লক্ষ্মীপুরে দোকানিকে কুপিয়ে হত্যা
Published: 25th, November 2025 GMT
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায় দোকানে ঢুকে আনোয়ার হোসেন (৫০) নামের এক দোকানিকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। আজ মঙ্গলবার সকালে উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নের নাগমুদ বাজারে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। নিহত আনোয়ার হোসেন ভোলাকোট ইউনিয়নের সাহারপাড়া গ্রামের আলী রেজা ব্যাপারীবাড়ির বাসিন্দা। নাগমুদ বাজারে একটি কনফেকশনারি রয়েছে তাঁর।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনের মতো সকাল থেকেই আনোয়ার দোকানে ছিলেন। সকালে মো.
নিহত ব্যক্তির স্ত্রী জান্নাত আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্বামীকে কেন হত্যা করেছে, আমরা জানি না। তাঁকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমি এ হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
রামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল বারী বলেন, হত্যার খবর পাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ব্যক্তিগত বিরোধ থেকেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। অভিযুক্ত ইউছুফ পলাতক। তাঁকে আটকের চেষ্টা চলছে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলিম ব্রাদারহুডের কয়েকটি শাখাকে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ ঘোষণার নির্দ
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মিশর, লেবানন ও জর্ডানে মুসলিম ব্রাদারহুডের শাখাগুলোকে ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। ট্রাম্প মুসলিম ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে সমর্থনের অভিযোগ এনেছেন।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
আরো পড়ুন:
প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার সংশোধনকে স্বাগত জানালেন জেলেনস্কি
জিনপিংয়ের সঙ্গে ফোনালাপ, বেইজিং যাচ্ছেন ট্রাম্প
প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প স্থানীয় সময় সোমবার (২৪ নভেম্বর) এ সংক্রান্ত একটি ডিক্রি জারি করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র এমন সময়ে এই পদক্ষেপ নিলো, যখন মধ্যপ্রাচ্যে শত্রুদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ইসরায়েল।
ডিক্রিতে জর্ডানের মুসলিম ব্রাদারহুড নেতাদের বিরুদ্ধে হামাস এবং আল-জামা আল-ইসলামিয়া নামে পরিচিত এই গোষ্ঠীর লেবাননের শাখাকে ‘বস্তুগত সহায়তা’ প্রদানের অভিযোগ আনা হয়েছে। ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধে হামাস এবং হিজবুল্লাহর পক্ষ নেওয়ার কারণে।
এতে আরো দাবি করা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের সময় মিশরের একজন মুসলিম ব্রাদারহুড নেতা ‘মার্কিন অংশীদার ও স্বার্থের’ বিরুদ্ধে সহিংস হামলার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
মুসলিম ব্রাদারহুড ১৯২৮ সালে মিশরে প্রতিষ্ঠিত একটি প্যান-ইসলামিস্ট সংগঠন, যা পরে আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা, মিশরীয় স্কুলশিক্ষক হাসান আল-বান্না বিশ্বাস করতেন, সমাজে ইসলামী নীতির পুনর্জাগরণই মুসলিম বিশ্বকে পশ্চিমা ঔপনিবেশিকতা প্রতিরোধে সক্ষম করবে।
মুসলিম ব্রাদারহুডকে এরই মধ্যে কিছু দেশ সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করেছে, যেমন মিশর ও সৌদি আরব।মিশরে ২০১৩ সাল থেকে মুসলিম ব্রাদারহুড নিষিদ্ধ। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে জর্ডানও সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। দেশটি অভিযোগ করে, মুসলিম ব্রাদারহুড অস্ত্র তৈরি ও মজুত করছে এবং দেশকে অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা করছে। চলতি বছরের মে মাসে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁও তার সরকারকে মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রভাব ও বিস্তার ঠেকাতে প্রয়োজনীয় প্রস্তাব তৈরির নির্দেশ দেন।
