Samakal:
2025-05-01@05:01:17 GMT

তেতেছে ফলের বাজার

Published: 6th, February 2025 GMT

তেতেছে ফলের বাজার

বাড়তি সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিতে দু’দিন বন্দর থেকে আমদানি করা ফল খালাস এবং সরবরাহ বন্ধ রাখেন আমদানিকারকরা। এর প্রভাব পড়েছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে। মাত্র দুই দিনেই পাইকারিতে ২০ কেজির প্রতি কার্টন আমদানি করা ফলের দাম বেড়েছে ১০০ টাকা পর্যন্ত।

খুচরায় বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ৪০ টাকার মতো। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার, ফকিরাপুল ও বাদামতলী বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

আমদানিকারকরা বলছেন, আগে আমদানি করা যেসব ফল রয়েছে, সেগুলো ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি হচ্ছে। গত মঙ্গল ও বুধবার আমদানি ও খালাস পুরোপুরি বন্ধ ছিল। বর্ধিত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার না হলে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ফল আমদানি, খালাস ও সরবরাহ কার্যক্রম ফের বন্ধ থাকবে। তারা বলছেন, ফলের ওপর বর্ধিত শুল্ক আরোপ এক ধরনের হটকারী সিদ্ধান্ত। এটি প্রত্যাহার করা না হলে ফল নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও ফল ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে কমলা, আপেল, নাশপাতি, আঙুর, আনারসহ আমদানি করা বিভিন্ন তাজা ফলের ওপর মোট শুল্ক-কর ছিল ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে শুল্ক-কর বাড়িয়ে করা হয় ১১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে তা আরও বেড়ে হয় ১১৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। চলতি অর্থবছর মাঝামাঝি এসে গত ৯ জানুয়ারি আরেক দফা সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর ফলে মোট শুল্ক-কর দাঁড়িয়েছে ১৩৬ দশমিক ২০ শতাংশে। গত সাড়ে তিন বছরে চার দফায় বেড়েছে শুল্ক-কর। সর্বশেষ গত ৯ জানুয়ারি সরকার ফল আমদানিতে নতুন করে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে এটি হয়েছে ৩০ শতাংশ।

এভাবে শুল্ক বাড়ানোর কারণে গত সপ্তাহে বাজারে আমদানি করা সব ধরনের ফলের কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকার মতো বেড়ে গেছে। বর্ধিত শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিতে ফল ব্যবসায়ীরা গত মঙ্গলবার থেকে দু’দিন চট্টগ্রাম, বেনাপোলসহ সব স্থল ও নৌপথ দিয়ে ফল আমদানি এবং খালাস বন্ধ রাখেন। এর প্রভাব পড়েছে পাইকারি বাজারে। নতুন করে আরেক দফা বেড়েছে দাম। গত দুই দিনে মাল্টা, আপেল, আনার ও আঙুরের কার্টনে ৮০ থেকে ১০০ টাকা দাম বেড়েছে। প্রতি কার্টনে ২০ কেজি ফল থাকে। সেই হিসাবে পাইকারি বাজারে কেজিতে বেড়েছে চার থেকে পাঁচ টাকা। এর ফলে খুচরা বাজারে বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা।

গতকাল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাল্টার কেজি ২৬৫ থেকে ২৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দু’দিন আগে কেজি ছিল ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে আরও কম অর্থাৎ কেজি কেনা গেছে ২৪০ থেকে ২৪৫ টাকায়। দুই-এক দিন আগেও সবুজ আঙুরের কেজি ৩১০ থেকে ৩২০ এবং কালো আঙুরের কেজি ৪০০ থেকে ৪৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দাম বেড়ে গতকাল এই দুই জাতের আঙুরের কেজি বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে ৩৩০ থেকে ৩৪০ ও ৪৪০ থেকে ৪৬০ টাকায়।

এ ছাড়া দুই-তিন দিন আগেও আফ্রিকার আপেলের (সবুজ রঙের) কেজি ছিল ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকা কেজি। আর পুঁজি আপেলের কেজি বিক্রি হয়েছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা। দাম বেড়ে এখন এ দুই জাতের আপেলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ থেকে ৩৭০ এবং ২৮০ থেকে ২৯০ টাকা। কমলা বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি, যা দু’দিন আগে ছিল ২০০ থেকে ২১০ টাকা। দুই দিনে কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে নাশপাতি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা দরে। আকারভেদে আনারের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, যা দুই-তিন দিন আগে ছিল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা।

কারওয়ান বাজারের ফল বিক্রেতা মো.

