কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে ১২০টি দোকান উচ্ছেদ
Published: 12th, October 2025 GMT
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের বালিয়াড়ি ও ঝাউবাগান দখল করে গড়ে তোলা ১২০টির বেশি অবৈধ দোকানপাট (চার চাকার টংঘর) উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন। আজ রোববার বেলা দুইটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত চলা এই যৌথ অভিযানে সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ ও ট্যুরিস্ট পুলিশের কয়েক শ সদস্য অংশ নেন। অভিযানে বাধা দেওয়ার অভিযোগে একজনকে আটক করা হলেও সামগ্রিকভাবে শান্তিপূর্ণভাবে উচ্ছেদ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।
সৈকতের বালিয়াড়ি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ না করার বিষয়ে আগেই উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ছিল।
সকালে সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, বেলা ১১টার পর থেকে সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ ও ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা অবৈধ দোকানপাট সরানোর চেষ্টা চালান। তবে দোকানমালিকেরা নানা অজুহাত দিলে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী মাইকিং করে বেলা দুইটা পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেন। তিনি ঘোষণা দেন, এরপরও দোকান না সরালে যৌথ বাহিনী উচ্ছেদে নামবে।
একই সময়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ‘কার্ড থাকুক বা না থাকুক, ঝাউবাগানের ভেতর কোনো দোকান রাখা যাবে না।’
দুপুর গড়িয়ে গেলেও দোকান না সরায় খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) দিয়ে অবৈধ দোকান ভাঙার কাজ শুরু হয়। পরে দোকানমালিকেরা ঝাউবাগানের ভেতরে রাখা দোকান সরিয়ে সৈকত সড়কের পাশে রাখতে শুরু করেন। এতে সাময়িকভাবে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। পরে পুলিশ মাইকিং করে দোকানগুলো অন্যত্র সরিয়ে নিতে অনুরোধ জানায়। বিকেল চারটার দিকে এক্সকাভেটর দিয়ে কয়েকটি দোকান ভাঙা শুরু হলে বাকিগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়।
যৌথ অভিযানে নেতৃত্ব দেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো.
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে সুগন্ধা সৈকতের বালিয়াড়ি দখল করে দেড় শতাধিক চার চাকার টংঘর দোকান বসানো হয়। জেলা প্রশাসন ও ট্যুরিস্ট পুলিশের তৎপরতায় দোকানগুলো সরিয়ে দিলে পরে মসজিদের উত্তর পাশের ঝাউবাগানে নতুন করে দোকান বসানো হয়। এতে পর্যটকদের নিরাপদ চলাচল ব্যাহত হচ্ছিল।
ইউএনও নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো সংঘাত ছাড়াই যৌথ বাহিনী ঝাউবাগানের ভেতর থেকে ১২০টির বেশি দোকান উচ্ছেদ করতে সক্ষম হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে কেউ বালিয়াড়ি বা ঝাউবাগানে অবৈধ স্থাপনা করতে না পারে, সেদিকেও নজর রাখা হবে।’
পুলিশ জানায়, সুগন্ধা সৈকতের বালিয়াড়িতে আরও কয়েক শ দোকানপাট রয়েছে। আগামী ১৬ অক্টোবরের মধ্যে এগুলো নিজ উদ্যোগে সরানোর সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় নতুন স্থাপনাগুলো ১১ অক্টোবর রাতের মধ্যে এবং পুরোনো স্থাপনাগুলো ১৬ অক্টোবরের মধ্যে সরাতে হবে। এরপর শহরজুড়ে মাইকিং করে বিষয়টি জানানো হয়।
জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথম দিনের অভিযানে ১২০টির মতো দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে। অবশিষ্টগুলো ১৭ অক্টোবরের মধ্যে সরানো হবে। একই সঙ্গে সৈকতের ময়লা-আবর্জনাও পরিষ্কার করা হচ্ছে। আমরা চাই, কোনো পর্যটক যেন সৈকতে এসে ভোগান্তিতে না পড়েন।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স কত র
এছাড়াও পড়ুন:
ফরিদপুরে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে তরুণ অবরুদ্ধ, পরে সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা
ফরিদপুরের নগরকান্দায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে এক তরুণকে অবরুদ্ধ করে একদল লোক। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার গোড়াইল বাজারে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে থানায় আনে।
এদিকে ওই ঘটনার সময় গোড়াইল বাজারের অদূরে ওই তরুণের বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর করে একদল লোক। এ সময় তারা বাড়ির সামনে একটি পাটখড়ির গাদায় আগুন ধরিয়ে দেয়।
গ্রেপ্তার তরুণ (২১) গত বছর নগরকান্দা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। বর্তমানে তিনি গোড়াইল বাজারে একটি ফার্মেসিতে সহকারী হিসেবে কাজ করেন। থানায় আনার পর তাঁর বিরুদ্ধে সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই তরুণ তাঁর ফেসবুক আইডিতে কাবা শরিফের ছবি বিকৃত করে ধর্মীয় অবমাননাকর বাক্য লিখে পোস্ট করেন। গতকাল বিকেলে ওই মন্তব্যের স্ত্রিনশট ফেসবুকে ছড়িয়ে পরে। সন্ধ্যার পর থেকে গোড়াইল বাজার এলাকায় উত্তেজনা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে আশপাশের গ্রাম থেকে লোকজন এসে ওই তরুণের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান। তখন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ওই বাজারের কয়েকজন ওষুধের দোকানের সাটার নামিয়ে ওই তরুণকে আটকে রাখেন। এর মধ্যেই বাজারে জনতা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। পরে বিষয়টি নগরকান্দা থানার পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানানো হয়।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে নগরকান্দার ইউএনও দবির উদ্দিন ও নগরকান্দা থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পরিস্থিতি ততক্ষণে উতপ্ত হয়ে ওঠে। ওই ওষুধের দোকান জনতা ঘিরে ফেলে। দোকানের সামনে থেকে হ্যান্ডমাইকে আইন হাতে তুলে না নেওয়ার জন্য জনতার উদ্দেশে কথা বলেন স্থানীয় আলেম সমাজের প্রতিনিধি ও জনপ্রতিনিধিরা। এ সময় ইউএনও দবির উদ্দিন এক দিনের মধ্যে দৃশ্যমান শাস্তির আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। রাত সাড়ে নয়টার দিকে ওই তরুণকে উদ্ধার করে থানায় নেওয়া হয়।
লস্করদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাত নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হিরু ফকির বলেন, পুলিশ ওই তরুণকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর গোড়াইল বাজার থেকে আনুমানিক এক কিলোমিটার দূরে তাঁর বাড়ির দিকে ছুটে যায় একদল লোক। তারা ওই তরুণের বাড়ি ভাঙচুর করে। ফিরে আসার পথে ওই বাড়ির সামনে একটি পাটখড়ির গাদায় আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে স্থানীয় মানুষের সহায়তায় সেই আগুন নেভানো হয়।
নগরকান্দা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিরুল ইসলাম বাদী হয়ে সাইবার সুরক্ষা আইনের ২৬ ও ২৭ ধারায় ওই তরুণকে আসামি করে মামলা করেছেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বলেন, ওই তরুণের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ পাওয়া গেছে, সেই স্কিনশর্ট তিনি দেখেছেন। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে নানা ধরনের গুজব ছড়ানোর সুযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ দল দিয়ে পরীক্ষা করা হবে। প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটন করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওই তরুণের বাড়িতে ভাঙচুরের বিষয়ে ওসি রেজাউল করিম বলেন, ঘটনাটা তেমন বড় কিছু নয়। ওই এলাকায় বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।