জুলাই সনদ পাস হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কাঠামোয় পরিবর্তন আসতে পারে: শিশির মনির
Published: 20th, November 2025 GMT
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখায় আছে, সর্বশেষ সাবেক প্রধান বিচারপতি সরকারপ্রধান হবেন। যেহেতু এটি আগামী সংসদ থেকে কার্যকর হবে, তাই জুলাই সনদ পাস হলে সরকারের কাঠামোয় আমূল পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনির।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মামলার রায়ের পরে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে এ কথা বলেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের পক্ষে শুনানি করা জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
আরও পড়ুনতত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা পুনর্বহাল হওয়ায় দেশ গণতন্ত্রের মহাসড়কে হাঁটবে: অ্যাটর্নি জেনারেল৪৮ মিনিট আগেসংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে আনা ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে ১৪ বছর আগে দেওয়া রায় পুরোটাই বাতিল করেছেন আপিল বিভাগ। ওই রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল মঞ্জুর ও এ-সংক্রান্ত রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন নিষ্পত্তি করে আজ রায় দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। রায়ে বলা হয়, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার-সম্পর্কিত বিধানাবলি এই রায়ের মাধ্যমে পুনরুজ্জীবিত ও সক্রিয় করা হলো। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারসংক্রান্ত বিধানাবলি ভবিষ্যৎ প্রয়োগ যোগ্যতার ভিত্তিতেই কার্যকর হবে বলে রায়ে এসেছে।
শিশির মনির বলেন, জুলাই সনদ চারটি অপশন দিয়ে গণভোটে পাঠানো হচ্ছে। এই চার অপশন গণভোটে পাস হলে এবং নতুন সংসদের সংবিধান সংস্কার সভায় গৃহীত হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামোয় আমূল পরিবর্তন আসতে পারে। তবে এটা নির্ভর করবে জুলাই সনদ গণভোটে পাস হলো কি না, আর পাস হওয়ার পর সংবিধান সংস্কার পরিষদ তা গ্রহণ করবে কি না তার ওপর।
আরও পড়ুনএই রায়ে সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ প্রশস্ত হবে: বদিউল আলম মজুমদার২ ঘণ্টা আগেতত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চতুর্দশ সংসদ নির্বাচনের সময় থেকে কার্যকর হবে জানিয়ে শিশির মনির বলেন, রায়ে বলা হয়েছে, সংসদ ভেঙে যাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে। এখন যেহেতু সংসদ নেই, তাই এই বিধান আপাতত কার্যকর হবে না। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এটি কার্যকর হবে না। এটি ভবিষ্যতে কার্যকর হবে।
এই আইনজীবী বলেন, আজকের রায়ে বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে অতীতে দেওয়া রায় কলঙ্কিত ছিল।
রায়ের পর জামায়াতে ইসলামীর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে শিশির মনির বলেন, ৪১ বছর আগে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরাকারের প্রথম প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। অনেক জল ঘোলা হয়েছে, অসম্মান হয়েছে, অনেক মানুষের প্রাণ গেছে, গুম–খুনের শিকার হয়েছে, নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে।
এই আইনজীবী আরও বলেন, ৪১ বছর পরে আবার সবাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে। জামায়াত সে সময়ই বলেছিল—গণতন্ত্র, সুষ্ঠু নির্বাচন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা একটি থেকে আরেকটিকে আলাদা করা যাবে না।
আরও পড়ুনহাসিনা পালিয়ে যাওয়ায় বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পেরেছে: রুহুল কুদ্দুস১ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনতত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিধান পুনরুজ্জীবিত, কার্যকর ভবিষ্যতে৪ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ শ র মন র জ ল ই সনদ ব যবস থ ক সরক র সরক র র আইনজ ব প স হল
এছাড়াও পড়ুন:
নিউমুরিং টার্মিনাল পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি প্রক্রিয়া নিয়ে রুল শুনানি শুরু
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সম্পর্কিত প্রক্রিয়া প্রশ্নে রুলের ওপর পরবর্তী শুনানির জন্য আগামীকাল বৃহস্পতিবার দিন রেখেছেন হাইকোর্ট। শুনানি নিয়ে আজ বুধবার বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ পরবর্তী শুনানির এ দিন ধার্য করেন।
নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়ার বৈধতা করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ৩০ জুলাই হাইকোর্ট রুল দেন। এর ধারাবাহিকতায় এনসিটি পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডের চুক্তি সম্পর্কিত প্রক্রিয়ায় স্থিতাবস্থা চেয়ে সম্পূরক আবেদন দাখিল করে রিট আবেদনকারী পক্ষ। এই আবেদনের শুনানিতে ১৩ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল শুনানির জন্য ১৯ নভেম্বর দিন রাখেন। এ অনুসারে আজ মধ্যাহ্ন বিরতির পর শুনানি শুরু হয়।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম। শুনানির বিষয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) কর্তৃপক্ষের সমঝোতা স্মারক হয়। ২০১৫ সালের পিপিপি আইন ও ২০১৭ সালের জিটুজির নির্দেশিকা লঙ্ঘন করে এনসিটি পরিচালনার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দায়িত্ব দিতে চুক্তির প্রক্রিয়া চলছে। জিটুজি হচ্ছে সরকার টু সরকার। ডিপি ওয়ার্ল্ড সরকার নয়, একটি কোম্পানি। পিপিপি আইন অনুসারে এ ধরনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হলে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি বোর্ড অব গভর্নরস থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু বর্তমানে সংসদ না থাকায় সেই বোর্ড অব গভর্নরস অনুপস্থিত। মূল্যায়ন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রেও বোর্ড অব গভর্নরসের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আইন অনুসারে বোর্ড অব গভর্নরস না থাকার কারণে এ–সংক্রান্ত মূল্যায়ন কমিটি গঠনসহ নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ আইনসম্মত নয়।
এরপর রিটের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। রিট আবেদনকারীপক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও আইনজীবী আনোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আখতার হোসেন মো. আবদুল ওয়াহাব উপস্থিত ছিলেন।
নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ যুব অর্থনীতিবিদ ফোরামের পক্ষে সংগঠনটির সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসাইন চলতি বছর রিট করেন। রুলে দেশি অপারেটরদের (প্রতিষ্ঠান) অনুমতি না দিয়ে পিপিপি আইন ও নীতি লঙ্ঘন করে এনসিটি পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়া কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে যেকোনো অপারেটরকে এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব (নিযুক্ত) দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতি অনুসারে ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক পাবলিক বিডিং (দরপত্র আহ্বান) নিশ্চিত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয় রুলে। নৌসচিব, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এই রুলের ওপর আজ শুনানি শুরু হলো।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার নতুন দায়িত্ব নিয়েছে নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান চিটাগং ড্রাইডক লিমিটেড। টার্মিনালটি পরিচালনার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাইফ পাওয়ারটেকের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ৬ জুলাই দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে এ দায়িত্ব নেয় জাহাজ মেরামতের এ প্রতিষ্ঠান। প্রথমবারের মতো বন্দরে টার্মিনাল পরিচালনায় যুক্ত হলো চিটাগং ড্রাইডক।
চট্টগ্রাম বন্দরের বৃহৎ এই টার্মিনাল নির্মিত হয় ২০০৭ সালে। টার্মিনালটি নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি সংযোজনে বন্দর কর্তৃপক্ষ ধাপে ধাপে মোট ২ হাজার ৭১২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কনটেইনারের সিংহভাগ এই টার্মিনাল দিয়ে পরিবহন হয়।