সবুজ রঙের একটা ঘাসফড়িং। উড়ে এসে তনয়দের বারান্দার সিঁড়ির নিচে আছড়ে পড়লো। অমনি একটি শব্দ হলো। কোথা থেকে যে এটি এলো, কে জানে। তবে পতঙ্গটিকে একপলক দেখার জন্য কৌতূহলী হয়ে উঠলো তনয়।
এক পা দু-পা করে সে এগিয়ে গেলো ওটির দিকে। ঘাসফড়িংটার লম্বা পা দুটো ভাঙা। শরীরের সাথে কোনোরকম ঝুলে আছে। মেঝেতে ওটি চিৎ হয়ে পড়ে রইল। দেখে মনে হলো-এখন-তখন অবস্থা ওর। বারান্দার সিঁড়িতে বসে আধমরা ঘাসফড়িংটার ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনাবিভোর তনয়।
সে সময় একটি খয়েরি ডানার চিল ওদের উঠোনের আকাশে একবার চক্কর দিয়ে গেলো। চিলটা আনমনে চিঁউ চিঁউ গান গেয়ে উঠলো। তনয় ঘাসফড়িংটির দিকে অপলক তাকিয়ে রইলো। ততোক্ষণে নিথর হয়ে গেছে বেচারা ঘাসফড়িং। দুটো ছোটো মাছি কী মনে করে যেন তার ওপর দিয়ে কয়েকবার ওড়াউড়ি করলো। তারপর ওরা নিরুদ্দেশ হয়ে গেলো। কোথায় যে গেলো কে জানে।
অল্পক্ষণ পরই কোথা থেকে যেন কয়েকটি পিপিলিকা ব্যস্ত হয়ে ছুটে এলো। তনয় মনে মনে ভাবলো, তবে কী মাছি দুটো গিয়ে পিপিলিকাদের খবরটা দিয়ে এলো! যে, এখানে একটা খাবার পড়ে আছে। তাড়াতাড়ি যাও। গিয়ে ভাগ বসাও।
দেখতে না-দেখতে ঘাসফড়িংটির কাছে অনেক পিপিলিকা এসে জড়ো হলো। এতো পিপিলিকা যে-কোথা থেকে আসছে, তনয় ঠিক বুঝতে পারছে না। পিপিলিকা আরও আসছে। আরও। আরও। দূর থেকে ওরা সারি বেঁধে খাবারের কাছে ছুটে আসছে।
তনয় ভাবলো, দেখি তো গিয়ে ওরা কোথা থেকে আসছে। ভেবে পিপিলিকার সারিটা দেখে সে এগিয়ে চললো। বেশিদূর যেতে হলো না তাকে। মিটার তিনেক পথ গিয়েই সে পিপিলিকার বাসাটি পেয়ে গেলো।
তনয় দেখতে পেলো দেয়ালের গায়ে সরু একটি ফাটল। ফাটলের ভেতর থেকে সারি বেঁধে পিপিলিকা বেরিয়ে আসছে। সৈনিকদের মতো শৃঙ্খলাবদ্ধ পিপিলিকার সারি। মার্চ করতে করতে যেন ওরা বেরিয়ে আসছে। পিপিলিকার সারিটা দেখে তনয় মনে মনে ভাবলো, ওরা কতই না পরিশ্রমী! নিজের খাবার নিজেরাই জোগাড় করে।
এরই মধ্যে পিপিলিকারা মৃত ঘাসফড়িংটিকে কামড়ে ধরে টানাটানি শুরু করে দিলো। প্রথমে ওরা ঘাসফড়িংটিকে টেনে নড়ানোর চেষ্টা করলো। যথাযথ নাড়াতেও পারলো। পরে তারা এটিকে কামড়ে ধরে নিয়ে তাদের বাসার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করলো।
তনয় অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো, এতো ছোটো ছোটো পিপিলিকা! অথচ কী চমৎকারভাবেই না খাবারটাকে কামড়ে ধরে বাসায় নিয়ে চলেছে। আচ্ছা, ঘাসফড়িংটাকে বাসা পর্যন্ত নিয়ে যেতে ওদের কতো সময় লাগতে পারে? এক ঘণ্টা। না, এক ঘণ্টায় ওরা কাজটা পারবে বলে মনে হয় না। কম করে হলেও ওদের তিন ঘণ্টা সময় লাগার কথা। তনয় মনে মনে ভাবলো, আচ্ছা দেখিই না ওরা কী করে।
মিনিট দশেক পর দেখা গেলো, ওরা ঘাসফড়িংটাকে মাত্র দুই সেন্টিমিটার পথ নিয়ে যেতে পেরেছে। তাতে কী! কাজটি করতে গিয়ে ওরা যে-হাল ছেড়ে দেয়নি, এটিই বড়ো কথা। আশ্চর্য ধৈর্য পিপিলিকার। আশ্চর্য অধ্যবসায়ী ওরা। আনন্দের সাথে ওরা কাজটি করে চলেছে।
