দুর্নীতির কোনো অভিযোগ তদন্তের আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান করার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা বাতিলের সুপারিশ করেছে দুদক সংস্কার কমিশন। তদন্তের আগে অনুসন্ধানের এ আবশ্যিকতাকে চরম বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে কমিশন বলেছে, দুর্নীতির অপরাধের ক্ষেত্রে এমন বাধ্যবাধকতার কোনো যৌক্তিকতা নেই। অনুসন্ধান বাধ্যতামূলক হওয়ায় অনাবশ্যক দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়।

গত শনিবার বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে দুদক সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এর আগে দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান ও কমিশনের অন্য সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেন।

অনুসন্ধানের বাধ্যবাধকতা নিয়ে কমিশন বলেছে, অনুসন্ধানের কারণে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হওয়ায় প্রভাবশালী অভিযুক্ত ব্যক্তিরা দুদকের কাজে অন্যায়ভাবে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পান। এর ফলে দুদকের কর্মকর্তাদের মধ্যে দুর্নীতির প্রবণতা বাড়ে। আর খুন বা ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে যেখানে অনুসন্ধানের আবশ্যিকতা নেই, সেখানে দুর্নীতির ক্ষেত্রে এ আবশ্যিকতা অযৌক্তিক।

কমিশনের প্রতিবেদনে আবশ্যিক অনুসন্ধানব্যবস্থা বাতিলসহ ৪৭টি সুপারিশ করা হয়েছে। এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি—রূপরেখাও দিয়েছে কমিশন। এর মধ্যে ১৫টি সুপারিশকে স্বল্প মেয়াদে (ছয় মাস), ১২টি মধ্যম (১৮ মাস) মেয়াদে বাস্তবায়নের রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। বাকি সুপারিশগুলো ৪৮ মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের প্রস্তাব করেছে কমিশন।

উচ্চমাত্রার দুর্নীতি বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দুর্নীতি ও অর্থ পাচার তদন্তে বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে পৃথক টাস্কফোর্স গঠনের সুপারিশ করেছে কমিশন। এ ছাড়া দুর্নীতি প্রতিরোধে দেশে দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় কৌশলপত্র প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, ব্যক্তিস্বার্থে সাংবিধানিক ও আইনগত ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।

দুদককে শক্তিশালী করতে আমলানির্ভরতা একটা বড় বাধা বলে মনে করা হয়। সংস্কার প্রতিবেদনে দুর্নীতি দমন কমিশনে ১০ শতাংশের বেশি প্রেষণে নিয়োগ না করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া মহাপরিচালক ও পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতা অনুযায়ী দুদকের অভ্যন্তরীণ প্রার্থীদের জন্য মহাপরিচালক পদে ৬০ শতাংশ ও পরিচালক পদে ৭৫ শতাংশ পদ সংরক্ষিত রাখার সুপারিশ এসেছে।

কমিশন বলেছে, বিগত সরকারের সময় আয়কর আইনে নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় এমনভাবে বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যার ফলে অপ্রদর্শিত বৈধ উৎসবিহীন আয় বৈধ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যবস্থা দুর্নীতিবান্ধব, অনৈতিক ও বৈষম্যমূলক। তাই বৈধ উৎসবিহীন আয়কে বৈধতাদানের যেকোনো রাষ্ট্রীয় চর্চা চিরস্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে।

স্বার্থের দ্বন্দ্ব ও এ–সংক্রান্ত পেশাগত ও প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা ক্ষমতার অপব্যবহারের অন্যতম কারণ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যক্তিস্বার্থ, পারিবারিক সম্পর্ক, পরিচিত ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা সিদ্ধান্ত নেন। তাই রাষ্ট্রীয় ও আইনি ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধে স্বার্থের দ্বন্দ্ব নিরসন ও প্রতিরোধসংক্রান্ত আইন প্রণয়নের সুপারিশ করেছে কমিশন।

রাজনীতি ও নির্বাচনসংক্রান্ত অর্থায়নে স্বচ্ছতার জন্য কিছু সুপারিশ করেছে কমিশন। এতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী আয়-ব্যয় নিয়মিত প্রকাশ করতে হবে। হলফনামার তথ্য প্রকাশ করতে হবে। যদি হলফনামায় পর্যাপ্ত তথ্য না থাকে, তথ্য গোপন করা হয় এবং বৈধ আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ থাকে; তার জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

