পরীমণির পর ‘মুসল্লিদের’ বাধার মুখে এবার অপু বিশ্বাস
Published: 29th, January 2025 GMT
একের পর এক অনাকাঙ্খিত বাধার মুখে পড়ছেন শোবিজ অঙ্গনের তারকারা। চট্টগ্রামে মেহজাবীন চৌধুরী, টাঙ্গাইলে পরীমণির পর এবার রাজধানীতেই ‘মুসল্লিদের’ তোপের মুখে পড়লেন অপু বিশ্বাস। বাতিল করতে হলো এই নায়িকার একটি অনুষ্ঠান।
জানা গেছে, ২৮ জানুয়ারি ঢাকার কামরাঙ্গীচরের সোনার থালা নামের একটি রেস্তোরাঁর উদ্বোধনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল ঢাকাই ছবির অন্যতম জনপ্রিয় এ অভিনেত্রীর।
তবে স্থানীয় ‘মুসল্লি’রা বিষয়টি জানতে পেরে সংগঠিত হয়ে কামরাঙ্গীচর থানায় গিয়ে অভিযোগ জানায়। এরপর পুলিশের হস্তক্ষেপে অপুকে ছাড়াই রেস্তোরাঁর উদ্বোধন সম্পন্ন হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কামরাঙ্গীচর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ লুৎফর রহমান। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় হুজুররা এসে অভিযোগ করার পর, থানা থেকে যোগাযোগ করা হয় রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। তারা বিষয়টি আমলে নিয়ে অপুকে বাদ দিয়েই উদ্বোধন সম্পন্ন করেছেন।’
অন্যদিকে, থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর উপস্থিত ‘মুসল্লি’দের কয়েকজন ভিডিও প্রকাশ করেন। সেখানে একজন অভিযোগের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, ‘অপু বিশ্বাসকে এনে উদ্বোধন করার উদ্যোগ নিয়েছে। এটা জানার পর মুসল্লি, জনতা ক্ষেপে উঠেছে। আমরা প্রশাসনের কাছে এসেছি। বলেছি, এই কামরাঙ্গীচরে নায়িকা-নর্তকি এনে এ ধরনের প্রোগ্রাম করা কিছুতেই ঠিক হবে না। দেশের জনগণ এমন আয়োজনে উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় মাদ্রাসার অনেক ওলামায়ে কেরাম এসে অভিযোগ জানিয়েছেন। এ জন্য আমরা ওসি সাহেবের কাছে দাবি জানিয়েছি, অপু বিশ্বাস যেন না আসতে পারেন।’
তবে বিষয়টি নিয়ে নিরব থেকেছেন অপু বিশ্বাস। একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা: বৈশ্বিক হুমকি ও স্থানীয় সংস্কার
এ বছরের বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের প্রতিপাদ্য– ‘সাহসী নতুন দুনিয়ায় সাংবাদিকতা-সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব’। অথচ বাস্তবতা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এ বছরেই প্রথম চার মাসে ১৫ জন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন এবং বৈশ্বিক পরিসরে সাংবাদিকতা সবচেয়ে বিপজ্জনক হুমকির মুখে পড়েছে। ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ইউনিয়নের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে।
এই ট্র্যাজেডির উল্লেখযোগ্য দিক হলো, যেসব বিশ্বশক্তি নিজেদেরকে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার রক্ষক হিসেবে তুলে ধরতে চায়, তারা ইসরায়েলের পরিকল্পিত ও নিশানা করে সাংবাদিক হত্যায় নীরবতা পালন করছে কার্যত এসব সাংবাদিকের ফিলিস্তিনি পরিচয়ের কারণে। শুধু সাংবাদিক নয়; এই নীরবতা বিস্তৃত তাদের পরিবার, নারী-শিশুসহ পুরো ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর ওপর।
এর চেয়েও উদ্বেগজনক, বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর এই নির্বিচার হত্যাযজ্ঞে ব্যবহৃত হয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর পশ্চিমা দেশগুলোর সরবরাহ করা উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। সাংবাদিকতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তার সামরিক ব্যবহারের প্রসঙ্গ উপেক্ষা করলে তা শুধু অসম্পূর্ণই থাকে না; অনৈতিকও বটে। ফিলিস্তিনি কণ্ঠস্বর– যাদের মাধ্যমে আমরা এই ভয়াবহ নৃশংসতার ব্যাপকতা ও মানবিক সংকটের গভীরতা জানতে পারি তা রুদ্ধ করা ছিল ইসরায়েলি অভিযানের প্রধান উপাদান। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার সাংবাদিকদের গাজায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করার মধ্যেও চরম নিষ্ঠুরতাকে আড়াল করার জোরালো ইঙ্গিত মেলে। তদুপরি প্রযুক্তি-দানব কোম্পানিগুলোর যারা এই হত্যাযজ্ঞে পরোক্ষভাবে জড়িত, তারা কোনো জবাবদিহি ছাড়াই পার পেয়ে যাচ্ছে।
