সুন্দরবন-সংলগ্ন বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার মোংলা নদী দিয়ে লোকালয়ে একটি মৃত কুমির ভেসে এসেছে। আজ রোববার সকালে জোয়ারের সময় মোংলা নদীর শাখা খাল নারকেলতলার স্লুইসগেটের কাছে কুমিরটিকে ভাসতে দেখেন স্থানীয় লোকজন। তবে দুপুরের দিকে ভাটা শুরু হলে কুমিরটিকে আর দেখা যাচ্ছিল না।

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় পরিবেশকর্মী মো.

হাছিব সরদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কুমিরটি জোয়ারের সঙ্গে ভেসে আসে। আমরা দেখি এটি উল্টো হয়ে আছে। একটি পা বিচ্ছিন্ন এবং গলা ও সামনের দুই পায়ে রশি বাঁধা। এটি বেঁধে মেরে ফেলা হয়েছে, নাকি জালের রশিতে বাঁধা পড়েছিল, তা তদন্ত হওয়া দরকার।’ তিনি বলেন, মৃত কুমিরটি দেখতে নারকেলতলা স্লুইসগেট এলাকায় ভিড় লেগে যায়। তবে দুপুরে ভাটা শুরু হওয়ার পর কুমিরটিকে আর সেখানে দেখা যাচ্ছে না। ভেসে হয়তো অন্য কোথাও চলে গেছে।

মোংলা নদীর পশ্চিমে পশুর নদ। সুন্দরবনের অন্যতম প্রধান এই নদের পাড়েই মোংলা সমুদ্রবন্দর। জোয়ারের সময় স্রোতে কুমিরটি মোংলা নদী থেকে নারকেলতলা খালের মুখে চলে আসে। তবে সেখানে স্লুইসগেট থাকায় খাল দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। স্থানীয় লোকজনের ধারণা, কুমিরটি সুন্দরবনের। নদীতে চলাচলকারী নৌযান বা বাণিজ্যিক জাহাজের ধাক্কা কিংবা প্রপেলারের আঘাতে কুমিরটির মৃত্যু হতে পারে। গলায় রশি বাঁধা থাকায় অনেকে আবার কুমিরটিকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন।

সম্প্রতি সুন্দরবনে কাঁকড়া শিকার করতে গিয়ে কুমিরের আক্রমণে এক জেলের মৃত্যু হয়েছে। বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার বুড়িরডাঙ্গা গ্রামেও বেশ কয়েক দিন ধরে কুমিরের আতঙ্ক বিরাজ করছে। সেখানকার পুকুর ও মৎস্যঘেরও বিগত কয়েক দিন ধরে একটি বড় কুমির দেখা গেছে।

মোংলা শহরের বাসিন্দা এম এম ফিরোজ প্রথম আলোকে বলেন, কিছুদিন ধরেই মোংলার বিভিন্ন এলাকায় কুমিরের আতঙ্ক বিরাজ করছিল। খাল দিয়ে কুমির আসছে, পুকুর-ঘেরে কুমির দেখা গেছে—এমন খবরের মধ্যে আজ সকালে একটা মৃত কুমির ভেসে আসার খবর পান। খবর পেয়ে তাঁরা স্লুইসগেট এলাকায় গিয়ে মৃত কুমিরটিকে ভাসতে দেখেন। পেছনের দুটি পায়ের একটি বিচ্ছিন্ন ছিল। গলার দিকে দড়ি বাঁধা ছিল। কুমিরটিকে হত্যা করা হয়েছি কি না স্পষ্ট নয়। প্রকৃত কারণ উদ্‌ঘাটন করা উচিত।

কুমিরের মরদেহ ভাসার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান সুন্দরবনের করমজল বন্য প্রাণী প্রজননকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির। দুপুরে তিনি সেখানে গিয়ে আর সেটি দেখতে পাননি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছি। স্থানীয়দের কাছ থেকে জেনেছি, জোয়ারের সময় কুমিরটি দেখা গিয়েছিল, এখন আর নেই। হয়তো ভাটির দিকে স্রোতে ভেসে গেছে। আমরা কুমিরটির খোঁজ করছি। আশপাশের নদীতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ল ইসগ ট স ন দরবন খবর প

এছাড়াও পড়ুন:

লোনাপানির সুন্দরবনের নিচে লুকিয়ে আছে মিঠাপানির ভান্ডার

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে পানি মানেই একরাশ তিক্ততার গল্প। নোনাজল, আর্সেনিক দূষণ, নদীর লবণাক্ততার বিস্তার—সব মিলিয়ে এই অঞ্চলের মানুষ বছরের বেশির ভাগ সময়ই নিরাপদ পানির সংকটে ভোগেন। খুলনা, সাতক্ষীরা আর বাগেরহাটজুড়ে চিংড়িঘের, ভাঙন, খরা ও লবণাক্ত নদীর পানি যেন জীবনের স্থায়ী সঙ্গী।

এই বাস্তবতার মধ্যে আন্তর্জাতিক একদল গবেষকের নতুন দাবি যেন উপকূলের বুকেই এক অচেনা আশার ঝরনা বইয়ে দিয়েছে। তাঁদের গবেষণায় দেখা গেছে, মাটির বহু গভীরে লুকিয়ে আছে দুটি বিশাল মিঠাপানির ভান্ডার। হাজার বছর আগের সেই পানি আজও প্রায় অক্ষত অবস্থায় টিকে আছে।

গবেষণাটি গত শুক্রবার খ্যাতনামা বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার কমিউনিকেশনসে প্রকাশিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, নিউ মেক্সিকো ইনস্টিটিউট অব মাইনিং অ্যান্ড টেকনোলজি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা খুলনা শহর থেকে সুন্দরবনের দক্ষিণ সীমানা পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আধুনিক ভূ-তড়িৎ-চৌম্বকীয় প্রযুক্তি, ম্যাগনেটোটেলুরিক ব্যবহার করে ভূগর্ভের অভ্যন্তরীণ গঠন পরীক্ষা করেন।

সুন্দরবনে প্যালিও ওয়াটারের দুটি উৎস পাওয়া গেছে। প্যালিও ওয়াটার হলো প্রাচীন ভূগর্ভস্থ জল, যা হাজার বছরের বেশি সময় ধরে আটকে থাকে। এটি প্রাচীন সুন্দরবনের বয়স ও গঠনের ধারণাকে আরও প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। ইসমে আজম, সুন্দরবনবিষয়ক লেখক ও গবেষক

গবেষকদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, খুলনার উত্তরের অংশে প্রায় ২০০ থেকে ৮০০ মিটার গভীরে বিস্তৃত আছে বিশাল এক মিঠাপানির স্তর। এটি প্রায় ৪০ কিলোমিটার বিস্তৃত এবং পানির লবণাক্ততা এত কম যে সরাসরি মিঠাপানি হিসেবে চিহ্নিত করা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই পানি তৈরি হয়েছিল শেষ বরফযুগে, যখন সমুদ্রপৃষ্ঠ আজকের তুলনায় প্রায় ১২০ মিটার নিচে ছিল। তখন নদীগুলো গভীর উপত্যকা তৈরি করে সমুদ্রের দিকে ছুটে যেত এবং সেই বালুমিশ্রিত নদীপথে প্রবেশ করা বৃষ্টির পানি হাজার বছর ধরে ভূগর্ভে সঞ্চিত থাকত।

সুন্দরবনের ভেতরে পাওয়া গেছে দ্বিতীয় আরেকটি মিঠাপানির ভান্ডার। এটি আকারে তুলনামূলক ছোট এবং গভীরতাও কম, কিন্তু লবণাক্ততার মাত্রা এতটাই নিচে যে এ অঞ্চলেও নিরাপদ পানির আরেকটি সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। এই দুটি ভান্ডারের মাঝখানে আছে একটি প্রশস্ত লবণাক্ত পানির স্তর, যা গঙ্গার প্রাচীন নদীখাত ভরাট হয়ে তৈরি হয়েছে। বরফযুগের পর সমুদ্রপৃষ্ঠ বাড়তে শুরু করলে এই এলাকাগুলো লবণাক্ত কাদা-মাটিতে ঢেকে যায় এবং এখন তা স্থায়ী লবণাক্ত স্তর হিসেবে ভূগর্ভে রয়ে গেছে।

গুগল স্যাটেলাইট মানচিত্রে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিলুপ্তির পথে সুন্দরী হাঁস
  • সুন্দরবনের গল্প নিয়ে আসছেন শ্বেতা
  • লোনাপানির সুন্দরবনের নিচে লুকিয়ে আছে মিঠাপানির ভান্ডার