ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ‘যদি আমার অফিসারদের মনোবল ঠিক না থাকে, ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধ লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, ঠিক সেভাবে আবার পাহারা দিতে হবে।’

আজ বৃহস্পতিবার সকালে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে সাজ্জাত আলী এ কথা বলেন।

সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো.

সাজ্জাত আলী। তিনি বলেন, ‘পুলিশ যখন একটি অরাজকতা ঠেকানোর, প্রতিহতের চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে কী ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে? অত্যন্ত দুঃখজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে আপনারা খারাপ ব্যবহার করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না। আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যে কাজটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকা শহরে, দেশে একটা অরাজকতাপূর্ণ পরিবেশের সৃষ্টি হবে।’

সাজ্জাত আলী বলেন, একটি গণ-অভ্যুত্থান হয়ে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তা সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে। এ জন্যই পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত, সচেতন মানুষের কাছ থেকে তাঁরা আশা করেন না।

পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্যের আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শেখ মো. সাজ্জাত আলী। তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে আমার সদস্যদের মনোবল ভেঙে যায় এবং এই পরিস্থিতির ক্ষতি সবাইকেই ভোগ করতে হয়। যদি আমার অফিসারদের মনোবল ঠিক না থাকে, ৫ আগস্টের পরে যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধ লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, ঠিক সেভাবে আবার পাহারা দিতে হবে।’

সাজ্জাত আলী বলেন, যাঁরা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছেন, তাঁদের কাছে অনুরোধ, এই কাজ করবেন না।

গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ‘এটা পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটা দেশের আইন। আইন আমি বানাই না, পার্লামেন্ট বানায়। আপনারা আইনটা দেখেন। পুলিশের কাজের আইনে যা বলা আছে, আমি শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’

দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে বলে জানান সাজ্জাত আলী। তিনি বলেন, নতুন সাইবার সাপোর্ট সেন্টারে থাকবে আধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ও ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই–মেইল ও ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানানোর সুযোগ পাবেন। লক্ষ্য হলো, প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করা।

শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বেলিং—এসব অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে গভীরভাবে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়াচ্ছে।

নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে বলে উল্লেখ করেন সাজ্জাত আলী। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানে বিশেষ উদ্যোগ থাকবে। হয়রানির শিকার হলে যাতে দ্রুত সহায়তা পাওয়া যায়, সেটাই হবে অন্যতম অঙ্গীকার।

সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় বলে উল্লেখ করেন ডিএমপি কমিশনার। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়তে সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ল শ সদস য স জ জ ত আল ড এমপ

এছাড়াও পড়ুন:

৪৩তম বিসিএস: চাকরি হারালেন তিন সহকারী কমিশনার, প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ নেই কারণ

বনিয়াদি প্রশিক্ষণরত বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের তিন শিক্ষানবিশ সহকারী কমিশনারকে সরকারি চাকরি থেকে অপসারণ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। গতকাল বুধবার জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে তাঁদের নিয়োগের অবসান ঘটানো হয়। তাঁরা তিনজন হলেন কাজী আরিফুর রহমান (ফরিদপুর), অনুপ কুমার বিশ্বাস (বগুড়া) ও নবমিতা সরকার (পিরোজপুর)। তাঁরা নিজ নিজ জায়গায় সহকারী কমিশনার হিসেবে কর্মরত থাকার পাশাপাশি সাভারের লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বনিয়াদি প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৮১–এর বিধি ৬(২)(এ) অনুযায়ী তাঁদের সরকারি চাকরি থেকে অবসান করা হয়েছে। ওই বিধি অনুসারে, শিক্ষানবিশির মেয়াদে কোনো কর্মকর্তাকে ‘সরকারি চাকরিতে বহাল থাকার অযোগ্য’ মনে হলে সরকারি কর্ম কমিশনের পরামর্শ ছাড়াই নিয়োগ বাতিল করা যায়।
তবে কোন কারণ দেখিয়ে তিন সহকারী কমিশনারকে অযোগ্য বিবেচনা করা হয়েছে, প্রজ্ঞাপনে সেটি উল্লেখ নেই।

এ ছাড়া তিন সহকারী কমিশনারের কাছে সরকারের কোনো আর্থিক পাওনা থাকলে পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি অ্যাক্ট, ১৯১৩ অনুযায়ী তা আদায়যোগ্য হবে বলে জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুনসহকারী শিক্ষক পদে দ্বিতীয় ধাপে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, পদ ৪১৬৬১২ নভেম্বর ২০২৫

অপসারিত হওয়া কর্মকর্তাদের একজন কাজী আরিফুর রহমান আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বনিয়াদি প্রশিক্ষণ চলাকালে গতকাল বিকেলে আমাকে প্রজ্ঞাপনটি জানানো হয়। কোনো কারণ উল্লেখ নেই। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।’ তিনি জানান, সরকারি চাকরিতে এটি তাঁর প্রথম অভিজ্ঞতা নয়। এর আগে ৪১তম বিসিএসে রেলওয়ে ক্যাডারে প্রথম হয়েছিলেন তিনি এবং প্রায় দেড় বছর সরকারি চাকরিতে যুক্ত ছিলেন। পরে ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে ২০তম হয়ে উত্তীর্ণ হন। নিজের পারিবারিক পরিস্থিতির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। বাবা হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত। কারণ না জানিয়ে এভাবে অপসারণ করায় আমি ও আমার পরিবার মানসিকভাবে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছি।’

এ বিষয়ে জানতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এহছানুল হকের দপ্তরে ফোন করা হলে সেখানে থাকা এক কর্মকর্তা জানান, সচিব প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে রয়েছেন। ব্যক্তিগত মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হলেও এই প্রতিবেদন (বেলা সোয়া তিনটা) লেখা পর্যন্ত কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুনপ্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে বড় নিয়োগ, পদ ৪৮৩৭ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনওবামা ফাউন্ডেশনে ছয় মাসের লিডারশিপ প্রোগ্রাম, যেভাবে আবেদন৭ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