সাবেক আইনমন্ত্রী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের (কসবা-আখাউড়া) সংসদ সদস্য আনিসুল হককে কৌশলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ‘ধরিয়ে দেন’ তারই বাসার দুজন ‘কাজের লোক’।

রবিবার (০২ ফেব্রুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এমন তথ্য তুলে ধরেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শরিফুল। 

যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা হলেন—সাবেক মন্ত্রীর অসুস্থ মায়ের সেবা-যত্নের দায়িত্বে থাকা শফিকুল ইসলাম সোহাগ এবং মন্ত্রীর গ্রামের বাড়ির কেয়ারটেকার (দারোয়ান) ইদ্রিস মিয়ার ছেলে আলাউদ্দিন বাবু।

আরো পড়ুন:

ফারুক হত্যা: সা‌বেক এম‌পি রানাসহ ৪ ভাই খালাস

সাবেক অর্থমন্ত্রীর একান্ত সচিব আজিজের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মোহাম্মদ শরিফুল ‘বিশ্বস্ত সূত্রের’ বরাতে ফেসবুক পোস্টে দাবি করেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে-পরে আনিসুল হকের ব্যক্তিগত শত শত কোটি টাকা নিরাপদে জমা রাখার কথা বলে, সেগুলো নিয়ন্ত্রণে নেয় সোহাগ ও বাবু। সরকার পতনের পর কৌশলে আনিসুল হককে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে ধরিয়ে দেন তারা।

শরিফুল বলছেন, এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী এখনো অবগত নন। টাকা আত্মসাৎ করে সোহাগ ও বাবু বিদেশে পালিয়ে যান। তারা প্রায়ই নাইট ক্লাবে আড্ডা দিচ্ছেন, আর অবৈধ টাকায় আরাম-আয়েশে বিলাসী জীবন পার করছেন। 

স্থানীয় রাজনীতিতে সোহাগ ও বাবুর একচ্ছত্র আধিপত্যের বিষয়েও সবিস্তারে বর্ণনা করেন ছাত্রলীগের এই নেতা। 

আনিসুল হকের ডানে শফিকুল ইসলাম সোহাগ, বামে আলাউদ্দিন বাবু

শরিফুল লেখেন, কৌশলে আনিসুল হকের এপিএস রাশেদুল কাওছার ভূঁইয়া জীবনকে সরিয়ে সোহাগ ও বাবু মন্ত্রীর পিএ পদ বাগিয়ে নেন। বনে যান সাবেক মন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা। এরপর দেশের সাব-রেজিস্ট্রার বদলি, চাকরির তদবির, অবৈধভাবে শত শত একর জমি; দেশ-বিদেশে ফ্ল্যাট, কয়েকশ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। 

পোস্টে বর্ণনা অনুযায়ী, সোহাগ ও বাবু কায়দা করে মন্ত্রীর গুলশান অফিস সম্পূর্ণ ‘নিয়ন্ত্রণে’ নেন। তখনই শুরু করেন আওয়ামী লীগসহ সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ত্যাগী নেতাকর্মীদের দূরে সরানোর ‘বিশেষ কৌশল’। 

অভিযুক্ত দুজন কসবা-আখাউড়ার রাজনীতি ধ্বংস করেছেন দাবি করে শরিফুল বলেন, কে নেতা, চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মেয়র হবেন; এসব সিদ্ধান্ত তারা নিতেন। আর মন্ত্রী তাদের সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্তভাবে ঘোষণা দিতেন। 

শরিফুলের ফেসবুক পোস্ট

ছাত্রলীগের এই নেতার দাবি, কসবা-আখাউড়ার দলীয় নেতাকর্মীকে বিদেশে বসে হরতাল-অবরোধ ও দলীয় লিফলেট বিতরণ করতে বলেন তারা। 

এই দুজনকে পাওয়ামাত্র ‘গণধোলাই’ দেওয়ার কথা বলে শরিফুল লিখেছেন, তাদের কাছ থেকে মন্ত্রীর অর্থগুলো উদ্ধার করুন। দলের নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পরিবারের মাঝে টাকাগুলো বিলিয়ে দিন। 

শরিফুলের পোস্টে অনেকে মন্তব্য করেছেন, যার মধ্যে একজন সবুজ আহম্মেদ। তিনি লিখেছেন, ‘‘অভিযুক্ত দুজন অতীতে কখনো রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। তৃণমূলের কোনো নেতাকে তারা চিনতেন না। মন্ত্রীর কারণে কসবা-আখাউড়ার আওয়ামী রাজনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে।’’

তানজিদ হাসান মিশু নামে একজন লেখেন, ‘‘তারা মন্ত্রীর পিএ পদ ব্যবহার করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের বিশাল ক্ষতি করেছেন। অথচ অতীতে কখনো ছাত্রলীগ-যুবলীগ বা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেননি।’’

ছাত্রলীগ নেতা শরিফুলের ফেসবুক পোস্টের মন্তব্য

মো.

