মারধরের প্রতিবাদে রূপগঞ্জে অটোরিকশাচালকদের সড়ক অবরোধ, যানজটে ভোগান্তি
Published: 14th, January 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বিআরটিসি বাসের ঠিকাদারের লোকজনের মারধরের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকেরা। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটায় রূপগঞ্জের এশিয়ান হাইওয়ে সড়কের মায়ারবাড়ী স্টেশন এলাকায় তাঁরা এ অবরোধ করেন। পরে পুলিশ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তাঁরা সড়ক ছেড়ে দেন।
অবরোধে অংশ নেওয়া কয়েকজন অটোরিকশাচালক বলেন, বছরের পর বছর ধরে তাঁরা কাঞ্চন থেকে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করেন। কিন্তু পাঁচ দিন ধরে কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় যাত্রী ওঠানামা করতে গেলে সড়কে চলাচলরত বিআরটিসি বাসের ঠিকাদারের লোকজন তাঁদের বাধা দিচ্ছেন। এ নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে তাঁরা সিএনজিচালকদের মারধর করেন। গতকাল সোমবার পুলিশের মধ্যস্থতায় বিআরটিসি বাসের ঠিকাদার ও তাঁদের লোকজনের সঙ্গে সিএনজিচালকদের বৈঠক হয়। বৈঠক থেকে ভবিষ্যতে এমনটি হবে না বলে ঠিকাদার আশ্বাস দেন।
অটোরিকশাচালকেরা জানান, আজ সকাল থেকে আবার কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় ঠিকাদারের লোকজন সিএনজিচালকদের যাত্রী পরিবহনে বাধা দেন। এ সময় তাঁরা কয়েকটি সিএনজি ভাঙচুরের পাশাপাশি অন্তত সাত চালককে মারধর করেন। এর প্রতিবাদে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে এশিয়ান হাইওয়ে সড়কের কাঞ্চন সেতুর টোল প্লাজার সামনে মায়ারবাড়ী স্টেশনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
এদিকে সড়ক অবরোধের কিছুক্ষণের মধ্যে সড়কের দুই পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়। ঢাকাগামী লেনে প্রায় চার কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের তৈরি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় আসা ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা। এ সময় দীর্ঘ যানজটে আটকে থেকে অনেকে পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে রওনা দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন। পরে সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সড়কে বিআরটিসি বাস ও অটোরিকশা চলাচল বন্ধ রাখার শর্তে সিএনজিচালকেরা অবরোধ তুলে নেন।
সোনারগাঁ থেকে বাণিজ্য মেলায় আসা শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিবার নিয়ে মেলায় এসেছি। চালকদের অবরোধের কারণে আসার পথেই লম্বা যানজট পোহাতে হয়েছে। মেলার সময় যেন এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ তৈরি না হয়, সেদিকে পুলিশের সতর্ক থাকা প্রয়োজন।’
এ বিষয়ে জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, সড়ক অবরোধের সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে চালকদের সঙ্গে কথা বলেছে। সিএনজিচালকদের অভিযোগ নিয়ে তাঁরা বিআরটিসি বাস সার্ভিস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্ধিরগঞ্জে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি খাল দখল করে চাঁদাবাজি!
