তদন্তের আগে অনুসন্ধান ব্যবস্থা বাতিলের সুপারিশ
Published: 9th, February 2025 GMT
দুর্নীতির কোনো অভিযোগ তদন্তের আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান করার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা বাতিলের সুপারিশ করেছে দুদক সংস্কার কমিশন। তদন্তের আগে অনুসন্ধানের এ আবশ্যিকতাকে চরম বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে কমিশন বলেছে, দুর্নীতির অপরাধের ক্ষেত্রে এমন বাধ্যবাধকতার কোনো যৌক্তিকতা নেই। অনুসন্ধান বাধ্যতামূলক হওয়ায় অনাবশ্যক দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়।
গত শনিবার বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে দুদক সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এর আগে দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান ও কমিশনের অন্য সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেন।
অনুসন্ধানের বাধ্যবাধকতা নিয়ে কমিশন বলেছে, অনুসন্ধানের কারণে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হওয়ায় প্রভাবশালী অভিযুক্ত ব্যক্তিরা দুদকের কাজে অন্যায়ভাবে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পান। এর ফলে দুদকের কর্মকর্তাদের মধ্যে দুর্নীতির প্রবণতা বাড়ে। আর খুন বা ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে যেখানে অনুসন্ধানের আবশ্যিকতা নেই, সেখানে দুর্নীতির ক্ষেত্রে এ আবশ্যিকতা অযৌক্তিক।
কমিশনের প্রতিবেদনে আবশ্যিক অনুসন্ধানব্যবস্থা বাতিলসহ ৪৭টি সুপারিশ করা হয়েছে। এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি—রূপরেখাও দিয়েছে কমিশন। এর মধ্যে ১৫টি সুপারিশকে স্বল্প মেয়াদে (ছয় মাস), ১২টি মধ্যম (১৮ মাস) মেয়াদে বাস্তবায়নের রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। বাকি সুপারিশগুলো ৪৮ মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের প্রস্তাব করেছে কমিশন।
উচ্চমাত্রার দুর্নীতি বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দুর্নীতি ও অর্থ পাচার তদন্তে বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে পৃথক টাস্কফোর্স গঠনের সুপারিশ করেছে কমিশন। এ ছাড়া দুর্নীতি প্রতিরোধে দেশে দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় কৌশলপত্র প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, ব্যক্তিস্বার্থে সাংবিধানিক ও আইনগত ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।
দুদককে শক্তিশালী করতে আমলানির্ভরতা একটা বড় বাধা বলে মনে করা হয়। সংস্কার প্রতিবেদনে দুর্নীতি দমন কমিশনে ১০ শতাংশের বেশি প্রেষণে নিয়োগ না করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া মহাপরিচালক ও পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতা অনুযায়ী দুদকের অভ্যন্তরীণ প্রার্থীদের জন্য মহাপরিচালক পদে ৬০ শতাংশ ও পরিচালক পদে ৭৫ শতাংশ পদ সংরক্ষিত রাখার সুপারিশ এসেছে।
কমিশন বলেছে, বিগত সরকারের সময় আয়কর আইনে নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় এমনভাবে বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যার ফলে অপ্রদর্শিত বৈধ উৎসবিহীন আয় বৈধ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যবস্থা দুর্নীতিবান্ধব, অনৈতিক ও বৈষম্যমূলক। তাই বৈধ উৎসবিহীন আয়কে বৈধতাদানের যেকোনো রাষ্ট্রীয় চর্চা চিরস্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে।
স্বার্থের দ্বন্দ্ব ও এ–সংক্রান্ত পেশাগত ও প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা ক্ষমতার অপব্যবহারের অন্যতম কারণ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যক্তিস্বার্থ, পারিবারিক সম্পর্ক, পরিচিত ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা সিদ্ধান্ত নেন। তাই রাষ্ট্রীয় ও আইনি ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধে স্বার্থের দ্বন্দ্ব নিরসন ও প্রতিরোধসংক্রান্ত আইন প্রণয়নের সুপারিশ করেছে কমিশন।
