ইংরেজি ভাষায় ‘হর্স ট্রেডিং’ বলে একটি অভিব্যক্তি আছে, ঘোড়ার যেখানে কোনো রকম উপস্থিতি নেই। বরং এই অভিব্যক্তি যে ধারণা তুলে ধরে, তা হলো দুটি গোষ্ঠী বা সংগঠনের মধ্যে চলা অনানুষ্ঠানিক আলোচনা বা দেনদরবার, উভয় পক্ষ যেখানে নিজেদের জন্য সবচেয়ে জুতসই বিবেচিত সুবিধা অন্য পক্ষের কাছ থেকে আদায় করে নিতে সার্বক্ষণিক প্রস্তুতি বজায় রাখে। প্রধানত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে অন্য পক্ষের কাছ থেকে নিজেদের সুবিধাজনক অবস্থানের সুযোগ গ্রহণ করে ছাড় আদায় করে নেওয়ার জন্য চালানো আলোচনাকেই বরং এই অভিব্যক্তির মধ্য দিয়ে অনেকটা গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করা হয়।

ফলে রাজনীতির চলমান প্রক্রিয়ায় বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া এগিয়ে আসার আগে একাধিক পক্ষের মধ্যে ভিন্নভাবে চলতে থাকা আলোচনার বেলায় এই ‘হর্স ট্রেডিং’ অভিব্যক্তির সবচেয়ে জুতসই প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়। কেননা, জড়িত সব কটি পক্ষ সেখানে নিজেদের ঘোড়া সর্বোচ্চ মূল্যে বিক্রি হওয়া নিশ্চিত করে নেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যায়। জাপানের রাজনীতিতে অতি সম্প্রতি যা ঘটে চলেছে, এককথায় তা হচ্ছে হর্স ট্রেডিং।

চলতি মাসের শুরুতে সানায়ে তাকাইচি প্রধান ক্ষমতাসীন উদার গণতন্ত্রী দল এলডিপির সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর ধরে নেওয়া হয়েছিল, জাপানের পরবর্তী এবং দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী তিনি হতে চলেছেন। তবে এর ঠিক পরপর তাকাইচির গ্রহণ করা কিছু সিদ্ধান্ত এবং ঘোষিত নীতিগত অবস্থান নিয়ে ক্ষমতাসীন জোটের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয় এবং অবস্থানগত সেই বিভাজন তীব্র হয়ে উঠলে জোটের ছোট অংশীদার জোট ছেড়ে বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা প্রচার করলে তীরে এসে তরি ডুবে যাওয়ার মতো আকস্মিকভাবে শেষ মুহূর্তের এক সংকটে সানাইচি এবং তার দল এলডিপিকে পড়তে হয়। এমনকি এ রকম অস্থিরতাও দলের ভেতরে দেখা দিয়েছিল যে অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে ‘পুলসিরাত’ পার হতে পারা তো দূরের কথা, তাকাইচির দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় কল্পনার ফানুসও হয়তো আকাশে ওড়ার আগেই ফেটে যেতে পারে। এ রকম আশঙ্কার পেছনে তাকাইচির নিজস্ব কিছু সিদ্ধান্ত ও মন্তব্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

কোমেই পার্টি ২৬ বছরের বন্ধন ছিন্ন করে ক্ষমতাসীন জোট ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর দলের নেতৃত্ব শুরুতে ঘোষণা করেছিল যে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ভোট গ্রহণে দল এলডিপি কিংবা বিরোধী—কোনো পক্ষের প্রার্থীকেই সমর্থন করবে না। তবে তাকাইচির ক্ষোভ অবশ্য এতে দূর হয়নি এবং কোমেই পার্টির বিরুদ্ধে অনেকটা শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ হিসেবে তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে নিম্নকক্ষের পরবর্তী নির্বাচনে এলডিপি কোমেই পার্টির প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রার্থী মনোনীত করবে।

