বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার। বৈঠকের পর বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বৈঠকে নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যত তাড়াতাড়ি ফিরে যাওয়া সম্ভব, বিএনপির পক্ষ থেকে সেদিকেই জোর দেওয়া হয়েছে।

আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই বৈঠক হয়। বেলা সাড়ে তিনটায় ইইউ রাষ্ট্রদূতের পতাকাবাহী গাড়ি বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে প্রবেশ করে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের পর আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ, সবার মনে প্রশ্ন আছে, সেই বিষয়গুলো বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে। একটি হচ্ছে নির্বাচন, কবে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, আমাদের ভাবনা কী? সংস্কারের ব্যাপারে আমাদের ভাবনা কী? মূলত নির্বাচনের রোডম্যাপ—এই বিষয়টা নিয়েই আলোচনা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা যেটা বলে আসছি, এই বছরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। অন্য কোনো ভাবনার দিকে না গিয়ে সরাসরি জাতীয় নির্বাচনের দিকে গিয়ে দেশে আগামী দিনে একটা নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা প্রয়োজন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার জন্য।’

আমীর খসরু বলেন, ‘অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি দেশ বেশি দিন চলতে পারে না। অগণতান্ত্রিক সরকারের রাজনৈতিক ওয়েট (ওজন) থাকে না, মবিলাইজেশন প্রসেস (সংহত করার প্রক্রিয়া) থাকে না, জনগণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকে না, জনগণের কাছ থেকে কোনো ফিডব্যাক (প্রতিক্রিয়া বা মতামত) পাওয়া যায় না। সুতরাং একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যত তাড়াতাড়ি ফিরে যাওয়া সম্ভব, সেদিকে আমরা জোর দিয়েছি।’

সংস্কার নিয়েও আলোচনা

ইইউ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে সংস্কার নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংস্কারের বিষয়ে যেটি আলোচনা হয়েছে, সেটা হচ্ছে যে কটি বিষয়ে আমরা ঐকমত্যে যেতে পারব, সেগুলো ইমিডিয়েটলি (তাৎক্ষণিকভাবে) করা যেতে পারে। সেগুলোর ব্যাপারে সময় নেওয়ার কোনো কারণ নেই। আর যেগুলো ঐকমত্য হবে না, সেগুলো আগামী দিনে নির্বাচনে প্রতিটি দল জনগণের কাছে নিয়ে যাবে.

..তাদের প্রোগ্রামে নিয়ে যাবে। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আগামী দিনে সংসদে পেশ করা হবে এবং সংসদে আলোচনা হবে, তর্ক হবে-বিতর্ক হবে এবং পাস করা হবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, ‘যেহেতু ইইউর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে আমাদের, সঙ্গে তাদের অর্থনীতির...। যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তা অব্যাহত থাকবে কি না? আমাদের পক্ষ থেকে পরিষ্কারভাবে বিএনপির অর্থনৈতিক সফলতা আমরা বলেছি। আগামী দিনে দেশের অর্থনীতিকে এই গর্তের মধ্য থেকে তুলে আনার জন্য বিএনপি যে কর্মসূচি ইতিমধ্যে নিয়েছে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে যদি কোনো কর্মসূচির উদ্যোগ নেওয়া হয়, সেটা অবশ্যই আমরা সমর্থন করব। আমাদের দলের অর্থনৈতিক কর্মসূচি আছে। জনগণ আমাদের নির্বাচিত করলে সেই কাজগুলো আমরা করব।’

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলেও উল্লেখ করেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের বিএনপি স্বাগত জানায়।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

স্বচ্ছতার জন্য ডিএনসিসির প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে:

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সব প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।  

সোমবার (২৮ এপ্রিল) ডিএনসিসির ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত পশ্চিম শেওড়াপাড়া, পশ্চিম কাজীপাড়া ও সেনপাড়া পর্বতা এলাকায় ৪ কিলোমিটার রাস্তা, ৫ কিলোমিটার নর্দমা ও দেড় কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণকাজের উদ্বোধন ও গণশুনানি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা জানান।

ডিএনসিসির প্রশাসক বলেন, ডিএনসিসির সব প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। প্রকল্পটি কবে শুরু হবে, কবে শেষ হবে, কতা টাকা বরাদ্দ আছে—এসব তথ্য ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। এছাড়া, রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ হলে নির্মাণ সামগ্রী কী, সেটা জনগণের জানা দরকার। যখন জনগণ জানবে, তখন তারা জবাবদিহি করতে পারবে।

