ফিলিপস ঝড়ে পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিল কিউইরা
Published: 9th, February 2025 GMT
হারিয়ে যাওয়া ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজ আলোর মুখ দেখেছে পাকিস্তানের কল্যাণে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আয়োজক পাকিস্তানই এই তিন জাতির সিরিজ আয়োজন করেছে প্রস্তুতির মঞ্চ হিসেবে। সেখানে প্রথম ম্যাচেই স্বাগতিকরা মুখোমুখি হয় নিউজিল্যান্ডের। শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) এই ম্যাচে পাকিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছে কিউইরা।
লাহরে গ্লেন ফিলিপসের ঝড়ো শতকে ৬ উইকেটে ৩৩০ রান বিশাল পুঁজি পায় নিউজিল্যান্ড। রান তাড়ায় নেমে ২৫২ রানে অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তান। ফলে ৭৮ রানে বড় জয় নিয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রস্তুতি দারুণভাবে শুরু করেছে কিউইরা।
গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন কিউই কাপ্তান মিচেল স্যান্টনার। শুরুটা অবশ্য মন মতো হয়নি সফরকারীদের। শাহিন শাহ আফ্রিদির প্রথম ওভারের ফেরেন উইল ইয়াং। আরেক প্রতিশ্রুতিশীল ওপেনার রাচিন রবীন্দ্রের ১৯ বলে ২৫ রান ছোট ক্যামিও থামিয়ে দেন আবরার আহমেদ।
আরো পড়ুন:
হোয়াইটওয়াশের দ্বারপ্রান্তে শ্রীলঙ্কা
চারে এসে সফল শান্ত-হৃদয়
তবে তৃতীয় উইকেটে কেন উইলিয়ামস আর ড্যারিল মিচেলের ১১২ বলে ৯৫ রানের জুটি নিউজিল্যান্ডের ইনিংস মেরামত করে দেয়। উইলিয়ামস ৫৮ আর মিচেল ৮৪ বলে করেন ৮১। তবে কিউইদের বড় রানটা আসে মূলত শেষ ৬ ওভারের ঝড়ে। এই ৩৬ বলে ৯৮ রান তোলে নিউজিল্যান্ড। যার মূল কৃতিত্ব ক্যারিয়ারের প্রথম শতরান করা ফিলিপসের। ৭২ বলে সেঞ্চুরি পূরণ করেন এই বোলং অলরাউন্ডার। শেষ পর্যন্ত ৬ চার এবং ৭ ছক্কায় ৭৪ বলে ১০৬ রানে অপরাজিত থাকেন ফিলিপস। পাকিস্তানের হয়ে শাহিন ৩টি আর আবরার ২টি করে উইকেট শিকার করেন।
পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ফখর জামানের কল্যাণে ভালো সূচনা পায় পাকিস্তান। তবে আরেক প্রান্তে বাবর আজম ২৩ বলে ১০ রান করে বিদায় নেন। উদ্বোধনী জুটি থেকে আসে ৫২ রান। তিনে নামা কামরান গুলাম ও কচ্ছপ গতিতে ৩২ বলে ১৮ রান করে সাজঘরে ফেরেন। হতাশ করেছেন কাপ্তান মোহাম্মদ রিজওয়ানও।
তবে আরেক প্রান্তে উড়তে থাকা ফখর যখন ৬৯ বলে ৮৪ রানের চোখধাঁধানো ইনিংস খেলে থামেন তখন পাকিস্তানের দলীয় রান ১১৯। এই ওপেনারকে ফেরান প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান ফিলিপস। এরপর আগা সালমান ছাড়া আর কোন স্বাগতিক ব্যাটসম্যান প্রতিরোধই গড়তে পারেননি। তৈয়ব তাহির আউট হয়েছেন ২৯ বলে ৩০ রান করে। সালমান আঘার সংগ্রহ ছিল ৫১ বলে ৪০ রান। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বোলিংয়ের সময় পায়ে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন হারিস রউফ। এই পেসার ব্যাটিংয়ে নামতে না পারায় ৪৭.
নিউজিল্যান্ডের হয়ে ৩টি করে উইকেট শিকার করেছেন ম্যাট হেনরি ও কাপ্তান স্যান্টনার। ২ উইকেট তোলেন মাইকেল ব্রেসওয়েল। ম্যাচসেরা ফিলিপস।
সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) মুখোমুখি হবে নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা।
ঢাকা/নাভিদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ন কর প রথম উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
‘লিচুর বাগানে’ যে কারণে ‘পিরিতের বেড়া’ দিতে হয়
‘তাণ্ডব’ সিনেমার গান ‘লিচুর বাগানে’ প্রকাশের পর রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে। কফি শফ থেকে বাস, মেট্রোরেল আশপাশে কান পাতলে গানটা শোনা যাচ্ছে। কেউ না কেউ শুনছেন। সামাজিক মাধ্যমের স্টোরি ও রিলসেও গানটি ভেসে বেড়াচ্ছে। চরকি ও এসভিএফের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত গানটির আজ পর্যন্ত (১২ এপ্রিল ২০২৫) ভিউ হয়েছে যথাক্রমে ১২ মিলিয়ন ও ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন।
উচ্ছ্বসিত অনেক দর্শক গানটি নিয়ে মন্তব্যও করেছেন। তাহসিন নামের এক শ্রোতা লিখেছেন, ‘গানটির প্রতিটি সুর, দৃশ্য ও পরিবেশনায় বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অপূর্ব রূপ ফুটে উঠেছে। যাত্রাপালার ফিল্মের আবহে তৈরি এই গানটি যেন গ্রামীণ বাংলার প্রাণস্পন্দন তুলে ধরেছে। লোকেশন থেকে শুরু করে কস্টিউম, প্রতিটি ডিটেইলে আছে নিখুঁত যত্ন।’
গানটি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বন্ধুদের মধ্যে খুনসুটিও চলছে। বন্ধুকে মেনশন দিয়ে কেউ যেমন প্রশ্ন করছেন, ‘কী রে, বেড়া ডিঙাতে পারলি?’ আবার কেউ জিজ্ঞেস করছেন বল তো, ‘“লিচুর বাগানে” কেন “পিরিতের বেড়া” দিতে হয়?’
প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা যাক। শুরুতেই ‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, ‘কে এই ছত্তার পাগলা’ শীর্ষক প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। গবেষক সরোজ মোস্তফার মতে ‘কে দিল পিরিতের বেড়া লিচুরও বাগানে’ পঙ্ক্তির রচয়িতা ও সুরকার ছত্তার পাগলা। তবে সংগীতগবেষক গৌতম কে শুভর মত ভিন্ন। তাঁর মতে, ‘এটি মূলত প্রচলিত ঘেটু গান। “কে দিল পিরিতির বেড়া লিচুর বাগানে?” অংশটি মূল গানের অংশ। ছত্তার পাগলা নিজের মতো করে এর সঙ্গে কথা সংযোজন করেছেন। নেত্রকোনায় ছত্তার পাগলার লেখা রূপটিই বিখ্যাত হয়েছে।’ ২০১৪ সালের এপ্রিলে মারা গেছেন ছত্তার পাগলা। জীবদ্দশায় রচনা ও সুরারোপ করেছেন কয়েক শ গান। মৃত্যুর বছর তিনেক আগে তাঁর কাছ থেকে গানটি শুনে হাতে লিখে রেখেছিলেন আল মামুন চৌধুরী।
আল মামুন চৌধুরীর লেখা অনুযায়ী গানটির কথা:
কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে
লিচুরও বাগানে গো সই…লিচুরও বাগানে …(ঐ)
পাখি খাইছ না লিচু, বন্দে খাইবো
বন্দে লিচু খাইয়া, খুশি হইবো
আমার কাছে আইসা কইবো
কত শান্তি দিবো আমার মনেপ্রাণে (ঐ)
ছোট ছোট লিচুগুলি, বন্দে তুলে আম্বো তুলি
বন্দে দেয় গো আমার মুখে,
আমি দিতে চাই বন্ধুর মুখের পানে…(ঐ)