২৬ বছর ধরে দুই দলের মধ্যে অনেকটা অলিখিত সম্মতি হিসেবে একে অন্যের বিরুদ্ধে প্রার্থীর মনোনয়ন না দিয়ে বরং পরস্পরের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার নিয়ম বলবৎ ছিল। নীতিগত সেই অবস্থান ভেঙে দিয়ে তাকাইচির একতরফা সেই ঘোষণা প্রচারিত হওয়ার পর কোমেই পার্টির নেতা সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনার একফাঁকে বলে দিয়েছিলেন যে দল কাউকে সমর্থন না করার ইতিপূর্বে প্রচারিত ঘোষণা থেকে সরে এসে এখন বরং নীতিগত কিছু সমন্বয় করার মধ্য দিয়ে বিরোধী জোটের প্রার্থীকে সমর্থন করবে। ফলে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হতে পারায় তাকাইচির স্বপ্ন হঠাৎ ভেঙে পড়ার মুখে এসে দাঁড়ায় এবং নিম্নকক্ষে বেশ কিছু আসন থাকা দলগুলোর মধ্যে সত্যিকার অর্থের ‘হর্স ট্রেডিং' শুরু হয়, যার জের এখনো চলছে।

জাপানের সংসদে নিম্নকক্ষের মোট আসনসংখ্যা হচ্ছে ৪৬৫। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করে নিয়ে সরকার গঠন করতে হলে ২৩৩টি আসনের সমর্থন প্রয়োজন। নিম্নকক্ষে এলডিপির মোট আসন হচ্ছে ১৯৬, এককভাবে সরকার গঠনের জন্য যা যথেষ্ট নয়। সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচনের আগে কোমেই পার্টির সমর্থন নিয়ে এলডিপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রাখতে সক্ষম হলেও সেই নির্বাচনে এলডিপি এবং কোমেই পার্টি উভয় দলকে বেশ কয়েকটি আসন হারাতে হওয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে সংখ্যালঘু সরকারের প্রধান হিসেবে ইশিবা শিগেরু প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। কোমেই পার্টি জোট ছেড়ে চলে যাওয়ায় এলডিপিকে এখন সেই দলের ২৪টি আসনের সমর্থন হারাতে হচ্ছে এবং নিজেদের প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থীর পক্ষে নিম্নকক্ষের প্রয়োজনীয় ভোট সংগ্রহ করা দলের পক্ষে কঠিন হয়ে উঠেছে। সে রকম অবস্থান থেকে দল ৩৫টি আসন থাকা জাপান ইনোভেশন পার্টি জেআইপির সঙ্গে হর্স ট্রেডিংয়ে নিয়োজিত হয় এবং বিশেষ কিছু প্রশ্নে ছাড় দিতে সম্মত হওয়ার মধ্য দিয়ে জেআইপিকে দলে ভেড়ানোর জোর তৎপরতা শুরু করে।

জেআইপি অবশ্য কয়েক দিন আগে পর্যন্ত বিরোধী দলগুলোর একক প্রার্থী হিসেবে তাকাইচিকে চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্য নিজেদের একক প্রার্থী ঠিক করে নেওয়ার আলোচনায় যোগ দিচ্ছিল। তবে এলডিপির পক্ষ থেকে দলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকাইচি এবং জেআইপির শীর্ষ নেতা হিরোফুমি ইয়োশিমুরার মধ্যে বেশ কয়েকটি গোপন বৈঠক ইতিমধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং দুই দল জোটবদ্ধ হতে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। ওসাকা শহর এবং কানসাই অঞ্চলভিত্তিক দল জেআইপি আঞ্চলিক বিষয়াবলির ওপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করে থাকে।

জেআইপির প্রধান দুটি দাবি হচ্ছে সরকারের কেন্দ্রীভূতকরণ হ্রাস করে কিছু সরকারি কর্মকাণ্ড পরিচালনার কেন্দ্র ওসাকায় সরিয়ে এনে বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়ার বাস্তব আকার দেওয়া এবং সামাজিক নিরাপত্তা বিমার প্রিমিয়াম হ্রাস করা। উভয় দাবি মেনে নিতে তাকাইচি সম্মত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পথে তিনি এখন অনেকটা এগিয়ে গেলেও দুই দলের মিলিতভাবে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন এখনো সম্ভব হয়নি। ফলে ধারণা করা যায়, ছোট কয়েকটি দল এবং নির্দলীয় সাংসদদের সঙ্গে হর্স ট্রেডিং এখনো চলবে এবং ২১ অক্টোবর নিম্নকক্ষে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত তা হয়তো অব্যাহত থাকবে।

তবে কথা হচ্ছে, ২১ অক্টোবর নিম্নকক্ষের নির্ধারিত ভোটে কষ্টার্জিত জয় নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে সরকারপ্রধানের দায়িত্বে আসীন হওয়ার অর্থ তাকাইচির জন্য অন্যভাবে হয়ে উঠতে পারে সংখ্যালঘু একটি সরকার পরিচালনা করা, যার স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয়মুক্ত হওয়া হয়তো সম্ভব নয়। এবার দেখা যাক কোন জাপানের স্বপ্ন নিয়ে সানায়ে তাকাইচি জাপানকে পরিচালনা করার নেতৃত্বের হাল ধরতে যাচ্ছেন।

