বৃহস্পতিবার বিশেষ কমিটি রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর সেদিন রাতেই আচমকা ফেডারেশনে যান বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল। কোচ পিটার বাটলার ও নারী ফুটবলারদের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব মেটাতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তাবিথের উপস্থিতিতে সবাই ইতিবাচক সমাধানই ধরে নিয়েছিলেন। বিদ্রোহ করা ১৮ ফুটবলারের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলা বাফুফে সভাপতি সব ভুলে অনুশীলনে যোগ দিতে বলেন সাবিনা খাতুন-ঋতুপর্ণা চাকমাদের। কিন্তু নিজেদের দাবির পক্ষে অনঢ় থাকা মেয়েরা শনিবার বাটলারের অধীনে অনুশীলনে যোগ দেননি। তাতে সংকট নিরসনের আভাসও মিলছে না।
এই অবস্থায় বিদ্রোহী মেয়েদেরও ক্যাম্প থেকে বের করার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তবে প্ল্যান ‘বি’ বাস্তবায়নের পথে এগোচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। নতুন করে ৩৫ জন নারী ফুটবলারের সঙ্গে চুক্তি করতে যাচ্ছে বাফুফে। সেই তালিকায় নেই আন্দোলন করা ১৮ জনের কেউই। রোববার ১২ জনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করবে বাফুফে। পর্যায়ক্রমে বাকি ২৩ জনের সঙ্গে এই সপ্তাহের মধ্যেই চুক্তি সম্পন্ন করা হবে বলে গতকাল সমকালকে জানিয়েছে বাফুফের বিশ্বস্ত একটি সূত্র, ‘সভাপতির কথা হচ্ছে মেয়েদের তো বোঝানো হয়েছে। তারা সেটা গ্রহণ করেনি। আমিও তাদের বলেছি, তারা নেয়নি। তাই এখন যারা ট্রেনিং করছে, তাদের মধ্য থেকে স্কোয়াড চূড়ান্ত করব। ওদের সঙ্গে চুক্তি করে ফেলব। প্রথম যে ১২ জন অনুশীলন শুরু করেছে, তাদের দিয়ে শুরু করব। মোট ৩৫ জনের সঙ্গে চুক্তি করব আমরা। সেখানে আপাতত ওরা (বিদ্রোহী) নেই।’
নতুন করে ৩৫ জনের সঙ্গে চুক্তি করলেও বাফুফে ভবনের আবাসিক ক্যাম্পে থাকা আন্দোলনরত মেয়েদের তাড়িয়ে না দিয়ে কৌশল অবলম্বন করতে যাচ্ছেন কর্তারা। ‘চুক্তি না হলে নিয়মমতো মেয়েরা ক্যাম্পে থাকতে পারে না; কিন্তু আমরা তাদের বের করে দিচ্ছি না। আমরা তাদের সুযোগও দিচ্ছি, প্লাস সম্মানও দিচ্ছি। আমাদের ধারণা, যখন চুক্তি হয়ে যাবে, স্কোয়াড ঘোষণা হবে, তখন ওরা নিজেরাই চলে যাবে।’
এই কর্মকর্তার মতো সরাসরি কিছু না বললেও সভাপতি তাবিথ আউয়ালের কথাতেও অনেকটা স্পষ্ট সাবিনা খাতুনরা চুক্তিতে থাকছেন না। অনুরোধ করার পরও মেয়েদের অনুশীলনে যোগ না দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাফুফে সভাপতি গতকাল সমকালকে জানান, ‘বর্তমান চ্যালেঞ্জ উতরানোর জন্য আমরা অবশ্যই ধৈর্যশীল ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেব। আবার এই মুহূর্তে আরব আমিরাতের বিপক্ষে ম্যাচকে সামনে রেখে যেসব মেয়ে অনুশীলন করছে, তাদের নিয়েই ভাবছি।’
তবে ৩৫ জনের তালিকায় নাম না থাকলেও সাবিনাদের জন্য চুক্তিতে ঢোকার দরজা একেবারে বন্ধ করছে না বাফুফে। সব ভুলে অনুশীলনে যোগ দিলে আন্দোলন করা মেয়েরাও চুক্তিতে আসবেন বলে জানিয়েছে ওই সূত্রটি। সে ক্ষেত্রে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই অনুশীলনে ফিরতে হবে সাবিনা-মনিকাদের। কারণ এর মধ্যেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচের জন্য দল ঘোষণা করবেন বাটলার। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই দলে বিদ্রোহীদের থাকার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ।
