পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ, নারায়ণগঞ্জের ভ্যানচালকদের সড়ক অবরোধ
Published: 12th, January 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জে ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানি ও চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ব্যাটারিচালিত ভ্যানচালকেরা। রোববার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নগরের চাষাঢ়া গোল চত্বর এলাকায় সড়ক অবরোধ করে তাঁরা বিক্ষোভ করেন।
ভ্যানচালকদের অবরোধের কারণে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ গিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে তাঁরা সড়ক ছেড়ে দেন। পরে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে অর্ধশতাধিক ভ্যানচালক জড়ো হন। তাঁরা ভ্যানচালকদের প্রতি পুলিশের হয়রানি ও চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে ‘নারায়ণগঞ্জ ব্যাটারিচালিত ভ্যান মালিক সমিতি সংহতি’ ব্যানারে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে বেলা ১১টার দিকে নগরের চাষাঢ়া গোল চত্বর এলাকায় ভ্যানগাড়ি নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এতে নগরের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং তীব্র যানজট দেখা দেয়।
ভ্যানচালকদের কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে অংশ নেন গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক তরিকুল সুজন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ফারহানা মানিক (মুনা)। খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছির আহমেদ ঘটনাস্থলে গিয়ে হয়রানি ও চাঁদাবাজির অভিযোগের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে ভ্যানচালকেরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন।
ব্যাটারিচালিত ভ্যানচালক কামাল হোসেন বলেন, পুলিশ ভ্যানচালকদের ওপর অত্যাচার ও জুলুম করছে। তারা রেকার বিলের নামে ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করছে। তাঁরা পুলিশের এই চাঁদাবাজি থেকে মুক্তি চান।
ভ্যানচালক শাহ্ আলম বলেন, ‘আমরা ভ্যান গাড়িতে মালামাল টেনে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় করে সংসার চালাই। পুলিশের লোক ভাড়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে আমাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে। আমরা গরিব মানুষ। চাঁদা দিলে সংসার চালাব কেমনে?’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক ফারহানা মানিক বলেন, পুলিশ কৌশলে ভ্যানচালকের সঙ্গে প্রতারণা করে চাঁদাবাজি করছে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর এ ধরনের অভিযোগ অনাকাঙ্ক্ষিত। ভ্যানচালকদের অভিযোগ আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে সদর মডেল থানার ওসি নাছির আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আইনশৃঙ্খলা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ। যদি কারও বিরুদ্ধে হয়রানি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া যায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নগরের যানজট ও ফুটপাত হকারমুক্ত রাখতে সবার সহযোগিতা চান তিনি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কারখানার বর্জ্যে মরছে নদ
ডাইং কারখানার বর্জ্যে মরছে ব্রহ্মপুত্র নদ। প্রকাশ্যে এ দূষণ ঘটলেও দেখার কেউ নেই। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ ভুক্তভোগীদের। পরিবেশ কর্মকর্তা চাইছেন সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ অভিযোগ।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও নরসিংদী সদর উপজেলায় অন্তত ৬০টি ডাইং কারখানা ব্রহ্মপুত্র দূষণের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। নদের তীরে অবস্থিত এসব কারখানায় এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) থাকলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই প্রতিদিন নদে ফেলছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এ নদের সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষজন।