দুইবারের ব্যর্থ চেষ্টার পর তৃতীয়বার দলীয় সভাপতি নির্বাচনের বৈতরণি পার হতে সক্ষম হয়েছেন জাপানের উদার গণতন্ত্রী দলের এই নেত্রী। তবে তৃতীয়বারের সর্বশেষ এই চেষ্টাও যে মসৃণ ছিল, তা অবশ্য বলা যায় না। প্রচার অভিযান চলা অবস্থায় বড় একটি সময় ধরে সমর্থন হারের দিক থেকে তিনি ছিলেন পিছিয়ে ২ নম্বরে। এ ছাড়া পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে চলা বিতর্ক অনুষ্ঠানে নিজেকে সত্যিকার অর্থে সাড়া জাগানো নেতা হিসেবে তুলে ধরতে তেমন সাফল্য তিনি দেখাতে পারেননি। তবে তারপরও শেষ সময়ে এসে অগ্রবর্তী প্রার্থী কোইজুমি শিনজিরোকে ভালো ব্যবধানে পরাজিত করতে তিনি সফল হয়েছেন। দলের ভেতরের বিভিন্ন উপদলের নেতাদের কাছে বারবার ধরনা দিয়ে নিজের সমর্থন ভিত্তি পোক্ত করে নেওয়ার চেষ্টা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়ায় এই ফলাফল অর্জন করা তার পক্ষে সম্ভব হয়।

জাপানের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম বলছে তাকাইচির জয়ের পেছনে মুখ্য ভূমিকা ছিল তারো আসোর নেতৃত্বাধীন এলডিপির সবচেয়ে বড় উপদলের। প্রথম দফার ভোট গ্রহণের পর পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে তাকাইচির পাশাপাশি কোইজুমি টিকে থাকা অবস্থায় আসোর সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করে তার সমর্থন তাকাইচি চেয়েছিলেন এবং আসো তার উপদলকে সেই অনুযায়ী নির্দেশ দেওয়ায় তাকাইচির পক্ষে পাল্লা ভারী হয়ে উঠেছিল। ফলে অনুমান করা যায় প্রধানমন্ত্রীর পদে তাকাইচি আসীন হলেও ‘কিং মেকার’ হিসেবে আসো পেছন থেকে ছড়ি ঘুরিয়ে নির্দেশনা দেওয়া অব্যাহত রাখবেন। দলীয় নেতৃত্বের পদে বাছাই করে নেওয়া কয়েকজনের বেলায় এই প্রবণতা ভালোভাবে লক্ষ্য করা গেছে। আসোর আশীর্বাদ পুষ্ট হয়ে এর আগে আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার জন্য অভিযুক্ত দলের কয়েকজন নেতা আবারও প্রভাবশালী হয়ে উঠছেন, জাপানের রাজনীতির জন্য ভালো লক্ষণ যা অবশ্যই নয়।

দলের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার মধ্যে দিয়ে জাপানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে পারার দুয়ার তাকাইচির সামনে খুলে যাওয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে নিজের অনুসরণ করতে যাওয়া নীতিমালার কিছু আভাস তিনি তুলে ধরেন। জাপানের আর্থিক দুরবস্থা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করার জন্য সংসদের সব কটি দলের প্রতি আহ্বান জানানো ছাড়াও পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে নিজের কিছু ধারণা সেখানে তিনি প্রকাশ করেছেন।

জাপানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, শুল্ক নিয়ে দেখা দেওয়া সমস্যা যেন পুরোপুরি সমাধান করে নেওয়া যায় সে জন্য দুই দেশের আলোচকদের মধ্য অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব রকম পদক্ষেপ নিতে তিনি প্রস্তুত থাকবেন এবং নতুন করে সমস্যা দেখা দিলে দুই দেশের পরামর্শ কমিটি আলোচনায় মিলিত হয়ে সমাধান খুঁজে বের করবে বলে তিনি মনে করছেন। এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দ্রুত বৈঠকে মিলিত হয়ে ভারত  প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে দেখা দেওয়া সমস্যা সামাল দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখার উল্লেখও তিনি করেছেন।

