নকীব খান। নন্দিত কণ্ঠশিল্পী ও সুরকার। গানে গানে তিনি পেরিয়ে এসেছেন পাঁচ দশকের দীর্ঘ পথ। এ উপলক্ষে ১৭ জানুয়ারি রাজধানীর ইয়ামাহা ফ্লাগশিপ সেন্টারে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তাঁর একক সংগীত সন্ধ্যা ‘সুরে সুরে পঞ্চাশে’। এ আয়োজন ও অন্যান্য প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন রাসেল আজাদ বিদ্যুৎ 

গানের ভুবনে পাঁচ দশকের পথ-পরিক্রমা নিয়ে আয়োজিত ‘সুরে সুরে পঞ্চাশে’ সংগীত সন্ধ্যায় কোন গানগুলো শোনাবেন? 

‘সুরে সুরে পঞ্চাশে’ কোন গানগুলো গাইব তা নিয়ে এখনও ভাবছি। রেনেসাঁ ব্যান্ডের পাশাপাশি একক ও মিশ্র অ্যালবামে গাওয়া কিছু গান শ্রোতারা এখনও শুনতে চান। কিন্তু চাইলেও শ্রোতাপ্রিয় সব গান তো শোনানো সম্ভব নয়। কারণ এ আয়োজনের জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তাই আয়োজক নূর ইভেন্টসের সবার সঙ্গে কথা বলেই গানের চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করতে হবে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরে দু-এক দিনের মধ্যেই অনুষ্ঠানের গান নির্বাচন করে ফেলব।        

পেছন ফিরে তাকালে শিল্পীজীবনের এ দীর্ঘ সফর কীভবে মনের পর্দায় ধরা দেয়?

ফেলে আসা সময়ের অনেক ঘটনাই চলচ্চিত্রের মতো মনের পর্দায় ভেসে ওঠে। ১৯৭২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সংগীতের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে পারা সত্যি স্বপ্নের মতো। কখনও ভাবিনি, গানে গানে এতটা পথ পাড়ি দিতে পারব। এই দীর্ঘ পথচলায় শ্রোতার ভালোবাসাই ছিল অনুপ্রেরণা। যদিও সংগীত বলয়ে বেড়ে উঠেছি, তারপরও কখনও শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন দেখিনি। প্রায় পাঁচ দশক আগে বড় ভাইয়ের সঙ্গে বালার্ক ব্যান্ড করেছিলাম। জিলু খান, আমি এবং ছোট ভাই পিলু খান তিনজনই এই ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। ব্যান্ডের অন্য সদস্যরাও ছিল আমাদেরই বন্ধু। তাই যা কিছু করেছি একান্ত নিজেদের ভালো লাগা থেকে। নানা ব্যস্ততায় ব্যান্ডের সদস্যরা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়লে বালার্ক ভেঙে যায়। কিন্তু ততদিনে আমি ও পিলু সংগীতের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছিলাম। সৃষ্টির নেশা আমাদের পেয়ে বসেছিল। যেজন্য সোলসে যোগ দেই। ‘তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে’, ‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে’-এর মতো গানগুলো সৃষ্টির পর কাজের স্পৃহা বেড়ে গিয়েছিল। সংগীত পেশা হিসেবে না নিলেও গান থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারিনি। তাই আমৃত্যু গানের সঙ্গেই নিজেকে জড়িয়ে রাখতে চাই।

সোলসে থাকাকানীল সময়ে সুরকার হিসেবে আলাদা পরিচিতি গড়ে নিতে পেরেছিলেন। তারপরও সোলস ছেড়ে রেনেসাঁ ব্যান্ড গড়ার কারণ?

