কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় সাথি খাতুন (২২) নামে এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার স্বামী মো. সিমান্ত (৩০)-এর বিরুদ্ধে। সোমবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার সদকী ইউনিয়নের করাতকান্দি গ্রামের স্বামীর বাড়ি থেকে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে।

নিহত সাথি খাতুন একই ইউনিয়নের মালিয়াট গ্রামের মনছুর শেখের মেয়ে এবং করাতকান্দি গ্রামের ইটভাটা শ্রমিক মো.

সিমান্তের স্ত্রী। এই দম্পতির নাহিদ (৬) ও আফসানা (৪ মাস) নামে দুই সন্তান রয়েছে।

পরিবারের অভিযোগ, স্বামী সিমান্ত পরকীয়ায় জড়িত ছিলেন এবং এ নিয়ে দাম্পত্য কলহ চলছিল। বিষয়টি মীমাংসার জন্য পারিবারিকভাবে একাধিক সালিস হলেও সমাধান হয়নি। সাত দিন আগে শ্বশুর মনছুর শেখ ৯০ হাজার টাকা দিয়ে সিমান্তকে পরকীয়া সম্পর্ক ছিন্ন করার অনুরোধ করেন। তবে গতকাল (রোববার) সিমান্ত তার পরকীয়া প্রেমিকার সঙ্গে ঘোরাঘুরি করায় এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সিমান্ত লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ও ব্লেড দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে কেটে সাথি খাতুনকে হত্যা করেন এবং পরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়ে পালিয়ে যান।

এ বিষয়ে কুমারখালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিপ্লব বিশ্বাস জানান, খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

এদিকে, ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত সিমান্তসহ তার পরিবারের সদস্যরা পলাতক রয়েছে। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালাচ্ছে।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস

রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।

‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।

এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।

বর্ষার ফুলের উৎসব

বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!

রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।

এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