বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনের প্রতি সমর্থন ও সংহতি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। একই সঙ্গে ১২ অক্টোবর আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীদের ওপর পুলিশি হামলার নিন্দা জানিয়েছে সংগঠনটি।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে শিক্ষক নেটওয়ার্ক বলেছে, ইউনেসকোর সুপারিশ অনুযায়ী বাংলাদেশ কখনোই ৫ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষা বরাদ্দ দেয়নি। চব্বিশের গণ–আন্দোলনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার শিক্ষায় বরাদ্দ আগের চেয়েও কমিয়েছে। সরকার ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করলেও সেখানে শিক্ষা সংস্কারে কোনো কমিশন নেই।

শিক্ষকদের দাবির প্রতি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো (শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়) ইতিবাচক মনোভাব পোষণ না করলে তা নতুন রাজনৈতিক সংকট তৈরি করবে বলে সতর্ক করেছে শিক্ষক নেটওয়ার্ক। বিবৃতিতে বলা হয়, শিক্ষক নেটওয়ার্ক মনে করে, শিক্ষক–কর্মচারীদের উত্থাপিত তিনটি দাবি ন্যায্য। অবিলম্বে দাবিগুলো মেনে নেওয়ার জন্য সরকারকে আহ্বান জানায় শিক্ষকদের সংগঠনটি।

শিক্ষকদের তিনটি দাবি হলো মূল বেতনের ২০ শতাংশ (ন্যূনতম ৩ হাজার টাকা) বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা দেড় হাজার টাকা করা এবং কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ বাড়ানো।

এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীদের দাবিদাওয়া বর্তমান সময়ের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট ও মূল্যস্ফীতিতে জীবনযাপনের জন্য অতি সামান্য বলে মনে করে শিক্ষক নেটওয়ার্ক। আন্দোলনরত শিক্ষক–কর্মচারীদের প্রতি বৈষম্য চলছে উল্লেখ করে তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা যেখানে মূল বেতনের ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ বাড়িভাড়া পান, সেখানে বেসরকারি শিক্ষকেরা হাজার টাকা বরাদ্দ পান।

এই ব্যবস্থাকে বেসরকারি শিক্ষকদের প্রতি অবমাননা বলে মনে করে শিক্ষক নেটওয়ার্ক। বিবৃতিতে তারা বলেছে, এই ব্যবস্থা পুরো জাতির জন্য লজ্জাজনক। যার কারণে শিক্ষকেরা শিক্ষকতায় পূর্ণ মনোযোগী থাকতে পারেন না। প্রাইভেট পড়ানো-কোচিং থেকে শুরু করে দলীয় রাজনীতিসহ অন্যান্য অশিক্ষকসুলভ কাজে জড়াচ্ছেন।

বিবৃতিতে শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি দাবি তুলে ধরা হয়েছে। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে চলতি অর্থবছরে শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ১০ শতাংশ বৃদ্ধি এবং আগামী অর্থবছরে আরও ১০ শতাংশ বাড়ানোর নিশ্চয়তা প্রদান, চিকিৎসা ভাতা ন্যূনতম দেড় হাজার টাকা নির্ধারণ এবং উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশে উন্নীত করা।

এ ছাড়া আগামী অর্থবছর থেকে শিক্ষা খাতে জিডিপির ৩ শতাংশ বরাদ্দ নিশ্চিত করা এবং তা পর্যায়ক্রমে ৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে শিক্ষক নেটওয়ার্ক। একই সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীদের ওপর পুলিশি নির্যাতনের তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ক ষকদ র বর দ দ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ব্যবসা-বাণিজ্যে কমলেও ভোক্তাঋণে বড় প্রবৃদ্ধি কেন

দেশের ব্যাংক খাতে পুরোনো ঋণ কমবেশি পরিশোধ হচ্ছে, কিন্তু নতুন ঋণ বিতরণ কমে গেছে। বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্য, নির্মাণ ও পরিবহনসহ প্রায় সব উৎপাদনমুখী খাতে ব্যাংকঋণের স্থিতি কমেছে। এতে বেসরকারি বিনিয়োগে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বহু কারখানা বন্ধ হয়েছে। ফলে অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের সেপ্টেম্বর শেষে সব মিলিয়ে চলতি বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে ৬ দশমিক ২৯ শতাংশে নেমে এসেছে, যা গত ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

