কাপ্তাই হ্রদের প্রাণ ফেরাতে আসছে পাউবোর প্রকল্প
Published: 13th, January 2025 GMT
ধুঁকতে থাকা কাপ্তাই হ্রদের প্রাণ ফেরাতে উদ্যোগ নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এরই মধ্যে রাঙামাটির ‘কর্ণফুলী ও সংযুক্ত নদীসমূহের টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প’ নামে ডিপিপি প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে সাড়ে চার বছর। চলতি জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে চলবে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত।
প্রকল্পের মাধ্যমে কাচালং, রাইখিয়ং, শিলকসহ ১৩ নদী-খাল খননের মাধ্যমে হ্রদে পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়িয়ে সারাবছর কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন অব্যাহত রাখার ওপর জোর দেওয়া হবে। পাশাপাশি শুষ্ক মৌসুমে নৌযান চলাচলের পথ সুগম করা হবে। এ ছাড়া নাব্য বাড়ানো, পর্যটন শিল্পের বিকাশ, মৎস্য-কৃষি উৎপাদন বাড়ানোসহ ছয় ধরনের কাজের সমন্বিত পরিকল্পনা রয়েছে পাউবোর।
প্রকল্পের খাতভিত্তিক কাজের ওপর প্রথম যাচাই সভা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হয় গত ১৬ আগস্ট। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৮৫৩ কোটি টাকার ডিপিপি কাটছাঁট করে নামিয়ে আনা হয় ৬৯৬ কোটি টাকায়। পরে নতুন করে ৬৯৬ কোটি টাকার ডিপিপি গত ১০ নভেম্বর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল সোমবার পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মৎস্য উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ও পাবর্ত্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার নেতৃত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে প্রকল্পের সামগ্রিক বিষয় আলোচনা-পর্যালোচনা শেষে এটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পাউবো চট্টগ্রাম ও রাঙামাটি অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা বলেন, কাপ্তাই হ্রদ, কর্ণফুলীসহ ১৩ নদী-খালের টেকসই পানি ব্যবস্থাপনায় ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মোডিলিংয়ের (আইডব্লিউএম) সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ভিত্তিতে একগুচ্ছ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কাপ্তাই হ্রদের প্রাণ ফেরাতে ৬৯৬ কোটি টাকা প্রয়োজন। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে শুষ্ক মৌসুমে চট্টগ্রাম মহানগরের প্রায় কোটি মানুষ লবণাক্ত পানি নিয়ে যে সংকটে আছেন, তাও দূর হবে। বছরজুড়েই সচল থাকবে রাঙামাটি সদরের সঙ্গে পাঁচ উপজেলার নৌ যোগাযোগ, যা এখন নাব্য সংকটের কারণে বছরে আট মাস বন্ধ থাকে।
পরিবেশবিদ ও গবেষক ড.
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, কর্ণফুলী ও হালদা নদীর পানি চট্টগ্রাম শহরের মানুষকে ব্যবহারের জন্য সরবরাহ করে ওয়াসা। তবে শুষ্ক মৌসুমে এ দুই নদীতে পানি কমে যাওয়ার ফলে লবণাক্ততা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ে। তখন আমাদের কাপ্তাই হ্রদের মিঠা পানির দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। হ্রদের পানি পেলে আমরা লবণাক্তমুক্ত পানি শহরবাসীকে সরবরাহ করতে পারি।
১৩ নদী-খালের প্রাণ ফেরাতে বাধা ৯১ কিলোমিটার
খরস্রোতা কাচালং নদী ভারতের মিজোরাম থেকে সাজেক অববাহিকা হয়ে নেমে এসেছে। এক সময় নদীপথে নৌকা নিয়ে সাজেকের মাচালং খাল মুখ পর্যন্ত মানুষের আসা-যাওয়া ছিল। বাঘাইছড়ি থেকে লংগদুর মাইনীমুখ পর্যন্ত নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে হেঁটে নদী পার হয় মানুষ। এ নদীর ৪৭ কিলোমিটার খনন করে ৬৯ লাখ ঘনমিটার মাটি অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছে পাউবো। এতে খরচ হবে ১৯৯ কোটি টাকা। একইভাবে কাপ্তাই হ্রদের রাইখিয়ং নদীর ১১ কিলোমিটার খননে ৭৬ কোটি টাকা, শিজক নদীর ৯ কিলোমিটার খননে ৭০ কোটি টাকা লাগবে। এ ছাড়া হ্রদে সংযুক্ত আরও ১০টি খালে ২৬ কিলোমিটার খননে ৩২ কোটি টাকা খরচ করা হবে।
বরকলে সীমান্তবর্তী ভূখণ্ড রক্ষায় প্রতিরক্ষা বাঁধ
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বরকলের ঠেগামুখ বাজার ও বিওপি-সংলগ্ন এলাকায় নদী ভেঙে বাংলাদেশে ভূখণ্ড ভারতের সীমানায় চলে যাচ্ছে। তাই ঠেগামুখ বাজার এলাকায় প্রতিরক্ষা বাঁধ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে পাউবো। এ ছাড়া কাচালং নদী, শিজক, রাইখিয়ং নদী তীরবর্তী ১২ কিলোমিটার ভাঙনপ্রবণ তীর ও লেকের পাড়ের ৩৬টি সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, রাস্তাঘাট ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রক্ষায় কাজ করবে প্রতিষ্ঠানটি। খরচ ২৮৮ কোটি টাকা।
বছরে ৮ মাস বন্ধ যোগাযোগ
কাপ্তাই হ্রদঘেরা নানিয়ারচর, বাঘাইছড়ি, লংগদু, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলার সঙ্গে রাঙামাটি সদরের মানুষকে নৌপথে আসা-যাওয়া করতে হয়। তবে পানি শুকিয়ে গেলে বছরে আট মাস বন্ধ থাকে অন্য উপজেলার সঙ্গে নৌ যোগাযোগ।
হ্রদের পানি কোটি মানুষের ভরসা