অভিযোগ রয়েছে, নদের তীরে অবস্থিত কারখানাগুলো ইটিপি রাখলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ফেলছে। অনেক কারখানায় ইটিপি থাকলেও খরচ কমাতে বেশির ভাগ সময় তা বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া বেশকিছু কারখানার ইটিপি প্রয়োজনের তুলনায় ছোট হওয়ায় সঠিকভাবে বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব হয় না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, নরসিংদী সদর উপজেলায় রয়েছে ছোট-বড় ৫০টি ডাইং কারখানা। আড়াইহাজারে স্পিনিং মিলসহ ডাইং কারখানা রয়েছে অন্তত ১০টি। নরসিংদীর ডাইং কারখানাগুলোর মধ্যে পাঁচদোনা এলাকার আবদুল্লাহ ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ, বাঘহাটা এলাকার ফাইভ অ্যান্ড ফাইভ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, সাজেদা ডাইং, আনোয়ার ডাইং, শতরূপা ডাইং, রুকু ডাইং, মেসার্স একতা ডাইং, কুড়েরপাড় এলাকার ব্রাদার্স টেক্সটাইল, ইভা ডাইং, ভগীরথপুর এলাকার এম এমকে ডাইং, নীলা ডাইং, এইচ এম ডাইং, মা সখিনা টেক্সটাইল, মুক্তাদিন ডাইং, পাঁচদোনা এলাকার তানিয়া ডাইং, সান ফ্লাওয়ার টেক্সটাইল প্রভৃতি।
আড়াইহাজারের কয়েকটি কারখানা হলো– ভাই ভাই স্পিনিং মিলস, ছাবেদ আলী স্পিনিং মিল, রফিকুল ডাইং, দিপু ডাইং ও হাজী হাবিবুর ডাইং।
আড়াইহাজার পৌরসভার চামুরকান্দি এলাকার বাসিন্দা মিয়াজউদ্দিন মিয়া বলেন, দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নদটি। দেশীয় জাতের মাছের অভয়াশ্রম এ নদ থেকে মাছ হারিয়ে গেছে।
আড়াইহাজারের বালিয়াপাড়া এলাকার ইসমাইল হোসেন জানান, রফিকুল ডাইংয়ের বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে পানির রং কালচে হয়ে গেছে। একই অবস্থা অন্য কারখানাগুলোর। বর্জ্য নদে ফেলার বিষয়ে স্থানীয়রা কথা বলতে গিয়ে উল্টো কারখানা কর্তৃপক্ষের হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
রফিকুল ডাইংয়ের মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, তাদের ইটিপি নেই। ডাইংয়ের পানি তারা নির্দিষ্ট পানির ট্যাংকে রাখেন, সরাসরি নদে ফেলেন না। ট্যাংকে জমানো পানি কোথায় ফেলেন জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের গনেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব হাসান শুভর ভাষ্য, কুড়েরপাড় এলাকার ডাইং কারখানাগুলোর রং মেশানো বর্জ্য পরিশোধন না করে ব্রহ্মপুত্রে ফেলায় নদটি এখন মৃতপ্রায়। দূষণের কারণে দুর্গন্ধে এর পারে দাঁড়ানো যায় না। স্থানীয়রা অনেকবার প্রতিবাদ করেও প্রতিকার পাননি বলে জানান তিনি।
গত ১৫ এপ্রিল শিলমান্দী ইউনিয়নের কুড়েরপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইভা ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড নামে একটি কারখানা থেকে বর্জ্য এসে পড়ছে নদের পানিতে। ভিডিও করতে দেখে কারখানা কর্তৃপক্ষ বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে দেয়।
ইভা ডাইংয়ের ইটিপি ইনচার্জ রেজাউল করিম জানান, বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে তারা প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন। অনেক কারখানা সরাসরি নদে বর্জ্য ফেললেও তারা নদ দূষণ করেন না।
একই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফাতেমা ডাইংসহ ব্রহ্মপুত্রের তীরে গড়ে ওঠা কারখানাগুলো থেকেও নদে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে এসব কারখানার কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান জানান, নদে বর্জ্য ফেলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারেক বাবু জানান, ব্রহ্মপুত্রে নদে সরাসরি বর্জ্য ফেলছে ডাইংসহ যেসব কারখানা সেসবের অধিকাংশই নরসিংদী জেলার অন্তর্গত। তাই নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে নদ দূষণমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
আড়াইহাজারের ইউএনও সাজ্জাত হোসেন বলেন, কখনও কখনও কিছু কারখানা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ছেড়ে দেয়। কোন কারখানা নদ দূষণ করছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশবাদী সংগঠন তা জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।