গোপালগঞ্জে সমন্বয়কদের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা
Published: 26th, January 2025 GMT
গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের ওপর হামলার ঘটনায় ৩৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
রবিবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফয়সাল জামান ফাহিম বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় মামলাটি করেন। গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মির মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ওসি মির মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান বলেন, “গতকাল শনিবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেলে গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফয়সাল জামান ফাহিম বাদী হয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখ ও নাম না জানা ২০ জনকে আসামি করে মামলাটি করেন।”
আরো পড়ুন:
গোপালগঞ্জে সমন্বয়কদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, আহত ৫
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের হামলায় পাবনায় ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আহত
তিনি আরো বলেন, “মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা শরীফুল ইসলাম সোহাগসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এখন পযর্ন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।”
প্রসঙ্গত, গতকাল শনিবার বিকালে গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। হামলায় দুই সমন্বয়কসহ পাঁচজন আহত হন।
ঢাকা/বাদল/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ প লগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ইবিতে সাংবাদিককে হেনস্তা
দু্র্বৃত্ত আখ্যা দিয়ে সংবাদ প্রকাশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীকে হেনস্তার ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে শাহ আজিজুর রহমান হলে জুলাই আন্দোনকারীরা এ হেনস্তা করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তিনি হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী ও ডেইলি ক্যাম্পাসের ইবি প্রতিনিধি ওয়াসিফ আল আবরার।
আরো পড়ুন:
ইবিতে ছুটি ছাড়াই কর্মস্থলে অনুপস্থিত সেই মোজাম্মেল
রাসূল (সা.)-কে নিয়ে কটুক্তিকারী ইবি কর্মকর্তার বহিষ্কার দাবি
এ ঘটনায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ইবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়, যুগ্ম-সম্পাদক মেহেদী হাসান হাফিজ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবাহুল ইসলামসহ বিভিন্ন নেতাকর্মীরা ফেসবুকে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। এছাড়া সমন্বয়কদের একটি পক্ষও এ নিয়ে প্রতিবাদ জানান।
হল সূত্রে জানা যায়, আবরার বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হলে অবৈধভাবে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করছিলেন। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে প্রাধ্যক্ষ বরাবর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন এবং হল থেকে নামানোর দাবি জানান।
এরই জেরে মঙ্গলবার রাতে ওই হলের ৬-৭ জন আবাসিক শিক্ষার্থী আবরারের রুমে (৪০৫) গিয়ে তাকে হল থেকে নেমে যাওয়ার জন্য বলেন। একপর্যায়ে ইবির বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক সাজ্জাতুল্লাহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বাঁধা দেন। এতে তাদের মাঝে বাকবিতণ্ডা শুরু হলে আবরার জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে যায়। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নেওয়া হলে সেখান থেকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
শিক্ষার্থীদের দাবি, ওয়াসিফ আল আবরার কলেজে থাকা অবস্থায় পাবনার বেড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। জুলাই আন্দোলনেও তার বিতর্কিত ভূমিকা ছিল। চারদিকে যখন আন্দোলনকারীরা একে একে শহীদ হচ্ছিলেন, তখন তিনি হাসিমাখা ছবি পোস্ট করেন। গত ৫ আগস্টের পর নির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে তাকে হল থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। অনেকদিন ধরে ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায় তিনি অবৈধভাবে হলে ছিলেন, তার নিজস্ব সিট ছিল না। প্রাধ্যক্ষ নামিয়ে দেওয়ার পরে তাকে কিছু শিক্ষার্থী আশ্বাস দিয়ে বলেন, নামিয়ে দিয়েছে তো কি হয়েছে, আমরা তোকে দেখব।
এদিকে, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের দুই গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় এবং দফায় দফায় তাদের বাকবিতণ্ডা ও সংঘর্ষে জড়াতে দেখা যায়। এ সময় দুই গ্রুপের শিক্ষার্থীরা ভিসি বাংলোর সামনে অবস্থান নেন। পরে রাত সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম ও প্রক্টরিয়াল বডির সহায়তায় প্রক্টর অফিসে একটি সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এসময় দুই গ্রুপের শিক্ষার্থীরা তাদের অভিযোগ উত্থাপন করেন।
