প্রিমিয়ার ব্যাংক ও কর্মকর্তাদের ৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা জরিমানা
Published: 11th, November 2025 GMT
প্রিমিয়ার ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এইচ বি এম ইকবাল ও তাঁর পরিবারের চার সদস্য ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিদেশে সম্পদ কিনেছেন। পাশাপাশি কার্ড ব্যবহার করে সীমাতিরিক্ত লেনদেন করেছেন। এ ঘটনায় ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম রিয়াজুল করিমসহ জড়িত কর্মকর্তাদের ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
একই ঘটনায় ব্যাংকটিকে ২ কোটি ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আগামী রোববারের মধ্যে এই টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় ব্যাংকটির হিসাব থেকে অর্থ কেটে নেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ নিয়ে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আবু জাফরের যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁরা বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, তিনি এ রকম একটি চিঠি পাওয়ার কথা শুনেছেন।
বিএফআইইউর চিঠিতে বলা হয়, ‘অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইন লঙ্ঘন করে রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (আরএফসিডি) হিসাব খোলা, ওই হিসাবগুলোতে নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ জমা, ঘোষিত ফরম সংরক্ষণ না করা, ক্রেডিট কার্ডে এনডোর্সমেন্টসহ অন্যান্য নিয়ম যথাযথভাবে পালন না করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাচারে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণের জন্য ব্যাংকের বিরুদ্ধে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা জরিমানা আরোপ করা হলো।’
এ ছাড়া ৫টি আরএফসিডি হিসাব ও ১৮টি ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সন্দেহজনক লেনদেন হলেও তা বিএফআইইউকে জানানো হয়নি। পাশাপাশি ব্যাংকের অন্য গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের রপ্তানিকারকের রিটেনশন কোটা (ইআরকিউ) হিসাব থেকে ১ লাখ ডলার এইচ বি এম ইকবাল ও তাঁর ছেলে মঈন ইকবালের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়েছে। এটাকে চুরি আখ্যায়িত করে এক কোটি টাকা জরিমানা আরোপ করা হয়।
এ ছাড়া অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনের আওতায় দায়ী কর্মকর্তাদেরও পৃথকভাবে জরিমানা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রিমিয়ার ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম রিয়াজুল করিমকে ৩০ লাখ টাকা, বর্তমান অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) সৈয়দ নওশের আলীকে ৩০ লাখ টাকা ও ঢাকার বনানী শাখার তৎকালীন অপারেশন ম্যানেজার মনিরুল করিম লিটনকে ২২ লাখ টাকা জরিমানা আরোপ করা হয়েছে।
এ ছাড়া ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংকের কার্ড বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী প্রত্যেক কর্মকর্তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ সময়ে দুজন কর্মকর্তা এই বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। এ ছাড়া ২২ বার নিয়ম লঙ্ঘন করে ক্রেডিট কার্ডের সীমা খুলে দেওয়ায় জাকির হোসেন জিতুকে ২২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আরোপিত জরিমানার অর্থ যার যার কাছ থেকে আদায়যোগ্য হবে বলে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি এই কর্মকর্তাদের অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এর আগে এইচ বি এম ইকবাল ও তাঁর পরিবারের চার সদস্যের এসব অনিয়মের বিষয়ে প্রিমিয়ার ব্যাংককে লিখিতভাবে জানিয়েছিল বিএফআইইউ। সেই সঙ্গে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ব্যাংকটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ইকবাল ছাড়া তাঁর পরিবারের যে চার সদস্যের বিষয়ে ব্যাংকটির কার্ডে এই অনিয়ম পাওয়া গেছে তাঁরা হলেন—ইকবালের তিন সন্তান মোহাম্মদ ইমরান ইকবাল, মইন ইকবাল ও নওরীন ইকবাল এবং মইন ইকবালের স্ত্রী ইয়াসনা পূজা ইকবাল। বিএফআইইউর তদন্তে উঠে এসেছে, ইকবালসহ পাঁচজনের নামে ব্যাংকটির ১৮টি আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড এবং ৪টি প্রিপেইড কার্ড রয়েছে। এসব কার্ডের মাধ্যমে তাঁরা ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৩২ লাখ ৫০ হাজার ৩১১ ডলার খরচ করেছেন। আর এ ক্ষেত্রে তাঁরা বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের সীমার বেশি অর্থ খরচ করেছেন।
বিএফআইইউর পক্ষ থেকে প্রিমিয়ার ব্যাংকের কাছে এই অনিয়মের বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। ব্যাখ্যার সন্তোষজনক না হওয়ায় জরিমানা আরোপ করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত দ র ন ইকব ল ইকব ল ও আর প কর