ইভান ভূঁইয়া নামে একজন মন্তব্য্য করেছেন এমন, ‘‘দারোয়ান-কেয়ারটেকার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে; এতেই বোঝা যায় আওয়ামী লীগের ধ্বংসের কারণ।’’ 

অভিযুক্ত দুজনের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তাদের বিষয়ে এলাকায় খোঁজ-খবর করে পাওয়া যায়, সরকার পতনের পরই দুজন বিদেশে চম্পট দেন।

শরিফুলের পোস্টটি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে সেটি তার দেওয়া কি না, সে বিষয়ে জানতে তার মোবাইল নম্বরে একাধিকার কল করা হলেও সাড়া দেননি। তাকে এসএমএস দিলে ফিরতি বার্তায় ফেসবুক পোস্টটি তারই বলে জানিয়ে তিনি বলেন, যা লিখেছি সবই সত্য।

মাইনুদ্দীন/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ সব ক প স ট র র জন ত মন ত র র কর ছ ন আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

না’গঞ্জ আদালতের এজলাসের ভেতর সাবেক আইনমন্ত্রীকে মারধর (ভিডিও)

নারায়ণগঞ্জে আদালতের এজলাসের প্রবেশমুখে বিক্ষুব্ধ জনতা ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মারধরের শিকার হয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) পৌনে তিনটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত হাফেজ সোলাইমান হত্যা মামলায় রিমাণ্ড শুনানির জন্য নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মঈনুদ্দিন কাদিরের আদালতে তোলা হয় তাকে বলে জানান আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. কাইউম খান।

তিনি বলেন, হত্যা মামলাটিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমাণ্ড আবেদন করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। শুনানি শেষে আদালত চারদিনের রিমাণ্ড আবেদন মঞ্জুর করেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক গণমাধ্যমকর্মী বলেন, দুপুরে আদালতে তোলার সময় বাইরে  বিএনপন্থী আইনজীবীরা ‘আনিসুল হকের ফাঁসি’ চেয়ে স্লোগান দেন। শুনানি শেষে এজলাস থেকে বের হওয়ার সময় প্রবেশমুখে তাকে চর-থাপ্পর দেন বিক্ষুব্ধ জনতা ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। 

এই সময় আনিসুল হকের মাথায় পুলিশের হেলমেট ছিল। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা সাবেক এ আইনমন্ত্রীকে নিয়ে দৌঁড়ে আদালতের বারান্দা ত্যাগ করেন এবং একইভাবে তাকে দ্রুততার সাথে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়।

গণমাধ্যমকর্মীদের ধারণ করা ভিডিওতেও এজলাসের প্রবেশমুখে আনিসুল হককে চর-থাপ্পর দিতে দেখা যায়। 

প্রিজন ভ্যানে থাকা অবস্থায়ও বাইরে আদালত প্রাঙ্গণে ‘ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই, আনিসুল হকের ফাঁসি চাই’ বলে স্লোগন দিতে থাকেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। 

শুনানির আগে ও পরে বিএনপির মিছিলে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাবেক সভাপতি সরকার হুমায়ূন কবির ও আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার প্রধানকে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায় বলেও জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আদালত পুলিশের পরিদর্শক কাইউম খান বলেন, এজলাস থেকে বের হওয়ার পর বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি হয়, পরে পুলিশ দ্রুততার সাথে আসামিকে প্রিজন ভ্যানে তোলে। কিন্তু সেখানে কেউ চর-থাপ্পর দিয়েছে এমনটা আমার নজরে পড়েনি।

যোগাযোগ করা হলে ‘আনিসুল হককে উৎসুক জনগণ মারধর করেছে’ বলে জানিয়ে এতে বিএনপন্থী আইনজীবীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সরকার হুমায়ূন কবির।

তিনি আরও বলেন, ফাঁসির দাবিতে মিছিল করছি আমরা কিন্তু চর-থাপ্পর দিছে জনগণ। আইনজীবীরা কেন মারবে, তাদের প্রতি মানুষের ক্ষোভ আছে, সেই ক্ষোভ থেকে জনগণ তাকে মারধর করেছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্যের ৪৫% রাজনৈতিক
  • নির্বাচনে র‌্যাব-পুলিশের সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনী যুক্ত করাসহ ১২ প্রস্তাব
  • ‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’
  • না’গঞ্জ আদালতের এজলাসের ভেতর সাবেক আইনমন্ত্রীকে মারধর (ভিডিও)
  • নারায়ণগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে কিল-ঘুষি
  • নারায়ণগঞ্জে আদালত প্রাঙ্গণে সাবেক আইনমন্ত্রীকে কিল-ঘুষি
  • নারায়ণগঞ্জের আদালতে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে কিলঘুষি
  • ডিবির অভিযানে আ.লীগের সাবেক এমপিসহ গ্রেপ্তার ৭
  • পুলিশ সপ্তাহ শুরু মঙ্গলবার, নির্বাচনী নির্দেশনা পাবে আইনশৃঙ্খলা ব
  • সাবেক আইজিপিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় আবার বাড়ল