Samakal:
2025-05-01@03:23:36 GMT

ঘাসফড়িং এবং পিপিলিকার দল

Published: 17th, January 2025 GMT

ঘাসফড়িং এবং পিপিলিকার দল

সবুজ রঙের একটা ঘাসফড়িং। উড়ে এসে তনয়দের বারান্দার সিঁড়ির নিচে আছড়ে পড়লো। অমনি একটি শব্দ হলো। কোথা থেকে যে এটি এলো, কে জানে। তবে পতঙ্গটিকে একপলক দেখার জন্য কৌতূহলী হয়ে উঠলো তনয়। 
এক পা দু-পা করে সে এগিয়ে গেলো ওটির দিকে। ঘাসফড়িংটার লম্বা পা দুটো ভাঙা। শরীরের সাথে কোনোরকম ঝুলে আছে। মেঝেতে ওটি চিৎ হয়ে পড়ে রইল। দেখে মনে হলো-এখন-তখন অবস্থা ওর। বারান্দার সিঁড়িতে বসে আধমরা ঘাসফড়িংটার ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনাবিভোর তনয়।
সে সময় একটি খয়েরি ডানার চিল ওদের উঠোনের আকাশে একবার চক্কর দিয়ে গেলো। চিলটা আনমনে চিঁউ চিঁউ গান গেয়ে উঠলো। তনয় ঘাসফড়িংটির দিকে অপলক তাকিয়ে রইলো। ততোক্ষণে নিথর হয়ে গেছে বেচারা ঘাসফড়িং। দুটো ছোটো মাছি কী মনে করে যেন তার ওপর দিয়ে কয়েকবার ওড়াউড়ি করলো। তারপর ওরা নিরুদ্দেশ হয়ে গেলো। কোথায় যে গেলো কে জানে। 
অল্পক্ষণ পরই কোথা থেকে যেন কয়েকটি পিপিলিকা ব্যস্ত হয়ে ছুটে এলো। তনয় মনে মনে ভাবলো, তবে কী মাছি দুটো গিয়ে পিপিলিকাদের খবরটা দিয়ে এলো! যে, এখানে একটা খাবার পড়ে আছে। তাড়াতাড়ি যাও। গিয়ে ভাগ বসাও। 
দেখতে না-দেখতে ঘাসফড়িংটির কাছে অনেক পিপিলিকা এসে জড়ো হলো। এতো পিপিলিকা যে-কোথা থেকে আসছে, তনয় ঠিক বুঝতে পারছে না। পিপিলিকা আরও আসছে। আরও। আরও। দূর থেকে ওরা সারি বেঁধে খাবারের কাছে ছুটে আসছে। 
তনয় ভাবলো, দেখি তো গিয়ে ওরা কোথা থেকে আসছে। ভেবে পিপিলিকার সারিটা দেখে সে এগিয়ে চললো। বেশিদূর যেতে হলো না তাকে। মিটার তিনেক পথ গিয়েই সে পিপিলিকার বাসাটি পেয়ে গেলো। 
তনয় দেখতে পেলো দেয়ালের গায়ে সরু একটি ফাটল। ফাটলের ভেতর থেকে সারি বেঁধে পিপিলিকা বেরিয়ে আসছে। সৈনিকদের মতো শৃঙ্খলাবদ্ধ পিপিলিকার সারি। মার্চ করতে করতে যেন ওরা বেরিয়ে আসছে। পিপিলিকার সারিটা দেখে তনয় মনে মনে ভাবলো, ওরা কতই না পরিশ্রমী! নিজের খাবার নিজেরাই জোগাড় করে। 
এরই মধ্যে পিপিলিকারা মৃত ঘাসফড়িংটিকে কামড়ে ধরে টানাটানি শুরু করে দিলো। প্রথমে ওরা ঘাসফড়িংটিকে টেনে নড়ানোর চেষ্টা করলো। যথাযথ নাড়াতেও পারলো। পরে তারা এটিকে কামড়ে ধরে নিয়ে তাদের বাসার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করলো।
তনয় অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো, এতো ছোটো ছোটো পিপিলিকা! অথচ কী চমৎকারভাবেই না খাবারটাকে কামড়ে ধরে বাসায় নিয়ে চলেছে। আচ্ছা, ঘাসফড়িংটাকে বাসা পর্যন্ত নিয়ে যেতে ওদের কতো সময় লাগতে পারে? এক ঘণ্টা। না, এক ঘণ্টায় ওরা কাজটা পারবে বলে মনে হয় না। কম করে হলেও ওদের তিন ঘণ্টা সময় লাগার কথা। তনয় মনে মনে ভাবলো, আচ্ছা দেখিই না ওরা কী করে।
মিনিট দশেক পর দেখা গেলো, ওরা ঘাসফড়িংটাকে মাত্র দুই সেন্টিমিটার পথ নিয়ে যেতে পেরেছে। তাতে কী! কাজটি করতে গিয়ে ওরা যে-হাল ছেড়ে দেয়নি, এটিই বড়ো কথা। আশ্চর্য ধৈর্য পিপিলিকার। আশ্চর্য অধ্যবসায়ী ওরা। আনন্দের সাথে ওরা কাজটি করে চলেছে। 
যতোই ওরা  ওরা তো আর জানে না যে-বিনা পরিশ্রমেই খাবারটা তাদের বাসার কাছে পৌঁছে গেছে। পরে যখন বুঝতে পারল, তখন মনে হলো খুশিই হয়েছে ওরা। তাই সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে স্রষ্টাকে অনেক ধন্যবাদ দিলো। কারণ ওদের ধারণা, মহান স্রষ্টাই তাদের পরিশ্রম কমিয়ে দিয়েছেন। 
তুমুল উদ্দীপনা নিয়ে পিপিলিকারা খাবারটা বাসার ভেতর নিয়ে যাওয়ার কাজে মেতে ওঠলো। এতো বড়ো একটা ঘাসফড়িং! ওরা এটিকে বাসার ভেতরে নিয়ে যাবে কেমন করে? দেয়ালের ফোকর দিয়ে সেটিকে ঢোকানো তো মুশকিল। ওরা প্রথমে ওটার লম্বা পা দুটো কেটে আলাদা করে নিলো। পরে মাথাটা কাটলো। তারপর শরীরটাও। এভাবে পিপিলিকারা তনয়ের চোখের সামনে আস্ত ঘাসফড়িংটাকে টুকরো টুকরো করে ওদের বাসায় নিয়ে গেলো। 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা

বছর পাঁচেক আগেও ধান কাটার শ্রমিকেরা বৈশাখ মাসের অপেক্ষায় থাকতেন। বৈশাখে হাওরের বুকজুড়ে সবুজ ধান যখন সোনালি রঙ ছড়াতে শুরু করে, তখন থেকেই দূরদূরান্ত থেকে হাওরে আসতে থাকেন ধান কাটার শ্রমিকেরা। কিন্তু, এই চিত্র দ্রুত বদলাচ্ছে। হাওরের কৃষক এখন ধান কাটার জন্য বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করেন। ফলে কৃষকের শ্রম এবং অর্থ দুটোরই সাশ্রয় হচ্ছে। তবে, কর্মহীন হয়ে পড়ছেন কৃষি শ্রমিকেরা। বাধ্য হয়ে তারা পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে ঝুঁকছেন অন্য পেশায়।

তিন বছর হলো ধান কাটার পেশা ছেড়েছেন মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া গ্রামের মো. মকবুল মিয়া। এখন তিনি সারাবছর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান।

আরো পড়ুন:

খুলনার বরফশ্রমিক
নেই নিয়োগপত্র, আইডি কার্ড ও ছুটি

ফুড ডেলিভারিম্যান: খাবারের রাজ্যে অতৃপ্ত দিনরাত

মকবুল মিয়া বলেন, ‘‘আগে বছরের ছয় মাস বর্ষায় নৌকা বাইতাম, আর হুগনা সিজন আইলে নিজের জমি চাষ করতাম, আবার মাইনষের জমিতেও কামলা দিতাম। যা আয় অইতো তাই দিয়া আমরার ছয়জনের সংসার চইল্যা যাইতো। কিন্তু, যহন থেইক্যা নতুন নতুন মেশিন হাওরে আইতাছে, তহন থেইক্যা আমরার আর বেইল নাই।’’

