অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বিচারবহির্ভূত হত্যা দুর্ভাগ্যজনক: মির্জা ফখরুল
Published: 1st, February 2025 GMT
যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পরে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে এ ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যা দুর্ভাগ্যজনক। এই নির্মমতা আওয়ামী ফ্যাসিবাদী আমলকেই মনে করিয়ে দেয়।
শনিবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, কুমিল্লা জেলাধীন সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলামকে সাদা পোশাকধারী লোকেরা বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে তাকে হত্যা করে। তৌহিদুল ইসলামকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। ড.
মানুষ এক অজানা আশঙ্কায় দিনাতিপাত করবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, তৌহিদুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা জনমনে নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এহেন বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনায় দেশবাসী হতবাক হয়েছে। সরকার ও প্রশাসনে আওয়ামী দোসরদের ঘাপটি মেরে থেকে রক্তাক্ত ঘটনা ঘটানো হচ্ছে কি না, সেটি নিয়ে গভীর অনুসন্ধান জরুরি।
মির্জা ফখরুল বলেন, কোন সরকারি বাহিনীই আইন হাতে তুলে নিতে পারে না। অপরাধ সংঘটনকারী যতই শক্তিশালী হোক, তাকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া আইনের শাসনের অন্যতম শর্ত। কিন্তু তাকে কখনোই বিচারবহির্ভূতভাবে নির্যাতন করে হত্যা করার কোন অধিকার সরকারী বাহিনীগুলোর নেই। বেআইনি হত্যা করে কখনোই সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা যায় না, এতে আইনের শাসনকে চরমভাবে অবজ্ঞা করা হয় এবং দেশকে ঠেলে দেয়া হয় আদিম অন্ধকারের দিকে।
বিএনপি মহাসচিব তৌহিদুল ইসলামের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনার জোর আহ্বান জানান। একই সঙ্গে নিহতের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনাসহ তার পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জ্ঞাপন করেন করেন মির্জা ফখরুল।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম র জ ফখর ল ব এনপ ত হ দ ল ইসল ম সরক র র আইন র র ঘটন আওয় ম ফখর ল
এছাড়াও পড়ুন:
অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা ও মব সন্ত্রাস: আইন উপদেষ্টা
হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা ও মব সন্ত্রাসকে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা বলে মনে করেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তবে মিথ্যা মামলা থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মুক্তি দিতে ফৌজদারি কার্যবিধির সংশোধন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা এ কথা বলেন। গত এক বছরে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে যেসব কাজ হয়েছে, সংবাদ সম্মেলনে সেসব তুলে ধরেন তিনি।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘মিথ্যা মামলা নিয়ে আমার বিরক্তি ও আপত্তি বহুবার প্রকাশ করেছি। বারবার আপনাদের বলি, আমাদের সরকারের আমলে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক যে দুটি ঘটনা ঘটেছে, একটা হচ্ছে মিথ্যা মামলা, মামলা হতে পারে, কিন্তু মিথ্যাভাবে লোককে ফাঁসানো, মানে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা; আরেকটা হচ্ছে জব জাস্টিস। মব সন্ত্রাস আমি বলি। এই দুইটা আমাদের খুবই পীড়িত করে।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, মিথ্যা মামলা ঠেকানোর জন্য বা এই মামলা থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়ার জন্য ফৌজদারি কার্যবিধির সংশোধন করা হয়েছে। পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা না করে একটা প্রাথমিক প্রতিবেদন তৈরি করে আদালতে দেবেন। আদালত যদি দেখেন, এখানে ৪০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, কিন্তু ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষ্য আছে, বাকিদের বিরুদ্ধে নেই, তাহলে আদালত তখনই ছাড় করে দিতে পারবেন। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে সুফল পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের কাজের জন্যও আইন মন্ত্রণালয়কে দোষারোপ করা হয় উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘অন্য কারও ব্যর্থতার জন্য আমাদের দোষারোপ করবেন না। আমরা টিম হিসেবে কাজ করি এটা সত্যি, কিন্তু এক মন্ত্রণালয় অন্য মন্ত্রণালয়ের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।’
নির্বাচন কবে হবে, সে বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, জাস্ট অপেক্ষা করেন, কিছুদিনের মধ্যে ঘোষণা করা হবে।
হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার
হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে আইন উপদেষ্টা বলেন, পর্যালোচনার পর ১৫ হাজারের বেশি মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া সাইবার আইনের অধীনে ৪০৮টি ‘স্পিচ অফেন্স’–সংক্রান্ত মামলা এবং জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে করা ৭৫২টি হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এসব মামলা প্রত্যাহারের কারণে কয়েক লাখ রাজনৈতিক নেতা, কর্মী ও স্বাধীন মতের মানুষ হয়রানি থেকে রেহাই পেয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা তাঁর মন্ত্রণালয়ের এক বছরের কাজের চিত্র তুলে ধরে বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ সংশোধন করে আইনটিকে ন্যায়বিচারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ জারি, দেওয়ানি কার্যবিধি সংশোধন, ফৌজদারি বিধি সংশোধন, মামলাপূর্ব বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতার বিধান সংযোজন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সংশোধন, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিধিমালায় সংশোধন, সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ জারি, বিবাহ নিবন্ধন বিধিমালা সংশোধন, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস গঠন বিধিমালা, ২০২৫ এবং জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের আইন ও বিচার বিভাগে পদায়নে বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও বিভিন্ন কার্যক্রমের তথ্য তুলে ধরেন উপদেষ্টা।