নেইমার জুনিয়রের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে আল হিলাল। দুই পক্ষ সমঝোতার ভিত্তিতে চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। আল হিলাল বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে নেইমারের সঙ্গে চুক্তি বাতিল হয়েছে। ক্লাবটি নেইমারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে এবং ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা জানাচ্ছে। 

সৌদি লিগ ছেড়ে নেইমার যাচ্ছেন ব্রাজিলের লিগে। খেলবেন শৈশবের ক্লাব সান্তোসে। সংবাদ মাধ্যম আগেই জানিয়েছে, সান্তোসে যোগ দেওয়ার বিষয়ে মৌখিকভাবে সম্মত হয়েছেন সাবেক বার্সেলোনা ও পিএসজি তারকা। 

নতুন করে জানা গেছে, নেইমার তার মেডিকেল সম্পন্ন করতে ব্রাজিলে যাচ্ছেন। সান্তোস বৃহস্পতি বা শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন করে ভক্তদের সঙ্গে তার পরিচয় করিয়ে দিতে পারে। সব পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোলে, ২ ফেব্রুয়ারি সাও পাওলোর বিপক্ষে দ্বিতীয় অভিষেক হতে পারে তার। 

নেইমার আল হিলাল থেকে সান্তোসে যোগ দিতে বিশাল অঙ্কের বেতন ছাড় দিচ্ছেন বলে খবর। আল হিলালে তিনি মৌসুমে ১০০ মিলিয়ন ইউরো বেতন পেতেন। সপ্তাহে তার বেতন ছিল প্রায় ১.

৫ মিলিয়ন ইউরো। সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, সান্তোস তাকে সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার ইউরো বেতন দেবে। 

বর্তমান সান্তোসের ফুটবলাররা সপ্তাহে ২৫ হাজার ইউরোর মতো বেতন পান। ওই হিসাবে নেইমার দ্বিগুন বেতন নিচ্ছেন। তারপরও তিনি তার বর্তমান বেতনের প্রায় ৯৬.৬৭ শতাংশ  ছাড় দিয়েই সান্তোসে খেলতে সম্মত হয়েছেন। সংবাদ মাধ্যম নিউজ নাইটের মতে, সান্তোসের সঙ্গে দেন-দরবার করে বেতন বাড়ানোর কোন ইচ্ছে নেই নেইমার জুনিয়রের। 

গত মৌসুমে অবনমনে চলে যাওয়া সান্তোসের সঙ্গে নেইমার প্রাথমিকভাবে মাত্র ৬ মাসের চুক্তি করছেন। থাকছে এক বছর চুক্তি নবায়নের শর্তও। তবে ৬ মাস পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারে যোগ দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। মেসি-সুয়ারেজের সঙ্গে তার জুটি গড়ার গুঞ্জন আছে। আবার মেসির প্রতিপক্ষও হয়ে যেতে পারেন নেইমার। গুঞ্জন আছে, শিকাগো ফায়ার এফসি তাকে দলে নিতে আগ্রহী। 

নেইমার ব্রাজিলের হয়ে ২০২৬ বিশ্বকাপ খেলে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ করতে চান। তার বয়স মাত্র ৩২ বছর। সংবাদ মাধ্যম দাবি করেছে, সান্তোসে খেলে ফর্মে ফিরতে চান নেইমার। মার্চে ফিরতে চান ব্রাজিলের জার্সিতে। যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডায় অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপের পরে মেজর লিগে খেলবেন নাকি বুট জোড়া তুলে রাখবেন ওই সিদ্ধান্ত আপাতত তোলাই থাকছে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আল হ ল ল

এছাড়াও পড়ুন:

