বুলডোজারে আমু-সাদিকের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিলো ছাত্র-জনতা
Published: 6th, February 2025 GMT
সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন
উত্তেজিত ছাত্র-জনতা বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে । এসময় বুলডোজার দিয়ে উভয় নেতার বাড়ির সামনের অংশ, সীমানা প্রাচীর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে বাড়িতে থাকা আসবাবপত্র বের করে পুড়িয়েও দেওয়া হয়।
বুধবার (৬ নভেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত টানা এ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে প্রতক্ষদর্শীরা জানান, রাত সাড়ে ১১টার দিকেই বরিশাল নগরীর কালিবাড়ি রোড ঘিরে পুলিশের লক্ষণীয় উপস্থিতি ছিল। রাত ১২টার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও কালিবাড়ি রোডে আসেন। একইসময় ছাত্র জনতা মিছিল নিয়ে কালিবাড়ি রোডের সেরনিয়াবাত ভবনমুখী হন। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের সড়কের দুইপাশ থেকেই প্রবেশে বাধা দেন। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর বাসভবনের ভেতর ঢুকে যান। এসময় তারা জনমানবহীন বাড়ির বিভিন্ন তলায় গিয়ে পড়ে থাকা ভাঙাচোরা কিছু আসবাবপত্র ও গ্লাস ভাঙচুর করে।
পরে শিক্ষার্থীরা বুলডোজার নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাতে বাধা প্রদানের চেষ্টা করে। তবে শিক্ষর্থীরা সেই বাধাও উপেক্ষা করে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর বাসভবনের সীমানা প্রাচীর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। পরে বাসভবনের সামনের অংশ, গাড়ি গ্যারেজ ও সেডের অংশবিশেষ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। এতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় জনতাও অংশগ্রহণ করে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের শিক্ষার্থীরা বলেন, দেশের মানুষ বর্তমানে সুখে শান্তিতে বসবাস করছে। তবে দেশের বাহিরে থেকে খুনি, ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসররা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। দেশের ভেতরে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির পাঁয়তারা করছে। তারা মনে করেছে ছাত্র জনতা ঘুমিয়ে গেছে। তাই দেশ থেকে ফ্যাসিস্টদের মূল উৎপাটনে জনগণের টাকায় বানানো তাদের বাড়িঘরে আজকের এ প্রোগ্রাম।
শিক্ষার্থীরা বলেন, কালিবাড়ি রোডে সাদিকের বাড়িটি ছিল টর্চারসেল। মানুষকে এখানে ধরে এনে নির্যাতন করা হতো। তাই জনগণের ক্ষোভ এতটাই ছিল যে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করে পুলিশ-সেনাবাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
এদিকে কালিবাড়ি রোডের সেরনিয়াবত ভবন ভাঙচুরের পর রাত দেড়টার দিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা নগরীর বগুরা রোডস্থ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর বরিশালের বাসভবনেও ভাঙচুর চালায়। সেখানে একটি টিনের ঘর বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি টিনের ঘর লাগোয়া একতলা ভবনের সামনের অংশ এবং পাশের দোতলা ভবনের সামনের অংশ ভাঙা হয়। পরে উঠানের সীমানা প্রাচীর ও বাড়ির সামনের সীমানা প্রাচীর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় বুলডোজার দিয়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুলডোজার দিয়ে আমির হোসেন আমুর বাসভবনের ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশের পরপরই ঘরগুলোতে ভাঙচুর চালানো হয়। পাশাপাশি ভেতরে থাকা বিভিন্ন মালামাল বাড়ির সামনে জড়ো করে তাতে আগুন দেওয়া হয়।
নাঈম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, কালিবাড়ি রোড ও বগুরারোডের এ ভবনগুলোতে ফ্যাসিবাদের আস্থানা। আমরা বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের কোনো আস্থানা রাখতে চাই না। তাই বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
ঘটনাস্থলে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল মহানগরের আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম শাহেদ বলেন, বিক্ষুব্ধ জনতা ফ্যাসিবাদের দোসরদের আস্তানা ভেঙে দিচ্ছে।
তবে এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য দিতে কেউ রাজি হননি।
এনজে
.উৎস: SunBD 24
কীওয়ার্ড: র স মন র অ শ ছ ত র জনত ব সভবন র র ব সভবন র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।
এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।
বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশএমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।
এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।
কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেইএমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।
এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।
সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।
গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতাঅক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।
সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।