বন্দরের ফরাজীকান্দায় নাসিম ওসমান ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতুর টোল প্লাজায় একটি পাট বোঝাই ট্রাকে অগ্্িনকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।

এরআগে টোল প্লাজার সিটিটিভি  ক্যামেরা ভেঙ্গে ফেলার কারণে ট্রাকটি বুধবার ভোর থেকে ঘটনাস্থলে পার্কিং করা ছিল। আগুনের খবর পেয়ে বন্দর ফায়ার সার্ভিসের ২টি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে প্রায় ২ ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নেভায়। মদনগঞ্জ ফাঁড়ী পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

ক্ষতিগ্রস্থ ট্রাক চালক আব্দুল মজিদের দাবি, গত বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারী) রাত ৮টায় দিকে ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ট-১৪-৬২৯২) যোগে কিশোরগঞ্জ থেকে পাট নিয়ে নারায়ণগঞ্জের কাশিপুর ইয়াছিন জুট মিলে দিকে রওনা দেই।

পরে ভোর সাড়ে ৩টায় সময় পাট বোঝাই ট্রাকটি বন্দরে নাসিম ওসমান ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতুর টোল প্লাজার সামনে আসলে ওই সময় অসাবধানতা বসত টোল প্লাজার সিসি ক্যামেরা ভেঙ্গে যায় ট্রাকের ধাক্কায়। 

এ ঘটনায় টোলপ্লাজার কর্মচারিরা মারমুখী আচরণ করে গাড়ীর চাবি ও কাগজপত্র জোরপূর্বক রেখে দেয়। এবং ক্ষতিপুরন বাবদ ১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা দাবি করে। ২ দিন ধরে পাট বোঝাই ট্রাকটি আটক রাখে। ক্ষতিপুরনের টাকা না পেয়ে শুক্রবার দুপুরে টোলপ্লাজায় নিয়জিত কর্মচারিরা পাট বোঝাই ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করে।

পাটের মালিক সুজিত সাহা দাবী করেন, অগ্নিকান্ডে পাট পুড়ে গিয়ে ২০ লাখ টাকা  ক্ষতি সাধন হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের প্রস্তুতি চলছে।

এ বিষয়ে টোলপ্লাজা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, বুধবার ভোরে টোল প্লাজার সিসি টিভির ক্যামেরা ভেঙ্গে ফেলে পাট বোঝাই ট্রাকটি। তখন ক্ষতিপুরনের কথা বলা হলে চালক জানায় সে মালিকের সাথে যোগাযোগ করতেছে।

কিন্তু আজকে (শুক্রবার) জুম্মার নামাজের সময়  ১টার দিকে যখন চারদিক অনেকটাই ফাঁকা তখন কয়েকজন লোক ট্রাকের পেছনে যায় এবং ট্রাকে আগুন জ¦লে ওঠে। 

ধারনা করা হচ্ছে সিগারেটের আগুন থেকে পাটের ট্রাকে আগুন লাগে। পরে ট্রাক চালক ট্রাকটি চালিয়ে টোল প্লাজার সামনে থেকে দুরে নিয়ে যায়। এবং ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভায়। 

এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, যদি আমরা চাবি নিয়ে যেতাম তাহলে চালক গাড়ি নিয়ে গেলো কিভাবে? সে তো গাড়িতেই ছিল। সিটিটিভির ফুটেজে সব পরিস্কার। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে তারা সিসিটিভি ফুটেজও দেখেছে।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

২২ ক্যাডার নিয়ে চলতেন স্বেচ্ছাসেবক দলের জিতু

বগুড়ায় মেয়েকে উত্ত্যক্ত ও বাবাকে খুনে অভিযুক্ত জিতু ইসলাম দলীয় প্রভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কথায় কথায় যাকে-তাকে অহেতুক মারধর করতেন। চলতেন ২২ জনের ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। তারা সবাই নানা অপকর্মে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামি। তাঁর আয় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা থেকে। গতকাল রোববার এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, জিতু ফুলবাড়ী কারিগরপাড়ার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে। ২০০৩ সালে এলাকায় বালু ব্যবসা নিয়ে প্রতিপক্ষ রবিউল ইসলামকে খুন করেন। সেই মামলায় তাঁর ১৪ বছর সাজা হয়। সাজা খেটে তিন বছর আগে বের হন। এর পর এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। তাঁর বাহিনীতে যে ২২ জন সদস্য, তারা কেউ রাজনৈতিক দলের পদ-পদবিতে নেই। হত্যা মামলা ছাড়াও জিতুর বিরুদ্ধে একটি মাদক ও একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।

ফুলবাড়ীর এক মুদি দোকানি বলেন, জিতু মাঝেমধ্যে তাঁর দোকান থেকে বাকি নিতেন। দু’বছরে বাকির পরিমাণ প্রায় ৪৮ হাজার টাকা হয়। তখন একদিন টাকা চান। এ কারণে জিতু তাঁকে মারধর করে নাকে খত নেন।
বৃন্দাবন এলাকার আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মাঝেমধ্যে জিতু তাঁর বাহিনী নিয়ে হাজির হতেন। মোটা অঙ্কের চাঁদা চাইতেন। চাঁদার কমপক্ষে অর্ধেক দিয়ে তবে নিস্তার পাওয়া যেত। এ ছাড়া ঈদে সেলামির নামে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো তাঁকে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা চান জিতু। না দেওয়ায় দোকানে ককটেল হামলা করেন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় আগস্টের পর জিতু বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়ে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ছোট ভাই মিতুলও তাঁর বাহিনীর সদস্য।

জিতু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সহসাধারণ সম্পাদকের পদ পান। সন্ত্রাসী হয়ে দলের পদ পাওয়ায় এলাকায় তাঁকে নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পদ পেয়ে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

এলাকার এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘জিতুর কারণে আমরা মুখ খুলতে পারি না। সে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে এলাকা অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি পেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তার নির্যাতনের শিকার অর্ধশতের কম হবে না। তার বখাটেপনার কারণে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হতো না।’
এক বছর আগে থেকে ফুলবাড়ির পাশেই শহরের শিববাটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন জিতু। সেই এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক শাকিল হোসেন। শাকিলের মেয়ে স্থানীয় ভান্ডারী সিটি বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এক মাস আগে ৫২ বছর বয়সী জিতু বিয়ের প্রস্তাব দেন শাকিলের মেয়েকে। বিষয়টি শাকিল জেনে রাগ করেন। জিতুর ওপর চড়াও হন। কিছুতে রাজি না হলে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকেন জিতু। তাঁর মেয়েকেও উত্ত্যক্ত করতেন। এরই এক পর্যায়ে শনিবার বিকেলে শাকিলকে পিটিয়ে খুন করেন জিতু ও তাঁর বাহিনী।
এ হত্যার ঘটনায় জিতুকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে গতকাল রোববার বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন শাকিলের স্ত্রী মালেকা খাতুন। পুলিশ শনিবার রাতেই জিতু ও তাঁর সহযোগী মতি এবং বিপ্লবকে আটক করে।

সন্ত্রাসীকে দলের পদ দেওয়ার বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল বলেন, ‘আমি জানতাম না, সে দলের নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করছে। আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি।’ শনিবার রাতে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সই করা বিবৃতিতে জিতু ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়।

বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির বলেন, ‘এ মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক জোবায়ের খান জানান, গতকাল জিতুসহ তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা শাখা। গতকাল বিকেলে শহরের সাতমাথায় সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী এতে সভাপতিত্ব করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