দলছুট বানর শিকল দিয়ে বাড়িতে বেঁধে রেখেছেন, বিক্রি করতে চান ১২ হাজার টাকায়
Published: 13th, October 2025 GMT
বানরটির গলায় লোহার শিকল; গাছে বাঁধা। ছটফট করছে। কাছে গিয়ে দেখা যায়, বানরটির কপালে আঘাতের চিহ্ন। একটি কলা পেয়ে বানরটি সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া শুরু করে। গতকাল রোববার জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার তুলসীগঙ্গা নদীর বাঁধসংলগ্ন এলাকার একটি বাড়িতে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়।
ওই বাড়ির মালিক আক্কেলপুর পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মী আবেদ আলী। সপ্তাহ দুয়েক ধরে তিনি বানরটি নিজ বাড়িতে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুই সপ্তাহ আগে আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের ছাদে দলছুট একটি বানর হাজির হয়। উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা বানরটিকে কলা ও পাউরুটি খেতে দিতেন। দু–তিন দিন বানরটি উপজেলা পরিষদের ভবন, গাছ ও মাঠে ঘোরাঘুরি করে বেড়ায়।
দিপু নামের উপজেলা পরিষদের এক কর্মচারী বলেন, ‘প্রায় দুই সপ্তাহ আগে এক সকালে বানরটি ইউএনও স্যারের কার্যালয়ের ছাদে ঘোরাঘুরি করছিল। আমরা বানরটিকে কলা-রুটি খেতে দিয়েছি। বানরটি দু-তিন দিন উপজেলা পরিষদ এলাকায় ছিল। পরে জানলাম, পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মী আবেদ আলী বানরটি কৌশলে ধরে নিয়ে গেছেন।’
আজ সোমবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ করছিলেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী আবেদ আলী। এ সময় বানরটির বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। বানরটির খাবারের জন্য প্রতিদিন তাঁর ১০০ টাকা খরচ হচ্ছে। একপর্যায়ে তিনি ১২ হাজার টাকায় বানরটি বিক্রি করতে চান বলে জানান। পরে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে আবেদ আলী বলেন, ‘আমি বানর পালার জন্য ধরেছি; বিক্রি করব না। ১০–১২ দিন আগে উপজেলা পরিষদে কলা খেতে দিয়ে বানরটিকে ধরেছি। তখন বানরটি ছোটাছুটি করতে গিয়ে গ্রিলের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এ কারণে বানরের কপালে একটু আঘাত লেগেছে।’
এ বিষয়ে জয়পুরহাট বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, ‘বন্য প্রাণী আটকে রাখা অপরাধ। বানরটি শিকল পরিয়ে আটকে রাখার কথা জানি না। প্রাণীটিকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করা হবে। বিষয়টি আক্কেলপুর উপজেলা বন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত ব নরট র র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
শিকলে বাধা শান্তর চিকিৎসায় ইউএনওর সহায়তা
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ছাতিয়ান গ্রামে টাকার অভাবে শিকলবন্দী জীবন কাটছে ১৪ বছর বয়সী শান্তর। জন্মের পর থেকেই মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। পরিবার তাকে চিকিৎসা করানোর চেষ্টা করে। তবে অর্থ সংকটে নিয়মিত চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দিন–দিন অস্বাভাবিক আচরণ বাড়তে থাকে। সে কারণে রাতে ঘরে, আর দিনে গাছের সঙ্গে শিকলে বেঁধে রাখতে বাধ্য হন অভিভাবকরা।
গত রবিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে শান্তর বাড়িতে যান নবাগত জেলা প্রশাসক মো. ইকবাল হোসেন। তিনি শিশুটির অবস্থা দেখে চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার আশ্বাস দেন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে শান্তর বাড়িতে প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা করার জন্য নগদ ১৫ হাজার টাকা শান্তর বাবা জসীম উদ্দীনের হাতে তুলে দেন মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুল ইসলাম।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার পীযূষ কুমার, সমাজসেবা কর্মকর্তা জামশেদ আলী, মিরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মারফত আফ্রিদি।
এ ব্যাপারে শান্তর পিতা জসিম উদ্দিন জানান, ২০১১ সালে জন্ম নেওয়ার পর শান্ত সাড়ে তিন বছর বয়সে নানা অস্বাভাবিক আচরণ ও অখাদ্য খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলে। পরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে গেলে দীর্ঘ পাঁচ বছর চিকিৎসা চালানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।
দারিদ্র্যের কারণে নিয়মিত ওষুধ কিনতে না পেরে চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায়। কিছুটা ভালো হওয়ার পর আবার সমস্যার পুনরাবৃত্তি হলে ২০১৮ সালে ফের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। সেবারও পাঁচ বছর ধরে ওষুধ চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ আসে। কিন্তু দৈনিক ১০০-২০০ টাকার ওষুধ বাবদ খরচ মেটানো তার পক্ষে সম্ভব হয়নি।
জসিম আরো জানান, করোনাকালে গণমাধ্যমে শান্তর ভিডিও ভাইরাল হলে সেসময়ের পুলিশ সুপার তানভির আরাফাত চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। পরে তিনি বদলি হলে চিকিৎসা থেমে যায়। বর্তমানে প্রতিবন্ধী ভাতার ২ হাজার ৬০০ টাকা তিন মাস পরপর পেলেও তা খাবার, কাপড় ও পরিচর্যায় শেষ হয়ে যায়।
তিনি বলেন, “গত ২৪ নভেম্বর ডিসি স্যার শান্তকে দেখতে আসেন এবং চিকিৎসার সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন। গতকাল ইউএনও স্যার ১৫ হাজার টাকা প্রদান করলেন এবং শান্তর চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাও সার্বিক সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন।”
মিরপুরের ইউএনও মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, “শান্তকে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতার কারণে শিকলে বেঁধে রাখা হয়। বিষয়টি জেলা প্রশাসকের নজরে আসার পর তিনি নিজে গিয়ে শিশুটির খোঁজ খবর নেন। আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসার জন্য ১৫ হাজার টাকা প্রদান করি। সরকারি সকল সহযোগিতা থেকে শান্তর চিকিৎসার সুব্যবস্থা করা হবে।”
ঢাকা/কাঞ্চন/এস