সিদ্ধিরগঞ্জের হীরার্ঝিল আবাসিক এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) খাল দখল করে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে। এর ফলে ডিএনডি খালটি ফের সংকুচিত হতে শুরু করেছে। পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।
এদিকে এই এলাকাটি শিমরাইল পাম্প স্টেশনের নিকটবর্তী এলাকা হওয়ায় দোকানগুলোর কারণে ঠিকমতোন পানি সরবরাহ হতে পারছে না। তবে প্রশাসনের ভাষ্য, খুব শিগগিরই এখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে নাসিক ১নং ওয়ার্ডের হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বালু খালপাড় দখল করে হরেক রকমের ছোট-বড় প্রায় ২৫টি দোকান বসানো হয়েছে। হাবিবুল্লাহ হবুলের মালিকানাধীন হাবিবুল্লাহ টাওয়ার থেকে শুরু করে মোক্তার হোসেন সরকারের মালিকানাধীন বিএম ভবন, সিদ্দিকুর রহমানের মালিকানাধীন মমতাজ ভিলা, নূর মোহাম্মদ টাওয়ার, নুরুল হুদা’র বাড়ির সামনে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
এর বিনিময়ে প্রতি দোকান থেকে টাকা তুলছেন স্ব স্ব বাড়ির মালিকরা। চাঁদা তোলার বিষয়টি কয়েকজন বাড়িওয়ালা অকপটে স্বীকারও করেছেন।
এদিকে, দোকানগুলোর কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নির্মিত ওয়াকওয়ে দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে পথচারীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। পাশাপাশি হীরাঝিল এলাকাবাসীকেও ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, হীরাঝিল আবাসিক এলাকা একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। যানবাহন ও মানুষের চাপ বেশি থাকায় এই এলাকায় সবসময় যানজট লেগেই থাকে। চলাচলের সুবিধার্তে এলাকাবাসী ডিএনডি খালের পাড় দিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে যেতেন। কিন্তু কয়েকজন বাড়িওয়ালা এহেন কর্মকান্ডের কারণে হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।
এসব দোকানের কারণে খালের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পানি নিষ্কাশন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং চাঁদাবাজি প্রশাসন বন্ধ করতে না পারলে আগামীতে ফের বন্যা হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত প্রদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘কাবাব বাড়ি’ ভবনের মালিক মো. রফিক বলেন, আমার বাড়ির সামনে ডিএনডি খাল দখল করে আমি কোনো দোকান বসাই নি। আমি নিজেও চাই এখানে কোনো দোকান না বসুক। কিন্তু আমি যতটুকু শুনেছি টিএইচ তোফা নামের এক ব্যক্তি এই দোকানগুলো বসিয়েছেন। আমি অনেক চেষ্টা করেছে দোকানগুলো সরিয়ে দেওয়ার। আর এখানে দোকান বসিয়ে টাকা তোলার প্রশ্নই উঠে না।
একই অভিযোগ স্বীকার করে মমতাজ ভিলার মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অন্যসবাই দোকান বসিয়েছে। আমি তা দেখাদেখি ২টি দোকান বসিয়েছি। এটা আমার অপরাধ হয়েছে তা আমি নিজেও বুঝি। আমি মূলত সবার দেখাদেখি দোকান বসিয়েছি।
নুরুল হুদা নামের আরেক বাড়িওয়ালা বলেন, আমি দোকান বসিয়েছি। কিন্তু ওইখান থেকে কোনো অর্থ আদায় করি না। চাইলে এ বিষয়ে তদন্ত করা হতে পারে। আর এখানে দীর্ঘদিন ধরেই দোকান ছিল।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিনূর আলম বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুভ আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। তবে অভিযোগ যেহেতু পেয়েছি তাহলে অবশ্যই ঘটনাস্থলে লোক পাঠানো হবে। ডিএনডি খালপাড় থেকে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রথমে আমরা একাধিকবার তাদের নোটিশ পাঠাবো।
যদি তারা কথা না শোনেন তাহলে আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। খাল দখলের বিরুদ্ধে আমরা সবসময় জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন খাল পরিষ্কার করা শুরু করেছি। ডিএনডি খালসহ যেকোনো খাল এভাবে দখল হয়ে থাকলে দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি শিগগিরই এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ৮ ডিসেম্বর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে ডিএনডি প্রকল্প হাতে নেয় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। শুরুতে প্রকল্পের বাজেট ৫৫৮ কোটি টাকা ধরা হলেও তা বাস্তবায়নে সবমোট ১৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়।
২০২৫ সালের জুন মাসে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর প্রকল্প বাস্তবায়ন করাকালে তখন খালটি দখল না হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর পরই হীরাঝিল এলাকার কয়েকজন বাড়িওয়ালা ডিএনডি খাল দখল করে দোকান বসানো শুরু করে।