এ বিষয়ে ইবির সহ সমন্বয়ক নাহিদ হাসান বলেন, “আবরারের বিষয়ে আমরা চাই এক জায়গায় বসে তার নেগেটিভ ও পজিটিভ নিউজ উভয়ই ধরে নিয়ে প্রমাণ করি, আবরার ফ্যাসিস্টদের দোসর কিনা? আমি মনে করি আবরার জুলাই আন্দোলনের পক্ষে ছিল। তাই তাকে আমি ফ্যাসিস্টের দোসর মনে করি না। এছাড়া জুলাই আন্দোলনের পর বিভিন্ন ঘটনায় আমরা হলে গেছি। তদ্রুপ আজকের ঘটনায়ও আমরা গেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় তাকে হল থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
ভিসি বাংলোয় অবস্থানের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “আবরারের ইস্যু নিয়ে এমন কোনো ব্যক্তি নেই, যার সঙ্গে আমি কথা বলিনি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এ ব্যাপারে আমরা বসতে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও এ ব্যাপারে জানেন। কিন্তু সবাই জানার পরও এক টেবিলে বসার কোনো পরিস্থিতি হয়নি। তারপরও উপাচার্য স্যারের কাছে যাওয়ার প্রক্রিয়া ভাঙ্গায় আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিনহাজ বলেন, “গত ৫ আগস্টের পর তাকে আশ্রয় দিচ্ছে অন্য একটি পক্ষ। তারা প্রাধ্যক্ষ স্যারের উপর দিয়ে বলেছে, ‘আমরা দেখছি তুই হলে থাক।’ তারা ছাত্রলীগের পুনর্বাসন করছে, যা ছাত্ররা মেনে নেয়নি। তার রুমে গিয়ে তাকে হল থেকে নেমে যেতে বলেছে শিক্ষার্থী। হল থেকে নামিয়ে দেওয়ার পরও সে আবার উঠেছে। এগুলো সে নিজ থেকে করেনি, নিশ্চয় কারো ইন্ধন আছে। তাকে বলার পর সে যখন নেমে যাচ্ছিল, তখন কিছু শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়। এদের হয়তো আবরার ফোন দিয়েছে। এক সময় সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। কিন্তু গুরুতর আহত হয়েছে এমন না।”
অবৈধভাবে হলে অবস্থান করা শিক্ষার্থী ওয়াসিফ আল আবরার বলেন, “আমাকে ৭-৮ জন লোক গিয়ে বলে ‘তুই ছাত্রলীগ করতি।’ আমি বললাম, না আমি ছাত্রলীগ করতাম না। তারা জানায়, এটার প্রমাণ আছে তাদের কাছে। আমি বলি, অবৈধভাবে হলে থাকি না, আমার বড় ভাইয়ের সঙ্গে থাকি। আরো অনেকেই তো অবৈধভাবে থাকে, তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত কি? ঘটনাস্থলে কয়েকজন বলে, ‘২ মিনিটের মধ্যে হল থেকে বের হবি।’ আমি বের হয়ে যাচ্ছিলাম। আমাকে তারা বলে, ‘আপনি হলুদ সাংবাদিক, পরে আবার ঝামেলা করবেন।’ এটা বলে তারা আমার ফোন নেওয়ার চেষ্টা করে। পরে ৮-৯ জন মিলে রুমের লাইট বন্ধ করে আমাকে মারধর করে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. পারভেজ হাসান বলেন, “তার তেমন গুরুতর কিছু হয়নি। আমরা ধারণা করছি, তার শ্বাসনালীতে আঘাত লেগেছে। প্রথমে সে সুস্থই হয়ে গেছিল। পরে শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছিল এবং বমি করছিল। এ সময় রোগীর সঙ্গে কথা বলে এবং বাইরে থেকে আবার তার উপর আক্রমণ হতে পারে- এমন কথা শুনে তার নিরাপত্তার কথাসহ যাবতীয় বিষয় চিন্তা করে কুষ্টিয়ায় রেফার করেছি।”
শাহ আজিজুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এটিএম মিজানুর রহমান বলেন, “আবরার আমাদের হলের এটাস্ট না। অনেকদিন ধরেই সে হলে থাকে। সে ছিল জিয়া হলের এটাস্ট। আমরা হল কর্তৃপক্ষ একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মাইগ্রেশানের সুযোগ দিয়েছি। কিন্তু সে এই সুযোগ নেয়নি। আমরা যখন অছাত্রদের হল ত্যাগ করার নোটিশ করি, সে তখন পুনরায় সুপারিশ নিয়ে আসে। কিন্তু পূর্বের মাইগ্রেশান দেওয়ার পর আর এ সুযোগ আমি কাউকে দেয়নি।”
তিনি বলেন, “আমি অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সিট দেওয়ার জন্য তাকে হল ত্যাগ করার নির্দেশ দেই এবং সে চলে যায়। কিন্তু গত পরশু আমি জানতে পারি, সে আবার হলে আসছে। পরে তার রুমমেটকে কল দিয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে অনুরোধ করি, আবরার যেন হলে না আসে। তার রুমমেট আমাকে আশ্বস্ত করে জানায়, সে ব্যবস্থা করবে। তারপরও আজ রাতে আবরার হলে আসলে এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, যা খুবই অপ্রত্যাশিত; এটা উচিত হয়নি।”
এ নিয়ে প্রক্টরিয়াল বডি জানান, এ ঘটনায় সমন্বয়কদের প্রথম ভুল. তাদের সমন্বয়হীনতা এবং প্রথমেই হল প্রাধ্যক্ষ বা প্রক্টরিয়াল বডিকে না জানানো। দ্বিতীয় ভুল, যারা ওই হলের স্টোকহোল্ডার না, তারা সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগ না করে সেখানে গেছে। সর্বোপরি এসব ঘটনায় জড়িতদের বিরূদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হল কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন থেকে পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মাঝে বিদ্যমান বিভাজন দূর করে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যেতে হবে।
সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, “আমি প্রক্টরকে বলেছি। এ বিষয়ে তিনি যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।”
ঢাকা/তানিম/মেহেদী