তাকাইচি এলডিপির নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই ট্রাম্পের সম্ভাব্য জাপান সফর নিয়ে দুই দেশ আলোচনা শুরু করে। চলতি মাসের শেষ দিকে মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া সফরের যে পরিকল্পনা ট্রাম্প করছেন, জাপানও এখন সেই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সরকারি কিছু সূত্রের বরাত দিয়ে জাপানের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম বলছে ২৭ অক্টোবর থেকে তিন দিনের জন্য জাপান সফরের পরিকল্পনা ট্রাম্প করছেন। টোকিওতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানোর মধ্য দিয়ে জাপান-মার্কিন সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরার চেষ্টা তাকাইচি অবশ্যই করবেন। তবে শুল্কসহ কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনায় মিলিত হয়ে জাপানের স্বার্থ রক্ষায় কিছুটা হলেও ছাড় দিতে ট্রাম্পকে রাজি করাতে তিনি সক্ষম হবেন কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয়।

অন্যদিকে তাকাইচির সামনে দেখা দিতে যাওয়া আরেকটি উদ্বেগ হচ্ছে জাপানের এই সর্বশেষ অগ্রগতি নিয়ে চীনের নিজস্ব মূল্যায়ন। সংবাদ সম্মেলনে তাকাইচির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল টোকিওর বিতর্কিত ইয়াসুকুনি মন্দির নিয়মিতভাবে সফর করা প্রধানমন্ত্রী হিসাবেও তিনি অব্যাহত রাখবেন কি না। ১৮৬৮ সালের মেইজি পুনরুত্থানের ঠিক পরপর প্রতিষ্ঠিত ইয়াসুকুনি মন্দিরে যুদ্ধে নিহত জাপানিদের প্রতি সম্মান জানানো হয়, যে তালিকায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধাপরাধী হিসেবে সাজাপ্রাপ্ত জাপানের সেই সময়ের কয়েকজন নেতাকেও পরবর্তী সময়ে অন্তর্ভুক্ত রাখা হয়েছে। ফলে ইয়াসুকুনি মন্দিরে জাপানের নেতাদের নিয়মিতভাবে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য যাওয়াকে চীন সন্দেহের চোখে দেখে আসছে এবং তাকাইচি হচ্ছেন জাপানের ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের মধ্যে প্রথম সারির একজন, নিয়মিতভাবে মন্দিরে গিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে তাকে কখনো পিছপা হতে দেখা যায়নি।

তবে এখন থেকে তার বিভিন্ন পদক্ষেপ ও বক্তব্য অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠায় সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেওয়া তিনি এড়িয়ে গেছেন এবং বলেছেন এ রকম এক পরিস্থিতি তৈরি করে নিতে তিনি আগ্রহী হবেন, বিশ্বের যেকোনো দেশের নাগরিকেরা যেখানে নিজ দেশের জন্য জীবন বিসর্জন দেওয়া নাগরিকদের প্রতি কোনো রকম বাধার মুখোমুখি না হয়ে শ্রদ্ধা জানাতে সক্ষম হবেন। অস্পষ্ট এই উত্তরের ব্যাখ্যা দুই দিক থেকেই করে নেওয়া যেতে পারে। ফলে চীন স্বভাবতই এতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি।

জাপানের ক্ষমতাসীন উদার গণতন্ত্রী দল নতুন নেতা বাছাই করে নেওয়ার ঠিক পরপর চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে চীন আশা করছে জাপানি পক্ষ দুই দেশের মধ্যে সম্মত হওয়া চারটি রাজনৈতিক দলিলে উল্লেখ থাকা নীতিমালা ও সম্মতি মেনে চলবে এবং চীন সম্পর্কে ইতিবাচক ও যুক্তিসংগত একটি নীতি গ্রহণ করবে। খুব বেশি কিছু বলা না হলেও ঠিক হুমকি নয়; বরং পরোক্ষ একধরনের সতর্কতার প্রতিফলন এখানে লক্ষ্য করা যায়, তাকাইচির জন্য যা অনেক বেশি ইঙ্গিতবহ সম্ভবত হয়ে উঠবে। ফলে ধরে নেওয়া যায়, সরকারের বাইরে কিংবা অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করে যাওয়া অবস্থায় যেসব পদক্ষেপ তিনি নিয়েছেন এবং যেসব কথা তিনি বলেছেন, এখন থেকে সেই পথে অগ্রসর হওয়ার আগে অনেক বেশি চিন্তাভাবনা করে পদক্ষেপ তাকে নিতে হবে।

