নির্বাচিত হওয়ার পর নিউইয়র্কের শীর্ষস্থানীয় দুই পদে কাদের মনোনয়ন দিলেন মামদানি
Published: 11th, November 2025 GMT
নিউইয়র্ক শহরের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি গত সোমবার তাঁর প্রশাসনের প্রথম বড় নিয়োগের ঘোষণা করেছেন। তিনি অঙ্গরাজ্য সরকারের অভিজ্ঞ কর্মকর্তা ডিন ফিউলিহানকে সিটি হলের প্রধান ডেপুটি বা ডেপুটি মেয়র হিসেবে মনোনীত করেছেন।
৭৪ বছর বয়সী ফিউলিহান এর আগে সাবেক মেয়র বিল দে ব্লাসিওর প্রশাসনে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রথম ডেপুটি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মামদানির চেয়ে চার দশকের প্রবীণ ফিউলিহান নিউইয়র্ক শহরের প্রশাসনের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন।
এ ছাড়া মামদানি তাঁর অঙ্গরাজ্য পরিষদের শীর্ষ সহকারী এবং দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এল বিসগার্ড-চার্চকে চিফ অব স্টাফ হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন, যা অনেকটা প্রত্যাশিতই ছিল। এই মনোনয়নগুলো স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ৩৪ বছর বয়সী মামদানি তাঁর প্রশাসনে তরুণ, বামপন্থী সহযোগীদের পাশাপাশি অভিজ্ঞ প্রশাসনিক ব্যক্তিত্বদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে চান।
ম্যানহাটানে এক সংবাদ সম্মেলনে মামদানি বলেন, তাঁর প্রশাসনকে কেবল অর্থনৈতিক কর্মসূচির সাফল্যে নয়, বরং সাধারণ নাগরিক সেবা দিয়ে মূল্যায়ন করা হবে। এ ক্ষেত্রে ময়লা পরিষ্কারের মতো দৈনন্দিন কাজের দক্ষতার বিষয়টিও যুক্ত থাকবে।
আরও পড়ুনজোহরান মামদানির সাফল্যে ডেমোক্র্যাটদের উচ্ছ্বাস; কিন্তু ক্ষমতায় ফেরা কি সহজ হবে০৮ নভেম্বর ২০২৫মামদানি বলেন, ফিউলিহান ও বিসগার্ড-চার্চ দুজনেই শহরকে রূপান্তর করার জন্য প্রয়োজনীয় নতুন ও সৃজনশীল চিন্তাধারা রাখেন। পাশাপাশি সেই ভাবনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতাও তাঁদের রয়েছে।
নীতিমালা বাস্তবায়নের পথে নানা বাধা মোকাবিলায় ফিউলিহান মামদানির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হয়ে উঠতে পারেন। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে ফিউলিহান রাজ্য পরিষদের শীর্ষ নেতাদের সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। সম্প্রতি গভর্নর ক্যাথি হোকুল তাঁকে রাজ্যের ফিন্যান্সিয়াল কন্ট্রোল বোর্ডের সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেন। ওই বোর্ড নিউইয়র্ক সিটির আর্থিক কার্যক্রম তদারকির কাজ করে।
১ জানুয়ারি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন মামদানি। এরপর মামদানিকে একের পর এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। নির্বাচনী প্রচারে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, নিউইয়র্কের ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে বৃহৎ ও ব্যয়বহুল একাধিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবেন। এর মধ্যে শহরে বাসে বিনা ভাড়ায় চলাচলের ব্যবস্থা, সরকারি অর্থায়নে শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র সম্প্রসারণ এবং প্রায় ১০ লাখ ভাড়া-নিয়ন্ত্রিত অ্যাপার্টমেন্টে ভাড়া বৃদ্ধির স্থগিতাদেশও রয়েছে।
আরও পড়ুনজোহরান মামদানির কাজে কীভাবে ট্রাম্প বাগড়া দিতে পারেন ৯ ঘণ্টা আগেএসব বাস্তবায়নে মামদানিকে রাজ্য পরিষদের সদস্যদের এবং গভর্নর হোকুলকে তাঁর পরিকল্পনা অনুমোদন করাতে হবে। এর বাইরে কর ও অন্যান্য উদ্যোগের মাধ্যমে বিলিয়ন ডলার রাজস্ব সংগ্রহের ব্যাপারেও রাজি করাতে হবে। হোকুল বলেছেন, তিনি মামদানির সঙ্গে বিশেষ করে শিশুসেবার উদ্যোগে কাজ করতে আগ্রহী, তবে বাসভাড়া পুরোপুরি বাতিল করার ব্যাপারে তিনি সংশয় প্রকাশ করেছেন।
এর পাশাপাশি রয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি মামদানিকে ‘চরমপন্থী কমিউনিস্ট’ বলে অভিহিত করেছেন। ট্রাম্প ইতিমধ্যে হুমকি দিয়েছেন, যদি মামদানি তাঁর অপছন্দের নীতি বাস্তবায়ন করেন, তবে তিনি নিউইয়র্ক সিটির জন্য নির্ধারিত গুরুত্বপূর্ণ ফেডারেল তহবিল বন্ধ করে দিতে পারেন কিংবা সেখানে ন্যাশনাল গার্ড পাঠাতে পারেন।
আরও পড়ুনজোহরান মামদানির রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি তাঁর মায়ের চলচ্চিত্রের কাছে কতটা ঋণী১০ নভেম্বর ২০২৫আরও পড়ুনজোহরান মামদানিকে ভোট দিয়েছেন ৯৭ শতাংশ মুসলিম ভোটার১৫ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন ম মদ ন র ন উইয়র ক ম মদ ন ক ফ উল হ ন র জন য কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পবিরোধী জনমত আগের চেয়ে শক্তিশালী হচ্ছে
ট্রাম্পবিরোধী জনমত আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। এত দিন তা বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছিল; কিন্তু গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কের মেয়র, নিউ জার্সি ও ভার্জিনিয়ার গভর্নর নির্বাচনের ফল সে চিত্রই তুলে ধরেছে। বিষয়টি রিপাবলিকান পার্টির নেতা ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুঝতে পেরেছেন। তিনি এখন এসব নির্বাচনে নিজের ভূমিকা খাটো করে দেখাচ্ছেন।
তিন নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির তিন প্রার্থীর কাছে হার রিপাবলিকান পার্টির জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি নির্বাচনটা দেখেছি। তবে এসব ব্যাপারে আমি তেমনভাবে জড়িত ছিলাম না।’ নির্বাচনে প্রার্থীদের সমর্থন করার কথাও অস্বীকার করেছেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ভার্জিনিয়ার গভর্নর প্রার্থীকে সমর্থন করিনি। নিউ জার্সির প্রার্থীকেও খুব একটা সহায়তা করিনি। নিউইয়র্ক সিটির মেয়র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমো সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করা হলে আমি বলেছিলাম—আপনি কি একজন “ঠগ” চান, নাকি একজন “বামপন্থী”?’
