মেডিকেলে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রাকিবুল
Published: 28th, January 2025 GMT
তাঁত শ্রমিক রাজা মোল্লা ও আমেনা খাতুন দম্পতির তিন সন্তান। তাদের মধ্যে বড় ছেলে রাকিবুল ইসলাম এবার মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। পরীক্ষার ফলাফলে মেধাতালিকায় ৪ হাজার ২৫৭তম হয়ে সুযোগ এসেছে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজে পড়ার। কিন্তু সেখানে ভর্তি ও পড়াশোনার সার্বিক খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পরিবার।
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ধোপাদহ ইউনিয়নের নাড়িয়াগদাই গ্রামে রাকিবুলের বাড়ি। তার ছোট ভাই ষষ্ঠ শ্রেণি এবং বোন দশম শ্রেণিতে পড়ে। তাদের মা-বাবা দু’জনেই তাঁত শ্রমিকের কাজ করেন। সেই কাজের আয় এবং ধারদেনা করে সন্তানদের পড়াশোনা করাচ্ছেন তারা। রাকিবুল নিজেও তাঁতের কাজ করে মা-বাবাকে সহযোগিতা করেছেন। এ ছাড়া টিউশনি করে নিজের পড়ালেখার খরচ যুগিয়েছেন তিনি। কিন্তু মেডিকেলে ভর্তি থেকে শুরু করে সেখানে পড়ানোর মতো আর্থিক সক্ষমতা তাঁর পরিবারের নেই। রাজা মোল্লার কোনো জায়গাজমি নেই। এমনকি বাড়ির ভিটেও নেই। তারা থাকেন নানাবাড়ি।
রাকিবুল বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হবো। অভাব-অনটনের কারণে অনেক দিন স্কুল-কলেজ বাদ দিয়ে তাঁত শ্রমিকের কাজ করেছি। নিয়মিত প্রাইভেট পড়তে পরিনি। টিউশনি করে নিজের পড়ালেখার খরচ চালিয়েছি। ভর্তি ফি এবং পরবর্তীতে বইপত্র ও মেডিকেলের সরঞ্জাম কিনতে অনেক টাকা লাগবে। সেটা নিয়ে আমি ও আমার পরিবার চরম দুশ্চিন্তায় আছি। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ভর্তি কার্যক্রম শুরু। চলবে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। কিন্ত এখন পর্যন্ত তার ভর্তির টাকা যোগাড় হয়নি। যত কষ্টই হোক, আমার একটাই স্বপ্ন, ডাক্তার হয়ে বাবা-মায়ের কষ্ট দূর করা। আমি যেন ভবিষ্যতে ভালো চিকিৎসক ও ভালো মানুষ হয়ে জনগণের সেবা করতে পারি, সেজন্য সবার কাছে দোয়া ও সহযোগিতা চাই।’
রাকিবুলের মা আমেনা খাতুন বলেন, ‘আয়ের সব টাকা সন্তানদের পেছনে খরচ করেছি। ছেলে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়েছে। এখন ছেলের ভর্তির টাকা ও পড়ালেখার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’
রাকিবুলের বাবা রাজা মোল্লা বলেন, ‘ছেলেটা ছোটবেলা থেকেই প্রচুর পড়ালেখা করতো। রাকিবুলের পড়ালেখার পেছনে তার মায়ের অবদান বেশি। এ ছাড়া স্কুল থেকে শিক্ষকরা আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। আমার স্বপ্ন ছিল ছেলেটাকে ডাক্তারি পড়ানোর। কিন্ত ছেলের মেডিকেলে ভর্তি ও পড়ালেখার খরচ নিয়ে খুব টেনশনে আছি। ছেলেটাকে ডাক্তারি পড়াতে পারলে আমাদের সব কষ্ট সার্থক হতো। জানি না সে স্বপ্ন পূরণ হবে কি না। মেডিকেলে না কি ভর্তি ও পড়ার খরচ অনেক। এত খরচ কীভাবে জোটাবো?’
