গোপালগঞ্জে শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান থেকে বাড়ি ফেরার পথে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় অমর বিশ্বাস (৫৪) নামে এক কাঠমিস্ত্রি নিহত হয়েছেন। 

শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) রাতে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা করপাড়া ইউনিয়নে বাজুনিয়া-গান্দিয়াশুর সড়কের তাড়গ্রাম পূর্বপাড়ায় দুর্ঘটনা ঘটে। 

নিহত অমর বিশ্বাস তাড়গ্রাম পূর্বপাড়া গ্রামের মহারাজ বিশ্বাসের ছেলে। তিনি পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি। 

গোপালগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মির মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান জানান, তাড়গ্রাম পূর্বপাড়ার রাজেন ডাক্তারের বাড়ির শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান শেষে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন অমর বিশ্বাস। এ সময় বাজুনিয়া-গান্দিয়াশুর সড়ক পার হতে গেলে দ্রুতগামী একটি মোটরসাইকেল তাকে চাপা দিলে গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারে কাছে হস্তান্তর করা হবে। 

তাড়গ্রাম পূর্ব পাড়ার বাসিন্দা ও নিহতের ভাতিজা সুবোধ বিশ্বাস বলেন, “আমার কাকা শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় শাওন সিকদার নামের এক যুবক তাকে মোটোরসাইকেল দিয়ে ধাক্কা মারে। এতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়।”

ঢাকা/বাদল/ইমন

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ প লগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

আলোর পাশে থেকেও তারা ‘অন্ধকারে’

রাজশাহী শহরের একটি মাদ্রাসায় পড়ত রুমন হোসেন (১৩)। মাদ্রাসার টিউশন ফি দিতে না পেরে বাবা নুর ইসলাম তাকে কাজে লাগিয়ে দেন। চার বছর ধরে সে কাজ করছে নগরের বিভিন্ন রেস্তোরাঁ, চা ও মোটরসাইকেলের দোকানে। এর মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আছে বছর দুই ধরে। কখনো ঘুরে ঘুরে বাদাম বিক্রি, কখনোবা কাজ করে চা ও জুসের দোকানে। সকাল আটটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত কাজ করে দৈনিক মজুরি পায় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।

যে বয়সে দল বেঁধে স্কুলে যাওয়া ও খেলাধুলা করার কথা রুমনের, সেই বয়সে তাকে কাজ করতে হচ্ছে। রুমনের মতো এমন অনেক শিশু নানা কাজ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত তারা। আলোর পাশে থেকেও অন্ধকারে থাকার মতো অবস্থা তাদের।

রুমনের বাবা নূর ইসলাম পেশায় রিকশাচালক। তিনি জন্ডিসে আক্রান্ত থাকার কারণে বেশিক্ষণ রিকশা চালাতে পারেন না। রুমনের মা সংসার ছেড়ে চলে যাওয়ায় তার বাবা আরেকটি বিয়ে করেছেন। সৎমায়ের সঙ্গে রুমনের বনিবনা হয় না। তাই সে থাকে দাদির সঙ্গে। দাদি আগে একটি কারখানায় কাজ করতেন। তবে বার্ধক্যের কারণে তিনি এখন কাজ করতে পারেন না। প্রতিদিন রোজগার করে রুমন যে অর্থ পায়, তা দাদির হাতে তুলে দেয়। আলাপকালে রুমন হোসেন বলে, ‘আব্বা ছোটকালে ক্যাম্পাসের একটা দোকানে কাজ করত। তারপর আমারে কাজে লাগায়া দেয়। কাজের জন্য খেলাধুলা করতে পারি না। বন্ধুদের মিস করি।’

আজ ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস, যা মে দিবস হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের একটি জুসের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ১২ বছর বয়সী আরিফুল ইসলাম (শান্ত) কাজ করছে। কাজের ফাঁকে কথা হয় তার সঙ্গে। সে জানায়, এর আগে তিন বছর মোটরসাইকেলের হেলমেটের দোকানে কাজ করেছে। পড়াশোনা করেছে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। তার বাবা মাহবুব ইসলাম ঢাকায় কাজ করেন। তবে সংসারের খরচ দেন না। মা আরিফা খাতুন বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে ঘর দিয়েছেন। প্রতি মাসে তিন হাজার টাকা কিস্তি দিতে হয়। মা একা কাজ করে সংসারের খরচ বহন করতে পারতেন না। তাই বাধ্য হয়ে তাকে কাজে লাগিয়ে দেন। এভাবেই চলছিল তাদের ছোট সংসার। তবে চার মাস আগে তাঁর মা ফুসফুসে সমস্যার কারণে মারা যান। এখন তার খালা তাকে দেখভাল করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন আবাসিক হলের ডাইনিং, ক্যানটিন, ভ্রাম্যমাণ খাবার, চা ও জুসের দোকানে কাজ করে অর্ধশতাধিক শিশু। তাদের অধিকাংশের বয়স ১২ বছরের কম। তারা কেউ-ই এখন লেখাপড়া করে না। পরিবারের আর্থিক দুরবস্থার কারণে বাধ্য হয়ে কাজ করছে তারা।

 

‘অন্ধকার জগতে’ জড়ানোর নজির

ক্যাম্পাসে থাকা শিশুরা যে শুধু শিশুশ্রমের শিকার হচ্ছে, তা নয়। অনেকে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের কয়েকটি দোকানে চুরির ঘটনায় তিন শিশুকে পুলিশে দেন দোকানিরা। এ সময় তাদের কাছে মাদকও পাওয়া যায়।

ক্যাম্পাসে যেসব শিশু কাজ করে, তাদের অনেককে লুকিয়ে ধূমপানও করতে দেখা যায়। পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতা ও শিক্ষার আলো থেকে দূরে থাকায় ‘অন্ধকার জগতে’ জড়িয়ে পড়ছে তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘নবজাগরণ ফাউন্ডেশন’, ‘ইচ্ছে’ ও ‘শিশু নিকেতন’ নামের সংগঠন ক্যাম্পাসের আশপাশে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করে।

ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কাজ করা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহির আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের দোকানগুলোতে নির্বিঘ্নে শিশুশ্রম হচ্ছে, এটা বিশ্ববিদ্যালয়–সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকের জন্যই লজ্জাকর। একইভাবে শিশুশ্রম রাষ্ট্রের জন্যও অপমানজনক। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উচিত এমন বেআইনি শিশুশ্রম রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। যাতে কোনো দোকানি শিশুদের কাজে নিতে না পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