আমরা যখন সাংবাদিকতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সম্ভাব্য ইতিবাচক দিক যেমন উপাত্ত বিশ্লেষণের উন্নত ক্ষমতা ও দক্ষতা নিয়ে ভাবছি, তখন এর অন্ধকার দিকগুলোকে অস্বীকার করা যায় না, বিশেষ করে যখন তা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মানবজীবনের ওপর হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।
মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে সাংবাদিকতা যেখানে সবচেয়ে বড় হুমকির মুখে পড়েছে, সেটি হলো যুক্তরাষ্ট্র। ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষেক তথাকথিত ‘মুক্ত বিশ্ব’ ও ‘সংবাদমাধ্যম স্বাধীনতা’র সংজ্ঞা পুনর্নির্ধারণ করেছে। প্রথম ১০০ দিনে ট্রাম্প প্রশাসন মতাদর্শগত কারণে ভয়েস অব আমেরিকা ও ন্যাশনাল পাবলিক রেডিওর মতো রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে পরিচালিত সম্প্রচার মাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছে; হোয়াইট হাউসের তালিকা থেকে অপছন্দের সাংবাদিকদের বের করে দিয়েছে এবং মূলধারার সংবাদমাধ্যম বাদ দিয়ে উগ্র ডানপন্থি মাগা (মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন) অনুগত প্রান্তিক গণমাধ্যমগুলোকে প্রাধান্য দিয়েছে।
প্রথম মেয়াদে সাংবাদিকদের ‘গণশত্রু’ হিসেবে অভিহিত করা ট্রাম্প তাঁর সাংবাদিকতাবিরোধী অভিযান এবার আরও জোরদার করেছেন। এটি আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং বৈশ্বিক স্বৈরাচারী প্রবণতারই অংশ। তাঁর পদক্ষেপ অন্য স্বৈরশাসকদের উৎসাহ দিচ্ছে, যা গণমাধ্যমের দমন-পীড়নের যৌক্তিকতা তৈরি করছে।
ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা যদি এখনও বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকতেন, তবে নিশ্চিতভাবেই তিনি ট্রাম্পের এই নীতিকে ভিন্নমত দমন ও সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের পক্ষে নজির হিসেবে ব্যবহার করে যুক্তি দাঁড় করাতেন।
ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনূস সংবাদমাধ্যমকে স্বাধীন, শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কারের সুপারিশ করার জন্য আমাদের দায়িত্ব দিয়ে একটি কমিশন গঠন করেছিলেন। আমাদের পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আগের সরকার সুপরিকল্পিতভাবে সংবাদমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিল। টেলিভিশন চ্যানেলের লাইসেন্স দিয়েছিল রাজনৈতিক পরিচয় ও আনুগত্যের ভিত্তিতে; সাংবাদিকতা বা সম্প্রচারে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নয়।
এ ছাড়া বিনিয়োগ বৈধ উৎস থেকে এসেছে কিনা, তা জানানোর কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই কালো টাকা ব্যবহৃত হয়েছে। পরিণতিতে সংবাদমাধ্যম হয়ে উঠেছে একেকটি গোষ্ঠীর হাতিয়ার, যার মাধ্যমে তারা তাদের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যকে প্রশ্নের বাইরে রাখতে বা সরকারের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে।