দুর্নীতি প্রতিরোধে সব সেবা খাতকে স্বয়ংক্রিয় (অটোমেশন) করা, জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের ঘুষ লেনদেনকে অপরাধ হিসেবে শাস্তির আওতায় আনার সুপারিশ করেছে কমিশন। দুদকের কেউ যাতে দুর্নীতিতে জড়িয়ে না পড়েন, এ জন্য ‘কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের’ মাধ্যমে নজরদারি অব্যাহত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।

দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত হলে দুদক বাস্তব অর্থে স্বাধীন, জবাবদিহিমূলক ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে পারবে। তবে এর জন্য রাজনীতি ও আমলাতন্ত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন দরকার।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র স প র শ কর ছ আবশ য ক সরক র তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

‘দূরে থেকেও আমরা কাছে, এটাই বাস্তব’

ঢাকাই চলচ্চিত্রের ‘প্রিয়দর্শিনী’খ্যাত নায়িকা আরিফা পারভীন মৌসুমী। সোমবার (৩ নভেম্বর) ৫২ বছর বয়স পূর্ণ করলেন এই অভিনেত্রী। বিশেষ এই দিনে দেশে নেই, সন্তানদের সঙ্গে এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন মৌসুমী। 

মৌসুমী যুক্তরাষ্ট্রে থাকলেও বাংলাদেশে অবস্থান করছেন তার স্বামী ওমর সানী। সোমবার (৩ নভেম্বর) সকালে চিত্রনায়ক ওমর সানী কয়েকটি ছবি তার ফেসবুকে পোস্ট করে স্ত্রীকে ভালোবাসার বার্তা দিয়েছেন।  

আরো পড়ুন:

মৌসুমীকে বিয়ে করা কি ভুল ছিল ওমর সানীর

তারকাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ

এসব ছবির ক্যাপশনে ওমর সানী লেখেন, “শুভ জন্মদিন প্রিয়দর্শিনী মৌসুমী। দূরে থেকেও আমরা কাছে এটাই বাস্তব, আর যারা আমাদেরকে নিয়ে উল্টাপাল্টা নিউজ করে ওরা হচ্ছে…। শুভ জন্মদিন।” 

জন্মদিনের প্রথম প্রহর থেকে ভক্ত-অনুরাগীরা প্রিয় অভিনেত্রীকে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। ওমর সানীর এই পোস্টে নেটিজেনদের পাশাপাশি শোবিজ অঙ্গনের অনেকেই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মৌসুমীকে।  

চিত্রনায়িকা মুনমুন লেখেন, “শুভ জন্মদিন প্রিয়দর্শিনী, প্রিয় অভিনেত্রী মৌসুমী আপা।” শাহনূর লেখেন, “শুভ জন্মদিন আপু।” আইরিন সুলতানা লেখেন, “শুভ জন্মদিন।” এমন অসংখ্য মন্তব্য কমেন্ট বক্সে ভেসে বেড়াচ্ছে।  

১৯৭৩ সালের ৩ নভেম্বর খুলনায় জন্মগ্রহণ করেন মৌসুমী। তার বাবার নাম নাজমুজ্জামান মনি ও মা শামীমা আখতার জামান। ছোটবেলা থেকেই অভিনেত্রী এবং গায়িকা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন মৌসুমী। এরপর ‘আনন্দ বিচিত্রা ফটো বিউটি কনটেস্ট’ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন, যার ওপর ভিত্তি করে তিনি ১৯৯০ সালে টেলিভিশনের বাণিজ্যিক ধারার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কাজের সুযোগ পান। 

চিত্রনায়িকা হিসেবে ঢাকাই চলচ্চিত্রে মৌসুমীর অভিষেক ১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মাধ্যমে। এ সিনেমায় সালমান শাহর সঙ্গে জুটিবদ্ধ হন এ অভিনেত্রী। প্রথম সিনেমাতে নিজেদের মেধার জানান দেন সালমান শাহ ও মৌসুমী। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। দুজনই ঢালিউডে নিজেদের অবস্থান তৈরি করে নেন। তারপর তিন দশকের বেশি সময় ধরে ঢালিউডে মেধার দ্যুতি ছড়াচ্ছেন মৌসুমী। 

নারগিস আক্তার পরিচালিত ‘মেঘলা আকাশ’ ও চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘দেবদাস’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য এই অভিনেত্রী পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