‘আমার ছেলে কী দোষ করেছিল, কেন তাকে দুনিয়া থাইক্যা চলে যাইতে হইল? ছেলেরে তো আর ফিরে পাইতাম না, খুনিদের ফাঁসি চাই। চারদিন পার হইয়া গেল পুলিশ কী করছে বুঝতে পারছি না। আমার ছেলে পুলিশে চাকরি করত, তারে কুপাইয়া মারল কারা? পুলিশের লোক হইয়াও যদি সঠিক বিচার না পাই, কী করব? আমার বলার কিছুই নাই।’ রোববার দুপুরে নিজ বাড়িতে এভাবেই আহাজারি করে কথাগুলো বলছিলেন দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হওয়া পুলিশ সদস্য শফিকুল ইসলামের মা ফাতেমা খাতুন।

তিনি বলেন, ‘শুনছি, পিবিআই নাকি দুইডারে ধরছে। আমি ভাবছিলাম ২৪ ঘণ্টার ভিতরে আমার ছেলের খুনিদের পুলিশ ধরব, কিন্তু কই তারা (পুলিশ) কী করছে বুঝতে পারছি না।’ ক্ষোভ প্রকাশ করে ফাতেমা খাতুন জানান, পুলিশ এসে তাদের বাড়ির লোকজনকে জিজ্ঞাস করে কাউকে সন্দেহ করেন কিনা। অথচ সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, লোকটা দৌড় দিচ্ছে, দৌড় দেওয়া লোকটাকে ধরে জিজ্ঞাস করলেই তো সবকিছু বের হওয়ার কথা।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনার সদস্যরা যৌথ অভিযান চালিয়ে শনিবার বিকেল পর্যন্ত দুর্গাপুর উপজেলার পৃথক স্থানে অভিযান চালিয়ে দু’জনকে আটক করেছে। তারা হলো– সাজিবুল ইসলাম ওরফে অপূর্ব ও বাকী বিল্লাহ। একই সঙ্গে হত্যায় ব্যবহৃত লাল রঙের একটি পালসার মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে।

জানা গেছে, নিহত শফিকুল ইসলাম জামালপুরে বেতারে এসআই পদে কর্মরত ছিলেন। গত ৮ জানুয়ারি ছুটিতে নেত্রকোনার দুর্গাপুরে নিজ বাসায় এসেছিলেন। পরদিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে বাগিচা পাড়ার নিজ বাসা থেকে বের হয়ে বাজারে গিয়েছিলেন তিনি। বাজার থেকে ফেরার পথে ৬টা ২০ মিনিটের দিকে পৌর শহরের উকিলপাড়া এলাকার পান মহল-সংলগ্ন গলির সড়কে তাঁকে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। পরে এলাকাবাসী তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। কিন্তু অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এ ঘটনায় নিহত পুলিশ কর্মকর্তার বাবা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করে শুক্রবার দুর্গাপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় পিবিআই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে দুই যুবককে আটক করে।

ময়মনসিংহ রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি আবুল কালাম আযাদ ও জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহেব আলী পাঠান গত শুক্রবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে নিহত পুলিশ সদস্যের গ্রামের বাড়িতে জানাজায় অংশ নেন ও নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তারা।

বাদী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কী কারণে আমার ছেলেকে মেরেছে, আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না। ছেলেকে আর ফিরে পাব না, কিন্তু হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। এভাবে যেন আর কোনো বাবা ছেলেহারা না হয়।’

অন্যদিকে নেত্রকোনা জেলা শহরের বড় বাজারের অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক দিলীপ কুমার রায় হত্যাকাণ্ডে গতকাল রোববার পর্যন্ত মামলা হয়নি। এ ঘটনায় কাউকে আটকও করতে পারেনি পুলিশ।

নিহত কলেজ শিক্ষকের শ্যালক সমকাল সুহৃদ সমাবেশ নেত্রকোনা জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সাহা বলেন, ‘সোমবার (আজ) আমার ভগ্নিপতির শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান করা হবে। পরে বিষয়টি নিয়ে তাঁর পরিবার বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।’

দুর্গাপুর থানার ওসি মোহাম্মদ বাচ্চু মিয়ার ভাষ্য, মামলাটি পিবিআইয়ে হস্তান্তর করা হয়েছে। এরই মধ্যে দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে পুলিশ, ডিবি, পিবিআই। গ্রেপ্তার দু’জনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

নেত্রকোনা সদর থানার ওসি কাজী শাহনেওয়াজ জানান, কলেজ শিক্ষক হত্যাকাণ্ডে থানায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। হত্যার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পিবিআই ময়মনসিংহ কার্যালয়ের পুলিশ সুপার রকিবুল আক্তার বলেন, এসআই শফিকুল ইসলাম হত্যায় দু’জনকে আটক করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক

জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সালিসে আসা এক যুবককে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ওই যুবকের মা আনারা বেগম এ কথা জানান।

গ্রেপ্তার ওই যুবকের নাম আল-আমিন (৩২)। তাঁর বাড়ি নগরের বলাশপুর এলাকায়। মায়ের দাবি, আল-আমিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। সালিসে জমিজমার কাগজ ঠিক থাকায় সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে রাজি না হলে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ওই যুবক যুবলীগের সমর্থক। তাঁকে গ্রেপ্তারে কয়েকবার বাড়িতে অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। থানায় তাঁকে পেয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে তাঁকে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আল-আমিনের মা আনারা বেগম বলেন, ২০২১ সালে বলাশপুর এলাকায় স্বামীর পেনশনের ১৭ লাখ টাকায় ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি কেনেন তাঁরা। এর আগে ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি কেনার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেন এক ব্যক্তি। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিস হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তন হলে নিজের কেনা জমিতে বাড়ি করার উদ্যোগ নিলে বাধা হয়ে দাঁড়ান ওই ব্যক্তি ও তাঁর পক্ষের লোকজন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় উভয় পক্ষকে ডাকা হয়। গত শনিবার রাত আটটায় থানায় সালিস শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। সালিসে শেষ পর্যায়ে যখন জমির কাগজপত্র তাঁদের ঠিক পান সালিসকারীরা, তখন ওসি আল-আমিনকে তাঁর কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। পেছনে পেছনে তিনি গিয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হয়। এরপর আল-আমিনকে গারদে ঢুকিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় সাজানো রাজনৈতিক মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

আনারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। আমার ছেলে ব্যবসা করে। তাকে রাজনৈতিক মামলায় পুলিশ কারাগারে পাঠিয়েছে।’

২৭ জুলাই আল-আমিনকে আদালতে পাঠানোর প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ৩৫ মিনিটে পুলিশের টহল দল নগরের আকুয়া ভাঙ্গাপুল এলাকায় অবস্থানকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে সদরের উত্তর দাপুনিয়ার সরকারি পুকুরপাড় সেলফি নামের স্থানে পাকা রাস্তার ওপর একদল সন্ত্রাসী জনতাবদ্ধ হয়ে রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি ভাঙচুর ও দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫টি মশাল, ২০টি লাঠি, ৩০টি ইটের টুকরা, ২৫টি কাচের টুকরা জব্দ করা হয়। এ ঘটনার পরদিন পুলিশ কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আল-আমিনকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ২৬ জুলাই রাত ১১টা ৪০ মিনিটে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রতিবেদনে পুলিশ আল-আমিনকে যুবলীগের সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করে।

থানার ওই সালিসে থাকা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মো. বাবু বলেন, থানা চত্বরের একটি ঘরে এসআই সজীব কোচের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের কাগজপত্র বোঝেন, এমন লোকজন নিয়ে সালিস শুরু হয়। একপর্যায়ে আল-আমিনকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যায়িত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে তাঁকে থানা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।

জানতে চাইলে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘১০ দিন আগে থেকে দারোগারা তাঁকে (আল-আমিন) ধরার জন্য খুঁজতেছে। ডেভিল হান্টের আসামি সে। আমাদের দুই দারোগা ছয় থেকে সাতবার তাঁর বাড়িতে রেড দিছে। সে যুবলীগের ফ্যাসিস্ট। মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তদন্তে প্রাপ্ত আসামি।’ ওসি বলেন, কোনো কাগজপত্র দিয়ে নোটিশ করে তাঁকে থানায় ডাকা হয়নি। বিচারক যদি মনে করে আমরা তাঁকে ইলিগ্যাল অ্যারেস্ট করেছি, তাহলে আদালত ফাইন্ডিংস দেবেন। আসামিকে থানা থেকে গ্রেপ্তার করা কী নিষেধ আছে?’ আদালতের প্রতিবেদনে ভিন্ন স্থান দেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জজ এটার বিচার করবে। যদি এমন কইরা থাকে, সমস্যা কী?’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ ধসে ১০ শ্রমিক আহত
  • ময়মনসিংহে জয়নুল আবেদিন উদ্যানে উচ্ছেদ হচ্ছে মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্ক
  • অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, পাহাড়ে ভূমিধসের শঙ্কা
  • ময়মনসিংহে ময়লা ছিটিয়ে টাকা ছিনতাই, দুই বছর পর ঢাকা থেকে আসামি গ্রেপ্তার
  • সাগরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত, ঢাকাসহ ৪ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস
  • ময়মনসিংহের সেই মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্কের চুক্তি বাতিল, অপসারণের উদ্যোগ
  • ময়মনসিংহে বন্ধুর বাড়িতে যুবকের রক্তাক্ত মরদেহ
  • টাঙ্গাইলে কুকুরের কামড়ে ২৫ জন আহত
  • জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক
  • ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি, আজও বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস