ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার পর্দা নেমেছে শুক্রবার। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় এদিন সকাল থেকেই মেলায় ক্রেতাদের আনাগোনা শুরু হয়। দুপুরের পর মেলা প্রাঙ্গণে ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড় বাড়ে। বিকেল শেষে সন্ধ্যায় সে ভিড় রূপ নেয় জনসমুদ্রে। এমন ভিড়ের মধ্যে ছিল শেষ মুহূর্তের কেনাকাটার ধুম।

বিকেলে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন আহমেদ আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার সমাপ্তি ঘোষণা করেন। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে মেলায় থাকা উদ্যোক্তাদের মাঝে বিভিন্ন ক্যাটেগরিতে পুরস্কার বিতরণ করেন তিনি। এবার বিভিন্ন ক্যাটেগরিতে ২২টি প্রতিষ্ঠান প্রথম পুরস্কার, ১৬টি দ্বিতীয় এবং ১৩টি প্রতিষ্ঠান তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছে। এর আগে ১ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচলে বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূস। 

সরেজমিন দেখা যায়, শুক্রবার দুপুর ২টার পর থেকে মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীর ঢল নামে। টিকিট কাউন্টারগুলোতে ছিল মানুষের দীর্ঘ সারি। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কেই শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। মেলা চলে রাত ১০টা পর্যন্ত।

বাণিজ্য মেলায় আগত হাটাব এলাকার দর্শনার্থী মামুন মোল্লা বলেন, খুবই ভালো লেগেছে। তবে মেলার ভেতরে ফুটপাতে অনেক হকার বসিয়ে মেলার মানকে একেবারে নষ্ট করে ফেলেছে। এদের জন্য হাঁটতে অসুবিধা হয়।

মেলায় বিদেশি স্টল কাশ্মীরি শাল হাউসের কর্মী আব্দুল মালেক বলেন, এবার বিক্রি ভালো। দর্শনার্থীও অনেক বেশি।

সায়মন ফেব্রিক্সের বিক্রয় প্রতিনিধি রাজিব নয়ন বলেন, মেলার শুরুতে একটু হতাশ হলেও শেষটা খুব ভালো ছিল। বেচাবিক্রি বেশ ভালো হয়েছে।

মিয়াকোর মার্কেটিং অফিসার আব্দুর রহমান বলেন, আমাদের ব্যবসা ও প্রচার এবং জনগণের সাড়া– সব বিষয় পজিটিভ। ঢাকার ভেতর থেকে রূপগঞ্জেই আমাদের জন্য ভালো হয়েছে।

মেলার খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ করে আক্কাস আলী নামে এক দর্শনার্থী বলেন, বাণিজ্য মেলার সবই ভালো ছিল, কিন্তু খাবারের মান তেমন ভালো না; দাম তিন থেকে চার গুণ বেশি।

এদিকে শুক্রবার কয়েক লাখ দর্শনার্থীর চাপ সামাল দিতে গলদঘর্ম ৭০০ পুলিশ সদস্য ও শতাধিক সেনা। এর মধ্যে দুপুরে তুচ্ছ ঘটনায় ঈগলু আইসক্রিম স্টলের বিক্রয়কর্মী ও মেলার প্রবেশদ্বার ঠিকাদার নিয়োজিত কর্মীদের মাঝে মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে মেলায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়। এ ঘটনায় সাংবাদিকরা ছবি তুলতে গেলে বাধার সম্মুখীন হন। পরে তাদের ওপরও হামলার ঘটনা ঘটে। ঈগলু আইসক্রিম স্টলের কর্মচারীদের হামলায় যমুনা টিভির রূপগঞ্জ প্রতিনিধি জয়নাল আবেদীন জয় আহত হন।

রূপগঞ্জ থানার এসআই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মানুষ যে যেভাবে পারে, এলোমেলোভাবে মেলায় প্রবেশ করে। এর মধ্যেও সব ঠিক রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছি।

এবারের মেলায় বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, হংকং, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, নেপালসহ বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য নিয়ে হাজির হন। মেলায় ৯টি বিদেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এ ছাড়া দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য দুটি হলের বাইরে মিলে মোট ৩৬১টি স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন ছিল। এবারের মেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্মৃতিধারণ সংবলিত তারুণ্যের বাংলাদেশ, ৩৬ জুলাই, মুগ্ধ কর্নারগুলো ছিল তরুণদের আগ্রহের স্থানে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র পগঞ জ ন র য়ণগঞ জ র পগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

শেয়ারবাজারে লেনদেন-খরা কাটছে না, হতাশ বিনিয়োগকারীরা

ঈদের ১০ দিনের ছুটির পর লেনদেন শুরুর প্রথম দিনেই বিনিয়োগকারীদের আশাবাদী করতে পারেনি দেশের শেয়ারবাজার। দীর্ঘ ছুটির পর আজ রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় দরপতনে। যদিও দিন শেষে সূচক ও লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। তবে তা বিনিয়োগকারীদের আশাবাদী হওয়ার মতো নয়। উল্টো ভালো মৌল ভিত্তির কিছু শেয়ারের দরপতন বিনিয়োগকারীদের আরও বেশি দুশ্চিন্তায় ফেলেছে।

ঢাকার বাজারে রোববার লেনদেন হওয়া ৩৯২ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭৯টিরই দরপতন হয়েছে, দাম বেড়েছে ১৪৫টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৬৮টির দাম। লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর দামের উত্থান–পতনের প্রভাবে দিন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭২৪ পয়েন্টে। আর লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৬৩ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৩৯ কোটি টাকা বেশি।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজারের লেনদেন বর্তমানে যে পর্যায়ে নেমেছে, তাতে বাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী কারও জন্যই তা আশান্বিত হওয়ার মতো না। এই লেনদেনে অনেক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর পরিচালন খরচ তোলায় দুঃসাধ্য হয়ে গেছে। ফলে অনেক ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক মাস শেষে বাজার থেকে পরিচালন খরচ তুলতেই হিমশিম খাচ্ছে। একইভাবে লেনদেন থেকে স্টক এক্সচেঞ্জগুলো যে কমিশন আয় করে তা দিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালন খরচ উঠছে না।

সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, বাজেটকে সামনে রেখে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা আশান্বিত হয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঘোষিত বাজেটে সরাসরি বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো সুখবর ছিল না। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাজার নিয়ে হতাশা আরও বেড়েছে। এ অবস্থায় নতুন করে বাজারে কোনো বিনিয়োগকারী তো আসছেনই না, উল্টো বিদ্যমান বিনিয়োগকারীরাও সুযোগ পেলে লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছাড়ছেন। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে বাজার দীর্ঘ মন্দার কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

ব্রোকারেজ হাউস লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে আজ রোববার সূচকের পতনে যেসব কোম্পানি বড় ভূমিকা রেখেছে তার মধ্যে ছিল ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, ইসলামী ব্যাংক, গ্রামীণফোন, বেক্সিমকো ফার্মা, বিএসআরএম লিমিটেড, আইএফআইসি ব্যাংক, রেনাটা, ওরিয়ন ইনফিউশন, ইউনাইটেড পাওয়ার ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। এসব কোম্পানির শেয়ারের দরপতনে আজ ডিএসইএক্স সূচকটি ৭ পয়েন্ট কমেছে। তার বিপরীতে সূচকের উত্থানে বড় ভূমিকা রেখেছে ব্র্যাক ব্যাংক, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, স্কয়ার ফার্মা, লাভেলো আইসক্রিম, সিটি ব্যাংক, এসিআই, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, আল–আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংক ও বীকন ফার্মা। এসব কোম্পানির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধিতে ডিএসইএক্স সূচকটি ১৮ পয়েন্টের বেশি বেড়েছে।

লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের এই প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, একদিকে ভালো মৌল ভিত্তির কিছু কোম্পানির শেয়ারের দরপতনে সূচক কমেছে, অন্যদিকে কিছু ভালো কোম্পানির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি সেই পতনকে রোধ করেছে। এই কারণে দিন শেষে সূচকটি ইতিবাচক ধারায় ছিল।

ঢাকার বাজারে আজ লেনদেনের এক–পঞ্চমাংশ বা প্রায় ২০ শতাংশই ছিল খাদ্য খাতের দখলে। এ খাতের লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৫২ কোটি টাকা। যার প্রায় অর্ধেকই আবার একটি কোম্পানির, সেটি লাভেলো আইসক্রিম। রোববার ঢাকার বাজারে লেনদেনের শীর্ষে ছিল কোম্পানিটি। দিন শেষে ২৫ কোটি টাকার শেয়ারের হাতবদল হয়। মূলত লাভেলো আইসক্রিমের লেনদেনের ওপর ভিত্তি করেই এদিন খাদ্য খাত লেনদেনের শীর্ষে জায়গা করে নেয়। খাতভিত্তিক লেনদেনের দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে ছিল ব্যাংক খাত। এই খাতের কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩৪ কোটি টাকা। ব্যাংক খাতকে এদিন লেনদেনের দ্বিতীয় অবস্থানে রাখার পেছনে বড় ভূমিকা ছিল ব্র্যাক ব্যাংকের। ঢাকার বাজারে আজ রোববার ব্র্যাকের ব্যাংকের ১৫ কোটি টাকার শেয়ারের হাতবদল হয়। সেই হিসাবে ব্যাংক খাতের সম্মিলিত লেনদেনের প্রায় অর্ধেকই ছিল ব্যাংকটির একক লেনদেন।

বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় এক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহী প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে এখন নতুন করে কোনো আশা দেখছেন না সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এ কারণে প্রতিদিনই কোনো না কোনো বিনিয়োগকারী বাজার ছেড়ে যাচ্ছেন। বাজেটকে ঘিরে বিনিয়োগকারীদের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, সেটি পূরণ না হওয়ায় হতাশা আরও বেড়েছে। যার প্রভাব বাজারে পড়ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেয়ারবাজারে লেনদেন-খরা কাটছে না, হতাশ বিনিয়োগকারীরা
  • পঞ্চগড়ে ভ্যান-নসিমন সংঘর্ষে নিহত ১