কমিশন অংশীজন নিয়ে যেসব পরামর্শ সভা করেছে, সেখানে উচ্চপদস্থ আমলারা স্বীকার করেছেন, অবৈধ কর্মকাণ্ডে যুক্ত সংবাদ মালিকদের চাপ ঠেকাতে তারা ব্যর্থ। তারা মিডিয়া লাইসেন্সিংয়ের ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ চেয়েছেন। মালিকদের স্বার্থ প্রকাশ করার কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায় অনেক মালিক সংবাদমাধ্যমকে ব্যবহার করছেন প্রতিদ্বন্দ্বীদের চরিত্র হনন, ভুল প্রচার এবং নিজেদের স্বার্থে সংবাদ নিয়ন্ত্রণ করতে। তারা একাধিক গণমাধ্যমের মালিকানা রাখছেন বিভিন্ন নামে; একই কনটেন্ট বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে প্রচার করে বাজারকে প্রভাবিত করে চলেছেন।
বিশ্বব্যাপী ‘গণমাধ্যমের মালিক কারা’– এই প্রশ্ন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এবং অনেক দেশে ক্রস ওনারশিপ নামে পরিচিত একই সঙ্গে একাধিক মাধ্যমের মালিকানার বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। এই নীতিতে একজন টিভি চ্যানেলের মালিক একই সঙ্গে পত্রিকার মালিক হতে পারেন না কিংবা একজন পত্রিকার মালিক একই সঙ্গে টিভি চ্যানেলের মালিক হতে পারেন না। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং ইউরোপের অনেক দেশে এ ধরনের নিয়ম আছে, যা গণমাধ্যমে বৈচিত্র্য বজায় রাখতে বা বহুমতের অবস্থান নিশ্চিত করতে জরুরি।
কিছু সমালোচক এ বিষয়ে ভারতের উদাহরণ টানলেও, মুক্ত গণমাধ্যমের বৈশ্বিক সূচকে ভারতের অবস্থান অত্যন্ত দুর্বল, যা দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ছাড়া অন্য সবার নিচে। সেখানে সংবাদমাধ্যমের ‘গদি মিডিয়া’ নামকরণ থেকেই বোঝা যায় গণমাধ্যমগুলোর অবস্থান। মূলধারার প্রায় সব গণমাধ্যমই হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপির নীতি-আদর্শের প্রসারে নিয়োজিত। তবে ভারতেও ক্রস ওনারশিপ নিষিদ্ধের একটি বিল এখনও সংসদে বিবেচনাধীন।
অনেকে বলছেন, সংবাদমাধ্যমকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরের যে প্রস্তাব কমিশন করেছে, তা অবাস্তব। কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, বেশির ভাগ সংবাদমাধ্যম লাভ করতে পারছে না বা রুগ্ণ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এসব গণমাধ্যম কোম্পানির মধ্যে যাদের হিসাব রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজের দপ্তর থেকে পাওয়া গেছে, তার নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেড় ডজনের বেশি সংবাদমাধ্যম লাভজনক, যা প্রমাণ করে, এ ধরনের রূপান্তর মোটেও অযৌক্তিক নয় এবং তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
মূল সমস্যা হলো, বাজারে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশিসংখ্যক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান যেনতেনভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং তারা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা বা বিভিন্ন স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। পাঠক বা শ্রোতাকে আকৃষ্ট করতে না পারলেও তারা টিকে থাকার চেষ্টায় বিজ্ঞাপনের দরে অস্বাভাবিক হারে ছাড় দিয়ে পুরো খাতের ক্ষতি করছে।
অন্য যে সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ক্ষীণ আপত্তি উঠেছে তা হলো, সাংবাদিকদের জন্য একটি জাতীয় ন্যূনতম বেতন স্কেল নির্ধারণ, যা সমতুল্য সরকারি চাকরির বেতনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। সমালোচকরা বলছেন, আর্থিক সংকটে থাকা খাতের জন্য এটি বাস্তবায়নযোগ্য নয় এবং এটি মানা হলে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। অথচ একটু নিবিড়ভাবে যাচাই করলে দেখা যায়, ২০১৪ সালে ঘোষিত অষ্টম ওয়েজ বোর্ড যদি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হতো (নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট যোগ হলে), একজন রিপোর্টার বা সহসম্পাদকের বেতন এতদিনে ৯ম গ্রেডের সরকারি কর্মচারীর স্তরে পৌঁছে যেত। যেসব সংবাদপত্র মালিক এই সংস্কারের বিরোধিতা করছেন, তারা মূলত সাংবাদিক-কর্মচারীদের ন্যায্য বেতন না দিয়ে সরকারি বিজ্ঞাপনের সুবিধা নিতেই বেশি উৎসুক।
