সম্প্রতি ঢাকা ও চট্টগ্রামে পরপর কয়েকটি সংঘবদ্ধ খুন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই দৃশ্যের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় নাগরিকদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। আধিপত্য বিস্তার এবং চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মধ্যে যে বিরোধ, তার ফলেই এসব হত্যাকাণ্ড হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। খুনের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছে। কিন্তু রোগীর মৃত্যুর পর ডাক্তার পৌঁছানোর সেই চিরাচরিত গল্প শোনার চেয়ে সন্ত্রাসী ও ভাড়াটে খুনিদের বিরুদ্ধে ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেটাই নাগরিকদের মূল বিবেচনার বিষয়।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, গত সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকার মিরপুর ১২ নম্বরে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে মুখোশ পরা অস্ত্রধারীরা ঢুকে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে যুবদলের নেতা গোলাম কিবরিয়াকে। পুলিশের ভাষ্য, বিদেশে বসে শীর্ষ সন্ত্রাসী মফিজুর রহমান ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটান। এলাকায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় কিবরিয়াকে ব্যবহার করতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন মফিজুর। হত্যাকারীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালককে গুলি করে, একজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে স্থানীয় জনতা। যে মফিজুরের বিরুদ্ধে কিবরিয়া হত্যার অভিযোগ উঠেছে, তিনি যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। ২০২১ সালে গ্রেপ্তারের পর জামিনে বের হয়ে মালয়েশিয়া পালিয়ে যান। তাঁর বিরুদ্ধে অন্তত ২৭টি মামলা রয়েছে। এ রকম একজন দুর্ধর্ষ অপরাধীর জামিনে বের হয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়াটা আমাদের বিচার ও আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার দুর্বলতারই প্রতিফলন। 

এর আগে ১০ নভেম্বর পুরান ঢাকায় দিনদুপুরে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় পুলিশের তালিকায় থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে। খুনের মামলায় হাজিরা দিয়ে আদালত থেকে বের হওয়ার পর মোটরসাইকেলে করে আসা অস্ত্রধারীরা তাঁকে গুলি করে পালিয়ে যায়। ঢাকার অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধের জেরে পরিকল্পিতভাবে তাঁকে খুন করা হয়। এই খুনের সঙ্গে অপর শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজামুল ইসলাম ইমনের ঘনিষ্ঠদের নাম উঠে আসে।

৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর নির্বাচনী জনসংযোগে অংশ নেওয়া সারোয়ার হোসেনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ সাজ্জাত আলীর অনুসারী সারোয়ারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অস্ত্র, হত্যাসহ ১৫টি মামলা ছিল। মাইক্রোবাসে করে আসা সন্ত্রাসীরা খুব কাছ থেকে গুলি করে সারোয়ারকে হত্যা করে।

এর সব কটিই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসীদের এই বেপরোয়া খুন আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতাকেই তুলে ধরে। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের আগে–পরে কয়েকটি কারাগার থেকে অপরাধীরা পালিয়ে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে জঙ্গি ও শীর্ষ সন্ত্রাসীরাও ছিল। তাদের অনেককেই পরবর্তী সময়ে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। আবার কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে বের হওয়ার পর ঢাকা ও চট্টগ্রামের অপরাধজগতে জড়িয়ে পড়েছে। আবার অভ্যুত্থানের সময় থানা ও কারাগার থেকে যেসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ খোয়া গিয়েছিল, তার অনেকটাই উদ্ধার করা যায়নি।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা বারবার সরকারকে সতর্ক করে আসছেন যে জামিনে মুক্ত সন্ত্রাসী ও উদ্ধার না হওয়া অস্ত্রের কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। বিভিন্ন সময় সরকার কঠোর হওয়ার কথা বললেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে কার্যকর ও সমন্বিত কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই সরকারকে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে নাগরিকেরা দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে চান।     

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ র ষ সন ত র স পর স থ ত হত য ক উদ ধ র ব যবস অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

পটুয়াখালীতে গ্রামীণ ব্যাংকে আগুন, প্রভাব পড়েনি শাটডাউনের

পটুয়াখালী সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নে গ্রামীণ ব্যাংকের শাখায় আগুন দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। রবিবার (১৭ নভেম্বর) মধ্যরাতে ব্যাংকটির ডিবুয়াপুর শাখায় ঘটনাটি ঘটে। তবে, এতে  কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

এদিকে, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির কোনো প্রভাব পড়েনি জেলায়। আজ সকাল থেকে স্বাভাবিক রয়েছে অভ্যন্তরীণ রুটে বাস ও মিনবাস চলাচল। সড়কে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, অটো ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে প্রতিদিনের মতো। তবে স্বল্প পরিসরে চলাচল করছে দূরপাল্লার পরিবহন। 

আরো পড়ুন:

কেরানীগঞ্জে থানার সামনে থাকা লেগুনায় আগুন 

এবার সাভারে দাঁড়িয়ে থাকা বাসে অগ্নিসংযোগ

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় জেলা শহরে ১৫টি পুলিশের মোবাইল টিমসহ র‍্যাব ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

ডিবুয়াপুর গ্রামীণ ব্যাংক শাখার ম্যানেজার হাফিজুর রহমান বলেন, “রাত সাড়ে ১২টার দিকে আমরা ব্যাংকের দোতলায় ছিলাম। কয়েকজন সন্ত্রাসী বোতলে করে আনা কেরোসিন ঢেলে নিচতলায় আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায়। পরে আমার নিচে নেমে পানি দিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলি। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। পরে ঘটনাস্থলে এসে রাতভর পুলিশ ব্যাংক পাহাড়া দেয়। এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়রি করা হবে।”

পটুয়াখালী সদর থানার (ওসি) তদন্ত মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা তৎপর রয়েছি। মাঠে ১৫টি পুলিশের টিম মোতায়েন রয়েছে। ব্যাংকে আগুনের ঘটনায় তদন্ত চলছে। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/ইমরান/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ধানমন্ডি ৩২: সাউন্ড গ্রেনেড ফাটার পর ছত্রভঙ্গ বিক্ষোভকারীরা
  • সরকারের প্রস্তুতি ভালো থাকায় নাশকতা হয়নি
  • ‘৩২ নম্বর ধূলিসাৎ না করা পর্যন্ত ফিরব না’
  • শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়: গোপালগঞ্জে মিছিল, সড়ক অবরোধের চেষ্টা
  • হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়কে ঘিরে আতঙ্ক নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া
  • ৩২ নম্বরের দিকে যাওয়া ২টি বুলডোজার আটকে দিল সেনাবাহিনী
  • শেখ হাসিনার রায়কে ঘিরে সচিবালয়ে নিরাপত্তা জোরদার
  • পটুয়াখালীতে গ্রামীণ ব্যাংকে আগুন, প্রভাব পড়েনি শাটডাউনের