Samakal:
2025-09-17@23:14:16 GMT

অভিভাবকের স্বার্থ দেখবে কে?

Published: 29th, January 2025 GMT

অভিভাবকের স্বার্থ দেখবে কে?

গত ২০ জানুয়ারি সমকালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, ‘বেড়েছে শিক্ষার ব্যয়, অসহায় অভিভাবক’। যদিও প্রতিবেদনটি চট্টগ্রাম শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নিয়ে লেখা, কিন্তু এটি যেন পুরো দেশেরই শিক্ষাচিত্র। দিন দিন শিক্ষা উপকরণে খরচ এমন একটি অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে, দরিদ্র ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক শিক্ষার্থী ব্যয় সংকুলান করতে পারছে না।

এমনকি মধ্যবিত্ত শ্রেণির অভিভাবকরাও দিশেহারা। বই, খাতা, কলম, পেন্সিল, জ্যামিতি বক্স– প্রতিটি উপকরণেরই দাম বেড়েছে। এমনিতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ঊর্ধ্বমুখী, তার ওপর শিক্ষা উপকরণের দাম এভাবে বাড়তে থাকলে অভিভাবকরা যাবেন কোথায়? যেসব পরিবারে দুই বা ততধিক শিক্ষার্থী, তাদের অবস্থা বলার অপেক্ষা রাখে না।

এর সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যও উল্লেখযোগ্য। প্রতিবছর শিক্ষার্থীরা নতুন ক্লাসে ওঠামাত্র ভর্তি প্রক্রিয়ায় বিশাল অঙ্কের অর্থ খরচের ধকল সামাল দিতে হয় অভিভাবকদের। তারপর যুগের পরিবর্তনে শিক্ষাক্ষেত্রে এমন অবস্থা হয়েছে, পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা যেমনই হোক; নতুন ক্লাসে নতুন স্কুল ড্রেস, নতুন জুতা, নতুন টিফিন বক্স, নতুন খাতাপত্র– সব অবশ্যই দিয়ে পাঠাতে হয়। যেন সাধ্যের অতিরিক্ত জীবনযাপনের জন্য শৈশব থেকেই শিক্ষার্থীদের ভেতর একটি ক্রমবর্ধমান চাহিদা তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে।

সাধারণ পরিমিতিবোধসম্পন্ন জীবনযাত্রা থেকে শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। আবার আগের বছরের কোনো খাতাপত্র ব্যবহার উপযোগী থাকলেও তা বাদ দেওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। একজন শিক্ষক হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আগের বছরের বেঁচে যাওয়া ভালো খাতাপত্র যদি হোমওয়ার্ক করার নির্দেশও দেওয়া হতো তাহলে অনেক দরিদ্র ও অসচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। বছর শেষ হয়েছে বলে ভালো খাতাও ফেলে দিতে হবে কেন? শিক্ষার মূল কাজ তো মানবিক গুণাবলির বিকাশ ঘটানো। আমরা যদি শিক্ষার্থীদের শৈশব থেকেই এভাবে সাশ্রয়ী ও মিতব্যয়ী হতে শেখাতাম; এ আদর্শের শিক্ষা তাদের পরবর্তী জীবনেও কাজে লাগত। অথচ আমাদের শিক্ষাকাঠামো মানবিক গুণাবলির বিকাশ তো হচ্ছেই না, কোনো প্রকারের নৈতিকতা ও মূল্যবোধের শিক্ষাও দিতে পারছে না। শিক্ষাকাঠামো এখন কেবল সনদসম্পন্ন যন্ত্র তৈরির কারিগরে পরিণত হয়েছে, যার বাইরের পোশাকটা ঝলমলে, ভেতরটা ফাঁকা। 

ছেলেবেলায় একটা প্রবাদ খুব শোনা যেত– ‘লেখাপড়া করে যে, গাড়িঘোড়ায় চড়ে সে’। ভাবতে অবাক লাগে, আজ যুগের পরিবর্তনে নির্মম বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে প্রবাদটি যেন ঘুরিয়ে বলার সময় এসেছে। কেননা.