তবে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ উৎপাদনমুখী খাতগুলোর অবস্থা খারাপ হলেও ভোক্তা ঋণ বাড়ছে দ্রুতগতিতে। গত জুনে ভোক্তা ঋণে ২৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। মানুষ সংসার চালাতে ব্যক্তিগত ঋণের ওপর নির্ভর করছেন, পাশাপাশি ক্রেডিট কার্ডে ব্যয়ও বাড়ছে। গাড়ি ও বাড়ি কেনার ঋণেও কিছুটা প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

এ নিয়ে ব্যাংকাররা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। কেউ বলছেন ভোক্তাঋণে খেলাপির হার তুলনামূলক কম, তাই ব্যাংকগুলো এই খাতে নজর বাড়িয়েছে। ফলে ব্যক্তিগত ঋণ ও ক্রেডিট কার্ডে ঋণ বাড়ছে নিয়মিত। আবার কেউ মনে করেন, ঋণ বাড়ার পাশাপাশি আদায় না হওয়ায় স্থিতি বেড়েছে। আগের নিয়মে দুই বছর খেলাপি না হলে ঋণ অবলোপন করা যেত না, এখন তা করা যাচ্ছে। এতে হিসাবের স্থিতি বাড়লেও প্রবৃদ্ধি সামনের ডিসেম্বরে কমে আসতে পারে।

বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকার ব্যক্তিগত ঋণ, ৬০ লাখ টাকার গাড়িঋণ এবং ২ কোটি টাকার আবাসন ঋণ নিতে পারেন। এগুলো মিলেই ব্যাংক খাতে ভোক্তা ঋণের হিসাব করা হয়। এসব ঋণের সুদহার এখন ১১ থেকে ১৪ শতাংশ। তবে ক্রেডিট কার্ডে সুদের হার ২৫ শতাংশ পর্যন্ত পড়ে।

ভোক্তাঋণ পরিস্থিতি

গত জুন শেষে দেশে মোট ভোক্তাঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৭২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, যা মোট ব্যাংকঋণের প্রায় ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ। এ সময় মোট ব্যাংকঋণ ছিল ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা। গত মার্চ পর্যন্ত ভোক্তাঋণের প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশের নিচে থাকলেও জুনে তা বেড়ে ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

**বেসরকারি খাতে ঋণে ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি। **বিনিয়োগে স্থবিরতা, তবে গাড়ি-বাড়ি-ব্যক্তিগত ঋণে প্রবৃদ্ধি। **মোট ভোক্তা ঋণ দাঁড়িয়েছে ১.৭৩ লাখ কোটি টাকায়। **ক্রেডিট কার্ডে ২৫%, ব্যক্তিগত ঋণে ১১-১৪% সুদ।

২০২৪ সালের জুনে ভোক্তাঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা, যা মোট ব্যাংকঋণের ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। তখন মোট ব্যাংকঋণের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৪৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। ব্যাংকিং খাতে ভোক্তাঋণের এমন প্রবৃদ্ধি আগে দেখা যায়নি। ব্যাংকাররা বলছেন, মূলত গত বছরের একই সময়ে কম প্রবৃদ্ধি থাকায় এবার প্রবৃদ্ধিটা হঠাৎ বেশি দেখাচ্ছে। পাশাপাশি ব্যক্তিগত ঋণ, ফ্ল্যাট ও গাড়ির চাহিদাও বাড়ছে। যদিও ব্যবসায়িক ঋণ খাতে মন্দা অব্যাহত।

এ ছাড়া ব্যাংকগুলো এখন অন্য ব্যাংকের ঋণ অধিগ্রহণে কম সুদ দিচ্ছে। কারণ, এতে নথিপত্র যাচাই প্রক্রিয়া সহজ হয়। ভালো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা গ্রাহকদের ক্ষেত্রেও ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয় দ্রুত।

টাকা যাচ্ছে কোথায়

ব্যাংকারদের মতে, চলতি বছরে গাড়ি বিক্রি বেড়েছে। ফলে ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক উভয় ধরনের গাড়ি আমদানি বাড়ছে। ক্রেডিট কার্ড এবং ব্যক্তিগত ঋণেও প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। মোটরসাইকেল বিক্রিও আগের তুলনায় বেড়েছে, যার একটি বড় অংশ এসেছে ব্যাংকের ভোক্তাঋণ থেকে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে বাণিজ্যিক পণ্যবাহী গাড়ি সবচেয়ে বেশি আমদানি হয়েছিল ২০২১-২২ অর্থবছরে, যা সংখ্যায় ২৮ হাজার ৮৯৭টি। পরের দুই অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় যথাক্রমে ১২ হাজার ৯৩৯ ও ১২ হাজার ৮১০টি। তবে সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আবার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ হাজার ১৯৭টিতে। এই অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয় ১১ শতাংশ।

