গণ অনশনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ শিক্ষার্থী অসুস্থ
Published: 12th, January 2025 GMT
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবিতে অনশনরত অবস্থায় ৬ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়েছেন। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। রোববার রাত পৌনে দশটার দিকে অনশন চলা অবস্থায় তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন।
অসুস্থরা হলেন, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্র অধিকার পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি এ কে এম রাকিব, ইসলামি স্টাডিজ বিভাগের সোহান প্রামানিক ও আতিকুর রহমান তানজিল, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল মুরাদ, ফিন্যান্স বিভাগের রাকিব ও দর্শন বিভাগের তৌহিদ।
এদিন সকাল সাড়ে ৮টায় অনশন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। সোয়া ৬টার দিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন জবি উপাচার্য। শিক্ষার্থীদের নিকট কাজের সার্বিক বিষয় তুলে ধরেন তিনি। এরপর শিক্ষার্থীরা ইউজিসি ও মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের আসার দাবি জানান। এ সময় উপাচার্যের সঙ্গে বসে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড.
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তিন দাবি হলো- সেনাবাহিনীর কাছে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ হস্তান্তরের চুক্তি অনতিবিলম্বে স্বাক্ষর করতে হবে। পুরান ঢাকার বাণী ভবন ও ড. হাবিবুর রহমান হলের স্টিল বেইজড ভবনের কাজ দ্রুত শুরু এবং শেষ করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত আবাসন ব্যবস্থা না হয় ততদিন পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন ভাতা নিশ্চিত করতে হবে।
এদিন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙার অনুরোধ জানান উপাচার্য। তবে শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখান করেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেহেতু আমাদের দাবির সঙ্গে একমত আমাদের দাবি এখন ইউজিসি ও মন্ত্রণালয়ের কাছে। তারা আমাদের জানাক।
এর আগে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, তোমরা যে দাবি করছ সেই দাবি আমারও। এ বিষয়ে আজ মন্ত্রণালয়ে চিঠি গেছে। আমরা আজ সারাদিন তোমাদের খোঁজ রাখছি। প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। আমরা আমাদের এ আন্দোলনের ফলাফল পাব। আমরা কথা দিচ্ছি, আমরা তোমাদের দাবি অনুযায়ী কাজ করব। ছাত্র প্রতিনিধি নিয়ে আমরা একটা কমিটি গঠন করে সব বিষয় জানাব।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
তিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৫ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ
সম্পূরক বৃত্তি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণাসহ তিন দফা দাবিতে অনশনে বসা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্যে দুজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন তাঁরা।
এর আগে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়।
তিন দফা দাবির অন্যটি হলো ক্যাফেটেরিয়ায় ভর্তুকি প্রদান ও স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করা এবং কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা চালু।
আজ বুধবার দুপুরে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে তিন দফা দাবিতে অনশন চালিয়ে যেতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনশনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে তাঁদের খোঁজখবর নিতে দেখা যায়।
অনশনে বসা পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন উদ্ভিদবিজ্ঞানের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ফয়সাল মুরাদ ও ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ফেরদৌস শেখ, ইতিহাস বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শাহীন মিয়া এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের অপু মুন্সী।
অনশনকারীদের মধ্যে ফয়সাল মুরাদ ও এ কে এম রাকিব অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের পেটে ব্যথা, রক্তচাপ কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে।
অনশনকারী অপু মুন্সী বলেন, পারিবারিক কারণে তাঁকে গ্রামে চলে যেতে হয়েছে। তাই গতকাল রাতে তিনি অবস্থান করতে পারেননি।
আজ অনশনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে অনশনকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করবেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ কারণে শিক্ষার্থীদের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে উপস্থিত হতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
অনশনে অংশ নেওয়া শাহীন মিয়া বলেন, প্রশাসন আগের মতোই বাহানা করে যাচ্ছে। হচ্ছে, হবে এ বক্তব্য থেকে বের হতে পারেনি প্রশাসন। আর কোনো টালবাহানা তাঁরা শুনবেন না। তাঁদের দাবি অবশ্যই মানতে হবে। তা না হলে প্রশাসনকে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হবে।
আরেক অনশনকারী ফয়সাল মুরাদ বলেন, প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে অনশন চলছে, কিন্তু প্রশাসন এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ইতিমধ্যে তিনিসহ আরও একজন অনশনকারী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
অনশনকারী এ কে এম রাকিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অবস্থানসহ বেশ কিছু কর্মসূচি পালন করেছি, কিন্তু তাতে প্রশাসন কর্ণপাত করেনি। তাই অনশনে যেতে বাধ্য হয়েছি। এ ছাড়া আমাদের উপায় ছিল না। এই নখদন্তহীন প্রশাসন হয়তো আমাদের দাবি মেনে নেবে, নয়তো তাদের নিজেদের রাস্তা মাপতে হবে।’
আরও পড়ুনসম্পূরক বৃত্তি ও জকসু নির্বাচনের রূপরেখাসহ তিন দাবিতে অনশনে ৫ শিক্ষার্থী১৯ ঘণ্টা আগেযতক্ষণ তিন দফা দাবি আদায় না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত অনশন চলবে জানিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যতক্ষণ শরীরে শেষ রক্তবিন্দু আছে ততক্ষণ তাঁরা অনশন চালিয়ে যাবেন। ক্লাস-পরীক্ষা শেষ করে অনেকেই এসে সংহতি প্রকাশ করছেন। সকাল থেকে এ সংখ্যা বাড়ছে।
এদিকে গতকাল রাতে অনশনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে উপস্থিত হন। এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম ডিসেম্বরের মধ্যে জকসু নির্বাচন আয়োজনের এবং জানুয়ারি মাস থেকে সম্পূরক বৃত্তি দেওয়ার আশ্বাস দেন।
তবে সুস্পষ্ট রূপরেখা ছাড়া ও প্রশাসন থেকে লিখিত না পাওয়া পর্যন্ত অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে উপাচার্যকে জানিয়েছেন অনশনকারী শিক্ষার্থীরা।