পিটার বাটলারকে সরিয়ে দিলেই মেয়েরা অনুশীলনে ফিরবেন। দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্রিটিশ কোচকে বাদ দেবে না বলে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে বাটলারকে ডেকে তাবিথ কড়া ভাষায় কথা শুনিয়েছেন বলে জানা গেছে। বাটলারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগে অনুশীলন করছেন না মেয়েরা, সেগুলো নাকি প্রমাণিত হয়নি বিশেষ কমিটির তদন্তে। ঋতুপর্ণা চাকমা-মারিয়া মান্ডারা চাচ্ছেন লিখিত প্রতিশ্রুতি। যেখানে লেখা থাকবে বাটলার ভবিষ্যতে মেয়েদের নিয়ে কোনো বাজে মন্তব্য করবেন না। এই বিষয়টি করা যায় কিনা– প্রশ্নে বাফুফের ওই কর্মকর্তার জবাব এমন, ‘কিরণ (নারী উইংয়ের প্রধান) আপা ওদের বলেছে, তোমরা অনুশীলন শুরু করো, আমি প্রয়োজন হলে পর্যবেক্ষক রাখব, সে এক মাস তোমাদের ট্রেনিং সেশন পর্যবেক্ষণ করবে। তোমাদের সঙ্গে বাটলার কোনো খারাপ ব্যবহার করে কিনা, তা দেখবে। যদি করে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশন নেব। সবার সঙ্গে আলাদা করে সভাপতি পর্যন্ত কথা বলেছেন। এর পর আর কী করার আছে আমাদের?’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত ব থ আওয় ল ফ টবল র
এছাড়াও পড়ুন:
একজন চা শ্রমিকের দিনে আয় ১৭৮ টাকা
হবিগঞ্জে ছোট-বড় মিলেয়ে চা বাগানের সংখ্যা প্রায় ৪১টি। এসব বাগানের বাসিন্দা প্রায় দেড় লাখ। এর মধ্যে, স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ৩২ থেকে ৩৫ হাজার মানুষ চা পাতা উত্তোলনে জড়িত।
চা বাগানে একজন শ্রমিককে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়। এর বিনিময়ে মজুরি পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। অভিযোগ রয়েছে, কোনো কোনো বাগানে নিয়মিত এই মজুরিও দেওয়া হয় না।
শ্রমিকদের দাবি, দৈনিক মজুরি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করতে হবে। বর্তমানে যে মজুরি পাওয়া যায় তা দিয়ে সংসার চলে না। প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে চা শ্রমিকদের নৈমিত্তিক ছুটির ব্যবস্থা করতে হবে।
আরো পড়ুন:
বৈষম্য কেন? নারী শ্রমিকেরা পান না সমান মজুরি
ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা
সরেজমিনে কয়েকটি বাগান ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকরা ছোট্ট কুঠুরিতে গাদাগাদি করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসবাস করেন। পুষ্টিকর খাবার তো দূরের কথা, দু-বেলা পেটভরে খেতে পারেন না।
শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘‘দুই বছর অন্তর চা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি ও সমস্যা নিয়ে চা বাগান মালিক পক্ষের সংগঠনের সঙ্গে চা শ্রমিক ইউনিয়ন প্রতিনিধির বৈঠক হয়। সর্বশেষ গত বছরের আগস্টে বৈঠক হয়েছে। সে সময় ৮ টাকা ৫০ পয়সা বৃদ্ধি পেয়ে মজুরি ১৭৮ টাকা ৫০ নির্ধারিত হয়েছে।’’
শ্রমিকদের কষ্টের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এই টাকায় চলা যায় না। দেশের কোথাও এতো সস্তা শ্রমের দাম নেই। বর্তমানে একজন কৃষিশ্রমিক দিনে ৫০০-১০০০ টাকা আয় করেন, একজন রিকশাচালকের প্রতিদিনের আয় ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা। সেখানে একজন চা শ্রমিক পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। এজন্য তাকে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়।’’
চা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে নাটক ও গানের মাধ্যমে দাবি জানিয়ে আসা জেলার চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি প্রতীক থিয়েটারের সভাপতি সুনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘দৈনিক ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা মজুরিতে শ্রমিকদের চলা কঠিন হয়ে পড়েছে। অচিরেই মজুরি ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হোক। এছাড়া, শ্রমিকদের আরো সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।’’
ঢাকা/রাজীব