আমাদের পরামর্শ সভায় দেখা গেছে, সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম উভয়েই আর্থিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, যা তাদের আপস করতে বাধ্য করছে। ন্যায্য পারিশ্রমিক ও নীতিগত সহায়তা সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে জরুরি। কমিশন দীর্ঘমেয়াদি গণমাধ্যম শিল্পের আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য একাধিক কর রেয়াত ও প্রণোদনার সুপারিশ করেছে। এগুলো সরকার গ্রহণ করলে যেসব সংবাদপত্রের ক্রেতা আছে, সেগুলো সরকারের নীতি সহায়তার কারণে আর্থিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে এবং সাংবাদিক-কর্মচারীদের ন্যায্য বেতন-ভাতা পরিশোধে তাদের তেমন সমস্যা হবে না। তবে যারা শুধু সরকারি বিজ্ঞাপন হাতিয়ে নেওয়ার জন্য পত্রিকা প্রকাশ করেন, সেগুলোর দৌরাত্ম্য বন্ধ হবে। সরকারি মিডিয়া লিস্ট এবং হকার সমিতির বিক্রির হিসাব অনুযায়ী এ ধরনের পত্রিকার সংখ্যা পাঁচ শতাধিক।
সংবাদমাধ্যমের সংস্কার নিয়ে যখন আলোচনা করছি, তখন স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য বর্তমানে বিদ্যমান বৈরী পরিবেশের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। সাংবাদিকদের ওপর মৌখিক ও শারীরিক হামলা এখনও হচ্ছে, অনেকে মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত হচ্ছেন। কেউ কেউ কারাবন্দিও হয়েছেন। তবে তা মূলত তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে। তারা একই সঙ্গে সাংবাদিক আবার রাজনৈতিক কর্মী। কিন্তু সাবেক স্বৈরশাসকের অনুসারী হিসেবে তারা যেসব কর্মকাণ্ড করেছেন, সেসবের কারণে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও তাদের রাজনৈতিক পরিচয়ের বদলে সাংবাদিক পরিচয়ই সামনে উঠে আসছে। বিষয়টা কিছু সমস্যাপূর্ণ। আবার গণমাধ্যমের সেলফ সেন্সরশিপ ও সাংবাদিকদের ওপর বেশির ভাগ হামলার পেছনে এখন কাজ করছে সামাজিক মাধ্যমে হুমকি এবং কথিত মব ভায়োলেন্স। সরকারের এগুলো কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণের কথা থাকলেও তা দেখা যাচ্ছে না।
অন্তর্বর্তী সরকার বলছে, তারা কোনো সংবাদমাধ্যমের সম্পাদকীয় সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করেনি। কিন্তু শুধু এ বক্তব্য সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দূর করার জন্য যথেষ্ট নয়। সম্প্রতি একজন উপদেষ্টাকে বিতর্কিত প্রশ্ন করা নিয়ে একই দিনে তিনটি আলাদা প্রতিষ্ঠানের তিনজন সাংবাদিককে বরখাস্ত করা হয়েছে। কোনো ধরনের আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়াই এ ধরনের চাকরিচ্যুতিকে অনেকে সন্দেহের চোখে দেখছেন এবং কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন–সরকারকে বিব্রত করার উদ্দেশ্যে এটি কোনো সমন্বিত পদক্ষেপ ছিল কিনা।
এই বরখাস্তের ঘটনা অনলাইনে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কিন্তু এ ধরনের ঘটনার তদন্ত বা প্রতিকার করার মতো কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা এখনও নেই। প্রস্তাবিত সাংবাদিক সুরক্ষা অধ্যাদেশ এবং একটি স্বাধীন গণমাধ্যম কমিশন গঠন করলে এ ধরনের ঘটনা তদন্ত ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় তা কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার যদি দ্রুত এসব সংস্কার বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নিতে না পারে, তাহলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অধরাই থেকে যাবে।
কামাল আহমেদ: সাংবাদিক