বাড়তি সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিতে দু’দিন বন্দর থেকে আমদানি করা ফল খালাস এবং সরবরাহ বন্ধ রাখেন আমদানিকারকরা। এর প্রভাব পড়েছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে। মাত্র দুই দিনেই পাইকারিতে ২০ কেজির প্রতি কার্টন আমদানি করা ফলের দাম বেড়েছে ১০০ টাকা পর্যন্ত।
খুচরায় বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ৪০ টাকার মতো। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার, ফকিরাপুল ও বাদামতলী বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
আমদানিকারকরা বলছেন, আগে আমদানি করা যেসব ফল রয়েছে, সেগুলো ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি হচ্ছে। গত মঙ্গল ও বুধবার আমদানি ও খালাস পুরোপুরি বন্ধ ছিল। বর্ধিত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার না হলে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ফল আমদানি, খালাস ও সরবরাহ কার্যক্রম ফের বন্ধ থাকবে। তারা বলছেন, ফলের ওপর বর্ধিত শুল্ক আরোপ এক ধরনের হটকারী সিদ্ধান্ত। এটি প্রত্যাহার করা না হলে ফল নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও ফল ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে কমলা, আপেল, নাশপাতি, আঙুর, আনারসহ আমদানি করা বিভিন্ন তাজা ফলের ওপর মোট শুল্ক-কর ছিল ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে শুল্ক-কর বাড়িয়ে করা হয় ১১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে তা আরও বেড়ে হয় ১১৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। চলতি অর্থবছর মাঝামাঝি এসে গত ৯ জানুয়ারি আরেক দফা সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর ফলে মোট শুল্ক-কর দাঁড়িয়েছে ১৩৬ দশমিক ২০ শতাংশে। গত সাড়ে তিন বছরে চার দফায় বেড়েছে শুল্ক-কর। সর্বশেষ গত ৯ জানুয়ারি সরকার ফল আমদানিতে নতুন করে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে এটি হয়েছে ৩০ শতাংশ।
এভাবে শুল্ক বাড়ানোর কারণে গত সপ্তাহে বাজারে আমদানি করা সব ধরনের ফলের কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকার মতো বেড়ে গেছে। বর্ধিত শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিতে ফল ব্যবসায়ীরা গত মঙ্গলবার থেকে দু’দিন চট্টগ্রাম, বেনাপোলসহ সব স্থল ও নৌপথ দিয়ে ফল আমদানি এবং খালাস বন্ধ রাখেন। এর প্রভাব পড়েছে পাইকারি বাজারে। নতুন করে আরেক দফা বেড়েছে দাম। গত দুই দিনে মাল্টা, আপেল, আনার ও আঙুরের কার্টনে ৮০ থেকে ১০০ টাকা দাম বেড়েছে। প্রতি কার্টনে ২০ কেজি ফল থাকে। সেই হিসাবে পাইকারি বাজারে কেজিতে বেড়েছে চার থেকে পাঁচ টাকা। এর ফলে খুচরা বাজারে বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা।
গতকাল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাল্টার কেজি ২৬৫ থেকে ২৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দু’দিন আগে কেজি ছিল ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে আরও কম অর্থাৎ কেজি কেনা গেছে ২৪০ থেকে ২৪৫ টাকায়। দুই-এক দিন আগেও সবুজ আঙুরের কেজি ৩১০ থেকে ৩২০ এবং কালো আঙুরের কেজি ৪০০ থেকে ৪৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দাম বেড়ে গতকাল এই দুই জাতের আঙুরের কেজি বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে ৩৩০ থেকে ৩৪০ ও ৪৪০ থেকে ৪৬০ টাকায়।
এ ছাড়া দুই-তিন দিন আগেও আফ্রিকার আপেলের (সবুজ রঙের) কেজি ছিল ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকা কেজি। আর পুঁজি আপেলের কেজি বিক্রি হয়েছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা। দাম বেড়ে এখন এ দুই জাতের আপেলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ থেকে ৩৭০ এবং ২৮০ থেকে ২৯০ টাকা। কমলা বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি, যা দু’দিন আগে ছিল ২০০ থেকে ২১০ টাকা। দুই দিনে কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে নাশপাতি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা দরে। আকারভেদে আনারের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, যা দুই-তিন দিন আগে ছিল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা।
কারওয়ান বাজারের ফল বিক্রেতা মো.
ফল আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফআইএ) সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সমকালকে বলেন, গত মঙ্গল ও বুধবার সব স্থল ও নৌপথ দিয়ে ফল আমদানি এবং খালাস বন্ধ রাখা হয়। বৃহস্পতিবার থেকে এক সপ্তাহ আমদানি ও খালাস কার্যক্রম চলবে। ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে আবার বন্ধ থাকবে।
মাঝে এক সপ্তাহ চালু রেখে আবার বন্ধ কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফল বিশেষ করে শিশু ও রোগীদের খাদ্য। সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হলে এই দুই শ্রেণির মানুষের কষ্ট বেশি হবে। সে জন্য মাঝে এক সপ্তাহ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা হবে। সরকার বর্ধিত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার না করলে এই কর্মসূচি চলবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ ল ক কর ব যবস য় সরবর হ দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
কাফকো সার কারখানায় গ্যাস বিক্রির চুক্তি সই
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) সার কারখানায় গ্যাস বিক্রি করতে কোম্পানিটির সঙ্গে নতুন করে চুক্তি সই করেছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। দিনে গড়ে সাড়ে পাঁচ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে সার কারখানায়। চুক্তির পর দীর্ঘ দিনের বকেয়া গ্যাস বিল পরিশোধ করেছে কাফকো।
আজ বুধবার বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) মিলনায়তনে গ্যাস বিক্রির চুক্তিটি করা হয়। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, এ চুক্তির মধ্য দিয়ে সার কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে, যা দেশের কৃষি ও শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরাসরি অবদান রাখবে।
কর্ণফুলী গ্যাসের পক্ষে কোম্পানির সচিব কবির উদ্দিন আহম্মদ এবং কাফকোর পক্ষে কোম্পানি সচিব খাজা সাইদুর রহমান চুক্তিতে সই করেন।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। এতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান, কর্ণফুলী গ্যাসের চেয়ারম্যান এস এম মঈন উদ্দীন আহম্মেদ, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান, বিসিআইসি চেয়ারম্যান মো. ফজলুর রহমান, কর্ণফুলী গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, কাফকো ও পেট্রোবাংলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ চুক্তি কাফকোর মতো বৃহৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে এবং স্থানীয়ভাবে সার উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে আমদানিনির্ভরতা কমাতেও অবদান রাখবে। এই অংশীদারত্ব বাংলাদেশের শিল্প ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চুক্তি স্বাক্ষর শেষে কাফকোর পক্ষে শিল্পসচিব মো. ওবায়দুর রহমান কর্ণফুলী গ্যাসের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এস এম মঈন উদ্দীন আহম্মেদ এর কাছে বকেয়া গ্যাস বিল বাবদ ৯২৩ কোটি ৮১ লাখ ১৮ হাজার ৬১৬ টাকা এবং ডিমান্ড চার্জ বাবদ ৩৪ কোটি ৩৭ লাখ ৩৫ হাজার ৮৪৮ টাকার দুটি চেক হস্তান্তর করেন।