ট্রাম্প নিজেকে যতই দূরে রাখার চেষ্টা করুন না কেন, মঙ্গলবারের নির্বাচনে জনগণ আসলে তাঁর বিরুদ্ধেই ভোট দিয়েছেন। বলা চলে, ভোটের ব্যালটে ট্রাম্পের নাম না থাকলেও এর আগে কখনো কোনো নির্বাচনে এতটা স্পষ্টভাবে তাঁর বিরুদ্ধে ভোট দিতে দেখা যায়নি।
ট্রাম্পপন্থী ভোট কমেছেএ সপ্তাহে সবচেয়ে বড় লক্ষণীয় বিষয় হলো, ট্রাম্পবিরোধী ভোট আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়েছে এবং ট্রাম্পপন্থী ভোট আগের চেয়ে কমেছে। নির্বাচনের আগেই গত সোমবার সিএনএনের করা এক সমীক্ষায় বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। ওই সমীক্ষায় দেখা যায়, নিবন্ধিত ভোটারদের ৪১ শতাংশ কংগ্রেস নির্বাচন হলে ট্রাম্পের বিরোধিতা জানানোর জন্য ভোট দেওয়ার কথা বলেন। অপর দিকে মাত্র ২১ শতাংশ ভোটার ট্রাম্পকে সমর্থনের কথা বলেন; অর্থাৎ ট্রাম্পবিরোধী ভোট প্রায় দ্বিগুণ। এটা স্বাভাবিক নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অজনপ্রিয় প্রেসিডেন্টরা এ রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু সিএনএনের সমীক্ষা অনুযায়ী, গত প্রায় ২০ বছরে এ রকম বড় ফারাক আর দেখা যায়নি।
এর আগে ২০০৬ সালে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার কথা বলেছিলেন ৩৬ শতাংশ মানুষ আর মাত্র ১৫ শতাংশ বলেছিলেন তাঁর পক্ষে। ২০১৮ সালের ট্রাম্পের প্রথম মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগেও এই ব্যবধান এতটা বড় ছিল না। তখন ট্রাম্পবিরোধী ছিলেন ৩৮ শতাংশ। ট্রাম্পপন্থী ছিলেন ২৫ শতাংশ।
এত দিন সমীক্ষায় ট্রাম্পবিরোধী ভোট বাড়ার কথা বলা হলেও গত মঙ্গলবারের নির্বাচনের ফলও সেটা প্রমাণ করেছে। সারা দেশে ভোট না হলেও, ভার্জিনিয়া ও নিউ জার্সির বুথফেরত জরিপের তথ্য বলছে, ট্রাম্পবিরোধী ভোটের ব্যবধান বেড়েছে।
২০১৭ সালে ভার্জিনিয়ায় ট্রাম্পবিরোধী ও ট্রাম্পপন্থী ভোটের ব্যবধান ছিল ১৭ পয়েন্ট (৩৪%-১৭%), এবার তা বেড়ে ২২ পয়েন্টে (৩৮%-১৬%) দাঁড়িয়েছে। নিউ জার্সিতে ব্যবধান আরও বেড়েছে। ২০১৭ সালে ট্রাম্পবিরোধী ও ট্রাম্পপন্থী ভোটের ব্যবধান ছিল ১৭ পয়েন্ট (২৮%-১১%)। এবার ২৮ পয়েন্টে (৪১%-১৩%) পৌঁছেছে।
‘নো কিংস’ট্রাম্পবিরোধী ভোট বেড়ে যাওয়ার দুটি কারণ উঠে এসেছে। একটি হচ্ছে ‘নো কিংস’ আন্দোলন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি ও কর্তৃত্ববাদী আচরণের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে গত মাসে এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এ আন্দোলন ঘিরে যে সমাবেশ হয়েছিল সেগুলো নিছক কাকতালীয় ছিল না। এসব ট্রাম্পবিরোধী আন্দোলন এখনো আগের মতোই শক্তিশালী, আশাব্যঞ্জক এবং সক্রিয়। এই আন্দোলনের সদস্যরা হয়তো এখন ডেমোক্রেটিক পার্টিতে খুব আস্থাশীল নন, কিন্তু তাঁরা রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাননি; বরং ভোট দিতে প্রস্তুত।
দ্বিতীয় বিষয় হলো, ট্রাম্পের রাজনৈতিক আধিপত্য থাকা সত্ত্বেও তাঁর মূল ভোটারগোষ্ঠী এখন তেমন উৎসাহী নন।