যতোই ওরা ওরা তো আর জানে না যে-বিনা পরিশ্রমেই খাবারটা তাদের বাসার কাছে পৌঁছে গেছে। পরে যখন বুঝতে পারল, তখন মনে হলো খুশিই হয়েছে ওরা। তাই সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে স্রষ্টাকে অনেক ধন্যবাদ দিলো। কারণ ওদের ধারণা, মহান স্রষ্টাই তাদের পরিশ্রম কমিয়ে দিয়েছেন।
তুমুল উদ্দীপনা নিয়ে পিপিলিকারা খাবারটা বাসার ভেতর নিয়ে যাওয়ার কাজে মেতে ওঠলো। এতো বড়ো একটা ঘাসফড়িং! ওরা এটিকে বাসার ভেতরে নিয়ে যাবে কেমন করে? দেয়ালের ফোকর দিয়ে সেটিকে ঢোকানো তো মুশকিল। ওরা প্রথমে ওটার লম্বা পা দুটো কেটে আলাদা করে নিলো। পরে মাথাটা কাটলো। তারপর শরীরটাও। এভাবে পিপিলিকারা তনয়ের চোখের সামনে আস্ত ঘাসফড়িংটাকে টুকরো টুকরো করে ওদের বাসায় নিয়ে গেলো।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সকালের সবচেয়ে বরকতময় সময় ব্যবহারের ৭ কৌশল
সকাল মানুষের জীবনের একটি মূল্যবান সময়, যা দিনের বাকি অংশের জন্য সুর নির্ধারণ করে। সকাল আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার, শরীর ও মনকে প্রস্তুত করার এবং দিনের লক্ষ্য অর্জনের একটি সুবর্ণ সুযোগ।
সামাজিক মাধ্যম, কাজের চাপ এবং পারিবারিক দায়িত্ব আমাদের অনেক সময় কেড়ে নেয়, তাই সকালকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে আমরা জীবনকে আরও উৎপাদনশীল করতে পারি।
১. আল্লাহর সঙ্গে দিনের শুরুফজরের নামাজের ১৫-২০ মিনিট আগে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া এবং দোয়া করা জীবনকে আমূল বদলে দিতে পারে। এই সময়টি শান্ত ও পবিত্র, যখন আল্লাহর সঙ্গে কোনো বাধা থাকে না।
কে আছে আমাকে ডাকার, আমি সাড়া দেব? কে আছে আমার কাছে চাওয়ার, আমি দান করব? কে আছে ক্ষমা প্রার্থনা করার, আমি ক্ষমা করব?সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,১৪৫নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘প্রতি রাতে, যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বাকি থাকে, তখন আমাদের রব নিকটতম আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘কে আছে আমাকে ডাকার, আমি সাড়া দেব? কে আছে আমার কাছে চাওয়ার, আমি দান করব? কে আছে ক্ষমা প্রার্থনা করার, আমি ক্ষমা করব?”’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,১৪৫)।
তাহাজ্জুদের সময় আপনার হৃদয়ের কথা আল্লাহর কাছে প্রকাশ করুন। এতে মানসিক শান্তি বাড়বে এবং দিনের জন্য ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে। যদি আপনি নতুন হন, সপ্তাহে এক দিন থেকে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে এটি অভ্যাসে পরিণত করুন।
ফজরের আগে অবশিষ্ট সময়ে কোরআন তিলাওয়াত করুন, কারণ কোরআনে বলা হয়েছে, ‘ভোরে কোরআন পড়া (ফেরেশতাদের) দ্বারা প্রত্যক্ষ করা হয়।’ (সুরা ইসরা. আয়াত: ৭৮)।
