আরজি কর হাসপাতালের চিকিৎসককে ধর্ষণ-হত্যা: সঞ্জয়ের যাবজ্জীবন কারাদ
Published: 20th, January 2025 GMT
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় আরজি কর নামের একটি হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার মামলায় সঞ্জয় রায় নামে একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। স্থানীয় সময় সোমবার (২০ জানুয়ারি) পশ্চিমবঙ্গের শিয়ালদহে অবস্থিত কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত এই রায় দেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় আজ বেলা ২টা ৪৫ মিনিটের কিছু পরে শিয়ালদহে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস কলকাতা পুলিশের সাবেক সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন। সঞ্জয়কে গত শনিবার আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩১ বছর বয়সী স্নাতকোত্তর শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়। আজ রায় দেওয়া হল।
শনিবার সঞ্জয় রায়কে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৬৪ (ধর্ষণের শাস্তি), ৬৬ (মৃত্যুর কারণ ঘটানোর শাস্তি) এবং ১০৩ (হত্যার শাস্তি) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়। বিচারক অনির্বাণ দাস বলেন, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্ত শুরু করা সিবিআই যে প্রমাণ হাজির করেছে তা যথেষ্ট ছিল এবং সেই ভিত্তিতে রায় ঘোষিত হয়।
শনিবার রায় ঘোষণার আগে বিচারক দাসের প্রশ্নের উত্তরে সঞ্জয় রায় বলেন, তাকে ফাঁসানো হয়েছে। সোমবার দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটে আদালতে উপস্থিত করার পরেও সঞ্জয় তার নির্দোষ হওয়ার দাবিতে অটল থাকেন।
সিবিআইয়ের পক্ষের আইনজীবী এই অপরাধকে ‘বিরলতম’ হিসেবে উল্লেখ করে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার আবেদন জানান। সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, ‘‘বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের বিশ্বাস অটুট রাখতে আমরা সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন জানাই।’’ তবে সঞ্জয় রায়ের আইনজীবী মৃত্যুদণ্ডের বিকল্প শাস্তি দেওয়ার প্রার্থনা করেন যাতে আসামি সংশোধনের সুযোগ পান।
মৃত চিকিৎসকের মা–বাবার পক্ষের আইনজীবী সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন জানিয়ে বলেন, ‘‘সিভিক ভলান্টিয়ার হিসেবে সঞ্জয় রায়ের দায়িত্ব ছিল হাসপাতালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু তিনি যাকে রক্ষা করার কথা, তার বিরুদ্ধেই এমন জঘন্য অপরাধ করেছেন।’’
গত বছরের ৯ আগস্ট এক শিক্ষানবিশ নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটনা ঘটে। এর পরপরই ভারতজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। জুনিয়র ডাক্তাররা দেশের অনেক অংশে রোগীদের দেখতে অস্বীকার করে দেন বিচারের দাবি। তারা ভুক্তভোগীর বিচার এবং হাসপাতালে নারীদের নিরাপত্তা দাবি করেন।
ঢাকা/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ব আইয় র র আইনজ ব
এছাড়াও পড়ুন:
আবারও নিরপরাধ দাবি হিটু শেখের, ভিন্ন কথা সাক্ষীদের
আলোচিত শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় তৃতীয় দিনের মতো গতকাল মঙ্গলবার সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে মাগুরায়। এদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসানের আদালতে ১০ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এদিনও মামলার প্রধান আসামি আছিয়ার বোনের শ্বশুর হিটু শেখ আদালত কক্ষে ঢোকার আগে সাংবাদিকদের কাছে নিজেকে নিরপরাধ দাবি করেন। কিন্তু আদালত সূত্র জানায়, সাক্ষীরা প্রত্যেকে হিটু শেখের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
এর আগে সোমবার ছিল এই মামলার দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্য গ্রহণ। সেদিনও শুনানি শেষে আদালত থেকে বের হওয়ার সময় হিটু শেখ নিজেকে নিরপরাধ দাবি করেন।
গতকাল কড়া নিরাপত্তার মধ্যে হিটু শেখসহ ৪ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। বাদীপক্ষের আইনজীবী ও নারী-শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি মনিরুল ইসলাম মুকুল জানান, গত তিন কার্যদিবস টানা সাক্ষ্য গ্রহণ চলেছে। গতকাল ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। সাক্ষীদের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন, আছিয়ার বোন হামিদা ছিলেন। এ নিয়ে মোট ১৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হলো। এ মামলায় মোট ৩৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে। আজ বুধবার মাগুরা ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা সাক্ষ্য দেবেন। গতকাল আসামিপক্ষের আইনজীবী স্বাধীনভাবে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। তিনি আদালতে আসামিরা নির্দোষ বলে যুক্তি উপস্থাপন করেন।
গতকালও আদালত কক্ষে ঢোকার আগে হিটু শেখ ঘটনার জন্য তাঁর পুত্রবধূ আছিয়ার বোনকে দায়ী করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। হিটু শেখ বলেন, ঘটনার সময় আমিসহ আমার দুই ছেলে বাড়িতে ছিলাম না। সকালে বাইরে যাওয়ার সময়ও আছিয়াকে সুস্থ দেখে গেছি। আছিয়ার বোন এ সময় একাই বাড়িতে ছিল। সাংবাদিকরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখেন। দোষী হলে যে শাস্তি হয়, মাথা পেতে নেব।
বোনের বাড়ি বেড়াতে এসে ৬ মার্চ রাতে মাগুরা সদরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুর হিটু শেখের ধর্ষণের শিকার হয় ৮ বছরের শিশু আছিয়া। ঢাকা সিমএমএইচে ১৩ মার্চ তার মৃত্যু হয়।