মিষ্টি লিচু খাইয়া বন্দে, বাঁশি বাজায় মন আনন্দে
আমার মনে লাগে সন্দে বন্ধু সম্ভব জাদু জানে (ঐ)
বাঁশি হাতে পলায় মালা, তারে চায় ছত্তার পাগলা,
করব লইয়া উলামেলা, (২) প্রাণবন্ধুর সনে…(ঐ)
সরল অর্থে ‘বেড়া’ হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা তথা বাধা তৈরির উপকরণ। আর ‘পিরিতের বেড়া’ মানে ভালোবাসায় বাধা। কিন্তু ভালোবাসার এই বাধা তথা প্রতিবন্ধকতা ‘লিচুর বাগানে’ কেন? কবিতা তথা গানে অর্থের তারতম্য অর্থের অনুগত না হয়ে বোধ কিংবা ভাবনার পরবশে প্রস্ফুটিত হয়। ব্যক্তিবিশেষে তা ভিন্ন ভিন্ন অর্থ লাভ করে, ভিন্ন ভিন্ন মূল্য পায়।
আরও পড়ুন‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, কে এই ছত্তার পাগলা ০৬ জুন ২০২৫‘কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে’ একটি ‘ঘাটু গান’ বা ‘ঘেটু গান’। এই গান প্রসঙ্গে জানা যায়, এই গানের অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল নৃত্য। অল্প বয়সী একটি ছেলেকে মেয়ে সাজিয়ে তার নৃত্যের মধ্য দিয়ে ঘেটু গান পরিবেশিত হতো। সঙ্গে থাকত ঢোল, হারমোনিয়াম, বাঁশি ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র। কয়েকটি ‘ঘেটু গানে’র দৃষ্টান্ত দেখা যাক।
(১)
‘তুই আমারে চিনলে নারে
আমি তো রসের কমলা।
বন্ধুর বাড়ি আমার বাড়ি
মধ্যে নলের বেড়া।’
(২)
ঘুমাইলা ঘুমাইলারে বন্ধু
পান খাইলায়না
এক বালিশে দুইটি মাথা
সুন্দর কইরা কওরে কথা।
গানগুলো থেকে উপলব্ধি করতে কষ্ট হয় না যে ‘ঘেটু গানে’ যেমন ভাষার সারল্য আছে, তেমনিভাবে রূপকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে যাপিত জীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে থাকা নানা উপকরণ। আর এ ক্ষেত্রে গান রচনার সময় রচয়িতা তাঁর আশপাশ থেকেই গান নির্মাণের উপকরণগুলো যে নিয়ে থাকবেন, সেই ধারণাও পাওয়া যায়। ‘লিচুর বাগানে’ গানের ক্ষেত্রেও বোধ করি এটা ঘটেছে। তাই এই গানে যেমন ‘লিচু বাগানে’র কথা আছে, একইভাবে আছে ‘পাখি’, ‘বাঁশি’ ও ‘লিচু’র কথাও। পাখিকে লিচু না খাওয়ার অনুরোধ করলেও পাখি যেন খেতে না পারে সে কারণেই যে বেড়া দেওয়া হয়েছে; সেই ব্যথাও গানটিতে ফুটে উঠেছে। সব মিলিয়ে ‘লিচুর বাগান’ শেষ পর্যন্ত ‘লিচুর বাগানে’ সীমাবদ্ধ থাকেনি। হয়ে উঠেছে ভালোবাসার প্রতীক।
কথায় আছে, ভালোবাসা জয় করে নিতে হয়। জিতে নেওয়ার মধ্যেই আছে অপার আনন্দ। ভালোবাসায় প্রতিবন্ধকতা থাকাটা মোটেও দোষের নয়। বরং বাধা না থাকাটাই যেন আশ্চর্যের। একইভাবে ভালোবাসা জিতে নেওয়ার পরও পেয়ে গেছি বলে হাল ছেড়ে দিলে চলে না। ‘লিচুর বাগান’কে এ ক্ষেত্রে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করলে, ‘লিচুর বাগানে’ ‘পিরিতের বেড়া’ তথা ভালোবাসার বেষ্টনী দেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। কেননা ‘ভালোবাসা’কে ভালোবাসা দিয়েই আগলে রাখতে হয়। প্রবল যত্নে আঁকড়ে রাখতে হয়। যেন কোনো কৌতূহলেই তা দুলে না ওঠে, হারিয়ে না যায়।
আরও পড়ুনসাবিলা তো ‘লিচুর বাগানে’ দিয়ে কী যে আগুন লাগিয়ে দিল...০৫ জুন ২০২৫