গোপালগঞ্জে এক সভায় গায়ে পেট্রল ঢেলে এক ব্যক্তিকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ
Published: 8th, February 2025 GMT
গোপালগঞ্জে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভা চলার সময় এক ব্যক্তিকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। আজ শনিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে গোপালগঞ্জ শহরের বেদগ্রাম বিশ্ব মুক্তবাণী সংস্থার কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
তাঁকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে গোপালগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।
আহত ব্যক্তির নাম শ্যামল মণ্ডল। তিনি সদর উপজেলার করপাড়া ইউনিয়নের হাটবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা এবং রাজধানী ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। তিনি গোপালগঞ্জে বিশ্ব মুক্তবাণী সংস্থার (ডগলাস প্রকল্প) কোষাধ্যক্ষ। তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
বিশ্ব মুক্তবাণী সংস্থার নির্বাহী পরিচালক শলোমন অপূর্ব বাড়ৈ বলেন, গোপালগঞ্জের বেদগ্রামে বিশ্ব মুক্তবাণী সংস্থার সামনে ও ভেতরে জায়গা দখল করার জন্য দীর্ঘদিন পাঁয়তারা করছেন বর্তমান কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটির সহসভাপতি এন্ড্রু বিশ্বাস। আজ কার্যনির্বাহী কমিটির নির্ধারিত সভা ডাকা হয়েছিল। শুরুর কিছু সময় পর এন্ড্রু সভা বানচাল করার জন্য ৪০-৫০ জন লোক নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করেন। একপর্যায়ে উপস্থিত সদস্যদের কয়েকজনকে পেটানো হয়। আতঙ্কে অনেক সদস্য দৌড়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যান। এ সময় সংস্থাটির কোষাধ্যক্ষ শ্যামলকে কক্ষে আটকে মারধরের একপর্যায়ে তাঁর গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। এতে গুরুতর দগ্ধ হন তিনি।
সংস্থাটির সাধারণ সম্পাদক দানিয়েল বৈদ্য বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার এন্ড্রু বিশ্বাস তাঁর ভাগনেদের সঙ্গে নিয়ে খুলনায় গিয়ে আমাকে আজকের সভায় উপস্থিত না হওয়ার জন্য হুমকি দেন এবং আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। আমি গোপালগঞ্জে এলে দেখে নেবে বলেও হুমকি দিয়ে আসেন। তাঁর উদ্দেশ্য গোপালগঞ্জে বিশ্ব মুক্তবাণী সংস্থার জায়গাটুকু দখল করে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করবে। আজ এন্ড্রু বিশ্বাসের নেতৃত্বে প্রভাস বাড়ৈ, দিলীপ বাড়ৈ, আইজ্যাক বাড়ৈ, জুয়েল বাড়ৈ, মিকাইল বাড়ৈ, লিটন, সুকলাল মজুমদারসহ ৪০-৫০ জন লোক নিয়ে শ্যামলের ওপর হামলা হয়।’
এ বিষয়ে এন্ড্রু বিশ্বাসের সঙ্গে মুঠোফোন যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘আমার বিরুদ্ধে জায়গা দখলের যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা সঠিক নয়।’ সংস্থাটির সাধারণ সম্পাদক দানিয়েল বৈদ্যকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি তাঁর বড় ভাই হিসেবে একটা থাপ্পড় মেরেছি। তবে আজ আমার কোনো লোক হামলা করেনি। কারা তাঁদের ওপর হামলা করেছে বা পুড়িয়েছে সেসব আমার জানা নেই।’
গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক কর্মকর্তা মো.
গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির সাজেদুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা
কদিন ধরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আড্ডায় ঘুরেফিরে একটাই নাম জিনাত ফেরদৌস। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এই বক্সার প্রথমবারের মতো পা রেখেছেন জাতীয় বক্সিং রিংয়ে। আর প্রথমবারই নিজের জাত চেনালেন।
আজ বিকেলে পল্টনের মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে ৫২ কেজি ওজন শ্রেণির ফাইনালে নেমে প্রতিপক্ষ আফরা খন্দকারকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় তুলেছেন জিনাত। প্রতিযোগিতার আগেই যাঁর আগমন ঘিরে কৌতূহল ছিল তুঙ্গে, সেই জিনাত রিংয়ে নামতেই যেন বুঝিয়ে দিলেন, অন্যদের চেয়ে কেন তিনি এগিয়ে।
তিন রাউন্ডের লড়াইয়ে শুরু থেকেই জিনাত ছিলেন আক্রমণাত্মক। পাঞ্চে ছিল গতি, রক্ষণে ছিল আত্মবিশ্বাস। অন্যদিকে আফরা খন্দকার চেষ্টা করেছেন রক্ষণ সামলে লড়াইয়ে টিকে থাকতে। খান কয়েক মোক্ষম ঘুষিতে কিছুটা নড়বড়ে হলেও শেষ পর্যন্ত দমে যাননি আফরা।
বরং জিনাতের ঘন ঘন আক্রমণের ফাঁক গলে এক-আধটু পাল্টা আঘাত করতেও পেরেছেন। তবে এই পর্যায়ের এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হয়ে পড়ে তাঁর জন্য অনেকটাই চাপের। তবু আফরা লড়ে গেছেন। আর জিনাতের আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি এ লড়াইকে করে তুলেছিল দেখার মতো।
গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছিলেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ও আফরার বড় বোন আফঈদা খন্দকার। উৎসাহ দিচ্ছিলেন ছোট বোনকে। পাশে ছিলেন মা–বাবাও। তবে পরিবারের ষোলো আনা সমর্থনও জিনাতকে হারানোর জন্য যথেষ্ঠ হয়নি।
ম্যাচ শেষে আফরা বললেন, ‘তিনি একজন ভালো খেলোয়াড়। তাঁর বিপক্ষে খেলা আমার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে তাঁর আক্রমণাত্মক স্কিলটা দুর্দান্ত। ম্যাচ শেষে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, গুড ফাইট।’
বিজয়ী জিনাত পরে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি সবাইকে বলতে চাই, বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা খেলতে চায়। তারা যদি সুযোগ-সুবিধা পায়, অনেক ভালো করবে। ওদের স্কিল আছে।’
সেমিফাইনালে আছিয়া না ফাইনালে আফরা—কোন লড়াইটা বেশি কঠিন ছিল? জিনাতের জবাব, ‘আমি আমার খেলাটা খেলেছি এবং জিতেছি। দুজনই আলাদা ধাঁচের প্রতিপক্ষ।’
জিনাত বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পদক জয়ের আকাঙ্ক্ষার কথা আজও বলেছেন। আগামী এশিয়ান গেমসে সুযোগ পেলে পদক জিতবেন কি না, প্রশ্নের ছোট্ট উত্তর, ‘ইনশা আল্লাহ।’
আফরা-জিনাত ফাইনাল ম্যাচটা যেন ছিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বক্সারের লড়াই নয়, এর বাইরেও চলছিল আরেক নাটক। ফাইনালের কয়েক ঘণ্টা আগেই বক্সিং রিংয়ে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। আনসারের বক্সার জাহিদুল হক রেফারির রায় নিয়ে ক্ষোভ জানাতে রিংয়ে বসে পড়েন প্রতিবাদ হিসেবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বক্সার জনি ভদ্রর ঘুষিতে কপালে চোট পান জাহিদুল। চিকিৎসাও নেন। একপর্যায়ে রিংয়ের মাঝখানে বসেই অভিনব প্রতিবাদ জানান।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ আনসার দল বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সভাপতির কাছে অভিযোগ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আনসারের প্রতিনিধিরা রিং ছেড়ে চলে যান। মুহূর্তেই ঘনীভূত হয়ে ওঠে অনিশ্চয়তা, আফরা-জিনাত ফাইনালটি আদৌ হবে তো? কারণ, আফরা বাংলাদেশ আনসারের প্রতিযোগী। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আনসার ফিরে আসে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
এ বিষয়ে বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফাইটে হারলে যা হয়। হারলেই বলে অন্যায় হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত রিংয়ে ফিরে এসেছে, খেলেছে, এটা ভালো।’
ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি প্রতিনিধিদল গ্যালারিতে এসে জিনাতকে শুভেচ্ছা জানায়, তাঁকে উপহারও দেয় তারা। গ্যালারিতে বাড়তি উত্তেজনা আর গুরুত্ব যোগ করে ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে। আর দেশের সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক উপস্থিতি তো ছিলই ম্যাচটা ঘিরে।