বোরহান সমকালকে বলেন, দাম বাড়ার কারণে বিক্রি কিছুটা কমেছে। অনেকেই দাম শুনে হাঁটা ধরেন। সামনে বিক্রি আরও কমে গেলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।

ফল আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফআইএ) সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সমকালকে বলেন, গত মঙ্গল ও বুধবার সব স্থল ও নৌপথ দিয়ে ফল আমদানি এবং খালাস বন্ধ রাখা হয়। বৃহস্পতিবার থেকে এক সপ্তাহ আমদানি ও খালাস কার্যক্রম চলবে। ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে আবার বন্ধ থাকবে।

মাঝে এক সপ্তাহ চালু রেখে আবার বন্ধ কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফল বিশেষ করে শিশু ও রোগীদের খাদ্য। সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হলে এই দুই শ্রেণির মানুষের কষ্ট বেশি হবে। সে জন্য মাঝে এক সপ্তাহ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা হবে। সরকার বর্ধিত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার না করলে এই কর্মসূচি চলবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ল ক কর ব যবস য় সরবর হ দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

শিল্প খাতের উৎপাদন যেন ব্যাহত না হয়

গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করার পরও চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারেনি। তারা মাটির নিচে থাকা গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন না করে জ্বালানি খাতকে আমদানিনির্ভর করার পাশাপাশি গোষ্ঠীবিশেষকে মোটা অঙ্কের কমিশন–বাণিজ্য করার সুযোগ দিয়েছিল।

অন্তর্বর্তী সরকার এখন পর্যন্ত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে টেকসই কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানা নেই। বরং তাদের নেওয়া কর্মসূচিতেও জন–অসন্তোষ প্রশমনের রাজনৈতিক প্রয়াস লক্ষ করা যাচ্ছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবারের গ্রীষ্মে লোডশেডিং সীমিত রাখার কথা বলেছেন। সেটা যদি গ্যাসের উৎপাদন বাড়িয়ে করা হয়, দেশবাসী স্বাগতই জানাবে। সরকার শিল্প খাতে গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে বাসাবাড়ি বা অন্য খাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়ানোর যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে সমস্যা আরও বাড়বে। শিল্প খাতে গ্যাসের সরবরাহ কমানো মানে সেখানে উৎপাদন কমবে।

ইতিমধ্যে শিল্পপ্রতিষ্ঠানে গ্যাসের সরবরাহ কমানোয় উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। জ্বালানি উপদেষ্টাকে পাঠানো চিঠিতে তারা বলেছে, কারখানাগুলোয় ন্যায্যতার ভিত্তিতে গ্যাসের সরবরাহ করা না হলেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কারখানা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ কারণে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ও বোনাস পরিশোধে সংকট তৈরি করতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।

বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) সূত্র বলছে, দেশে দিনে গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। এখন সরবরাহ করা হচ্ছে ২৭০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে ১০৫ কোটি ঘনফুট যাচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয়। বিদ্যুৎ খাত এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাচ্ছে। তাই আবাসিক ও শিল্প গ্রাহকের গ্যাস-সংকট বেড়েছে। গ্যাসের জোগান না বাড়িয়ে রেশনিং করে বা এক খাতে কমিয়ে, আরেক খাতে বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার উদ্যোগ কোনো কাজে আসবে না বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।

বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে। এটা খুবই ভালো কথা। কিন্তু গ্যাসের উৎপাদন কিংবা আমদানি না বাড়াতে পারলে পরিস্থিতি আরও নাজুক হবে। অনেক জ্বালানিবিশেষজ্ঞ দেশে গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর কথা বলেছেন। সেটা তো রাতারাতি সম্ভব নয়। তথাকথিত সিস্টেম লস বা চুরি কমিয়ে কিছু গ্যাস বা বিদ্যুৎ হয়তো সাশ্রয় হবে। এ অবস্থায় এলএনজি ও জ্বালানি তেলের আমদানি বাড়াতে হবে; যাতে শিল্প খাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা যায়।

গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম নিয়েও সরকার চাপে আছে। আইএমএফ গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। বর্তমানে পেট্রোবাংলা প্রতি ইউনিট গ্যাস বিক্রি করে পায় ২২ টাকা ৮৭ পয়সা। তাদের খরচ হচ্ছে গড়ে ২৭ টাকার বেশি—এটা সাধারণ গ্রাহকদের জন্য। এখানে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হয়। কিন্তু শিল্পে প্রতি ইউনিট গ্যাস তারা বিক্রি করে ৩০ টাকায়; যেখানে ভর্তুকি দিতে হয় না।

জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে সজাগ থাকতে হবে যাতে দেশের শিল্প খাত, বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্পের উৎপাদন যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। জ্বালানি উপদেষ্টা গ্রাম ও শহরে লোডশেডিং ভাগ করে নেওয়ার কথা বলেছেন। খুবই আশার কথা। একই সঙ্গে তিনি যদি বলতেন, জনজীবনে লোডশেডিং কমানোর পাশাপাশি শিল্প খাতে গ্যাস সরবরাহও স্বাভাবিক থাকবে, তাতে শিল্পোদ্যোক্তারা আশ্বস্ত হতেন, দেশবাসীও।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৪ শতাংশ
  • চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে বিদেশি ঋণ শোধ ৩০০ কোটি ডলার ছাড়াল
  • আদানির সঙ্গে চুক্তি ক‌রে শুল্ক ফাঁকি
  • তৃতীয় প্রান্তিকে মুনাফা কমেছে স্কয়ার ফার্মার
  • ৯ মাসে ১৪ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা
  • শিল্প খাতের উৎপাদন যেন ব্যাহত না হয়
  • শিক্ষার মানোন্নয়নে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ প্রয়োজন
  • ২০২৭ সালের জুনের পর ‘করছাড়’ থাকবে না
  • ৯ মাসে ৪,৬০০ কোটি টাকার ব্যবসা ওয়ালটনের
  • যমুনা অয়েলের মুনাফা বেড়েছে ৩৮ শতাংশ