তাপসের ঘনিষ্ঠ সহচর মনির হোসেন গ্রেপ্তার
Published: 17th, January 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার মামলায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের ঘনিষ্ঠ সহচর মনির হোসেন হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১টার দিকে ওয়ারীর লারিমিনি স্ট্রিট এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মনির নিউমার্কেট থানার চাঁদনী চক বিজনেস ফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তিনি ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে অর্থ জোগান দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ আছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, মনির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায় নিউমার্কেট থানায় করা একটি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। গত ১৬ জুলাই বিকেলে শত শত শিক্ষার্থী-জনতা ঢাকা কলেজের সামনে অবস্থান নেন। তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন প্রতিহত করতে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। তাদের অতর্কিত হামলায় ঢাকা কলেজের ছাত্র শামীমসহ বেশ কয়েক ছাত্র-জনতা ও পথচারী গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় ঢাকা কলেজের ছাত্র মুহাম্মদ শামীম ২৪ নভেম্বর নিউমার্কেট থানায় মামলা করেন।
গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, গত ৫ আগস্টের পর আত্মগোপনে থাকা গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন মণ্ডল ওরফে লাদেন মামুনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাজধানীর উত্তরার রূপায়ণ সিটি এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর।
উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, বেশ ক’দিন ধরেই মামুনকে গ্রেপ্তারের জন্য আমরা তৎপরতা চালিয়ে আসছিলাম। এর মধ্যে খবর আসে, তিনি রূপায়ণ সিটি এলাকার একটি ভবনে আছেন। শুক্রবার বিকেলে সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ওসি আরও বলেন, উত্তরা পশ্চিম থানায় মামুনের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা করে হত্যার অভিযোগের একটি মামলা রয়েছে। তাকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গাজীপুরের বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে ১২টি হত্যা মামলাসহ দুই ডজন মামলা রয়েছে। ওই সব মামলায়ও তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, আত্মগোপনে থাকা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার রাতে ময়মনসিংহ নগরীর কলেজ রোড এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার মোস্তফা সরকার নিশাত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখার সাধারণ সম্পাদক। তার বাড়ি জামালপুর সদরে। নিশাতের বিরুদ্ধে ঢাকার একটি থানায় হত্যা মামলা রয়েছে। ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা শাখার ওসি শহিদুল ইসলাম এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারের পর নিশাতকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর কল জ র
এছাড়াও পড়ুন:
জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক
জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সালিসে আসা এক যুবককে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ওই যুবকের মা আনারা বেগম এ কথা জানান।
গ্রেপ্তার ওই যুবকের নাম আল-আমিন (৩২)। তাঁর বাড়ি নগরের বলাশপুর এলাকায়। মায়ের দাবি, আল-আমিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। সালিসে জমিজমার কাগজ ঠিক থাকায় সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে রাজি না হলে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ওই যুবক যুবলীগের সমর্থক। তাঁকে গ্রেপ্তারে কয়েকবার বাড়িতে অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। থানায় তাঁকে পেয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে তাঁকে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আল-আমিনের মা আনারা বেগম বলেন, ২০২১ সালে বলাশপুর এলাকায় স্বামীর পেনশনের ১৭ লাখ টাকায় ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি কেনেন তাঁরা। এর আগে ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি কেনার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেন এক ব্যক্তি। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিস হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তন হলে নিজের কেনা জমিতে বাড়ি করার উদ্যোগ নিলে বাধা হয়ে দাঁড়ান ওই ব্যক্তি ও তাঁর পক্ষের লোকজন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় উভয় পক্ষকে ডাকা হয়। গত শনিবার রাত আটটায় থানায় সালিস শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। সালিসে শেষ পর্যায়ে যখন জমির কাগজপত্র তাঁদের ঠিক পান সালিসকারীরা, তখন ওসি আল-আমিনকে তাঁর কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। পেছনে পেছনে তিনি গিয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হয়। এরপর আল-আমিনকে গারদে ঢুকিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় সাজানো রাজনৈতিক মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আনারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। আমার ছেলে ব্যবসা করে। তাকে রাজনৈতিক মামলায় পুলিশ কারাগারে পাঠিয়েছে।’
২৭ জুলাই আল-আমিনকে আদালতে পাঠানোর প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ৩৫ মিনিটে পুলিশের টহল দল নগরের আকুয়া ভাঙ্গাপুল এলাকায় অবস্থানকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে সদরের উত্তর দাপুনিয়ার সরকারি পুকুরপাড় সেলফি নামের স্থানে পাকা রাস্তার ওপর একদল সন্ত্রাসী জনতাবদ্ধ হয়ে রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি ভাঙচুর ও দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫টি মশাল, ২০টি লাঠি, ৩০টি ইটের টুকরা, ২৫টি কাচের টুকরা জব্দ করা হয়। এ ঘটনার পরদিন পুলিশ কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আল-আমিনকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ২৬ জুলাই রাত ১১টা ৪০ মিনিটে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রতিবেদনে পুলিশ আল-আমিনকে যুবলীগের সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করে।
থানার ওই সালিসে থাকা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মো. বাবু বলেন, থানা চত্বরের একটি ঘরে এসআই সজীব কোচের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের কাগজপত্র বোঝেন, এমন লোকজন নিয়ে সালিস শুরু হয়। একপর্যায়ে আল-আমিনকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যায়িত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে তাঁকে থানা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।
জানতে চাইলে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘১০ দিন আগে থেকে দারোগারা তাঁকে (আল-আমিন) ধরার জন্য খুঁজতেছে। ডেভিল হান্টের আসামি সে। আমাদের দুই দারোগা ছয় থেকে সাতবার তাঁর বাড়িতে রেড দিছে। সে যুবলীগের ফ্যাসিস্ট। মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তদন্তে প্রাপ্ত আসামি।’ ওসি বলেন, কোনো কাগজপত্র দিয়ে নোটিশ করে তাঁকে থানায় ডাকা হয়নি। বিচারক যদি মনে করে আমরা তাঁকে ইলিগ্যাল অ্যারেস্ট করেছি, তাহলে আদালত ফাইন্ডিংস দেবেন। আসামিকে থানা থেকে গ্রেপ্তার করা কী নিষেধ আছে?’ আদালতের প্রতিবেদনে ভিন্ন স্থান দেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জজ এটার বিচার করবে। যদি এমন কইরা থাকে, সমস্যা কী?’