তাকাইচি অন্যদিক  থেকে জাপানে বিদেশিদের আগমন নিয়ে উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠা বরাবর প্রকাশ করে গেলেও দলের নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি তিনি সম্ভবত এ কারণে এড়িয়ে গেছেন যে দায়িত্ব গ্রহণের আগে হঠাৎ বিতর্ক আরও সম্প্রসারিত করে নেওয়াকে তিনি হয়তো যুক্তিসংগত মনে করেননি। তবে কিছুটা বিলম্ব হলেও থলের সেই কালো বিড়াল একসময় বের হয়ে এসে নিজের চেহারা ঠিকই দেখাবে বলেও রাজনীতির অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন। বিদেশিদের সামনে  হঠাৎ খুলে যাওয়া জাপানের শ্রমের বাজারের দুয়ার এর ফলে আবারও বন্ধ কিংবা সংকুচিত হবে কি না, আগামী দিনগুলোতে তার আভাস সম্ভবত অনেক বেশি পরিষ্কার হয়ে উঠবে।

জাপানের রাষ্ট্রীয় সীমানার বাইরের এসব বিষয়ের ওপর আলোকপাত করার আগে দেশের ভেতরের যেসব সমস্যা সামাল দেওয়া নিয়ে তাকাইচিকে ভাবতে হবে, তার মধ্যে শীর্ষে আছে জাপানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান তিনি জানালেও কীভাবে তা সম্ভব হবে, সেই পথের নির্দেশনা দেখাতে তিনি সম্ভব হননি।

এ ছাড়া জাপানের প্রতিরক্ষা নীতি নিয়েও কিছু প্রশ্নের জবাব তাকে হয়তো দিতে হবে। জাপানের প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধি করে নিয়ে দেশের সামরিক শক্তি আরও সংহত করার পক্ষে বরাবর তিনি যুক্তি দেখিয়ে গেছেন এবং সমর বল বৃদ্ধির সেই ধারণায় শত্রু হিসাবে বিবেচিত দেশের ঘাঁটিতে আগ বাড়িয়ে হামলা চালানোও অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হলে সেই ধারণার সমর্থনে সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ তিনি নেবেন কি না, সেটি তাকে পরিষ্কার করে বলে দিতে হবে।

অন্য যে আরেকটি বিষয় নিয়ে তাকাইচি প্রশ্নবিদ্ধ হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, তা হলো জাপানের সমাজে নারী এবং সংখ্যালঘু হিসেবে গণ্য কয়েকটি গোষ্ঠীর বিষয়ে তার অবস্থান। নিজে নারীর প্রতিনিধিত্ব করা সত্ত্বেও নারীর সমান অধিকারের প্রতিফলন তুলে ধরা কয়েকটি বিষয়ে তার অবস্থান অতীতে বিতর্কের সূচনা করে দিয়েছিল। জাপানে স্বামী-স্ত্রীর নিজস্ব পারিবারিক পদবি ব্যবহারের বিরোধিতা তিনি শুরু থেকেই করে গেছেন, এমনকি আইনিভাবে তা স্বীকৃত হওয়ার পরেও। এ ছাড়া সিংহাসনে নারীর উত্তরাধিকার নিশ্চিত করার ঘোরতর বিরোধী তিনি। এসব কিছুর বাইরে সমকামী ও লিঙ্গ পরিবর্তনকারীদের অধিকারকেও সমালোচনার দৃষ্টিতে তিনি দেখেছেন। ফলে সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নিলে এসব বিষয়ে কোন অবস্থান তিনি গ্রহণ করেন, জাপানের সংবাদ মাধ্যমের পাশাপাশি দেশের নেতৃস্থানীয় বিভিন্ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠানও সেদিকে ঘনিষ্ঠ নজর রেখে যাবে।

মনজুরুল হক জাপান প্রবাসী শিক্ষক ও সাংবাদিক

*মতামত লেখকের নিজস্ব

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র ব চ ত হওয় র ন ম নকক ষ র ত হওয় র পর ন শ চ ত কর ক ষমত স ন গ রহণ কর ন র জন য অন ক ব শ দল র ন ত র প রথম অবস থ ন পদক ষ প এলড প র পরবর ত র অর থ ত কর র ব তর ক র বর ত ন ত গত র জন ত মন দ র সরক র অবশ য সমস য করছ ন জ আইপ

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শুরু

জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান মঞ্চে এসেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

উপস্থিত হয়েছেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা। যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা।

বিস্তারিত আসছে..

ঢাকা/আসাদ/নঈমুদ্দীন/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