রাজনীতি ও নির্বাচনসংক্রান্ত অর্থায়নে স্বচ্ছতার জন্য কিছু সুপারিশ করেছে কমিশন। এতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী আয়-ব্যয় নিয়মিত প্রকাশ করতে হবে। হলফনামার তথ্য প্রকাশ করতে হবে। যদি হলফনামায় পর্যাপ্ত তথ্য না থাকে, তথ্য গোপন করা হয় এবং বৈধ আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ থাকে; তার জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
দুর্নীতি প্রতিরোধে সব সেবা খাতকে স্বয়ংক্রিয় (অটোমেশন) করা, জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের ঘুষ লেনদেনকে অপরাধ হিসেবে শাস্তির আওতায় আনার সুপারিশ করেছে কমিশন। দুদকের কেউ যাতে দুর্নীতিতে জড়িয়ে না পড়েন, এ জন্য ‘কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের’ মাধ্যমে নজরদারি অব্যাহত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।
দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত হলে দুদক বাস্তব অর্থে স্বাধীন, জবাবদিহিমূলক ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে পারবে। তবে এর জন্য রাজনীতি ও আমলাতন্ত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন দরকার।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র স প র শ কর ছ আবশ য ক সরক র তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
হস্তক্ষেপ নয়, পর্যবেক্ষণ ও সহযোগিতায় বিশ্বাসী টিম ডিরেক্টর রাজ্জা
সংবাদ সম্মেলন তখন শেষ। আব্দুর রাজ্জাককে মনে করিয়ে দেওয়া হলো, ‘‘বাংলাদেশ দলের টিম ডিরেক্টর কিন্তু টসেও ইনপুট দিতেন। আপনি কি…?’’ রাজ্জাক মুখে হাসি আটকে রাখেন। এই পদে আসন্ন আয়ারল্যান্ড সিরিজে দায়িত্ব পাওয়া রাজ্জাক স্রেফ এতোটুকুই বলতে পারেন, ‘‘আমাদের থেকে এমন কিছু কখনোই দেখতে পারবেন না। আমরা নতুন কিছু নিয়ে ভাববো।’’
জাতীয় দলকে নিয়ে সেই ভাবনা থেকেই আমিনুল ইসলাম বুলবুলের বোর্ড একজনকে টিম ডিরেক্টর নিয়োগ দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ের জাতীয় পুরুষ দলের ব্যর্থতার কারণে আলোচনা হচ্ছিল, ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ওপরে একটি ছায়া বিভাগ থাকবে যারা সরাসরি জাতীয় দল পর্যবেক্ষণ করবে।
সেই ছায়া বিভাগে সাবেক ক্রিকেটাররাই থাকবেন। প্রথম টিম ডিরেক্টর হিসেবে রাজ্জাক পেলেন দায়িত্ব। কেন টিম ডিরেক্টর নিয়োগ দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব হলো সেই প্রশ্ন করা হয় তাকে। নাজমুল হাসান বোর্ড সভাপতির দায়িত্বে থাকার সময় টিম ডিরেক্টর পদটি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। সাবেক অধিনায়ক ও বোর্ড পরিচালক খালেদ মাহমুদ এই দায়িত্ব পালন করেছেন বিশ্বকাপসহ বেশ কয়েকটি সিরিজে। দলের সঙ্গে গভীরভাবে মিশে যেতেন তিনি। টস থেকে শুরু করে টিম মিটিংয়ে দিতেন ইনপুট। যা নিয়ে পরবর্তীতে অভিযোগ করেছিলেন কোচ ও অধিনায়ক।
তবে রাজ্জাক নিজের কাজ, পরিধি এবং দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন বলেই নিশ্চিত করলেন,"অন্যান্য যে কোনো টিম ডিরেক্টরের মতোই হবে আমার কাজ। আমি সব কিছু পর্যবেক্ষণ করব, সব কিছুতে নজর রাখব। আর কখনও যদি টিম ম্যানেজমেন্ট মনে করে আমার কোনো সহযোগিতা প্রয়োজন, তাহলে সেটিও দেওয়ার চেষ্টা করব। তাদের সাহায্য প্রয়োজন হলে আমি করব।"
"ক্রিকেট বোর্ডের মনে হয়েছে, দলের সঙ্গে একজন টিম ডিরেক্টর থাকলে ভালো হবে। এই পদটি কিন্তু আগেও ছিল। অনেক দিন ধরেই ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে বোর্ড পরিচালকের সংখ্যা কম থাকায় হয়তো দলের সঙ্গে কেউ যায়নি। তবে এর আগে প্রায় সিরিজেই দলের সঙ্গে টিম ডিরেক্টর থাকত।" - যোগ করেন তিনি।
ঢাকা/ইয়াসিন