এছাড়াও পড়ুন:
প্রিমিয়ার ব্যাংক ও কর্মকর্তাদের ৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা জরিমানা
প্রিমিয়ার ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এইচ বি এম ইকবাল ও তাঁর পরিবারের চার সদস্য ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিদেশে সম্পদ কিনেছেন। পাশাপাশি কার্ড ব্যবহার করে সীমাতিরিক্ত লেনদেন করেছেন। এ ঘটনায় ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম রিয়াজুল করিমসহ জড়িত কর্মকর্তাদের ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
একই ঘটনায় ব্যাংকটিকে ২ কোটি ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আগামী রোববারের মধ্যে এই টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় ব্যাংকটির হিসাব থেকে অর্থ কেটে নেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ নিয়ে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আবু জাফরের যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁরা বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, তিনি এ রকম একটি চিঠি পাওয়ার কথা শুনেছেন।
বিএফআইইউর চিঠিতে বলা হয়, ‘অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইন লঙ্ঘন করে রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (আরএফসিডি) হিসাব খোলা, ওই হিসাবগুলোতে নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ জমা, ঘোষিত ফরম সংরক্ষণ না করা, ক্রেডিট কার্ডে এনডোর্সমেন্টসহ অন্যান্য নিয়ম যথাযথভাবে পালন না করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাচারে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণের জন্য ব্যাংকের বিরুদ্ধে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা জরিমানা আরোপ করা হলো।’
এ ছাড়া ৫টি আরএফসিডি হিসাব ও ১৮টি ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সন্দেহজনক লেনদেন হলেও তা বিএফআইইউকে জানানো হয়নি। পাশাপাশি ব্যাংকের অন্য গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের রপ্তানিকারকের রিটেনশন কোটা (ইআরকিউ) হিসাব থেকে ১ লাখ ডলার এইচ বি এম ইকবাল ও তাঁর ছেলে মঈন ইকবালের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়েছে। এটাকে চুরি আখ্যায়িত করে এক কোটি টাকা জরিমানা আরোপ করা হয়।
এ ছাড়া অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনের আওতায় দায়ী কর্মকর্তাদেরও পৃথকভাবে জরিমানা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রিমিয়ার ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম রিয়াজুল করিমকে ৩০ লাখ টাকা, বর্তমান অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) সৈয়দ নওশের আলীকে ৩০ লাখ টাকা ও ঢাকার বনানী শাখার তৎকালীন অপারেশন ম্যানেজার মনিরুল করিম লিটনকে ২২ লাখ টাকা জরিমানা আরোপ করা হয়েছে।
এ ছাড়া ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংকের কার্ড বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী প্রত্যেক কর্মকর্তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ সময়ে দুজন কর্মকর্তা এই বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। এ ছাড়া ২২ বার নিয়ম লঙ্ঘন করে ক্রেডিট কার্ডের সীমা খুলে দেওয়ায় জাকির হোসেন জিতুকে ২২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আরোপিত জরিমানার অর্থ যার যার কাছ থেকে আদায়যোগ্য হবে বলে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি এই কর্মকর্তাদের অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এর আগে এইচ বি এম ইকবাল ও তাঁর পরিবারের চার সদস্যের এসব অনিয়মের বিষয়ে প্রিমিয়ার ব্যাংককে লিখিতভাবে জানিয়েছিল বিএফআইইউ। সেই সঙ্গে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ব্যাংকটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ইকবাল ছাড়া তাঁর পরিবারের যে চার সদস্যের বিষয়ে ব্যাংকটির কার্ডে এই অনিয়ম পাওয়া গেছে তাঁরা হলেন—ইকবালের তিন সন্তান মোহাম্মদ ইমরান ইকবাল, মইন ইকবাল ও নওরীন ইকবাল এবং মইন ইকবালের স্ত্রী ইয়াসনা পূজা ইকবাল। বিএফআইইউর তদন্তে উঠে এসেছে, ইকবালসহ পাঁচজনের নামে ব্যাংকটির ১৮টি আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড এবং ৪টি প্রিপেইড কার্ড রয়েছে। এসব কার্ডের মাধ্যমে তাঁরা ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৩২ লাখ ৫০ হাজার ৩১১ ডলার খরচ করেছেন। আর এ ক্ষেত্রে তাঁরা বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের সীমার বেশি অর্থ খরচ করেছেন।
বিএফআইইউর পক্ষ থেকে প্রিমিয়ার ব্যাংকের কাছে এই অনিয়মের বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। ব্যাখ্যার সন্তোষজনক না হওয়ায় জরিমানা আরোপ করা হয়েছে।