জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ‘ডি’ ইউনিট সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের প্রথম শিফটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার ফল আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রকাশিত হবে এবং পরীক্ষায় শিফট ভিত্তিক আনুপাতিক হারে মেরিট প্রকাশ হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম।

শুক্রবার পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা জানান তিনি।

উপাচার্য বলেন, অত্যন্ত সুন্দরভাবে পরীক্ষা চলছে। উপস্থিতি ৯০-৯৫ শতাংশ হতে পারে। আমরা সামনের পরীক্ষাগুলোও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পারব। পরীক্ষায় প্রতি শিফটের উপস্থিতি অনুযায়ী মেরিট দেওয়া হবে। ফলাফল যত দ্রুত সম্ভব প্রকাশ করা হবে। খাতা দেখতে একটু সময় লাগবে। আশা করি ১৫ দিনের মধ্যেই দিতে পারব। এটা সম্ভাব্য সময়। 

এদিকে বহুনির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বরের ক্রম অনুসারে মোট আসনের দশ গুণ পরীক্ষার্থীদের লিখিত পরীক্ষার (বর্ণনামূলক) উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য বিবেচিত হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা বলেছি এই সংখ্যাটা হ্রাস-বৃদ্ধি হতে পারে। এখানে আমাদের পাস মার্কস নেই। আমরা আসন অনুযায়ী একটা কাট অফ পয়েন্ট ধরব। সবাই যেন সবকিছুকেই সমান গুরুত্ব দেয় সেটার জন্য এটাই করেছি। 

লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, আমরা খাতা দেখা নিয়ে প্রথম থেকেই সতর্ক। এটাকে অটোমেশন করতে চেয়েছিলাম। এটা টেকনিক্যাল ইস্যু। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

ভর্তি পরীক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রশ্নের প্যাটার্ন এমনভাবে সাজানো হয়েছে যেন উত্তরও একইরকম হয়। কেউ যেন বেশি নম্বরও না দিতে পারে। একই ধাঁচের প্রশ্ন যেন একই ধাঁচের শিক্ষক দেখেন সেটা আমাদের কনসার্নে আছে। প্রশ্নের মডেল উত্তরও আছে। এখানে ভুলের সম্ভাবনা খুবই কম।

পরীক্ষা কমিটি সূত্রে জানা যায়, আজ ‘ডি’ ইউনিটের পরীক্ষায় মোট আবেদন পড়ে ২৪ হাজার ৯৫৬ টি। এই অনুষদে আসন সংখ্যা ৫৯০টি। আজ দ্বিতীয় শিফটের পরীক্ষা হবে বিকাল ৩টা ৩০ মিনিট থেকে ৪টা ৩০ মিনিট।

এ বছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে। পরীক্ষায় মোট নম্বর ১০০। এর মধ্যে লিখিত পরীক্ষা হবে ৭২ নম্বরের। বহুনির্বাচনী পরীক্ষা হবে ২৪ নম্বরের। লিখিত পরীক্ষা হবে ৪৮ নম্বরের। পরীক্ষায় এসএসসি পরীক্ষার জিপিএ-তে ১২ নম্বর এবং এইচএসসি পরীক্ষার জিপিএ-তে ১৬ নম্বর গণনা করা হবে। তবে পরবর্তীতে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের ৫০ নম্বরের ব্যবহারিক পরীক্ষা হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ল খ ত পর ক ষ উপ চ র য পর ক ষ র র পর ক ষ পর ক ষ য়

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