আজকাল সমাজে যারা গাড়িঘোড়ায় চড়ে, তারাই খুব সম্ভবত পড়াশোনা করে।

দরিদ্র ও অসচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা দিন দিন নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। শিক্ষা আজ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভোগসর্বস্ব পয়সাওয়ালাদের বিষয়। যেন তাদেরই অধিকার এ ক্ষেত্রে। অথচ একটি গণতান্ত্রিক সমাজ কাঠামোতে এমনটি তো হওয়ার কথা নয়। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের মতো শিক্ষাও মানুষের মৌলিক অধিকার। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও রাষ্ট্র আমাদের নাগরিকদের সে অধিকার নিশ্চিত করতে পারছে না। জাতি হিসেবে এটি আমাদের জন্য কোনো গৌরবের বিষয় নয়।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে সংস্কারের কথা বলছে। দেশের মানুষ এক বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। দেশে একটি শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা দরকার। দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও শিক্ষা উপকরণে যেন তার কোনো প্রভাব না পড়ে। যেন অভিভাবকদের আয়ত্তের বাইরে তা চলে না যায়। নতুবা বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে।

মাহজাবিন আলমগীর: শিক্ষিকা, মোহাম্মদপুর, ঢাকা  

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব র র

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনী উপকরণ সংগ্রহ শুরু করেছে ইসি

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনী উপকরণ সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের গুদামে ইতোমধ্যেই এসব নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছানো শুরু হয়েছে।

সোমবার বিকেলে ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নির্বাচন ভবনের বেসমেন্টে অবস্থিত ইসির গুদামে নির্বাচনী সরঞ্জাম দেখতে যান। এ সময় তারা সংগৃহীত ভোটগ্রহণের বিভিন্ন সরঞ্জাম পরীক্ষা করে দেখেন।

এসব নির্বাচনী সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে ব্যালট বাক্স, লক, ঢাকনা, গানি ব্যাগ, সিল, বিভিন্ন ধরনের ফরম, প্যাকেট ইত্যাদি।

ইসি ঘোষিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১৬ নভেম্বরের মধ্যে মাঠ পর্যায়ের নির্বাচনী দ্রব্য, ফরম, প্যাকেট বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে।

নির্বাচনী সরঞ্জাম সংগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বাসসকে বলেন, ‘আজ বার্ষিক দ্রব্য সংগ্রহের পরিকল্পনা সংক্রান্ত মিটিং করেছি। ইতিমধ্যে নির্বাচনী সরঞ্জাম আসা শুরু হয়েছে।’

ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ বাসসকে বলেন, ‘ইতোমধ্যেই আমরা কোনো কোনো নির্বাচনী উপকরণ প্রায় অর্ধেক পেয়েছি। আবার কোনো কোনো উপকরণ এখনো আসেনি। আশা করছি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই নির্বাচনী দ্রব্য সামগ্রী পেয়ে যাব।’

ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানান, বর্তমানে দেশের ১০টি অঞ্চলের আওতায় ৬৪ জেলায় ৩০০ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৬১ লাখ ৬১ হাজার ২০১ জন। এবার গড়ে প্রতি ৩ হাজার ভোটারের জন্য একটি ভোটকেন্দ্র করার ভিত্তিতে মোট ৪২ হাজার ৬১৮টি ভোটকেন্দ্র প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া সব মিলিয়ে ভোটকক্ষ হবে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৪৬টি। আগামী ২০ অক্টোবর চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করা হবে।

নির্বাচনী উপকরণ সংগ্রহের বিষয়ে সম্প্রতি ইসি সচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ পর্যন্ত ব্রাস সিল ও সিলগালা বাদে অন্যান্য উপকরণগুলো আমরা পাচ্ছি। সময়সীমা দেওয়া আছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই উপকরণগুলো পাচ্ছি। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সকল দ্রব্য পাওয়া যাবে বলে আমরা আশাবাদী।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচনী উপকরণ সংগ্রহ শুরু করেছে ইসি