ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজকে একীভূত করে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোর বিরুদ্ধে মহাসমাবেশ ও কলেজে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘শাটডাউন’সহ কঠোর কর্মসূচিতে যাচ্ছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের শ্রেণি কার্যক্রম নির্বিঘ্নে পরিচালনা করতে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোর সর্বস্তরে শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করে অধ্যাদেশ জারি করতে হবে।

আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর তোপখানা রোডে মেহেরবা প্লাজায় অবস্থিত শিক্ষাবিদ ইনস্টিটিউটে সাত কলেজ স্বাতন্ত্র্য রক্ষা পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলা হয়। লিখিত বক্তব্য পড়েন পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক মাহফিল আরা বেগম।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়া অধ্যাদেশে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী হিসেবে বিবেচিত হলেও এসব কলেজে কর্মরত বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকেরা প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নন। চূড়ান্ত অধ্যাদেশ, পাঠ্যসূচি ও প্রশাসনিক কাঠামো নির্ধারিত না হওয়ায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থী—উভয়েই বর্তমানে এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছেন। প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেল বা কাঠামোর ফলে নানাবিদ সংকট তৈরি হবে বলে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়।

এসব নিয়ে আজ মঙ্গলবার থেকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম দিনে আগামীকাল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর প্রাঙ্গণে গণজমায়েত, ৩ ডিসেম্বর সারা দেশের সব সরকারি কলেজে মানববন্ধন, ৪ ডিসেম্বর পরীক্ষা বন্ধসহ সাত কলেজে কর্মবিরতি এবং ৬ ডিসেম্বর শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মহাসমাবেশ করা হবে।

এ ছাড়া বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের মতামত ও দাবি উপেক্ষা করে চূড়ান্ত অধ্যাদেশ জারি করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে দেশের সব সরকারি কলেজ ও দপ্তরে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক কর্মবিরতি (টোটাল শাটডাউন) শুরু করা হবে বলে আজকরে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়।

আগে থেকেই ঢাকার এই সাত সরকারি কলেজে সংকট বিরাজ করছে। ২০১৭ সালে যথেষ্ট প্রস্তুতি ছাড়াই এগুলোকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। সরকারি এই কলেজগুলো হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও তিতুমীর কলেজ। এর মধ্যে ইডেন ও তিতুমীরে শুধু স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়; বাকি পাঁচটি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর—তিন স্তরেই পাঠদান হয়। এগুলোতে শিক্ষার্থী দেড় লাখের মতো। চলতি শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তিযোগ্য আসন ১১ হাজারের মতো। সাত কলেজে মোট শিক্ষক হাজারের বেশি।

আরও পড়ুনঢাকার সাত কলেজ: বিশ্ববিদ্যালয় শুরুর আগেই তীব্র সেশনজটে শিক্ষার্থীরা ২৩ নভেম্বর ২০২৫

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই সাত কলেজকে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পৃথক করার ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় চূড়ান্ত হওয়ার আগেই অধিভুক্তি বাতিল হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। এখন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষকে প্রশাসক করে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থায় কার্যক্রম চলছে।

সম্প্রতি সাত কলেজকে একীভূত করে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার সরকারি পরিকল্পনা আলোচনায় আসে। কিন্তু এর কাঠামো নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। সংকট কাটার পরিবর্তে নতুন জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আন্দোলনও চলছে। সংকটের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগেই শিক্ষার্থীরা পড়েছেন তীব্র সেশনজটে।

আরও পড়ুনসাত কলেজ ঘিরে নতুন সংকট২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ড স ম বর স ত কল জ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশে এইচআইভির নীরব বিস্তার, আগামী প্রজন্ম কি নিরাপদ?

এইচআইভি (হিউম্যান ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস) এমন একটি ভাইরাস, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। এ থেকে এইডস হতে পারে। এইডস এমন একটি অবস্থা, যখন শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অন্যান্য জীবাণু দিয়ে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এখনো বিশ্বজুড়ে এটি একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এইচআইভি নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৮ লাখ। গত বছর এইচআইভি সম্পর্কিত কারণে বিশ্বে প্রায় ৬ লাখ ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি ১৩ লাখ নতুন এইচআইভি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।

বাংলাদেশে সংক্রমণের ধারা

বাংলাদেশে বর্তমানে এইচআইভির উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন প্রধানত পুরুষদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনকারী পুরুষ, ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণকারী ব্যক্তি, নারী যৌনকর্মী ও অভিবাসী কর্মীরা। এইচআইভি পরীক্ষা ও এআরটি (অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি) পরিষেবা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ফলে দেশের এআরটি কেন্দ্রগুলোতে সম্প্রতি শনাক্ত হওয়া এইচআইভি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব মতে, এ বছর বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮৯১ জন এইচআইভি আক্রান্ত হয়েছেন। এই সময়ে এইচআইভি সম্পর্কিত কারণে মারা গেছেন ২১৯ জন। ২০২৪ সালে দেশে ১ হাজার ৪৩৮ জন এইচআইভি আক্রান্ত হন এবং ৩২৬ জন এইচআইভি সম্পর্কিত কারণে মারা যান। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১ হাজার ২৭৬ ও ২৬৬।

২০২৪ সালে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেছিলেন, বাংলাদেশে প্রায় ১৬ হাজার ৮৬৩ জন এইচআইভি আক্রান্ত ছিলেন। আর ইউএনএআইডিএস-এর অনুমান অনুসারে, দেশে এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার।

সিরাজগঞ্জ ‘রেড জোন’, যশোরে তরুণ রোগী বাড়ছে

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় নতুন এইচআইভি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সিরাজগঞ্জ, সীমান্তবর্তী জেলা যশোর ও রাজশাহীর পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক। সিরাজগঞ্জকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কারণ, সেখানে ইনজেকশনযোগ্য মাদক সেবনকারীদের মধ্যে সংক্রমণের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।

২০২০ সালে ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতালে এআরটি কেন্দ্র চালুর পর থেকে এ পর্যন্ত সিরাজগঞ্জে মোট ২৫৫ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যাঁদের মধ্যে ২৬ জন চিকিৎসা চলার সময় মারা গেছেন। এখানকার এইচআইভি আক্রান্তদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১৮৭ জন ইনজেকশনযোগ্য মাদক ব্যবহারকারী, যাঁরা সুই ভাগাভাগি করেন, ২৯ জন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থী, চারজন পেশাদার যৌনকর্মী এবং ৩৫ জন সাধারণ নাগরিক।

২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত যশোরের ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতালের এআরটি সেন্টারে ৪০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ২৫ জন রোগীর বয়স ১৭ থেকে ২৩ বছরের মধ্যে। বর্তমানে খুলনা বিভাগের এইচআইভি আক্রান্ত ২২০ জন যশোর জেনারেল হাসপাতালের এআরটি সেন্টারে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৮টি নতুন সংক্রমণ এবং একজনের মৃত্যুর তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

তরুণদের মধ্যে ঝুঁকি কেন বাড়ছে

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন, মাদক গ্রহণের সময় সুই ভাগাভাগি, কনডম ব্যবহারের প্রবণতা কম, অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক, যৌন স্বাস্থ্যশিক্ষার অভাব, রোগনির্ণয়ের প্রাথমিক পরীক্ষাকে নিরুৎসাহিত করাসহ বেশ কয়েকটি কারণে তরুণদের মধ্যে সংক্রমণ বাড়ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের হিসাবে এইচআইভিতে আক্রান্তদের মধ্যে ৭৭ শতাংশ মানুষ তাঁদের রোগ সম্পর্কে সচেতন ছিলেন।

অথচ ইউএনএআইডিএস-এর ২০১৪ সালের ঘোষিত লক্ষ্য হলো—২০৩০ সালের মধ্যে এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তিদের মধ্যে ৯৫ শতাংশকে তাদের রোগ সম্পর্কে সচেতন করা।

আক্রান্তদের অনেকে তথ্য গোপন করে চিকিৎসাসেবা নেন। এটা অন্যদের মাঝে এইচআইভির সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি বাড়ায়। অথচ সচেতন হয়ে সঠিক তথ্য জানিয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিলে দীর্ঘ মেয়াদে সুস্থ থাকা সম্ভব। আক্রান্তের কাছ থেকে নতুন কারও মধ্যে ছড়ানোর ঝুঁকিও কম। ব্যক্তিপর্যায়ে সচেতনতার পাশাপাশি অবশ্যই একটি জাতীয় এইচআইভি/এইডস পরিকল্পনা তৈরি করা দরকার; যাতে স্পষ্ট উদ্দেশ্য, যথাযথ অর্থায়ন ও জনসম্পৃক্ততা থাকে। তবেই এইচআইভির বিস্তার ও ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

মুকেশ শর্মা চিকিৎসক, এমবিবিএস, এমডি (মাইক্রোবায়োলজি)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশে এইচআইভির নীরব বিস্তার, আগামী প্রজন্ম কি নিরাপদ?
  • যুদ্ধ ও আঞ্চলিক উত্তেজনায় অস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের আয়ের রেকর্ড, তালিকায় মাস্কের স্পেসএক্সও
  • ব্যবসা-বাণিজ্যে কমলেও ভোক্তাঋণে বড় প্রবৃদ্ধি কেন
  • শেখ হাসিনার বিচার: ন্যায়বিচার বনাম ন্যায়সংগত বিচারপ্রক্রিয়ার প্রশ্ন
  • ১২ বলে ফিফটি আর ৩২ বলে সেঞ্চুরি করলেন অভিষেক, ছক্কার নতুন রেকর্ড
  • বিগ ফোর-এর জায়গায় কি উচ্চশিক্ষার নতুন গন্তব্যে জার্মানি, ফ্রান্স ও স্পেন
  • ইউক্রেনে মিসাইলে, ভূমধ্যসাগরে জলদস্যুদের গুলিতে আমরা মরবই?
  • স্বাস্থ্যে প্রকল্প থেকে সরছে সরকার: ১৭ মাস বেতনহীন, চাকরি হারানোর শঙ্কা