 আশির দশকের বেশির ভাগ ব্যান্ডই পপরক, মেটাল, হার্ডরক গানকে প্রাধান্য দেওয়া শুরু করেছিল। সোলস সদস্যরা একই পথে হাঁটা শুরু করেছিলেন। এতে মেলোডি গানের যে তৃষ্ণা, সেটা কোনোভাবেই পূরণ হচ্ছিল না। আমার মতো একই চিন্তাধারার কয়েকজন মিউজিশিয়ান এক হওয়ার পরই মূলত রেনেসাঁ ব্যান্ডের জন্ম। আমরা যারা রেনেসাঁ গঠন করেছিলাম, তাদের সবার ইচ্ছা ছিল একটাই, কথানির্ভর মেলোডি গান করা। সে কারণে আমি আর পিলু যেমন সোলস ছেড়েছি, তেমনি ব্যান্ডের অন্যান্য সদস্যরাও তাদের পুরোনো দল ছেড়ে রেনেসাঁয় যোগ দিয়েছিলেন। গান হোক সামাজিক আন্দোলনের হাতিয়ার এই ছিল আমাদের চাওয়া। তাই রোমান্টিক গান যেমন তৈরি করেছি, তেমনি নানা বিষয় নিয়েও গান করতে পিছিয়ে আসিনি আমরা। ‘আজ যে শিশু’, ‘বেঁচে থাকা নিয়ে যাদের যুদ্ধ’, ‘তৃতীয় বিশ্ব’, ‘বাংলাদেশ তোমার বয়স হলো কত’, ‘একুশ শতকের গ্রাম-বাংলা’ এমন অনেক গানেই বিষয় বৈচিত্র্য তুলে ধরার চেষ্টা ছিল। এ কারণেই ব্যান্ডের নাম রাখা হয়েছে রেনেসাঁ যার অর্থ নবজাগরণ।   

কণ্ঠশিল্পী এবং সুরকার নকীব খানের মধ্যে চিন্তা-চেতনায় কোনো পার্থক্য খুঁজে পান?

পার্থক্য একটাই, পরিচিতিটা কণ্ঠশিল্পী চাইতে সুরকার হিসেবে বড় করে দেখা। আমার চিন্তা-চেতনার জায়গাটাও সুরকার নকীব খানই দখল করে রেখেছে। এর চেয়ে বড় সত্যি হলো, আমি কখনও কণ্ঠশিল্পী স্বপ্ন দেখিনি; শ্রোতার কাছে সুরকার হিসেবেই নিজেকে তুলে ধরতে চেয়েছি।

বিভিন্ন শিল্পীর একক গান ও অ্যালবাম ছাড়াও সিনেমায় সুরকার হিসেবে কাজ করেছেন। কিন্তু প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে আপনাকে দেখা মেলেনি, কারণ কী?

প্লেব্যাক নিয়ে আসলেই কখনও ভাবিনি। শর্ত মেনে কাজের সুযোগ দেওয়ার কারণেই ‘পাঞ্চ’ সিনেমায় সুরকার হিসেবে কাজ করা। আমি যে ধরনের গান গাই, যে ধরনের সুর করতে চাই, তেমন কোনো গান করার স্বাধীনতা পেলে প্লেব্যাক নিয়ে ভাবতে পারি।  

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত

বাংলাদেশের মেকআপ আর্ট জগতে নীরবে নতুনত্ব যোগ করে যাচ্ছেন সোনালী মিতুয়া। তার শৈল্পিক ইলিউশন এবং বডি পেইন্টিংগুলো আন্তর্জাতিক মানের, যা দেখে চোখ ফেরানো দায়। বর্তমানে ফিনল্যান্ডে মেকআপের ওপর উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন এই শিল্পী, যার ক্যানভাসে শৈশবের প্রথম গন্ধ ছিল তেল রং আর থিনারের তীব্রতা। মেকআপ ব্যবহার করে তিনি যে ক্যানভাস তৈরি করেন-তা এক কথায় অনন্য, অসাধারণ। 

সোনালী মিতুয়া কখনও তার মুখে ফুটে ওঠে ফাটল ধরা পৃথিবী, যেখান থেকে গজিয়ে ওঠে সবুজ লতা। কখনও দেখা যায় তার মুখটাই এক অর্ধেক যন্ত্র, অর্ধেক প্রকৃতি, যেন মানুষ আর মেশিনের মাঝের এক অদ্ভুত, কাব্যময় দ্বন্দ্ব।আর কখনও সেই মুখটাই অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, শুধু দেখা যায় এক ভয়ঙ্কর কালো গহ্বর — যেন মানুষের শূন্য আত্মা। এগুলো কোনো সিনেমার দৃশ্য না।এগুলো এক তরুণী মেকআপ আর্টিস্টের সৃষ্ট জীবন্ত শিল্পকর্ম।

আরো পড়ুন:

একা বাস করতে পারে যে পাখি

কেউ কটূক্তি করলে কী করবেন?

