হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় কৃষিকাজে  স্থানীয় নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে বহুগুণ। 
পরিবারের চাহিদা মেটানো, নিম্ন আয়ের পরিবারে বাড়তি আয়ের উৎস সৃষ্টির পাশাপাশি স্বনির্ভর হওয়ার লক্ষ্যে অনেক নারী উদ্যোক্তা হিসেবেও কৃষি কাজে ঝুঁকছেন।
এসব নারীর মধ্যে একটি বড় অংশ দরিদ্র পরিবারের। যারা পারিবারিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের আশায় স্থানীয় কৃষকের ফসলি জমিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। বাড়তি অর্থ আয়ের উপায় হিসেবে এ কাজে এখন যুক্ত হচ্ছেন স্থানীয় অনেক নারী। পুরুষ শ্রমিকদের পাশাপাশি সমান তালে কাজ করে গেলেও মজুরির ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছেন তারা।
উপজেলার ৫টি চা বাগানে বসবাসকারী নারী ও কিশোরীরা স্থানীয় কৃষকদের ফসলি জমিতে শ্রমিক হিসেবে বেশি কাজ করেন। তারা জানান, সমপরিমাণ কাজ করলেও মজুরি বৈষম্যের শিকার নারীরা। এ ধরনের কাজ করা হয় ব্যক্তি মালিকানাধীন ফসলের জমিতে। মজুরির কোনো নির্ধারিত নীতিমালা না থাকায় এভাবেই কাজ 
করতে হচ্ছে তাদের। কৃষিজমিতে শ্রমিক হিসেবে নিয়মিত কাজ করেন এমন নারী শ্রমিকরা জানান, মাধবপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে বছরব্যাপী মৌসুমি সবজি ও বিভিন্ন ফসল চাষ করা হয়। যে কারণে পুরুষের পাশাপাশি নারীরও এসব জমিতে শ্রমিক হিসেবে কাজের সুযোগ থাকে প্রায় সারাবছরই। বিশেষ করে চা বাগানে যেসব নারী কাজ পান না, তারা পরিবারের চাহিদা পূরণে বাড়তি আয়ের আশায় কৃষিজমিতে কাজ করেন। চা বাগান ছাড়াও অন্যান্য এলাকার দরিদ্র পরিবারের নারীরাও এ কাজ করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী কৃষিশ্রমিক জানান, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত জমিতে পরিশ্রম করতে হয় তাদের। কাজের ক্ষেত্রে পুরুষদের 
সঙ্গে সমান তালে কাজ করলেও মজুরির ক্ষেত্রে সমতা নেই। সুরমা চা বাগানের মালতি ভুমিজ 
নামে এক নারী কৃষিশ্রমিক জানান, কৃষিজমিতে কাজের জন্য একজন পুরুষ শ্রমিক যেখানে দৈনিক ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা মজুরি পান; সেখানে একজন নারী শ্রমিককে দেওয়া হয় মাত্র ২০০ টাকা। মজুরি নিয়ে কথা বলতে গেলে কাজ থেকে বাদ পড়ার ভয় থাকে। তাই নারী শ্রমিকরা অল্প টাকাতেই কাজ করেন।
পরমানন্দপুর গ্রামের সুফিয়া নামে আরেক নারী কৃষিশ্রমিক কৃষকের জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ কাজ করার পাশাপাশি মৌসুমে ধান রোপণ, ধান কাটাসহ বছরজুড়ে শত শত শ্রমিক কৃষিজমিতে কাজ করেন। তবে কম পারিশ্রমিকে তাদের পরিবার চালানো কষ্টসাধ্য।
আমজাদ মিয়া নামে একজন কৃষক জানান, সার, বীজসহ কৃষি যন্ত্রপাতির দাম অনেক বেশি। এতে ফসলের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। তারপরেও তারা চেষ্টা করেন শ্রমিকদের সর্বোচ্চ সম্মান করতে। তাছাড়া সব কৃষক এক পর্যায়ের নন। যাদের পুঁজি কম, জমি কম তাদের ক্ষেত্রে সেভাবে শ্রমিকদের পারিশ্রমিক দেওয়া সম্ভব হয় না। সবাই মিলে এক্ষেত্রে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিলে শ্রমিক-মালিক উভয়পক্ষের মঙ্গল হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সজীব সরকার জানান, কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাওয়ায় অনেক নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। মাধবপুরের নারী-পুরুষ একযোগে কৃষিকাজ করেন। এক্ষেত্রে উভয়ের অবদান সমান। নারী শ্রমিকরা যারা কৃষিজমিতে কাজ করেন তাদের পারশ্রমিকের ক্ষেত্রে কৃষক ও জমির মালিকরা সচেতন হলে এ সমস্যার সমাধান খুঁজে নেওয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে কৃষি দপ্তরের পক্ষ থেকে যৌক্তিক কোনো সহায়তা চাওয়া হলে তারা সাধ্যমতো চেষ্টা করবেন পরামর্শ দেওয়ার।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র পর ব র পর ব র র ক জ কর ন উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে