বাংলাদেশের তিন জেলার সীমান্ত দিয়ে আরও ৩৮ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গত বুধবার গভীর রাত ও বৃহস্পতিবার সকালে তাদের ঠেলে পাঠানো হয়। পরে তাদের আটক করে পুলিশে দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বিজয়পুর সীমান্ত দিয়ে ২১ জনকে ঠেলে পাঠায় বিএসএফ। তাদের মধ্যে ১৯ জন তৃতীয় লিঙ্গের ও দু’জন পুরুষ। বিএসএফ বিজয়পুর বিওপির ১১৪৮/৪ এস থেকে প্রায় ১০০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আড়াপাড়া এলাকায় তাদের ঠেলে দিলে আটক করে বিজিবি। আটকদের বাড়ি ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, পটুয়াখালী, মৌলভীবাজার, জামালপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও টাঙ্গাইলে।

নেত্রকোনা ৩১ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম কামরুজ্জামান বলেন, তারা ৬ মাস থেকে ১২ বছর আগে কাজের সন্ধানে ভারতের দিল্লি গিয়েছিলেন। তাদের সেখানকার বিভিন্ন এলাকা থেকে একত্র করে বুধবার দিল্লির নাজিরাবাদ বিমানবন্দর দিয়ে উড়োজাহাজে আসামে আনা হয়। বৃহস্পতিবার ভোরে বিজয়পুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠায় বিএসএফ। তাদের দুর্গাপুর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, ‎বৃহস্পতিবার ভোরে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর সীমান্ত দিয়ে নারী ও শিশুসহ ১০ জনকে ঠেলে পাঠায় বিএসএফ। পরে তাদের আটক করে পুলিশে দিয়েছেন দুর্গাপুর বিওপি ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা। আটক সবাই সনাতন ধর্মাবলম্বী। তাদের মধ্যে চার শিশু, তিন নারী ও তিন পুরুষ রয়েছেন। লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম এসব তথ্য জানিয়েছেন। 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক ব্যক্তিরা নিজেদের কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বাসিন্দা বলে পরিচয় দিয়েছেন। তারা জানান, প্রায় ১০ বছর আগে কাজের সন্ধানে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে যান। সেখান থেকে বিএসএফ তাদের ধরে সীমান্ত পথে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।

বকশীগঞ্জ (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, জামালপুরের বকশীগঞ্জের ধানুয়া কামালপুর সীমান্ত দিয়ে বৃহস্পতিবার ভোর ৪টার দিকে সাতজনকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ। পরে তাদের আটক করে বিজিবি। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন, তাদের বাড়ি বাগেরহাট, ফরিদপুর, খুলনা ও বরগুনা জেলায়। ২০২১ সালে করোনাকালে ভারতে যান তারা। সবাই দিল্লিতে থাকতেন। বকশীগঞ্জ থানার ওসি খন্দকার শকের আহাম্মেদ বলেন, সাতজনকে থানায় হস্তান্তর করেছে বিজিবি।

ভারতীয় ও রোহিঙ্গাদেরও ঠেলে দিচ্ছে বিএসএফ: বিজিবিপ্রধান

সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, বিএসএফ ভারতের নাগরিক ও রোহিঙ্গাদেরও বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। পুশইনের শিকারদের মধ্যে বেশির ভাগই বাংলাদেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভারতের কিছু নাগরিক ও রোহিঙ্গাকেও তারা জোর করে পাঠিয়ে দিচ্ছে। শুরু থেকে আমরা এর কড়া প্রতিবাদ করে আসছি।’

বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের বীরউত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে ১০৩তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে অংশ নেন বিজিবি মহাপরিচালক। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প শইন উপজ ল র ব এসএফ

এছাড়াও পড়ুন:

জঙ্গি সন্দেহে কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি যুবক

জঙ্গি সন্দেহে কলকাতা পুলিশের বিশেষ টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে এক বাংলাদেশি নাগরিক। মুফতি আবদুল্লাহ আল মাসুদ নামে ওই বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয় পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার গয়েশপুর পুলিশ ফাঁড়ি এলাকা থেকে। এরপর তাকে ফাঁড়িতে নিয়ে এসে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ চলে। বৃহস্পতিবার এই ঘটনাটি ঘটেছে। 

ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও ভারত থেকে নিজের দেশে ফিরে যাননি মাসুদ। তিনি অবৈধভাবে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কাটাগঞ্জ এলাকায় বসবাস করতেন। সম্প্রতি তার বেশ কিছু কর্মকান্ডে সন্দেহ প্রকাশ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এর পরই মাসুদকে ইসলামী উগ্রপন্থী বলে দাবি করে পুলিশে অভিযোগ করা হয়। যেহেতু তার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তাই পুলিশ তাকে একজন অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতীয় আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়েছে। 

বিষয়টি সামনে আসার পরই যথেষ্ট উত্তেজনা ছড়িয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে কলকাতা পুলিশের পক্ষে কিছুই জানানো হয়নি। 

অন্যদিকে, গত ২৪ ঘন্টায় ভারত বাংলাদেশের দিনাজপুর সীমান্ত ও ভোমরা ঘোজাডাঙা সীমান্তে এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন আরো ১১ জন বাংলাদেশি নাগরিক। 

পুলিশ ও বিএসএফের যৌথ অভিযানে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এক বাংলাদেশি নাগরিককে। আটককৃতে ওই ব্যক্তির নাম পঞ্চানন পাল। তিনি বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গা থানার বাসিন্দা। ভারতে তিনি পরিচয় বদল করে রূপায়ণ পাল নামে বসবাস করছিলেন বলে অভিযোগ। তার কাছ থেকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ছাড়াও ভারতের আধার কার্ড, ভোটার কার্ড ও এমনকি ভারতীয় পাসপোর্ট পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে। 

একইদিনে ভারত থেকে অবৈধ পথে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময়ে ঘোজাডাঙ্গা ভোমরা সীমান্তের কাছে সরুপনগর এলাকার তারালি সীমান্ত থেকে বিএসএফের ১৪৩নম্বর ব্যাটালিয়নের হাতে আটক হয়েছেন আরো বাংলাদেশি নাগরিক। 

সীমান্তরক্ষী বাহিনী জানিয়েছে আটকের পর তাদের স্বরূপনগর থানার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছে তিন শিশু, তিনজন পুরুষ ও চারজন নারী। এর সবাই বাংলাদেশের সাতক্ষীরা এবং খুলনার বাগেরহাটের বাসিন্দা।

সুচরিতা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিলেট সীমান্তে বাংলাদেশে ঢুকে খুঁটি উপড়ে ফেলে বিএসএফ, স্থানীয়দের প্রতিবাদ
  • পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনে কর্মকর্তা নিয়োগ, বেতন ৫১,০০০ টাকা
  • জঙ্গি সন্দেহে কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি যুবক