তিন সীমান্ত দিয়ে ৩৮ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
Published: 11th, July 2025 GMT
বাংলাদেশের তিন জেলার সীমান্ত দিয়ে আরও ৩৮ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গত বুধবার গভীর রাত ও বৃহস্পতিবার সকালে তাদের ঠেলে পাঠানো হয়। পরে তাদের আটক করে পুলিশে দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বিজয়পুর সীমান্ত দিয়ে ২১ জনকে ঠেলে পাঠায় বিএসএফ। তাদের মধ্যে ১৯ জন তৃতীয় লিঙ্গের ও দু’জন পুরুষ। বিএসএফ বিজয়পুর বিওপির ১১৪৮/৪ এস থেকে প্রায় ১০০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আড়াপাড়া এলাকায় তাদের ঠেলে দিলে আটক করে বিজিবি। আটকদের বাড়ি ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, পটুয়াখালী, মৌলভীবাজার, জামালপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও টাঙ্গাইলে।
নেত্রকোনা ৩১ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম কামরুজ্জামান বলেন, তারা ৬ মাস থেকে ১২ বছর আগে কাজের সন্ধানে ভারতের দিল্লি গিয়েছিলেন। তাদের সেখানকার বিভিন্ন এলাকা থেকে একত্র করে বুধবার দিল্লির নাজিরাবাদ বিমানবন্দর দিয়ে উড়োজাহাজে আসামে আনা হয়। বৃহস্পতিবার ভোরে বিজয়পুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠায় বিএসএফ। তাদের দুর্গাপুর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর সীমান্ত দিয়ে নারী ও শিশুসহ ১০ জনকে ঠেলে পাঠায় বিএসএফ। পরে তাদের আটক করে পুলিশে দিয়েছেন দুর্গাপুর বিওপি ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা। আটক সবাই সনাতন ধর্মাবলম্বী। তাদের মধ্যে চার শিশু, তিন নারী ও তিন পুরুষ রয়েছেন। লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম এসব তথ্য জানিয়েছেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক ব্যক্তিরা নিজেদের কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বাসিন্দা বলে পরিচয় দিয়েছেন। তারা জানান, প্রায় ১০ বছর আগে কাজের সন্ধানে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে যান। সেখান থেকে বিএসএফ তাদের ধরে সীমান্ত পথে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।
বকশীগঞ্জ (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, জামালপুরের বকশীগঞ্জের ধানুয়া কামালপুর সীমান্ত দিয়ে বৃহস্পতিবার ভোর ৪টার দিকে সাতজনকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ। পরে তাদের আটক করে বিজিবি। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন, তাদের বাড়ি বাগেরহাট, ফরিদপুর, খুলনা ও বরগুনা জেলায়। ২০২১ সালে করোনাকালে ভারতে যান তারা। সবাই দিল্লিতে থাকতেন। বকশীগঞ্জ থানার ওসি খন্দকার শকের আহাম্মেদ বলেন, সাতজনকে থানায় হস্তান্তর করেছে বিজিবি।
ভারতীয় ও রোহিঙ্গাদেরও ঠেলে দিচ্ছে বিএসএফ: বিজিবিপ্রধান
সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, বিএসএফ ভারতের নাগরিক ও রোহিঙ্গাদেরও বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। পুশইনের শিকারদের মধ্যে বেশির ভাগই বাংলাদেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভারতের কিছু নাগরিক ও রোহিঙ্গাকেও তারা জোর করে পাঠিয়ে দিচ্ছে। শুরু থেকে আমরা এর কড়া প্রতিবাদ করে আসছি।’
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের বীরউত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে ১০৩তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে অংশ নেন বিজিবি মহাপরিচালক। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প শইন উপজ ল র ব এসএফ
এছাড়াও পড়ুন:
সীমান্ত হত্যা বন্ধে দাঁড়াতে হবে বিএসএফের বিরুদ্ধে: নাহিদ ইসলাম
ভারতের সীমান্ত বাহিনী বিএসএফ এখন খুনিতে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ২০০০ সালের পর থেকে বাংলাদেশের সীমান্তে অসংখ্য মানুষ হত্যা করেছে বিএসএফ। হত্যা বন্ধ করতে হলে আমাদের এই বাহিনীর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে।
‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’র নবম দিন বুধবার সন্ধ্যায় ঝিনাইদহ শহরের পায়রা চত্বরে এক পথসভায় এসব কথা বলেন নাহিদ ইসলাম।
এ সময় এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে যেন আর কোনো এক-এগারো না হয়– সেদিকে সচেষ্ট থাকতে হবে। আমরা অবশ্যই একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। তার আগে সংস্কার ও শেখ হাসিনার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’
পথসভায় বক্তব্য দেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, যুগ্ম সদস্য সচিব তারেক রেজা, মাহিন সরকার প্রমুখ।
আলমডাঙ্গা (চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি জানান, উপজেলার আলতায়েবা মোড়ে দুপুরে পথসভায় আখতার হোসেন বলেন, রাষ্ট্রব্যবস্থা সংস্কার ছাড়া নতুন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। আমরা এমন একটি রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলতে চাই, যা সব ধর্ম ও শ্রেণির মানুষের নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে যারা গণহত্যা করেছে, তাদের বিচার হবেই। শেখ হাসিনা সরাসরি হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন– এমন তথ্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এসেছে। তাঁকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য ভারত সরকারকে একদিন ইতিহাসের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে উপজেলার হাটবোয়ালিয়া এলাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে এনসিপি নেতাদের শুভেচ্ছা জানান। এ সময় সারজিস আলম পথসভা থেকে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমাদের ভালোবাসায় আমরা গর্বিত। তবে পড়াশোনাই এখন তোমাদের প্রধান দায়িত্ব। ক্লাস ফেলে পথে আসা কাম্য নয়।’
পরে চুয়াডাঙ্গা সদরের বড়বাজার এলাকায় আরেকটি সভা শেষে কেন্দ্রীয় নেতারা দামুড়হুদা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত এক কৃষকের বাড়ি গিয়ে সমবেদনা জানান।