ইন্টারনেটের বিস্তারের কারণে বাংলাদেশে যত ব্যবসা দাঁড়ানোর কথা, সেটি খুব বেশি না হলেও ফেসবুক, ইউটিউব আর ইনস্টাগ্রামের ব্যবহার বেড়ে ১০ কোটি গ্রাহক তৈরি হয়েছে। যার কিছু সুফল ইতোমধ্যে পেয়েছি। ই-মেইল আর ওয়েবসাইটের বিকাশ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। সফটওয়্যার ব্যবহার বা ডেটা নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড, শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা তথ্যপ্রযুক্তিতে উল্লেখযোগ্য বিস্তারের সুযোগ রয়ে গেছে এখনও।
জুলাই রাজনৈতিক পরিক্রমায় ইন্টারনেট বন্ধ ও মিথ্যা ঘোষণায় বাকস্বাধীনতা ও ব্যবসা পরিমণ্ডলকে করে দেয় নড়বড়ে। সরকার থেকে এমনটা করতে পারার মূল কারণ বিটিআরসির দুর্বল ইন্টারনেট নীতি ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার। তারপর জনমনে অধিকারের বিশ্বস্ততা তৈরি না হওয়ার প্রধান কারণ বিটিআরসি সরকারি সংস্থা ও তার রাজনৈতিক অবকাঠামোগত ক্ষমতায়নের পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা। যদিও স্বায়ত্তশাসিত হয়ে সরকারি সংস্থা, আইসিটি বাণিজ্য সংগঠন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি দিয়ে পরিচালিত ও নিয়ম তৈরি হলে বিশ্বস্ততার সমস্যা সমাধান হয়ে যেত বলে অনেকেই মনে করেন। ইন্টারনেট ও মোবাইল অপারেটরদের রেগুলেটরি বডি আলাদা হলেও অনেকখানি সহজ হতো, ফাইবার ব্রডব্যান্ড নিয়ে পলিসি তৈরিতে বারবার ফাইভজি থেকে অতিরিক্ত আয়ের চিন্তাটা কিছুটা হলেও দূরে রাখা যেত।
জুলাই-আগস্ট সময়ে ইন্টারনেট বন্ধের কারণে হওয়া ক্ষতি উত্তরণের কথা বাদ দিয়ে সবাই ঝুঁকেছি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির সেল্সম্যানশিপে। কারণ অনেকেই মনে করছি, স্টারলিংক বাংলাদেশের রাজনৈতিকভাবে অপব্যবহারযোগ্য ইন্টারনেট দিয়ে নাগরিক অধিকার ও অপ্রতিরোধ্য ব্যবসায়িক যোগাযোগমাধ্যম হয়ে উঠবে।
কিন্তু না, এটিও বিটিআরসির মাধ্যমে পরিচালিত হবে। আর যদি বিটিআরসি নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির ক্ষমতায়নে চলবে। অবশ্যই সিমিইউ-৪, সিমিইউ-৫ সাবমেরিনের সঙ্গে আরও প্যারালাল সংযোগ প্রয়োজন আমাদের। নদীমাতৃক দেশ– যেখানে ফাইবার যাবে না, সেখানে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পৌঁছাবে; সমুদ্র জাহাজে থাকবে, বিশেষ ব্যবসার চাহিদা পূরণে টেকসই ইন্টারনেট লাগবেই। কিন্তু ফাইবার ইন্টারনেট থ্রিজি/ফোরজি মোবাইল ইন্টারনেট সার্ভিস টিকিয়ে রাখার সব ব্যবস্থা করেই স্টারলিংককে সুযোগ দিতে হবে, যা অঞ্চলভিত্তিক ইন্টারনেট কাভারেজ নিশ্চিত করবে।
ইলন মাস্ক বা বিশ্বের শক্তিধর দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বা ডগির (ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিসিয়েন্সি, যুক্তরাষ্ট্র) প্রধানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক আলাদা চিন্তা হিসেবে বিবেচনায় নিতে হবে। অন্যথায়, বেসরকারি খাতে ৩০ বছরে গড়ে ওঠা ইন্টারনেট অবকাঠামো ভেঙে পড়তে পারে। বিশ্বের সঙ্গে সমানতালে শিক্ষা, যোগাযোগ ও ব্যবসা পরিচালনা ব্যয় বাড়ার শঙ্কা অমূলক হবে না।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন ত ক ব ট আরস ব যবহ র ব যবস সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।