আরও পড়ুনইশরাকের নামাজ: সকালের আলোয় আল্লাহর নৈকট্য ০৪ জুলাই ২০২৫২. ফজরের পর ঘুম থেকে দূরে থাকুনফজরের নামাজের পর ঘুমিয়ে পড়া অনেকের অভ্যাস, কিন্তু এটি সকালের বরকতময় সময় নষ্ট করে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ আমার উম্মতের জন্য সকালের সময়কে বরকতময় করেছেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৬,৪৮১)।
এই সময়ে বড় বড় কাজ সহজে সম্পন্ন করা যায়, কারণ এতে আল্লাহর বিশেষ বরকত রয়েছে।
আল্লাহ আমার উম্মতের জন্য সকালের সময়কে বরকতময় করেছেন। মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৬,৪৮১ফজরের পর ঘুমের প্রলোভন এড়াতে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। এই সময়ে পড়াশোনা, কোরআন মুখস্থ করা বা কোনো ব্যক্তিগত প্রকল্পে কাজ করা যায়। এটি দিনের বাকি সময়ে অবসরের জন্য সময় বাঁচায় এবং আগামী দিনে আরও তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস তৈরি করে।
বিশ্বের সফল ব্যক্তিরাও ভোর চারটা বা পাঁচটায় উঠে কাজ শুরু করার কথা বলেন, যা তাদের সাফল্যের একটি রহস্য।
৩. করণীয় তালিকা তৈরি করুনএকটি করণীয় তালিকা তৈরি করা দিনের পরিকল্পনাকে সুসংগঠিত করে। আমরা প্রায়ই মনে মনে কাজের পরিকল্পনা করি, কিন্তু মস্তিষ্কের ধারণক্ষমতা সীমিত। একটি ডায়েরি বা ফোনের নোট অ্যাপে কাজের তালিকা লিখে রাখলে সময় ও শক্তি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়। সম্পন্ন হওয়া কাজগুলো তালিকা থেকে কেটে দেওয়ার একটা আলাদা আনন্দ আছে।
এই তালিকায় দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যও অন্তর্ভুক্ত করুন। যেমন কোরআনের একটি নির্দিষ্ট অংশ মুখস্থ করা বা একটি নতুন দক্ষতা শেখার পরিকল্পনা। এটি আপনাকে দিনের শুরুতে ফোকাসড রাখবে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াবে।
আরও পড়ুনযে ৪টি পরীক্ষা নবীজি (সা.)–এর জীবনকে দৃঢ়তা দিয়েছে২২ জুলাই ২০২৫বিশ্বের সফল ব্যক্তিরাও ভোর চারটা বা পাঁচটায় উঠে কাজ শুরু করার কথা বলেন, যা তাদের সাফল্যের একটি রহস্য।৪. সকালে স্ক্রিন থেকে দূরে থাকুনসকালের মূল্যবান সময় সামাজিক মাধ্যমে বা ফোনে অযথা স্ক্রল করে নষ্ট করা উচিত নয়। অনেকে সকালে ফোন হাতে নিয়ে ‘শুধু একটু দেখে নিই’ ভেবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হারিয়ে ফেলেন। এটি মানসিক চাপ বাড়ায় এবং সকালের শান্তি নষ্ট করে।
নিয়ম করুন, সকালের নাশতা বা কিছু কাজ শুরু না করা পর্যন্ত ফোন বা সামাজিক মাধ্যমে যাবেন না। সকালে খবর পড়া এড়িয়ে চলুন। কারণ, এটি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে পারে। যখন ফোন ব্যবহার করবেন, তখন ইতিবাচক ও প্রেরণাদায়ক কনটেন্ট দেখুন, যা আপনার দিনকে উজ্জ্বল করবে।
