জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাপপ্রবাহ তীব্রতর হচ্ছে। এতে অতিরিক্ত তাপ আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় পরিবর্তন আনছে কি না, তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন। উষ্ণতার কারণে ড্রাভেট সিনড্রোমসহ অনেক স্নায়বিক রোগ দেখা যাচ্ছে। এসব রোগ উচ্চ তাপমাত্রার কারণে আরও বেড়ে যায়।

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের বিজ্ঞানী সঞ্জয় সিসোদিয়া বলেন, তাপপ্রবাহের সময় রোগীদের আরও সমস্যা হয়। মস্তিষ্কের অনেক প্রক্রিয়া শরীর কীভাবে তাপের সঙ্গে মোকাবিলা করে, তার সঙ্গে জড়িত বলে এসব প্রভাব দেখা যায়। ড্রাভেট সিনড্রোম একটি স্নায়বিক রোগ, যার মধ্যে একধরনের মৃগীরোগ অন্তর্ভুক্ত। প্রতি ১৫ হাজার শিশুর মধ্যে একজনকে প্রভাবিত করে। খিঁচুনির সঙ্গে প্রায়ই বুদ্ধিবৃত্তিক অক্ষমতা, অটিজম, এডিএইচডিসহ বিভিন্ন রোগ দেখা যায়। হঠাৎ তাপমাত্রার পরিবর্তনে অনেক সময় খিঁচুনি দেখা যায়। বিভিন্ন ধরনের স্নায়বিক রোগ দেখা যায়, যা ক্রমবর্ধমান তাপ ও আর্দ্রতার কারণে আরও খারাপ হয়। উষ্ণতা বাড়ার কারণে মৃগীরোগ, স্ট্রোক, এনসেফালাইটিস, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস, মাইগ্রেনসহ আরও অনেক কিছু দেখা যায়।

বিজ্ঞানীরা আমাদের মস্তিষ্কের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এরই মধ্যে দেখেছেন। ২০০৩ সালের ইউরোপীয় তাপপ্রবাহের সময় অতিরিক্ত মৃত্যুর প্রায় ৭ শতাংশ সরাসরি স্নায়বিক সমস্যার কারণে হয়েছিল। ২০২২ সালে যুক্তরাজ্যের তাপপ্রবাহের সময়ও একই রকম পরিসংখ্যান দেখা যায়। তাপ আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পরিবর্তন করতে পারে। তাপ বাড়ার কারণে মানুষ আরও হিংস্র, বিরক্তিকর ও হতাশাগ্রস্ত হতে পারে।

বিজ্ঞানীরা জানান, ‘মানুষের মস্তিষ্ক গড়ে কিছুটা বেশি তাপমাত্রা ধারণ করে। আমাদের শরীরের মূল তাপমাত্রার চেয়ে গড়ে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি দেখা যায়। আমাদের মস্তিষ্ক দেহের অন্যতম শক্তি গ্রহণকারী অঙ্গ। যখন আমরা চিন্তা করি, কাজ করি, মনে রাখি কিংবা আমাদের চারপাশের জগতের প্রতি সাড়া দিই, তখন মস্তিষ্ক যথেষ্ট পরিমাণে নিজস্ব তাপ উৎপন্ন করে। আমাদের শরীরকে ঠান্ডা রাখার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয় মস্তিষ্ককে। রক্তনালির নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সঞ্চালিত রক্ত মস্তিষ্কের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত তাপ কমিয়ে দেয়। কেন মাথা গরম হয়, তা বুঝতে পারছেন?’

আমাদের মস্তিষ্কের কোষ অত্যন্ত তাপ সংবেদনশীল। আমাদের মস্তিষ্ক খুব গরম বা খুব ঠান্ডা হয়ে গেলে তারা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। বিজ্ঞানী সিসোদিয়া বলেন, ‘আমরা পুরোপুরি বুঝতে পারি না জটিল মস্তিষ্কের বিভিন্ন উপাদান কীভাবে প্রভাবিত হয়। আমরা মস্তিষ্ককে একটি ঘড়ির মতো কল্পনা করতে পারি। অতিরিক্ত তাপে মস্তিষ্কের কাজ করার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। মানুষকে আরও বেশি ঝুঁকি নিতে বাধ্য করতে পারে। স্নায়বিক ব্যক্তিদের বেশি বেশি প্রভাবিত করছে।’

থার্মোরেগুলেশন মস্তিষ্কের একটি কার্যকারিতা। মস্তিষ্কের কিছু অংশ সঠিকভাবে কাজ না করলে এটি ব্যাহত হতে পারে। মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস রোগের কিছু ক্ষেত্রে শরীরের মূল তাপমাত্রা পরিবর্তিত হয় বলে মনে হয়। সিজোফ্রেনিয়ার মতো স্নায়বিক ও মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত কিছু ওষুধ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণকে প্রভাবিত করে। এমন ওষুধ গ্রহণ করা ব্যক্তিদের হিটস্ট্রোক বা হাইপারথার্মিয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাপপ্রবাহ আর রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধি মানুষের ঘুমকে প্রভাবিত করতে পারে। আমাদের মেজাজকে প্রভাবিত করে। মৃগীরোগে আক্রান্ত অনেক মানুষের জন্য কম ঘুম খিঁচুনির ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি হসপিটালস সাসেক্সের এক বার্ধক্য বিশেষজ্ঞ বেথান ডেভিস বলেন, তাপপ্রবাহের সময় ডিমেনশিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তির হার বাড়ছে। মৃত্যুর হারও বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা স্ট্রোকের ঘটনা ও মৃত্যুহার বৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত। ২৫টি দেশের স্ট্রোকে মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণ করে করা একটি গবেষণায় দেখা যায়, ইস্কেমিক স্ট্রোকে আক্রান্ত এক হাজার মৃত্যুর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে গরমের দিনে। বিশ্বব্যাপী স্ট্রোকে মারা যাওয়ার কারণে প্রতিবছর ১০ হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে তাপ।

