Samakal:
2025-12-13@10:15:58 GMT

আলু আবাদ করে পুঁজিতে টান কৃষকের

Published: 23rd, January 2025 GMT

আলু আবাদ করে পুঁজিতে টান কৃষকের

‘হামার তিস্তার চরে এবার আলু নয়, সোনা ফলছে। সেই সোনা দেখে খুশি হইছুনু। কিন্তু এখন আলু হামাগোর গলার কাঁটা হইছে। লোনের চাপে পানির দামে বিক্রি করবার নাগছি। তাতে অর্ধেক লোকসান হইবে। এখন কী করমো, কী খামো সে চিন্তায় আইতোত (রাতে) নিন্দ (ঘুম) আইসে না।’

আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন উলিপুরের অর্জুনেরচরের কৃষক নজরুল ইসলাম। তিন একর জমিতে আলু আবাদ করতে ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ৮০ হাজার টাকা ঋণ নিতে হয়েছে তাঁকে। প্রতি একরে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ফলন ভালো হলেও দাম পাচ্ছেন না। উৎপাদন খরচ নিয়ে প্রতি কেজি আলুর দাম ২০ টাকা পড়লেও, বিক্রি করতে হচ্ছে ১২-১৩ টাকায়।

ক্ষোভ প্রকাশ করে গোড়াই পিয়ার চরের আলুচাষি চাঁদ মিয়া বলেন, ‘আড়তদারের কাছে অগ্রিম টাকা নিয়া চড়া দামে সার-বীজ ও জমি ভাড়া করে ৮ একর জমিত আলুর আবাদ করছি। এখন ১০০ টাকার আলু ১৩ টাকায় বিক্রি করছি। যুদ্ধ করে আবাদ করে আমার কী হয়। কৃষককে দেখার কেউ নেই।’

কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক হাজার ১০০ হেক্টর। এর মধ্যে তিস্তার দুই পারে উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ২১টি চরেই ৬০০ হেক্টরে আলুর চাষ হয়েছে। বাম্পার ফলন হলেও, ভালো বাজার দাম না পেয়ে কৃষক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। শত শত বিঘা জমির আলু ক্ষেতেই পড়ে আছে। আড়তদারের ঋণের চাপ সামলাতে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন ইঁদুর মারার চরের হামজা শেখ ও চর নাটসালার নুর ইসলামের মতো অনেক কৃষক।

তাদের স্বজনরা জানান, দাম কমে যাওয়ায় আলু ক্ষেতেই পড়ে আছে। তুলতে গেলে শ্রমিকের খরচসহ আনুষঙ্গিক খরচ বেড়ে যাবে। ঋণ শোধ করা সম্ভব হবে না। আলু চাষ করে এবার তারা ফকির হয়ে গেছেন।

কিশোরপুর চরের কৃষক সাইদুর রহমান জানান, এলাকায় হিমাগার নেই। আলু সংরক্ষণের জন্য কুড়িগ্রাম শহরে যেতে হয়। সব কৃষক আবার এ সুযোগ পান না। দালালরা আগে থেকেই হিমাগার বুকিং দিয়ে রাখে। তাদের কারণে সবাই হিমাগারে সাশ্রয়ী মূল্যে আলু রাখার সুযোগ পান না। তাতে খুব একটা লাভ পান না কৃষক। আলু সংরক্ষণে তারা উলিপুরে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে হিমাগার নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

হিমাগার অগ্রিম বুকিংয়ের বিষয়ে কথা বলতে উলিপুরে বিক্রয় প্রতিনিধি মতিয়ার রহমান ও রফিকুলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে কোনো মন্তব্য করেননি তারা।

থেতরাই ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বলেন, কৃষকরা আর্থিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায় চড়া সুদে ঋণ নিয়ে আবাদ করেন। সেই আলু সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে কম দামে বিক্রি করেন। এ কারণে ভালো ফলন হলেও দাম না পেয়ে তাদের ভাগ্য ফেরে না। আলু সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন তারা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলেন, সংকট নিরসনে উপজেলা পর্যায়ে হিমাগার নির্মাণের পাশাপাশি প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে আলু সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আলু ও সবজি সংরক্ষণে স্থানীয় পর্যায়ে হিমাগার নির্মাণের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু হবে। তখন কৃষক ঝুঁকি থেকে মুক্তি পাবেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

হাদিকে গুলির ঘটনা আ.লীগের নির্বাচনবিরোধী ছকের অংশ: নাহিদ

ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনা কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নির্বাচনবিরোধী ছকের অংশ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এই মন্তব্য করেন তিনি।

আরো পড়ুন:

জুলাই অভ্যুত্থানকে নস্যাতের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান

দুর্নীতি-সন্ত্রাসের অভিযোগ পেলে প্রার্থিতা বাতিল: নাহিদ 

নাহিদ ইসলাম বলেন, “হাদির ওপর হামলা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, আওয়ামী লীগের নির্বাচনবিরোধী ছকের অংশ।”

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগকে নরমালাইজ করার চেষ্টা চলছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করার চেষ্টা দেখছি।”

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় সব জায়গায় আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করা, প্রশাসনিকভাবে প্রতিহত করা এবং ভারতের হস্তক্ষেপ বন্ধ করার কথা বলেছি।”

পতিতরা নির্বাচন ঠেকাতে চাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সবাইকে দায়িত্ব নিয়ে নির্বাচনি পরিবেশ ফেরাতে হবে।”

নাহিদ বলেন, “আমরা সর্বাত্মকভাবে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখব বলেছি। হামলাকারী ও পরিকল্পনাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছি।”

এর আগে সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে করেছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বৈঠকে তিনটি দলের দুজন করে প্রতিনিধি অংশ নেন।

বিএনপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন-দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি দলে ছিলেন-দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।

এছাড়া এনসিপির প্রতিনিধিদলে ছিলেন- দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ।

ঢাকা/রায়হান/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