শৈশবে একখানা দারুণ বই যেন আনন্দময় এক জগতের দুয়ার। সেই জগতের ছাপ পড়ে শিশুর মননে ও সৃজনশীলতায়। শিশুর বিকাশে দারুণ ইতিবাচক ভূমিকা রাখে বই। তবে বাস্তবতা হলো, মুঠোফোন-ইউটিউবের এই যুগে অনেক শিশুকেই বইয়ে আগ্রহী করে তুলতে হিমশিম খাচ্ছেন অভিভাবকেরা। কীভাবে বইয়ের প্রতি শিশুকে আগ্রহী করে তোলা যায়, সে প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছিলাম।

আগে শোনা, পরে পড়া

জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) বলছে, পড়তে শেখার আগেই শিশুকে বই পড়ে শোনানো প্রয়োজন। শিশুতোষ গল্পের বিভিন্ন চরিত্রের সংলাপগুলো বিভিন্ন স্বরে পড়ে শোনানো যেতে পারে। চরিত্রগুলোর বিষয়ে তাকে বলুন। প্রাণীর উল্লেখ থাকলে সেগুলোর ডাক কিংবা ভঙ্গি অনুকরণ করতে পারেন মজা করে। আপনার পড়ার কারণেই শিশুর কাছে মজাদার ও আকর্ষণীয় একটা জিনিস হয়ে উঠবে বই। শিশুকে বই পড়ে তো শোনাবেনই, নিজেও পড়বেন। শিশুরা ভীষণ অনুকরণপ্রিয়। আপনাকে বই নিয়ে বসতে দেখলে সেও একই কাজ করতে চাইবে। সে যখন পড়তে শিখবে, তখন তাকেও বলুন আপনাকে বই পড়ে শোনাতে। তাকে পড়ে শোনানোর কাজটাও আপনি চালিয়ে যান। শিশু একটু বড় হওয়ার পর তাদের আগ্রহের বিষয়ের বই খুঁজে দেওয়ার প্রতিও জোর দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

শিশুকে নানা ধরনের বই দিতে চেষ্টা করুন.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস

রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।

‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।

এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।

বর্ষার ফুলের উৎসব

বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!

রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।

এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