তিনি বলেন, “আমি গত সপ্তাহে কাউকে না জানিয়ে ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে চলমান কাজ পরিদর্শন করতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম, রাস্তাকে ধরে রাখার জন্য যে ওয়াল (বিশেষ দেয়াল) দেওয়া হয়েছে, সেটার পিলার বানানোর কথা ছিল স্টোন দিয়ে; কিন্তু বানিয়ে রেখেছে ব্রিক দিয়ে। এটা বড় দুর্নীতি। স্থানীয় মানুষ যদি না জানে, কী নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হবে, তাহলে দুর্নীতি করাটা সহজ। তথ্যের যত বেশি আদান-প্রদান হবে, তথ্য যত বেশি পাবলিক করা হবে, জনগণ তত বেশি জবাবদিহি করতে পারবে। আমি ঠিকাদারকে জানিয়ে দিয়েছি, সঠিক নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার না করলে বিল দেব না। তারা বলেছে, এটা ঠিক করে দেবে।” 

মোহাম্মদ এজাজ বলেন, যার যার এলাকার কাজ তারা বুঝে নেবেন। বুঝে নেওয়ার জন্য যত তথ্য ও সহযোগিতা লাগবে, সেটা আমরা দেব। ডিএনসিসির ওয়েবসাইটে প্রকল্পের সব তথ্য ও ঠিকাদারের ফোন নম্বরসহ দেওয়া থাকবে। স্থানীয় জনগণ স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাজ বুঝে নেবেন। আমরা চাই, সকলের অংশগ্রহণে উন্নয়নকাজ সম্পন্ন হবে। এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।”

তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে গিয়ে স্থানীয় সোসাইটি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহযোগিতা পাচ্ছি। সবার অংশগ্রহণ বাড়াতে আমি বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের নিয়ে গণশুনানি করছি। প্রতি মাসে ফেসবুক লাইভে দেশে-বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের সাথে যুক্ত হচ্ছি। ডিএনসিসির সবার ঢাকা অ্যাপ আছে, সেটির পাসওয়ার্ড পর্যন্ত আমাদের দিচ্ছে না। আগে যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা ৪ কোটি টাকা খরচ করে এই অ্যাপ বানিয়েছে। পাসওয়ার্ড না দিলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।”

ডিএনসিসির প্রশাসক বলেন, মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় হকারদের জন্য হাটা যায় না। মানুষের অবাধ চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। ঢাকা শহরে মানুষের চলাচলের অধিকার সবার আগে, সেই অধিকার আমরা বাস্তবায়নের চেষ্টা করব। মিরপুর-১০ এর প্রধান সড়কের যত হকার ও অটোরিকশা আছে, সেগুলো আমরা বন্ধ করে দেব। যারা এ ধরনের ইনফরমাল পেশায় যুক্ত আছেন, তাদের পুনর্বাসনের জন্যও আমরা প্ল্যাটফর্ম করব। তাদের জন্যও বিকল্প ব্যবস্থা আমরা তৈরি করব। এই শহরটা সবার, সবাই একসাথে বসবাস করব; কিন্তু অন্যদের কষ্ট না দিয়ে, অন্যের অধিকার নষ্ট না করে। 

বক্তৃতা শেষে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন এবং মোনাজাতে অংশ নেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুর রহমান, অঞ্চল-৪ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহাবুব আলম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হকসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।

ঢাকা/এএএম/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাদের সাথে পুলিশের মতবিনিময়
  • ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সিপিবি নেতার সৌজন্য সাক্ষাৎ
  • রাখাইনে ‘মানবিক করিডর’ দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত স্থগিতের দাবি রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের
  • ট্রাম্প কানাডাকে ‘ভেঙে ফেলতে’ চেয়েছিলেন
  • পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা
  • মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান
  • হামদর্দের গাজার জনগণের প্রতি মানবিক সহায়তা
  • প্রশাসক নিয়োগের বিরুদ্ধে রিট, ইউনিয়ন পরিষদটিতে চার মাস ধরে সব সেবা বন্ধ
  • সংসদে সংরক্ষিত আসন, না তৃণমূল রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ?
  • স্বচ্ছতার জন্য ডিএনসিসির প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে: