জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেয় ২৫ দল, কারা গেল, কারা যায়নি
Published: 17th, October 2025 GMT
জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ২৫টি রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে জুলাই সনদ সই হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও অতিথিরা অংশ নেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং যে ২৫টি দলের নেতারা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছে, সেই দলগুলো হলো—
১.
২. খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের।
৩. রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম ও মিডিয়া সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন।
৪. আমার বাংলাদেশ পাটির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।
৫. নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার।
৬. জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ ও মহাসচিব মোমিনুল আমিন।
৭. বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
৮. বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ ও মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ।
৯. বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
১০. গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল।
১১. জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক
শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন ও সিনিয়র সহসভাপতি মিসেস তানিয়া রব।
১২. গণ অধিকার পরিষদের (জিওপি) সভাপতি নুরুল হক ও সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান।
১৩. বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ও রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য বহ্নিশিখা জামালী।
১৪. জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার লুৎফর রহমান।
১৫. ১২–দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম।
১৬. ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।
১৭. গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান।
১৮. জাকের পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম ভুইয়া ও গাজীপুর জেলা ছাত্র ফ্রন্টের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হাসান শেখ।
১৯. জাতীয় গণফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক আমিনুল হক টিপু বিশ্বাস ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মঞ্জুরুল আরেফিন লিটু বিশ্বাস।
২০. বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল মাজেদ আতহারী ও মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার।
২১. বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়্যারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব খন্দকার মিরাজুল ইসলাম।
২২. ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম (বাবলু) ও মহাসচিব মোহাম্মদ আবু ইউসুফ (সেলিম)।
২৩. জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহসভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী ও মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী।
২৪. ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল কাদের ও মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী।
২৫. আমজনতার দলের সভাপতি কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক মো. তারেক রহমান।
অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদের নেতারা যাননি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দুই পর্বে আলোচনা করে জুলাই সনদ তৈরি করেছে। প্রথম পর্বে ৩৩টি ও দ্বিতীয় পর্বে ৩০টি দলের সঙ্গে আলোচনা করে তারা। জাতীয় পার্টিকে এই আলোচনায় রাখা হয়নি।
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫২টি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে।
এদিকে প্রেস উইং জানায়, অনুষ্ঠানে জুলাই শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান এবং শহীদ তাহির জামান প্রিয়র মা শামসী আরা বেগম মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন র জন ত ক ম হ ম মদ ল ইসল ম র রহম ন উপদ ষ ট র সদস য আবদ ল
এছাড়াও পড়ুন:
মতৈক্য হবে না, কারণ দলগুলো বিভিন্ন মহলের স্বার্থ দেখে: ফরহাদ মজহার
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার; তিনি মনে করছেন, নানা মহলের স্বার্থ দেখায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও মতৈক্য হবে না।
আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক গোলটেবিল আলোচনায় ঐকমত্য কমিশন, সংস্কার প্রস্তাবসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন তিনি। বর্তমান সংবিধান মেনে শপথ নেওয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমালোচনা করেন তিনি আগের মতোই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত এ আলোচনায় ফরহাদ মজহার বলেন, ‘সাংবিধানিকভাবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার অবৈধ। এই সরকারের কোনো এখতিয়ার নাই জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তৈরি করার। এই সরকারের কোনো এখতিয়ারই নাই কোনো কমিশন তৈরি করার। কারণ, এটা ইলিগ্যাল গভর্নমেন্ট।’
ছাত্র–জনতার যে অভ্যুত্থানে গত বছর শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে, তাতে নেতৃত্ব দেওয়া অনেক তরুণই ফরহাদ মজহারের চিন্তার অনুসারী বলে মনে করা হয়। অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন বঙ্গভবনে শপথ নিয়েছিল, তখনই তার সমালোচনা করেছিলেন তিনি।
‘নভেম্বর থেকে জুলাই: বিপ্লব থেকে বিপ্লবে’ শিরোনামের আজকের গোলটেবিলেও তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার সংবিধানে যদি আপনি শপথ করেন, আপনি রক্ষা করেন, তাহলে এটা রক্ষা করতে হবে। এটাকে আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন না, সংস্কার করতে পারবেন না।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ‘সম্পূর্ণ গণবিরোধী’ প্রস্তাব ছিল মন্তব্য করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘এটাতে যারা পার্টিসিপেট করেছে, এরা গণবিরোধী। কারণ, আমাদের তো গণঐক্য ছিল। আমরা যে গণ–অভ্যুত্থান করেছি গণঐক্যের ভিত্তিতে, কোনো দল, দলের ভিত্তিতে করি নাই। এটাই ছিল এই আন্দোলনের বিউটি।’
অন্তর্বর্তী সরকার যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করেছে, সেই কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর যে সুপারিশ করেছে, তাতে নানা বিষয়ে বিভেদ দেখা দিয়েছে।
তা নিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘তাঁরা কখনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারবে না। কারণ, রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন করপোরেশনের বিভিন্ন স্বার্থকে রক্ষা করে।’
সংস্কারের বিষয়গুলো নিয়ে দেশের সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে আলোচনা না করার সমালোচনা করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘সংস্কার নিয়ে আলোচনা করেছেন লুটেরা মাফিয়া শ্রেণির সঙ্গে। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে। জনগণের সঙ্গে না। কোনো গণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও না। নারীদের সঙ্গে করেছে? করেনি। তো কার সঙ্গে করেছে?’
ফরহাদ মজহার মনে করেন, গণ–অভ্যুত্থানের পর উচিত ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য অথবা শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার শপথ নেওয়া। সেটা না করে তারা ‘মারাত্মক ভুল’ করেছে।
গোলটেবিল আলোচনায় ফরহাদ মজহারের পাশেই বসে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তৎকালীন সমন্বয়ক, বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। তখনকার ভুল স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালানোর এক ঘণ্টা, দুই ঘণ্টাও বোধ হয় হয়নি, আমাদের রাজনৈতিক নেতারা এস্টাবলিশমেন্টের কোলে উঠে গেছেন। তো তরুণ হিসেবে আমাদেরও ভুল আছে, আমরা ২৫-২৬ বছরের কয়েকজন তরুণ ছিলাম পলিসি মেকিংয়ের দায়িত্বে। কিন্তু যখন আমাদের অগ্রজেরা এস্টাবলিশমেন্টকে গিয়ে দায়িত্ব দিয়ে আসেন, যে আপনারা একটা অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেন, তখন আমাদের হাতে আসলে খুব বেশি কিছু থাকে না।’
ফরহাদ মজহার সেই ভুল শুধরে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘৫ আগস্ট আমরা ভুল করেছি। তো কী হয়েছে? আমরা আবার ঠিক করব।’ বিদ্যমান সংবিধানকে বাতিল করতে দ্রুত সময়ে গণপরিষদ গঠন করার কথা বলেন তিনি।
এই আলোচনায় এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় এমন অনেক দল ছিল, যারা অনুভব করতে পারছিল না, চব্বিশের জুলাইয়ে দেশে অনেক বড় একটা ঘটনা ঘটেছে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদের সঞ্চালনায় এই বৈঠকে অংশ নেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম, কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন, পুসাবের স্থায়ী কমিটির সদস্য ফাহমিদুর রহমান, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট মোহাম্মদ সজল প্রমুখ।