সোনালী মিতুয়ার মেকআপে একটা গল্প, একটা দর্শন, একটা গভীর বার্তা লুকিয়ে থাকে। যেখানে অধিকাংশ মানুষ মেকআপকে শুধু প্রসাধনের জগতে দেখে, সে সেখানে মেকআপকে তুলেছে এক উচ্চমাত্রার শিল্প হিসেবে। তার হাতে রঙ মানে—চামড়ার ওপরে নয়, বরং আত্মার ভাষা প্রকাশের এক মাধ্যম।

তার কাজে দেখা যায় প্রস্থেটিক মেকআপের প্রভাব— যেখানে মুখ বদলে যায়, গড়ে ওঠে নতুন রূপ, নতুন চরিত্র। এমন কৌশল একদিন তাকে সিনেমার পর্দায় প্রস্থেটিক আর্টিস্ট হিসেবে বড় জায়গায় নিয়ে যাবে—
এ কথা বলার জন্য বিশেষজ্ঞও হতে হয় না। 

এই মেয়েটির সবচেয়ে বড় শক্তি তার কল্পনাশক্তি। সে মুখের ভেতরেই ফুটিয়ে তোলে গল্প—একদিকে প্রকৃতি, ফুল, প্রজাপতি; অন্যদিকে প্রযুক্তি, ধ্বংস আর শূন্যতা। দেখলে মনে হয়, এই দুইয়ের টানাপোড়েনেই গড়ে উঠেছে তার শিল্পজগৎ।

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এই মেয়েটি এক অনুপ্রেরণা। সে প্রমাণ করছে—শিল্পের ভাষা যদি শক্ত হয়, তাহলে দেশের সীমা পেরিয়ে বিশ্বেও পৌঁছানো যায়। যেখানে মেকআপকে এখনো অনেকেই কেবল সাজের কাজ মনে করেন, এই মেয়েটি সেখানে দেখিয়েছে — মেকআপও হতে পারে দর্শন, প্রতিবাদ আর সৃষ্টির ক্যানভাস। 

তিনি জানেন,  প্রস্থেটিক আর্টে (বিশেষত কৃত্রিম অঙ্গ, ক্ষত বা ফ্যান্টাসি চরিত্র তৈরি) করা যায় দক্ষতার সাথে।  বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমায় যেখানে প্রস্থেটিকের ব্যবহার খুবই সীমিত, সেখানে সোনালী মিতুয়ার মতো একজন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পী আছেন, তার হাতেই তৈরি হতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসের চরিত্রদের নিখুঁত রূপ, অথবা আমাদের ফ্যান্টাসি সিনেমার ভিনগ্রহের প্রাণী।

সোনালী মিতুয়ার কাজগুলো দেখলেই বোঝা যায়, তিনি মেকআপকে স্রেফ সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যম হিসেবে দেখেন না, বরং এটিকে একটি শক্তিশালী গল্প বলার হাতিয়ার মনে করেন। 

একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষ প্রকৃতির মাঝে ফাটল ধরা পাথরের মতো এক রূপ ধারণ করেছেন। সবুজ, হলুদ ও লালের মিশ্রণে চোখের অংশটি গভীর এবং রহস্যময়, আর ফাটলের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসা লতা-পাতা জীবনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি তার পরিবেশ-সচেতনতা এবং ফ্যান্টাসি আর্টের দক্ষতা প্রমাণ করে।

সাদাকালো স্কেচের মতো দেখতে এই মেকআপটি অত্যন্ত কঠিন এবং চোখে পড়ার মতো। মুখের প্রতিটি অংশে পেন্সিল বা চারকোল দিয়ে আঁকা হ্যাচিংয়ের মতো স্ট্রোকগুলো ত্রিমাত্রিক চেহারাটিকে দ্বিমাত্রিক কমিক-বুক বা নয়ার চলচ্চিত্রের চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছে।

চোখ ও মুখের চারপাশে মাকড়সার জাল এবং ফুলা, রক্তবর্ণ চোখের পাপড়ি ভীতি ও কষ্টের এক শক্তিশালী অনুভূতি জাগায়। এটি বিশেষ করে হ্যালোইন বা হরর থিমের জন্য পারফেক্ট।

গভীর অন্ধকারে তোলা এই ছবিটি ‘অন্ধকার গহ্বর’ বা ‘কৃষ্ঞগহ্বর’ থিমের একটি চমকপ্রদ ইলিউশন মেকআপ। নিখুঁত কনট্যুরিং এবং রঙের ব্যবহারে মুখের এক অংশে যেন সত্যিই একটি ফাঁকা, গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সেঞ্চুরির অপেক্ষায় মুশফিকুর, তিন দিনেই জয় রাজশাহীর
  • কারা বেশি কাঁদেন? 
  • বর্তমান সংকটের জন্য সরকার দায়ী, দলগুলোর চাপে সিদ্ধান্ত বদল
  • প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত