মোংলা নদী দিয়ে লোকালয়ে ভেসে এল মৃত কুমির
Published: 19th, October 2025 GMT
সুন্দরবন-সংলগ্ন বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার মোংলা নদী দিয়ে লোকালয়ে একটি মৃত কুমির ভেসে এসেছে। আজ রোববার সকালে জোয়ারের সময় মোংলা নদীর শাখা খাল নারকেলতলার স্লুইসগেটের কাছে কুমিরটিকে ভাসতে দেখেন স্থানীয় লোকজন। তবে দুপুরের দিকে ভাটা শুরু হলে কুমিরটিকে আর দেখা যাচ্ছিল না।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় পরিবেশকর্মী মো.
মোংলা নদীর পশ্চিমে পশুর নদ। সুন্দরবনের অন্যতম প্রধান এই নদের পাড়েই মোংলা সমুদ্রবন্দর। জোয়ারের সময় স্রোতে কুমিরটি মোংলা নদী থেকে নারকেলতলা খালের মুখে চলে আসে। তবে সেখানে স্লুইসগেট থাকায় খাল দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। স্থানীয় লোকজনের ধারণা, কুমিরটি সুন্দরবনের। নদীতে চলাচলকারী নৌযান বা বাণিজ্যিক জাহাজের ধাক্কা কিংবা প্রপেলারের আঘাতে কুমিরটির মৃত্যু হতে পারে। গলায় রশি বাঁধা থাকায় অনেকে আবার কুমিরটিকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন।
সম্প্রতি সুন্দরবনে কাঁকড়া শিকার করতে গিয়ে কুমিরের আক্রমণে এক জেলের মৃত্যু হয়েছে। বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার বুড়িরডাঙ্গা গ্রামেও বেশ কয়েক দিন ধরে কুমিরের আতঙ্ক বিরাজ করছে। সেখানকার পুকুর ও মৎস্যঘেরও বিগত কয়েক দিন ধরে একটি বড় কুমির দেখা গেছে।
মোংলা শহরের বাসিন্দা এম এম ফিরোজ প্রথম আলোকে বলেন, কিছুদিন ধরেই মোংলার বিভিন্ন এলাকায় কুমিরের আতঙ্ক বিরাজ করছিল। খাল দিয়ে কুমির আসছে, পুকুর-ঘেরে কুমির দেখা গেছে—এমন খবরের মধ্যে আজ সকালে একটা মৃত কুমির ভেসে আসার খবর পান। খবর পেয়ে তাঁরা স্লুইসগেট এলাকায় গিয়ে মৃত কুমিরটিকে ভাসতে দেখেন। পেছনের দুটি পায়ের একটি বিচ্ছিন্ন ছিল। গলার দিকে দড়ি বাঁধা ছিল। কুমিরটিকে হত্যা করা হয়েছি কি না স্পষ্ট নয়। প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করা উচিত।
কুমিরের মরদেহ ভাসার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান সুন্দরবনের করমজল বন্য প্রাণী প্রজননকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির। দুপুরে তিনি সেখানে গিয়ে আর সেটি দেখতে পাননি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছি। স্থানীয়দের কাছ থেকে জেনেছি, জোয়ারের সময় কুমিরটি দেখা গিয়েছিল, এখন আর নেই। হয়তো ভাটির দিকে স্রোতে ভেসে গেছে। আমরা কুমিরটির খোঁজ করছি। আশপাশের নদীতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ল ইসগ ট স ন দরবন খবর প
এছাড়াও পড়ুন:
সমুদ্র থেকে ভেসে আসা প্লাস্টিকে দূষিত সুন্দরবন
বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ সুন্দরবন এখন সমুদ্র থেকে ভেসে আসা প্লাস্টিক বর্জ্যে বিপর্যস্ত। বঙ্গোপসাগরের ঢেউয়ে ভেসে আসা বোতল, পলিথিন, প্যাকেট ও প্লাস্টিক সামগ্রী জমে থাকছে বনের বিভিন্ন খাল, চর ও তীরবর্তী এলাকায়। ফলে শুধু বনাঞ্চলের সৌন্দর্যই নষ্ট হচ্ছে না, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রাণী ও পুরো বনের বাস্তুতন্ত্র।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সুন্দরবনকে প্লাস্টিকমুক্ত রাখতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ। ইতোমধ্যে তারা পূর্ব সুন্দরবনের ডিমের চর ও কচিখালী এলাকায় শুরু করেছে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম।
আরো পড়ুন:
সুন্দরবনে দস্যুদের আস্তানা থেকে ৪ জেলে উদ্ধার
সুন্দরবনে কুমিরের আক্রমণে জেলে নিহত
সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “বনের বিভিন্ন স্থানে পরিদর্শনে গিয়ে দেখি, সমুদ্র তীরবর্তী এলাকাগুলোতে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য জমে আছে। এগুলো পরিবেশ এবং বনের প্রাণীদের জন্য ভয়াবহ হুমকি।”
তিনি বলেন, “ডিমের চর ও কচিখালীর সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় বনকর্মীরা চলতি মাসের শুরুতে প্লাস্টিক অপসারণ করেছেন। প্রতি মাসের প্রথম তিন দিনের যেকোনো একদিন বন বিভাগের কর্মীরা বনের অন্য এলাকাগুলোতেও প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণের কাজ করবেন। এসব সংগ্রহ করা বর্জ্য খুলনায় নিয়ে রিসাইকেল করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এতে একদিকে বন পরিচ্ছন্ন থাকবে, অন্যদিকে পরিবেশও কিছুটা সুরক্ষিত থাকবে।”
বঙ্গোপসাগরে চলাচলকারী জাহাজ, ট্রলার ও পর্যটকবাহী নৌযান থেকে ফেলা বর্জ্যই মূলত সমুদ্রপথে ভেসে সুন্দরবনে ঢুকছে। জোয়ারের পানিতে এসব বর্জ্য মাইলের পর মাইল ছড়িয়ে পড়ে।
সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করা সংগঠন সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশন-এর চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, “সমুদ্রগামী জাহাজগুলো থেকে বিপুল পরিমাণে বর্জ্য ফেলার কারণে তা সমুদ্রের পানিতে ভেসে সুন্দরবনসহ উপকূলীয় এলাকায় প্রবেশ করছে। এই বর্জ্য মানবদেহের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি এটি সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতিকেও মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত করছে। মাছের শরীরে এই বর্জ্য প্রবেশ করে তা মানবদেহে পৌঁছে বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।”
তিনি মনে করেন, “সমুদ্রগামী জাহাজগুলোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কঠোর মনিটরিং প্রয়োজন। পাশাপাশি পর্যটকবাহী নৌযানগুলোতে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা জরুরি।”
বন বিভাগ জানিয়েছে, সুন্দরবনকে প্লাস্টিকমুক্ত রাখার এই উদ্যোগে স্থানীয় জনগণ, পরিবেশবাদী সংগঠন ও পর্যটকদের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সচেতনতা বৃদ্ধি ও নিয়মিত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে এই বিশাল জীববৈচিত্র্যমণ্ডিত বনকে দূষণমুক্ত রাখার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
ঢাকা/শহিদুল/মাসুদ