২২ ক্যাডার নিয়ে চলতেন স্বেচ্ছাসেবক দলের জিতু

বগুড়ায় মেয়েকে উত্ত্যক্ত ও বাবাকে খুনে অভিযুক্ত জিতু ইসলাম দলীয় প্রভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কথায় কথায় যাকে-তাকে অহেতুক মারধর করতেন। চলতেন ২২ জনের ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। তারা সবাই নানা অপকর্মে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামি। তাঁর আয় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা থেকে। গতকাল রোববার এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, জিতু ফুলবাড়ী কারিগরপাড়ার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে। ২০০৩ সালে এলাকায় বালু ব্যবসা নিয়ে প্রতিপক্ষ রবিউল ইসলামকে খুন করেন। সেই মামলায় তাঁর ১৪ বছর সাজা হয়। সাজা খেটে তিন বছর আগে বের হন। এর পর এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। তাঁর বাহিনীতে যে ২২ জন সদস্য, তারা কেউ রাজনৈতিক দলের পদ-পদবিতে নেই। হত্যা মামলা ছাড়াও জিতুর বিরুদ্ধে একটি মাদক ও একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।

ফুলবাড়ীর এক মুদি দোকানি বলেন, জিতু মাঝেমধ্যে তাঁর দোকান থেকে বাকি নিতেন। দু’বছরে বাকির পরিমাণ প্রায় ৪৮ হাজার টাকা হয়। তখন একদিন টাকা চান। এ কারণে জিতু তাঁকে মারধর করে নাকে খত নেন।
বৃন্দাবন এলাকার আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মাঝেমধ্যে জিতু তাঁর বাহিনী নিয়ে হাজির হতেন। মোটা অঙ্কের চাঁদা চাইতেন। চাঁদার কমপক্ষে অর্ধেক দিয়ে তবে নিস্তার পাওয়া যেত। এ ছাড়া ঈদে সেলামির নামে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো তাঁকে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা চান জিতু। না দেওয়ায় দোকানে ককটেল হামলা করেন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় আগস্টের পর জিতু বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়ে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ছোট ভাই মিতুলও তাঁর বাহিনীর সদস্য।

জিতু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সহসাধারণ সম্পাদকের পদ পান। সন্ত্রাসী হয়ে দলের পদ পাওয়ায় এলাকায় তাঁকে নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পদ পেয়ে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

এলাকার এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘জিতুর কারণে আমরা মুখ খুলতে পারি না। সে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে এলাকা অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি পেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তার নির্যাতনের শিকার অর্ধশতের কম হবে না। তার বখাটেপনার কারণে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হতো না।’
এক বছর আগে থেকে ফুলবাড়ির পাশেই শহরের শিববাটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন জিতু। সেই এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক শাকিল হোসেন। শাকিলের মেয়ে স্থানীয় ভান্ডারী সিটি বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এক মাস আগে ৫২ বছর বয়সী জিতু বিয়ের প্রস্তাব দেন শাকিলের মেয়েকে। বিষয়টি শাকিল জেনে রাগ করেন। জিতুর ওপর চড়াও হন। কিছুতে রাজি না হলে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকেন জিতু। তাঁর মেয়েকেও উত্ত্যক্ত করতেন। এরই এক পর্যায়ে শনিবার বিকেলে শাকিলকে পিটিয়ে খুন করেন জিতু ও তাঁর বাহিনী।
এ হত্যার ঘটনায় জিতুকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে গতকাল রোববার বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন শাকিলের স্ত্রী মালেকা খাতুন। পুলিশ শনিবার রাতেই জিতু ও তাঁর সহযোগী মতি এবং বিপ্লবকে আটক করে।

সন্ত্রাসীকে দলের পদ দেওয়ার বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল বলেন, ‘আমি জানতাম না, সে দলের নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করছে। আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি।’ শনিবার রাতে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সই করা বিবৃতিতে জিতু ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়।

বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির বলেন, ‘এ মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক জোবায়ের খান জানান, গতকাল জিতুসহ তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা শাখা। গতকাল বিকেলে শহরের সাতমাথায় সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী এতে সভাপতিত্ব করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