রাকিবুলের প্রতিবেশী শহিদুল ইসলাম ও সোবাহান বিশ্বাস বলেন, আমরা দেখেছি ছোটবেলা থেকেই তার পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ বেশি। রাকিবুলের বাবা-মা অনেক কষ্ট করে তাঁকে পড়ালেখা করাচ্ছে। আজ তাদের কষ্ট সার্থক। এখন সে আমাদের এলাকার গর্ব।’
নাড়িয়াগদাই উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান বলেন, ‘রাকিবুল আমার বিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করেছে। প্রকৃত মেধাবীদের দারিদ্রতা কখনও সফলতা থেকে বিচ্যুত করতে পারে না– সেটা রাকিবুল প্রমাণ করেছে। আমার বিদ্যালয়ে থাকাকালীন যতটা পেরেছি তাকে আর্থিক সহযোগিতা করেছি। এখনও সহযোগিতা করবো। তার স্বপ্ন পূরণে সবাইকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করছি।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আরপিওর বিধানের বৈধতার রায় রিভিউর জন্য হলফনামার অনুমতি
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধানের বৈধতা দিয়ে ১৪ বছর আগে রায় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদনের জন্য হলফনামার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন দুজন আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি। শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আজ সোমবার হলফনামা করার অনুমতি দিয়েছেন।
আবেদনকারী সাত ব্যক্তি হলেন ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন, মেজর (অব.) এস এম হারুনুর রশীদ, কাজী জাহেদুল ইসলাম, আইনজীবী এস এম আজমল হোসেন, মেজর (অব.) নিয়াজ আহমেদ জাবের, মেজর (অব.) মো. জিয়াউল আহসান ও সালাহ উদ্দিন।
আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ মামলায় আবেদনকারীরা পক্ষ ছিলেন না। যে কারণে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন দায়েরের জন্য হলফনামা করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন তাঁরা। চেম্বার আদালত হলফনামা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছেন। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে শিগগিরই রিভিউ আবেদন করা হবে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২(৩ক)(ক) বিধান অনুযায়ী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যুক্ত করে দিতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী ইতিপূর্বে জাতীয় সংসদের কোনো নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকলে ওই তালিকা প্রদানের প্রয়োজন হবে না।
আইনজীবীর তথ্য অনুসারে, ঢাকার একটি আসন থেকে ২০০৭ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র নেন। পরে নির্বাচনের ওই তারিখ পিছিয়ে যায়। অন্যদিকে ২০০৮ সালে আরপিও দফা ১২(৩ক)–তে সংশোধনী আনা হয়। এই বিধান সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদ ও আরপিওর ১২(১) ধারার পরিপন্থী উল্লেখ করে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী ২০১০ সালে হাইকোর্ট রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট রুল ডিসচার্জ (খারিজ) করে রায় দেন। দফা (৩ক) সংবিধান পরিপন্থী নয় বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন রিট আবেদনকারী। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি লিভ টু আপিল খারিজ করে রায় দেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত আরপিওর ১২(৩ক)–তে বেআইনি কিছু পাননি বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে দুই আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি আবেদন করতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে ভোটারের গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। ভোটার কোন প্রার্থীকে ভোট দেবেন বা দেবেন না, এটি একান্তই তাঁর চিন্তা ও মতপ্রকাশের অধিকার। সিক্রেট ব্যালটে হামলা হলে ভোট বাতিলও হয়। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে প্রার্থীর যোগ্যতা নির্ধারণ করা আছে। রাজনৈতিক দল হলে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন লাগবে না, অথচ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে গেলে লাগবে অর্থাৎ একই মনোনয়নপত্র ঘিরে দ্বৈত বিধান। ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন থাকার ওই বিধানের মাধ্যমে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা সংবিধান সমর্থন করে না এবং ভোটারের গোপনীয়তারও লঙ্ঘন—এসব যুক্তি তুলে ধরে আবেদনটি করা হয়।