শুষ্ক মৌসমে কর্ণফুলী ও হালদা নদীর পানি কমে গেলে বঙ্গোপসাগর থেকে লবণাক্ত পানি বাড়তে থাকে এ দুই নদীতে। তখন চট্টগ্রাম শহর ও আশপাশের এলাকায় পানিতে লবণাক্ততা বাড়ে। ওই সময় কাপ্তাই হ্রদ থেকে মিঠা পানি কর্ণফুলী নদীতে ছাড়া হলে লবণাক্ততার মাত্রা কমে আসে। তাই শুষ্ক মৌসুমে কর্ণফুলী ও হালদা নদীর লবণাক্ততা ঠেকাতে কাপ্তাই হ্রদের পানি সংরক্ষণে গুরুত্বের কথা বলা হয়েছে সম্ভাব্যতা সমীক্ষায়।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে বাসের নিচে, দুই বন্ধু নিহত
রাজধানীতে অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে বাসের নিচে পড়ে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার বনশ্রীর এফ ব্লক সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এদিন মতিঝিলের ফকিরাপুল মোড়ে প্রাইভেট কারের চাপায় আব্দুল মতিন (৩৬) নামে এক রিকশাচালক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া পাঁচ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ছয়জন প্রাণ হারিয়েছেন।
বনশ্রীতে নিহত দু’জন হলেন– আব্দুল্লাহ আল নোমান (২১) ও পাভেল মিয়া (২০)। নোমানের মামা আব্দুল হামিদ জানান, নিহতরা পরস্পর বন্ধু। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে ঢাকায় ঘুরতে যাওয়ার সময় দু’জন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। তারা রূপগঞ্জের নামারমুসুরি এলাকায় থাকতেন। নোমান মুড়াপাড়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। পাভেল তেমন কিছুই করতেন না। এ ঘটনায় নোমানের পরিবারের পক্ষ থেকে সড়ক নিরাপত্তা আইনে খিলগাঁও থানায় মামলা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী মোটরসাইকেল চালক টিপু সুলতান বলেন, সড়কটি যানবাহনে ঠাসা ছিল। এ কারণে গাড়ি চলছিল ধীরগতিতে। হঠাৎ একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা পাশ থেকে এসে নোমানের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এতে দু’জন সড়কের ওপর ছিটকে পড়েন। পরে মিয়ামি পরিবহনের একটি বাস তাদের চাপা দেয়। নোমান ঘটনাস্থলেই মারা যান। মোটরসাইকেল আরোহী পাভেলকে গুরুতর আহত অবস্থায় ফরাজী হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
খিলগাঁও থানার ওসি দাউদ হোসেন জানান, বাসটি জব্দ করা হয়েছে। চালক ও তার সহকারী পালিয়ে গেছে। অটোরিকশা চালককেও আটক করা যায়নি। মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে।
গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফকিরাপুল মোড়ে প্রাইভেটকারের চাপায় প্রাণ হারান রিকশাচালক আব্দুল মতিন। তাঁর বাড়ি রংপুরে। তিনি মুগদার মাণ্ডা এলাকায় একটি রিকশার গ্যারেজে থাকতেন। মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাইমিনুল ইসলাম জানান, প্রাইভেটকারের চালক আল আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়েছে। ময়নাতন্ত শেষে পরিবারের কাছে মতিনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে বিমানবন্দর থানার সিভিল এভিয়েশন কোয়ার্টার গেটের (সি-টাইপ) সামনের ফুটপাত থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার বয়স আনুমানিক ২৫ বছর। বিমানবন্দর থানার এসআই আমিনুল ইসলাম বলেন, ওই যুবকের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। মরদেহ ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে।
সড়কে ঝরল আরও ছয় প্রাণ
খুলনার ডুমুরিয়ায় তেলবাহী লরির চাপায় দুই নারী নিহত হয়েছেন। গতকাল বিকেলে উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের নরনিয়া মহিলা মাদ্রাসার কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন– রোকেয়া বেগম (৫৫) ও রশিদা বেগম (৪৫)।
গতকাল সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কাছে সেলফি পরিবহনের বাসের ধাক্কায় শামসুল হক নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুরে গণস্বাস্থ্য উপকেন্দ্রের নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন। সাভার থেকে অবসরের পাওনাদি নিয়ে ফেরার পথে তিনি প্রাণ হারান। শামসুলের বাড়ি চাঁদপুরে। ঘটনার পর গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মচারীরা সেলফি পরিবহনের পাঁচটি বাস আটক করেন।
এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অটোরিকশা ও পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে নয়ন মিয়া (৩৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০ জন। গতকাল বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মোগড়াপাড়া ইউনিয়নের রতনদী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে শান্ত ইসলাম (১৮) নামে এক তরুণ নিহত হয়েছেন। গতকাল উপজেলার কুষ্টিয়া-প্রাগপুর সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। শান্ত মথুরাপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের রিপন মণ্ডলের ছেলে।
রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মৃগী বাজারে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কে ছিটকে পড়ে স্বপন শীল নামে এক স্যালুন ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। গতকাল ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণপত্র বিলি করতে বেরিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি।