পদ্মার চরে ‘অপারেশন ফার্স্ট লাইট’, ৬৭ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার
Published: 9th, November 2025 GMT
রাজশাহী, নাটোর, পাবনা ও কুষ্টিয়ার পদ্মার চরাঞ্চলে দাপিয়ে বেড়ানো সন্ত্রাসীদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছে পুলিশ, র্যাব ও এপিবিএন। রবিবার (৯ নভেম্বর) ভোর থেকে সারা দিন রাজশাহীর বাঘা, পাবনার আমিনপুর ও ঈশ্বরদী এবং কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের চরে অভিযান চালানো হয়।
অভিযানে ১১টি সন্ত্রাসী বাহিনীর ৬৭ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ইঞ্জিনিয়ার হাসিনুজ্জামান কাকনের ‘কাকন বাহিনী’র সদস্য। অভিযানে অস্ত্র, মোটরসাইকেল, মাদকদ্রব্য, নৌকা ও স্পিড বোটসহ নানা কিছু উদ্ধার করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
আবাসিক হোটেলে মিলল কর্মচারীর ঝুলন্ত মরদেহ
কাটা গলা নিয়ে রিকশাচালিয়ে ৩ কিলোমিটার, হাসপাতালে মৃত্যু
গত ২৭ অক্টোবর কুষ্টিয়ার দৌলতপুর, রাজশাহীর বাঘা ও নাটোরের লালপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী মরিচা ইউনিয়নের চৌদ্দহাজার মৌজার নিচ খানপাড়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গোলাগুলি হয়। ওই ঘটনায় তিনজন নিহত হন। পরবর্তীতে কাকন বাহিনীর প্রধান হাসিনুজ্জামান কাকনসহ বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে দৌলতপুর থানায় মামলা হয়।
ওই চরে মোট ১১টি সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে। রবিবার ভোরে তাদের দমনে পুলিশ, র্যাব ও এপিবিএন সদস্যদের নিয়ে যৌথ অভিযান শুরু হয়। এই অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন ফার্স্ট লাইট’। এতে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ টিমের ১ হাজার ২০০ সদস্য অংশ নেন। এছাড়া র্যাব ও এপিবিএনের সদস্যরাও অভিযানে অংশ নেন।
পুলিশ জানিয়েছে, পদ্মার চরের কাকন বাহিনী ছাড়াও সন্ত্রাসী বাহিনীগুলোর মধ্যে রয়েছে মন্ডল বাহিনী, টুকু বাহিনী, সাঈদ বাহিনী, লালচাঁদ বাহিনী, রাখি বাহিনী, শরীফ কাইগি বাহিনী, রাজ্জাক বাহিনী, চল্লিশ বাহিনী, বাহান্ন বাহিনী, সুখচাঁদ ও নাহারুল বাহিনী। এসব বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, পারস্পরিক দ্বন্দ্বের ফলে খুন, চরের চাষি ও জেলেদের হত্যা, চরের জমি দখল, বাথানের রাখাল ও মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, মাদক ও অস্ত্র পাচার, বেআইনি অস্ত্র দখলে রাখা, নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন ও সর্বহারাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দান, পদ্মা চরের খড়ের মাঠ দখল এবং ডাকাতি। এতে চরাঞ্চল অশান্ত থাকে।
অভিযান শেষে রবিবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোহাম্মদ শাহজাহান তার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি জানান, অভিযানে মোট ৬৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫৮ জন গ্রেপ্তার হয়েছে রাজশাহী রেঞ্জের রাজশাহী, পাবনা ও নাটোর জেলার চরাঞ্চলে। অন্য নয়জন গ্রেপ্তার হয়েছে পুলিশের খুলনা রেঞ্জের কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার চরাঞ্চলে। তারা কাকন বাহিনীসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্য। তাদের কয়েকজন সাজাপ্রাপ্ত আসামিও।
ডিআইজি জানান, অভিযানে রাজশাহী, নাটোর ও পাবনা জেলা থেকে ১০টি আগ্নেয়াস্ত্র, চারটি গুলি, দুটি গুলির খোসা, ২৪টি হাসুয়া, ছয়টি ডোসার, দুটি ছোরা, চারটি চাকু, তিনটি রামদা, দুটি চাইনিজ কুড়াল, একটি লোহার পাইপ, একটি টিউবওয়েল, পাঁচটি মোটরসাইকেল, ২০ বোতল ফেনসিডিল, ৮০০ গ্রাম গাঁজা ও ৫০ পিস ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। আর কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের চর থেকে একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা, একটি স্পিড বোড, অস্ত্র রাখার একটি সিলিন্ডার, দুটি তাবু ও পাঁচটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।
ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘‘এই অভিযানই শেষ নয়। অভিযান শুরু হলো। এটি থেমে যাবে না। মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখন থেকে নিয়মিত অভিযান চলবে। সন্ত্রাসী বাহিনীর কার্যক্রম পুরোপুরি নির্মূল সম্ভব না হলেও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।’’
ঢাকা/কেয়া/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র দ লতপ র সন ত র স র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
পুরোনো ব্যর্থতা শুধরে নিতে শুরু হচ্ছে জলবায়ু সম্মেলন
জাতিসংঘের জলবায়ু–সংক্রান্ত ৩০তম সম্মেলন বা কপ৩০ শুরু হচ্ছে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলের বেলেম শহরে। আগামীকাল সোমবার ১১ দিনব্যাপী এই সম্মেলনের যাত্রা শুরু হবে। এবারের সম্মেলনে পুরোনো প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আয়োজক দেশ ব্রাজিল। একই সঙ্গে পুরোনো ব্যর্থতা শুধরে নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।
কপের পূর্ণ রূপ হলো কনফারেন্স অব দ্য পার্টিস। এর সদস্যদেশগুলো ১৯৯২ সালে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তিতে সই করেছিল। চুক্তিটি হলো দ্য ইউনাইডেট নেশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসিসি)। বিশ্ব জলবায়ুব্যবস্থাকে মানুষের বিপজ্জনক তৎপরতা থেকে রক্ষা করাই এর লক্ষ্য। কপের প্রথম সম্মেলন হয় জার্মানির বার্লিনে, ১৯৯৫ সালে।
এবারের ৩০তম কপ চলছে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত। সম্মেলনের সভাপতিত্ব করা দেশ হিসেবে ব্রাজিলেরও আলাদা একটি গুরুত্ব রয়েছে। কারণ, এখন থেকে ঠিক ৩৩ বছর আগে দেশটির রিও ডি জেনিরো শহরে একটি সম্মেলে ইউএনএফসিসিসি চুক্তি সই হয়েছিল। স্বাক্ষরকারী দেশগুলো যে অভিন্ন লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করে, সে জন্য সম্মেলনে কিছু বিষয়সূচিও নির্ধারণ করেছে ব্রাজিল।
এর আগে কপ২৮–এ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল চুক্তিতে সই করা দেশগুলো। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ওপর এবার জোর দিচ্ছে ব্রাজিল। এ ছাড়া বৈশ্বিক উষ্ণতা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না বৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা ব্যর্থ হওয়ার বিষয়টি এবারের প্রথমবারের মতো স্বীকার করা হবে এবং সমাধানে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
ব্রাজিলের বেলেম শহরে আমাজন জঙ্গলের অংশ রয়েছে। এবারের সম্মেলনের জন্য এই শহর বেছে নেওয়ার পেছনেও কারণ রয়েছে। তা হলো বিশ্বে বনভূমির গুরুত্ব তুলে ধরা। নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পরও বিশ্বজুড়ে এখনো বনভূমি উজাড় হচ্ছে। একই সঙ্গে খনিজ সম্পদ উত্তোলন, কৃষিকাজ ও জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলনের মতো শিল্পায়ন–সংক্রান্ত বিভিন্ন খাতের হুমকির মুখে পড়ছে বনাঞ্চল।
কপ৩০ সম্মেলনের প্রথম সপ্তাহে ইউএনএফসিসিসি চুক্তিতে সই করা দেশগুলো তাদের অগ্রাধিকার তুলে ধরবে এবং অন্যদের অবস্থান খতিয়ে দেখবে। দ্বিতীয় সপ্তাহে বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীরা মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনায় যোগ দেবেন। সম্মেলনে চূড়ান্তি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিভিন্ন বিষয়ে দর–কষাকষি করবেন তাঁরা।