৫. শরীরচর্চা করুনশরীরচর্চার উপকারিতা আমরা সবাই জানি। বিশেষ করে এই সময়ে, যখন অনেকে বাড়ি থেকে কাজ করছেন, শরীরচর্চা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। বাড়িতে কাজ করার ফলে ঘাড়ে ও পিঠে ব্যথা, পেশির সমস্যা বাড়ছে।
সকালে মাত্র ৩০ মিনিট শরীরচর্চা, যেমন যোগ, পাইলেটস, হাই-ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং বা ব্রিস্ক ওয়াক, আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়াবে এবং মনকে সতেজ করবে।
ইউটিউবে হাজারো ধরনের ব্যায়ামের ভিডিও পাওয়া যায়, যা বাড়িতে সামান্য জায়গায় করা যায়। যদি বাইরে যাওয়ার সুযোগ থাকে, তবে সকালে ৩০ মিনিট হাঁটুন। লক্ষ্য হলো শরীরকে সচল রাখা এবং শক্তি বৃদ্ধি করা।
আরও পড়ুনসুস্থ জীবন যাপনে মহানবী (সা.)-এর ৯ অভ্যাস২৪ জুলাই ২০২৫সকালে মাত্র ৩০ মিনিট শরীরচর্চা, যেমন যোগ, পাইলেটস, হাই-ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং বা ব্রিস্ক ওয়াক, আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়াবে এবং মনকে সতেজ করবে।৬. পুষ্টিকর নাশতা গ্রহণব্যস্ততার কারণে অনেকে সকালের নাশতা বাদ দেন, কিন্তু গবেষণা বলছে, পুষ্টিকর নাশতা দিনভর মনোযোগ বাড়ায়, অপ্রয়োজনীয় চিনির লোভ কমায় এবং শক্তি জোগায়। নাশতায় উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার, যেমন ওটস বা মাল্টিগ্রেইন রুটি, স্বাস্থ্যকর চর্বি যেমন অ্যাভোকাডো বা বাদাম, গ্রিক ইয়োগার্ট এবং ফল অন্তর্ভুক্ত করুন।
সময় কম থাকলে একটি স্মুদি তৈরি করুন—পালংশাক, আপেল এবং হিমায়িত কলা ব্লেন্ড করে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর নাশতা তৈরি করা যায়। এটি দিনের শুরুতে সবুজ শাকসবজি গ্রহণের একটি সহজ উপায়।
৭. নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনবাড়ি থেকে কাজ করার সময় অনেকে ক্যাজুয়াল পোশাকে থাকেন। বরং সকালে সুন্দর পোশাক পরুন, যা আপনার মেজাজ উজ্জ্বল করবে। একটু পছন্দের সুগন্ধি ব্যবহার করলে আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
আল্লাহ সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯১নবীজি (সা) বলেছেন, ‘আল্লাহ সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯১)। নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা শুধু বাহ্যিক নয়, বরং এটি আপনার মানসিক প্রস্তুতি ও দিনের জন্য উৎসাহ বাড়ায়।
সকাল আমাদের দিনের ভিত্তি। ইসলাম আমাদের শেখায় যে সকাল আল্লাহর বরকত নিয়ে আসে। তাহাজ্জুদ, ফজরের পর জাগ্রত থাকা, করণীয় তালিকা তৈরি, স্ক্রিন থেকে দূরে থাকা, শরীরচর্চা, পুষ্টিকর নাশতা এবং নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন—এই সাতটি অভ্যাস আমাদের সকালকে উৎপাদনশীল করবে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
সূত্র: দ্য মুসলিম ভাইব ডট কম
আরও পড়ুনরহমতের দুয়ারে হাজিরা১৫ জুন ২০২৪