গাড়ি আমদানি বাড়ার সঙ্গে নিবন্ধনও বাড়ছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে প্রতি মাসে গড়ে ১ হাজার ৮২৭টি গাড়ি নিবন্ধন হয়েছিল, এরপর তা কমে যায়। তবে গত দুই বছর ধরে আবার ধীরে ধীরে বাড়ছে। ২০২৪ সালে মাসে গড়ে নিবন্ধন হয় ৯৫৪টি। চলতি বছর তা বেড়ে মাসে ১ হাজার ২০০টিতে দাঁড়িয়েছে।

কোন ব্যাংক কী করছে

ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও ঢাকা ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক ভোক্তাঋণ বিতরণে গুরুত্ব দিচ্ছে। এর মধ্যে সিটি ব্যাংক চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার ভোক্তাঋণ বিতরণ করেছে। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটি মাসে গড়ে ৬০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে, যা ২০২৩ ও ২০২৪ সালের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি। এই প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে বিকাশের সঙ্গে সিটি ব্যাংকের চালু করা অতিক্ষুদ্র ঋণ। পাশাপাশি আবাসন ও গাড়িঋণও দ্বিগুণ বেড়েছে।

ব্র্যাক ব্যাংকের ভোক্তাঋণের প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৫ শতাংশ। ব্যাংকটির ভোক্তাঋণের স্থিতি এখন ১২ হাজার কোটি টাকা। এর ডিএমডি মো. মাহীয়ুল ইসলাম বলেন, ‘এখন ব্যক্তিগত ঋণে ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। সামনে আমরা আবাসন ঋণে জোর দেব। এই ঋণ অন্যান্য ঋণের তুলনায় নিরাপদ।’

ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক ব্যক্তিগত ও আবাসন ঋণের পাশাপাশি ক্রেডিট কার্ডে জোর দিচ্ছে। প্রতি মাসে তাদের নেটওয়ার্কে প্রায় ৫ হাজার নতুন ক্রেডিট কার্ড গ্রাহক যুক্ত হচ্ছে। ফলে ব্যাংকটির ভোক্তাঋণ বিতরণ বেড়ে মাসে প্রায় ৪০০ কোটি টাকায় উঠেছে। ব্যাংকটির ডিএমডি আবেদুর রহমান সিকদার বলেন, ‘আমরা আবাসন ও ব্যক্তিগত ঋণে বেশি নজর দিচ্ছি। পাশাপাশি ক্রেডিট কার্ডে নানা সুবিধা যুক্ত করায় গ্রাহক বাড়ছে।’

ঢাকা ব্যাংকের রিটেইল ঋণেও প্রবৃদ্ধি এসেছে। ব্যাংকটির রিটেইল বিজনেস প্রধান এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘চলতি বছরে গাড়ি ও ক্রেডিট কার্ডের ঋণ দ্বিগুণ হয়েছে। গৃহঋণ আগের মতো রয়েছে, ব্যক্তিগত ঋণ বেড়েছে ৫ শতাংশ।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বড়পুকুরিয়ার কয়লা বিক্রি করে মুনাফা করছে খনি, কিনে লোকসানে বিদ্যুৎেকন্দ্র
  • বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে, দেশে সুফল কম
  • রাজশাহীতে সাংবাদিকদের আটকে রাখার হুমকি দেওয়া যুবশক্তির দুই নেতাকে অব্যাহতি
  • সাদিক কায়েম সাইবার মামলা করায় ছাত্রদলের নিন্দা
  • আরো বাড়ল স্বর্ণের দাম, মঙ্গলবার থেকে কার্যকর
  • নভেম্বরে দেশে এসেছে ২৮৯ কোটি ডলার প্রবাসী আয়
  • নানা আয়োজনে মোংলা বন্দরের প্লাটিনাম জয়ন্তী উদ্‌যাপন
  • ব্যবসা-বাণিজ্যে কমলেও ভোক্তাঋণে বড় প্রবৃদ্ধি কেন