সোমবার হোয়াইট হাউজে এক বিবৃতিতে জানায়, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মুসলিম ব্রাদারহুডের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছেন, যারা মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন স্বার্থ, মিত্রদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির প্রচারণা চালায়।
ট্রাম্পের আদেশে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের সঙ্গে আলোচনা করে ৩০ দিনের মধ্যে মুসলিম ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদন প্রকাশের ৪৫ দিনের মধ্যে মুসলিম ব্রাদারহুডের শাখাগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্ব সন্ত্রাসী’ হিসেবে মনোনীত হবে। এই তকমা মুসলিম ব্রাদারহুডের অন্যান্য শাখাগুলোকেও ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করার পথ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য খুলে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্র কোনো সংগঠনকে আন্তর্জাতিক ‘সন্ত্রাসী’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে ওয়াশিংটন সে সংগঠনের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদ জব্দ, সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ, সহ কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ পায়। সংগঠনটিকে বস্তুগত সহায়তা প্রদান অবৈধ হয়ে যায়।
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক সংগঠনের আকারে শাখা রয়েছে।মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে, মুসলিম ব্রাদারহুড-অনুমোদিত দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে থাকে।
মুসলিম ব্রাদারহুডকে কালো তালিকাভুক্ত করা যুক্তরাষ্ট্রে ডানপন্থি কর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবি।
তবে সমালোচকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ববাদ ও স্বাধীন রাজনৈতিক মত প্রকাশের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন আরো বাড়িতে দিতে পারে।
ব্রাদারহুডের সঙ্গে সম্পর্কিত দাতব্য প্রতিষ্ঠানে অনুদানের অভিযোগ তুলে মুসলিম আমেরিকান কর্মীদের লক্ষ্যবস্তু করার জন্যও এই ডিক্রি ব্যবহার করা যেতে পারে।
ডানপন্থি গোষ্ঠীগুলো দীর্ঘদিন ধরে মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে সম্পর্কের ভিত্তিহীন অভিযোগে মুসলিম আমেরিকান গোষ্ঠীগুলোকে নিষিদ্ধ করার জন্য চাপ দিচ্ছে।
কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস এর নির্বাহী পরিচালক নিহাদ আওয়াদ বলেন, ঘটনাটি মুসলিম আমেরিকান অ্যাডভোকেসি গ্রুপ ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানের উপর প্রভাব ফেলা উচিত নয়।
তিনি আল জাজিরাকে বলেন, “আমেরিকান মুসলিম সংগঠনগুলো স্বচ্ছ। তারা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত। ত্রাণ সংস্থাগুলো বিদেশে লাখ লাখ মানুষকে সেবা প্রদান করে। আমি আশা করি এটি তাদের কাজে প্রভাব ফেলবে না।”
তবে তিনি উল্লেখ করেন, মুসলিম বিরোধী কর্মীরা ‘এই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচার করার চেষ্টা করছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি মুসলিম সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের একটি অংশ’।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের আদেশের লক্ষ্য মার্কিন নাগরিকদের কাছে নিজের প্রচারণা চালানো। মধ্যপ্রাচ্যে এই পদক্ষেপ খুবই কমই প্রভাব ফেলবে।
আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুতের ফেলো রামি খৌরির মতে, “এটি খুবই অপেশাদার বৈদেশিক নীতি, তবে এটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ডানপন্থি উগ্রপন্থিদের জন্য একটি হাতিয়ার হতে পারে।”
তিনি উল্লেখ করেন, ট্রাম্পের আদেশটি এমন সময় এসেছে যখন যুক্তরাষ্ট্র গাজায় যুদ্ধবিরতিতে ‘অগ্রগতি করার জন্য মরিয়া হয়ে’ চেষ্টা করছে, যা ‘ইসরায়েলিরা মূলত উপেক্ষা করে এবং হামাস মূলত মেনে চলে’।
খৌরি বলেন, হোয়াইট হাউজ আসলে দেখাতে চায় যে, ট্রাম্প প্রশাসন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং সকলের জন্য শান্তি এবং সুখী, সুন্দর জীবন আনতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। যা আদতে কাল্পনিক।”
ঢাকা/ফিরোজ