নারীরা ঝুঁকছেন কৃষিশ্রমে মজুরি নিয়ে অসন্তোষ
Published: 1st, February 2025 GMT
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় কৃষিকাজে স্থানীয় নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে বহুগুণ।
পরিবারের চাহিদা মেটানো, নিম্ন আয়ের পরিবারে বাড়তি আয়ের উৎস সৃষ্টির পাশাপাশি স্বনির্ভর হওয়ার লক্ষ্যে অনেক নারী উদ্যোক্তা হিসেবেও কৃষি কাজে ঝুঁকছেন।
এসব নারীর মধ্যে একটি বড় অংশ দরিদ্র পরিবারের। যারা পারিবারিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের আশায় স্থানীয় কৃষকের ফসলি জমিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। বাড়তি অর্থ আয়ের উপায় হিসেবে এ কাজে এখন যুক্ত হচ্ছেন স্থানীয় অনেক নারী। পুরুষ শ্রমিকদের পাশাপাশি সমান তালে কাজ করে গেলেও মজুরির ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছেন তারা।
উপজেলার ৫টি চা বাগানে বসবাসকারী নারী ও কিশোরীরা স্থানীয় কৃষকদের ফসলি জমিতে শ্রমিক হিসেবে বেশি কাজ করেন। তারা জানান, সমপরিমাণ কাজ করলেও মজুরি বৈষম্যের শিকার নারীরা। এ ধরনের কাজ করা হয় ব্যক্তি মালিকানাধীন ফসলের জমিতে। মজুরির কোনো নির্ধারিত নীতিমালা না থাকায় এভাবেই কাজ
করতে হচ্ছে তাদের। কৃষিজমিতে শ্রমিক হিসেবে নিয়মিত কাজ করেন এমন নারী শ্রমিকরা জানান, মাধবপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে বছরব্যাপী মৌসুমি সবজি ও বিভিন্ন ফসল চাষ করা হয়। যে কারণে পুরুষের পাশাপাশি নারীরও এসব জমিতে শ্রমিক হিসেবে কাজের সুযোগ থাকে প্রায় সারাবছরই। বিশেষ করে চা বাগানে যেসব নারী কাজ পান না, তারা পরিবারের চাহিদা পূরণে বাড়তি আয়ের আশায় কৃষিজমিতে কাজ করেন। চা বাগান ছাড়াও অন্যান্য এলাকার দরিদ্র পরিবারের নারীরাও এ কাজ করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী কৃষিশ্রমিক জানান, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত জমিতে পরিশ্রম করতে হয় তাদের। কাজের ক্ষেত্রে পুরুষদের
সঙ্গে সমান তালে কাজ করলেও মজুরির ক্ষেত্রে সমতা নেই। সুরমা চা বাগানের মালতি ভুমিজ
নামে এক নারী কৃষিশ্রমিক জানান, কৃষিজমিতে কাজের জন্য একজন পুরুষ শ্রমিক যেখানে দৈনিক ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা মজুরি পান; সেখানে একজন নারী শ্রমিককে দেওয়া হয় মাত্র ২০০ টাকা। মজুরি নিয়ে কথা বলতে গেলে কাজ থেকে বাদ পড়ার ভয় থাকে। তাই নারী শ্রমিকরা অল্প টাকাতেই কাজ করেন।
পরমানন্দপুর গ্রামের সুফিয়া নামে আরেক নারী কৃষিশ্রমিক কৃষকের জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ কাজ করার পাশাপাশি মৌসুমে ধান রোপণ, ধান কাটাসহ বছরজুড়ে শত শত শ্রমিক কৃষিজমিতে কাজ করেন। তবে কম পারিশ্রমিকে তাদের পরিবার চালানো কষ্টসাধ্য।
আমজাদ মিয়া নামে একজন কৃষক জানান, সার, বীজসহ কৃষি যন্ত্রপাতির দাম অনেক বেশি। এতে ফসলের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। তারপরেও তারা চেষ্টা করেন শ্রমিকদের সর্বোচ্চ সম্মান করতে। তাছাড়া সব কৃষক এক পর্যায়ের নন। যাদের পুঁজি কম, জমি কম তাদের ক্ষেত্রে সেভাবে শ্রমিকদের পারিশ্রমিক দেওয়া সম্ভব হয় না। সবাই মিলে এক্ষেত্রে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিলে শ্রমিক-মালিক উভয়পক্ষের মঙ্গল হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সজীব সরকার জানান, কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাওয়ায় অনেক নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। মাধবপুরের নারী-পুরুষ একযোগে কৃষিকাজ করেন। এক্ষেত্রে উভয়ের অবদান সমান। নারী শ্রমিকরা যারা কৃষিজমিতে কাজ করেন তাদের পারশ্রমিকের ক্ষেত্রে কৃষক ও জমির মালিকরা সচেতন হলে এ সমস্যার সমাধান খুঁজে নেওয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে কৃষি দপ্তরের পক্ষ থেকে যৌক্তিক কোনো সহায়তা চাওয়া হলে তারা সাধ্যমতো চেষ্টা করবেন পরামর্শ দেওয়ার।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র পর ব র পর ব র র ক জ কর ন উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।
জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।
কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।
সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।