‘‘কেউ আর আমরারে আগের মতন দাম দেয় না। কাম করলেও ঠিকমতো টেহা পাই না, তাই পুষায় না,’’ বলেন এই কৃষিশ্রমিক।

মকবুলের মতো ধান কাটা, মাড়াই, রোদে শুকানো, ঝাড়া, কাঁধে বহন করার মতো স্বাধীন পেশা ছেড়েছেন অষ্টগ্রামের ফয়জুল, ইটনার শামছুল মিয়া, নিকলীর ফরিদ উদ্দিনসহ অসংখ্য শ্রমিক। এক সময় যারা এ পেশায় দলবেঁধে কাজ করতেন, এখন দৃশ্যপট পুরোটাই ভিন্ন। ধান কাটার পেশা বদলে তারা এখন কেউ রিকশাচালক, কেউ চায়ের দোকানদার, কেউ চটপটি-ফুচকার দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

তারা বলছেন, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির গতির সঙ্গে তারা কখনো তাল মেলাতে পারবেন না। কৃষকরাও তাদের শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছেন না। বেশি জমি যাদের আছে তারাও আধুনিক পদ্ধতির প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন। যে কৃষক অল্প জমিতে চাষাবাদ করেছেন, তারাও আর পয়সা খরচ করে কৃষিশ্রমিকের ওপর নির্ভর করছেন না। তারা পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা নিচ্ছেন। ফলে খেটে খাওয়া শ্রমিকেরা পড়েছেন বিপাকে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সনাতন পদ্ধতিতে এক বিঘা জমির ধান কাটতে প্রচুর সময় লাগে। ফসল কাটার পরে বহন ও মারাই করা, তারপর বস্তায় সংরক্ষণ করার জন্যও অনেক শ্রমিকের দরকার। এটুকু ৬ থেকে ৭ জন শ্রমিকের সারা দিনের কাজ। তার জন্য মজুরি গুনতে হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। কিন্তু, এ কাজে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করলে সময় এবং অর্থ দুটোই কম লাগে।

বৈশাখে বর্ষার পানি ও বৈরী আবহাওয়া না থাকায় কৃষকেরা হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটছেন। বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে ঝড়-তুফান শুরু হলে পাকা ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে তারা যে পদ্ধতিতে ধান কাটা সহজ এবং দ্রুত হয় সেই পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার পুরো জেলায় এক লাখ ৬৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওর এলাকাতেই আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। ফলন ভালো হওয়ায় এই ধান থেকে এবার প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ধান কাটতে এ বছর হাওর অঞ্চলে ৩৫ হাজার শ্রমিক নিয়োজিত আছেন। এই সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধান কাটতে কৃষক কম্বাইন্ড হারভেস্টারসহ ৪১৩টি ধান কাটার যন্ত্র ব্যবহার করছেন। 

জেলা শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. খোরশেদ উদ্দিন বলেন, ‘‘মানুষের পেশা পরিবর্তনশীল। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের বিভিন্ন পেশা বেছে নিতে হয়। কিন্তু, কৃষি এমন একটা পেশা, যারা এ পেশা রপ্ত করেছেন তাদের জন্য নতুন পেশায় আসা খুব কঠিন। বর্তমানে কৃষিকাজে যেভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, তাতে কৃষিশ্রমিকেরা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।’’

‘‘শুধু কৃষিতেই নয়, বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে,’’ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকারকেই সুদৃষ্টি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান, মাঠে যদি কৃষক ও শ্রমিক ন্যায্য শ্রমমূল্য না পান, তাহলে কৃষিও একদিন হুমকির মুখে পড়বে।’’

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