Samakal:
2025-07-31@17:04:30 GMT

অভিভাবকের স্বার্থ দেখবে কে?

Published: 29th, January 2025 GMT

অভিভাবকের স্বার্থ দেখবে কে?

গত ২০ জানুয়ারি সমকালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, ‘বেড়েছে শিক্ষার ব্যয়, অসহায় অভিভাবক’। যদিও প্রতিবেদনটি চট্টগ্রাম শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নিয়ে লেখা, কিন্তু এটি যেন পুরো দেশেরই শিক্ষাচিত্র। দিন দিন শিক্ষা উপকরণে খরচ এমন একটি অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে, দরিদ্র ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক শিক্ষার্থী ব্যয় সংকুলান করতে পারছে না।

এমনকি মধ্যবিত্ত শ্রেণির অভিভাবকরাও দিশেহারা। বই, খাতা, কলম, পেন্সিল, জ্যামিতি বক্স– প্রতিটি উপকরণেরই দাম বেড়েছে। এমনিতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ঊর্ধ্বমুখী, তার ওপর শিক্ষা উপকরণের দাম এভাবে বাড়তে থাকলে অভিভাবকরা যাবেন কোথায়? যেসব পরিবারে দুই বা ততধিক শিক্ষার্থী, তাদের অবস্থা বলার অপেক্ষা রাখে না।

এর সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যও উল্লেখযোগ্য। প্রতিবছর শিক্ষার্থীরা নতুন ক্লাসে ওঠামাত্র ভর্তি প্রক্রিয়ায় বিশাল অঙ্কের অর্থ খরচের ধকল সামাল দিতে হয় অভিভাবকদের। তারপর যুগের পরিবর্তনে শিক্ষাক্ষেত্রে এমন অবস্থা হয়েছে, পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা যেমনই হোক; নতুন ক্লাসে নতুন স্কুল ড্রেস, নতুন জুতা, নতুন টিফিন বক্স, নতুন খাতাপত্র– সব অবশ্যই দিয়ে পাঠাতে হয়। যেন সাধ্যের অতিরিক্ত জীবনযাপনের জন্য শৈশব থেকেই শিক্ষার্থীদের ভেতর একটি ক্রমবর্ধমান চাহিদা তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে।

সাধারণ পরিমিতিবোধসম্পন্ন জীবনযাত্রা থেকে শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। আবার আগের বছরের কোনো খাতাপত্র ব্যবহার উপযোগী থাকলেও তা বাদ দেওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। একজন শিক্ষক হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আগের বছরের বেঁচে যাওয়া ভালো খাতাপত্র যদি হোমওয়ার্ক করার নির্দেশও দেওয়া হতো তাহলে অনেক দরিদ্র ও অসচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। বছর শেষ হয়েছে বলে ভালো খাতাও ফেলে দিতে হবে কেন? শিক্ষার মূল কাজ তো মানবিক গুণাবলির বিকাশ ঘটানো। আমরা যদি শিক্ষার্থীদের শৈশব থেকেই এভাবে সাশ্রয়ী ও মিতব্যয়ী হতে শেখাতাম; এ আদর্শের শিক্ষা তাদের পরবর্তী জীবনেও কাজে লাগত। অথচ আমাদের শিক্ষাকাঠামো মানবিক গুণাবলির বিকাশ তো হচ্ছেই না, কোনো প্রকারের নৈতিকতা ও মূল্যবোধের শিক্ষাও দিতে পারছে না। শিক্ষাকাঠামো এখন কেবল সনদসম্পন্ন যন্ত্র তৈরির কারিগরে পরিণত হয়েছে, যার বাইরের পোশাকটা ঝলমলে, ভেতরটা ফাঁকা। 

ছেলেবেলায় একটা প্রবাদ খুব শোনা যেত– ‘লেখাপড়া করে যে, গাড়িঘোড়ায় চড়ে সে’। ভাবতে অবাক লাগে, আজ যুগের পরিবর্তনে নির্মম বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে প্রবাদটি যেন ঘুরিয়ে বলার সময় এসেছে। কেননা.

আজকাল সমাজে যারা গাড়িঘোড়ায় চড়ে, তারাই খুব সম্ভবত পড়াশোনা করে।

দরিদ্র ও অসচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা দিন দিন নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। শিক্ষা আজ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভোগসর্বস্ব পয়সাওয়ালাদের বিষয়। যেন তাদেরই অধিকার এ ক্ষেত্রে। অথচ একটি গণতান্ত্রিক সমাজ কাঠামোতে এমনটি তো হওয়ার কথা নয়। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের মতো শিক্ষাও মানুষের মৌলিক অধিকার। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও রাষ্ট্র আমাদের নাগরিকদের সে অধিকার নিশ্চিত করতে পারছে না। জাতি হিসেবে এটি আমাদের জন্য কোনো গৌরবের বিষয় নয়।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে সংস্কারের কথা বলছে। দেশের মানুষ এক বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। দেশে একটি শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা দরকার। দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও শিক্ষা উপকরণে যেন তার কোনো প্রভাব না পড়ে। যেন অভিভাবকদের আয়ত্তের বাইরে তা চলে না যায়। নতুবা বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে।

মাহজাবিন আলমগীর: শিক্ষিকা, মোহাম্মদপুর, ঢাকা  

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব র র

এছাড়াও পড়ুন:

‘বিচার প্রক্রিয়া ও সংস্কারের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে’

অন্তবর্তী সরকারের শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, “বাংলাদেশ বর্তমানে এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। সবাইকে ধৈর্য ধরে বিচার প্রক্রিয়া, সংস্কার এবং নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে। সারাদেশ এখন জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার অপেক্ষায় রয়েছে।”

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) জাহাঙ্গীরনগর বিবিদ্যালয়ে নির্মিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম স্মৃতিস্তম্ভ ‘অদম্য ২৪’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি।

এর আগে, অদম্য ২৪ উদ্বোধন করেন তিনি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নির্মিত জুলাইয়ের ভিডিও ও ফটো ডকুমেন্টারি উপভোগ করেন।

আরো পড়ুন:

জবির পরিত্যক্ত ডাস্টবিনগুলো সংস্কার করল ছাত্রদল

রাকসু থেকে জাতীয় পর্যায়ের নেতৃত্বে যারা

আদিলুর রহমান খান বলেন, “১ বছর আগে বাংলাদেশে যে ঐক্য গড়ে উঠেছিল, সেই ঐক্যই পারে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেতে। বিচার প্রশ্নে বলতে চাই কোনো অবস্থাতেই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তৈরি হওয়া সরকার বিচারের ক্ষেত্রে দুর্বলতা স্কোপ রাখবে না। খুব দ্রুতই বেশ কয়েকটি বিচারের কাজ দৃশ্যমান হবে।”

তিনি আরো বলেন, “তরুণ ছাত্র-জনতা ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি এবং দেশকে বাঁচানোর জন্য জীবন দিয়েছেন। ছাত্র-জনতার মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পরাজিত করা সম্ভব হয়েছে। সেই ঐক্য ধরে রাখতে হবে।” এছাড়া স্মৃতিস্তম্ভ ‘অদম্য-২৪’ বিভাজন ভুলে একাত্ম হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন।

সমাপনী বক্তব্যে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, “সংঘবদ্ধ আন্দোলনে ৫ আগস্ট আমরা বিজয় অর্জন করেছি। এর মানে এই নয় যে, অন্য যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে আর স্বর আপনারা শুনবেন না। আপনারা দেখবেন, জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষার্থীরা সচেতন এবং কথা বলার ব্যাপারে উন্মুক্ত।”

তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, এই স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আবার স্মরণ করিয়ে দিলাম, আমরা যদি বাংলাদেশে কোনো অশান্তি দেখি, বৈষম্য দেখি, পরাজয়ের কালো মেঘ দেখি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অদম্য সংগ্রামীরা আবারো তাদের সেই কার্যক্রম শুরু করবে। গোটা বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিবে, আবার বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবে।

অনুষ্ঠানে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, উপ -উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রব, প্রক্টর অধ্যাপক রাশিদুল আলমসহ জাহাঙ্গীরনগরের সঙ্গে জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়ে শহীদ পরিবারের সদস্যরাও বক্তব্য দেন।

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