জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, এখন থেকে সারাবছর অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে। তবে ৩১ জানুয়ারির পরে রিটার্ন জমা দিলে বকেয়া আয়করের ওপর ২ শতাংশ হারে জরিমানা গুণতে হবে। রোববার আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, অনলাইন ট্যাক্স রিটার্ন সাবমিট বন্ধ হবে না। ৩৬৫ দিনই করদাতা ই-রিটার্ন দিতে পারবে। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত যারা ট্যাক্স রিটার্ন দেবেন, তাদের করের হিসাব এক রকম হবে। এরপর যারা দেবেন, তারাও অনলাইনে দিতে পারবেন, তবে তাদের অটোমেটিক্যালি অতিরিক্ত চার্জ চলে আসবে। বকেয়া করের ওপর প্রতি মাসে এই চার্জ হবে ২ শতাংশ। সর্বোচ্চ সময় ২৪ মাস পর্যন্ত তা আমলে নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে মোট ৪৮ শতাংশের বেশি কারও কাছ থেকে চার্জ নেওয়া হবে না। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো.

হাফিজুর রহমান ও অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার। অনুষ্ঠানে অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়ার হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, আজ পর্যন্ত অনলাইন রিটার্ন জমা দিয়েছেন ১২ লাখ করদাতা। আশা করছি, ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এটা ১৪ লাখের কাছাকাছি যাবে।

আবদুর রহমান খান বলেন, এখন কাস্টমসকে ব্যবহার করছি ব্যবসার সহায়ক যন্ত্র হিসেবে। একটা সময় ছিল, যখন দেশের রাজস্বের প্রধান উৎস ছিল কাস্টমস। তখন আয়কর দেওয়ার মতো জনশক্তি ছিল না। ভ্যাট প্রথা ছিল না। তখন কেবল কাস্টমস থেকে রাজস্ব আয় হতো।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ধীরে ধীরে মধ্য বিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণি তৈরি হয়েছে। তাতে ধীরে ধীরে আয়কর আদায় বেড়েছে। এরপর ভ্যাট চালু করা হয়েছে। সেখান থেকেও বড় একটা রাজস্ব আসছে। এখনও দুই-তৃতীয়াংশ রাজস্ব পরোক্ষ কর থেকে আসে। এর মানে এই নয় যে, কাস্টমসের গুরুত্ব কমে গেছে। দেশের নিরাপত্তা ও ব্যবসায় সহায়তার জন্য কাস্টমসের গুরুত্ব একই রকম রয়ে গেছে। 

কাস্টমসের গুরুত্ব তুলে ধরে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, কাস্টমসে ট্যাক্স আরোপের মূল উদ্দেশ্য রাজস্ব আহরণ নয়। এর মাধ্যমে স্থানীয় শিল্পকে বিকশিত করা হয়৷ বাইরের প্রতিযোগীদের দমিয়ে না রাখলে না স্থানীয় শিল্প বিকশিত হবে না। আবার দেশের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্যও অনেক কিছু আমদানি রোধ করতে হয়। তাই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাস্টমসের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, আমরা বন্ডের বিষয়ে অভিযোগ শুনি, সেটাও আমরা অটোমেশনের মধ্যে এনেছি। কার্যক্রম শুরু করতাম, তবে ব্যবসায়ীদের অনুরোধে এক মাস পিছিয়েছি। আমরা আশা করি, সামনে মাস থেকে অপারেশন শুরু করতে পারব।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আয়কর র ট র ন ক স টমস র

এছাড়াও পড়ুন:

৩০ নভেম্বরের মধ্যে করদাতাদের ই-রিটার্ন জমা দিতে বলেছে এনবিআর

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি করদাতা অনলাইনে তাঁদের ই-রিটার্ন জমা দিয়েছেন। গত আগস্টে সব করদাতার জন্য অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

ই-রিটার্ন সিস্টেম ব্যবহার করে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে সব ব্যক্তি করদাতাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে এনবিআর। গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ অনুরোধ জানায় সংস্থাটি।

গত বছর নির্দিষ্ট এলাকার অধিক্ষেত্রের ব্যক্তি করদাতা, সারা দেশে ব্যাংকে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়। তাতে ১৭ লাখের বেশি করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেন।

দেশে বর্তমানে ১ কোটি ১২ লাখের মতো কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন। তাঁদের মধ্যে প্রতিবছর মাত্র ৪০ লাখ টিআইএনধারী রিটার্ন দাখিল করেন।

এনবিআর জানায়, এক বিশেষ আদেশের মাধ্যমে চলতি বছর ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের প্রবীণ করদাতা, শারীরিকভাবে অসমর্থ বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন করদাতা, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতা, মৃত করদাতার পক্ষে আইনগত প্রতিনিধি কর্তৃক রিটার্ন দাখিল এবং বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিক ছাড়া সব ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

চলতি ২০২৫-২৬ করবর্ষে যেসব করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন, তাঁরাও চাইলে অনলাইনে ই-রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। অন্যদিকে ই-রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধনসংক্রান্ত সমস্যার কারণে কোনো করদাতা অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে না পারলে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট উপকর কমিশনারের কাছে সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে আবেদন করলে অতিরিক্ত বা যুগ্ম কর কমিশনারের অনুমোদনক্রমে কাগুজে রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। এই সময়সীমা ৩১ অক্টোবর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা ১৫ দিন বাড়ানো হয়েছে।

এনবিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করদাতার পক্ষে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধিও অনলাইনে ই-রিটার্ন জমা দিতে পারছেন। এ ছাড়া বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতাদের ক্ষেত্রে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও তাঁদের পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, ই-মেইল ইত্যাদি তথ্য দিয়ে ই-মেইল করলে ই-রিটার্নের নিবন্ধন লিংক পাঠানো হয়। এর মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতারা ই-রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধন করে সহজেই অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন। কোনো ধরনের কাগজপত্র বা দলিল আপলোড না করেই করদাতারা তাঁদের আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায়ের প্রকৃত তথ্য ই-রিটার্ন সিস্টেমে এন্ট্রি করে ঝামেলাহীনভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন। ই-রিটার্ন দাখিলের পর তাৎক্ষণিকভাবে জমা স্লিপ পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আয়কর সনদও প্রিন্ট করে নিতে পারছেন করদাতারা।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ই-রিটার্ন জমা সহজ করার জন্য গত বছরের মতো এবারও করদাতাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ই-রিটার্নসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যায় করদাতাদের সহায়তা দিতে একটি কল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। আবার ওয়েবসাইটে ই-রিটার্নসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা লিখিতভাবে জানালেও তার সমাধান পাচ্ছেন করদাতারা। কোনো করদাতা সশরীর নিজ নিজ কর অঞ্চলে গিয়েও ই-রিটার্ন জমা দেওয়াসংক্রান্ত সেবা নিতে পারছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৩০ নভেম্বরের মধ্যে করদাতাদের ই-রিটার্ন জমা দিতে বলেছে এনবিআর