উষ্ণ পৃথিবী কম বয়সীদের স্নায়ু বিকাশকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। যুক্তরাজ্যের ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের বিজ্ঞানী জেন হার্স্ট বলেন, অতিরিক্ত তাপ ও অকাল শিশুর জন্মের মতো খারাপ গর্ভাবস্থার মধ্যে একটি যোগসূত্র রয়েছে। তাপপ্রবাহ অকাল জন্মের ২৬ শতাংশ বৃদ্ধি করছে। এতে শিশুর স্নায়ু বিকাশে বিলম্ব ও জ্ঞানীয় প্রতিবন্ধকতা দেখা যাবে।

তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মশার বিস্তারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে জিকা, চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর মতো স্নায়বিক রোগ সৃষ্টি বাড়বে। সুইস ট্রপিক্যাল অ্যান্ড পাবলিক হেলথ ইনস্টিটিউটের মেডিকেল এনটোমোলজিস্ট টোবিয়াস সুটার বলেন, তাপ জিকা ভাইরাসের ভ্রূণকে প্রভাবিত করতে পারে এবং মাইক্রোসেফালি সৃষ্টি করতে পারে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও শীতকাল মৃদু হওয়ার অর্থ হচ্ছে, মশার প্রজনন মৌসুম বছর আগে শুরু হয় ও পরে শেষ হয়।

সূত্র: বিবিসি

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর জ য র আম দ র ম ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

বরিশালের কোচ হচ্ছেন আশরাফুল

ক্রিকেটে দীর্ঘ দুই দশকের ক্যারিয়ার শেষে কোচিংয়ে ক্যারিয়ার গড়ছেন মোহাম্মদ আশরাফুল। গত বছর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে কোচিং করিয়েছেন আশরাফুল। কিছুদিন আগে গ্লোবাল সুপার লিগে রংপুর রাইডার্সের কোচ হয়েছিলেন। এরই মধ্যে আইসিসির লেভেল-৩ কোচ শিক্ষা কোর্স শেষে সার্টিফিকেট পেয়েছেন।

এবার বড় ধৈর্ঘ্যর ক্রিকেটেও তাকে দেখা যাবে। অক্টোবরে জাতীয় ক্রিকেট লিগে বরিশাল বিভাগের কোচিংয়ের দায়িত্ব পেতে আগ্রহ দেখিয়েছেন আশরাফুল। বিসিবিরও ইচ্ছা আশরাফুল দলটির দায়িত্ব নিক। বিসিবির পরিচালক ও টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান বলেছেন, ‘‘বরিশাল দলকে নিয়ে আমরা খুব সিরিয়াসলি চিন্তা করছি। সে (আশরাফুল) আগ্রহ দেখিয়েছে। সেই বলেছে কোচ হতে চায়। যেহেতু দুই বছর খেলেছে বরিশালে। আমরা তাকে সেখানে কোচ হিসেবে রাখার পরিকল্পনা করেছি।’’

তবে বরিশাল বিভাগের দল নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি আকরাম খানরা। গত বছর লিগ চলাকালীন নিয়মিত অধিনায়ক ফজলে মাহমুদ দল ছেড়ে চলে যান। পরবর্তীতে অধিনায়কত্ব না করার শর্তে খেলেন। পক্ষপাতমূলক অধিনায়কত্ব করার অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে।

আরো পড়ুন:

কোচিংয়ে আগ্রহ বাড়ছে ক্রিকেটারদের

ভারত সফরে ধোনি-কোহলিদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলবেন মেসি

সোহাগ গাজী যুক্ত হলেও পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়। কোচ আশিকুর রহমানও দায়িত্ব ছেড়ে চলে যান। ড্রেসংরুমের অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়। যা বিসিবির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন কোচ, অধিনায়ক, ম্যানেজার। এ বছরের দল গঠন নিয়েই চরম বিপাকে।

ফজলে রাব্বী ও সোহাগ গাজীর আলাদা গ্রুপ তৈরি হওয়াতে বিসিবি পড়েছে জটিলতায়। তবে পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে জিরো টলারেন্স দেখানো হবে বলে জানিয়েছেন আকরাম খান,

‘‘বরিশালকে নিয়েও আমরা আলাপ–আলোচনা করেছি। চিন্তাভাবনা করছি— যেহেতু অনেক...এরা ম্যানেজার নিয়ে খুশি না, কোচ নিয়ে খুশি না, অধিনায়ক নিয়ে খুশি না। খেলোয়াড়–খেলোয়াড় দ্বন্দ্ব আছে। এটা তো হওয়া আসলে উচিত না। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এটা সিরিয়াসলি মনিটর করব— যদি দেখি কেউ ডিপ্রাইভ হচ্ছে।, খেলা নষ্ট হচ্ছে, বা মান সম্মান খারাপ হচ্ছে। তাহলে আমরা অ্যাকশন নেবো।’’

ঢাকা/ইয়াসিন 

সম্পর্কিত নিবন্ধ