ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় শেষ হয়ে গেল গতকাল রোববার। যাঁরা রিটার্ন দেননি, তাঁরা এখন কী করবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা হতেই পারে। কিন্তু বাস্তবে তার কারণ নেই; মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েনি। রিটার্ন জমার উপায় আছে। শুধু খরচ একটু বাড়বে।

বিষয়টি হলো, এখন রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় করের টাকার ওপর ২ শতাংশ হারে সুদ আরোপিত হবে। মিলবে না বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত; থাকবে না কর অব্যাহতি। কিন্তু রিটার্ন দিতে পারবেন। তিন দফা সময় বাড়ানোর পর গতকাল রিটার্ন জমার নির্ধারিত সময় শেষ হয়েছে। আজ সোমবার থেকে জরিমানা দিয়ে রিটার্ন দিতে হবে।

কর দিবসে যে পরিমাণ কর অপরিশোধিত থাকবে, তার ওপর ২০২৩ সালের আয়কর আইনের ১৭৪ ধারা অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে অতিরিক্ত কর আরোপ করা হবে। আয়কর রিটার্ন দেওয়ার শেষ দিন হলো কর দিবস।

কীভাবে রিটার্ন দেবেন

অনলাইন ও অফলাইন (কাগুজে)—দুইভাবে এখন রিটার্ন দেওয়া যাবে। অনলাইনে দেওয়ার জন্য ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে রিটার্ন দিতে পারবেন। সে জন্য কারও অনুমতির প্রয়োজন হবে না। সে জন্য ২ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। সর্বোচ্চ ২৪ মাসের জন্য ৪৮ শতাংশ পর্যন্ত এই সুদ আরোপিত হবে; ৩৬৫ দিনই অনলাইনে রিটার্ন দেওয়া যাবে।

অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যাংকিং, কার্ড পেমেন্ট (ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড) ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে করদাতারা কর পরিশোধ করতে পারছেন। পাশাপাশি জমা দেওয়া রিটার্নের কপি, প্রাপ্তি স্বীকারপত্র, আয়কর সনদ, টিআইএন সনদ ডাউনলোড ও প্রিন্ট করার সুবিধা পাচ্ছেন।

এ বছর ১৪ লাখের বেশি করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেছেন এবং আরও ১৪ লাখের বেশি করদাতা ই-রিটার্নের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন।

আপনি যদি কর কার্যালয়ে গিয়ে সনাতনী পদ্ধতিতে কাগুজে রিটার্ন দিতে চান, তাহলে প্রথমেই আপনাকে করের টাকার ওপর ২ শতাংশ সুদ হিসাব করে করের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। অবশ্য এর আগে আপনি বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত এবং কর অব্যাহতি নিতে পারবেন না। এরপর রিটার্ন জমার পর পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে প্রাপ্তি সনদ দেবেন উপ–করকমিশনার।

এবার অন্যবারের মতো কর অঞ্চলগুলোতে তেমন একটা ভিড় ছিল না। এ বছর অনলাইনে রিটার্ন জমা উৎসাহিত করছে এনবিআর। বর্তমানে এক কোটি ১১ লাখ কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএনধারী আছেন। প্রতিবছর গড়ে ৪০ লাখ রিটার্ন জমা পড়ে। রিটার্ন জমার এ বছরের হিসাব এখনো চূড়ান্ত করেনি এনবিআর।

এনবিআরের কর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন টিআইএনধারীদের দুই-তৃতীয়াংশই রিটার্ন দেন না। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন সরকারি–বেসরকারি সেবা পেতে টিআইএন ও রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে অনেকেই শুধু সেবা পেতে টিআইএন নেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর র ট করদ ত

এছাড়াও পড়ুন:

৩০ নভেম্বরের মধ্যে করদাতাদের ই-রিটার্ন জমা দিতে বলেছে এনবিআর

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি করদাতা অনলাইনে তাঁদের ই-রিটার্ন জমা দিয়েছেন। গত আগস্টে সব করদাতার জন্য অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

ই-রিটার্ন সিস্টেম ব্যবহার করে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে সব ব্যক্তি করদাতাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে এনবিআর। গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ অনুরোধ জানায় সংস্থাটি।

গত বছর নির্দিষ্ট এলাকার অধিক্ষেত্রের ব্যক্তি করদাতা, সারা দেশে ব্যাংকে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়। তাতে ১৭ লাখের বেশি করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেন।

দেশে বর্তমানে ১ কোটি ১২ লাখের মতো কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন। তাঁদের মধ্যে প্রতিবছর মাত্র ৪০ লাখ টিআইএনধারী রিটার্ন দাখিল করেন।

এনবিআর জানায়, এক বিশেষ আদেশের মাধ্যমে চলতি বছর ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের প্রবীণ করদাতা, শারীরিকভাবে অসমর্থ বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন করদাতা, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতা, মৃত করদাতার পক্ষে আইনগত প্রতিনিধি কর্তৃক রিটার্ন দাখিল এবং বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিক ছাড়া সব ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

চলতি ২০২৫-২৬ করবর্ষে যেসব করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন, তাঁরাও চাইলে অনলাইনে ই-রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। অন্যদিকে ই-রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধনসংক্রান্ত সমস্যার কারণে কোনো করদাতা অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে না পারলে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট উপকর কমিশনারের কাছে সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে আবেদন করলে অতিরিক্ত বা যুগ্ম কর কমিশনারের অনুমোদনক্রমে কাগুজে রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। এই সময়সীমা ৩১ অক্টোবর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা ১৫ দিন বাড়ানো হয়েছে।

এনবিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করদাতার পক্ষে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধিও অনলাইনে ই-রিটার্ন জমা দিতে পারছেন। এ ছাড়া বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতাদের ক্ষেত্রে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও তাঁদের পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, ই-মেইল ইত্যাদি তথ্য দিয়ে ই-মেইল করলে ই-রিটার্নের নিবন্ধন লিংক পাঠানো হয়। এর মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতারা ই-রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধন করে সহজেই অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন। কোনো ধরনের কাগজপত্র বা দলিল আপলোড না করেই করদাতারা তাঁদের আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায়ের প্রকৃত তথ্য ই-রিটার্ন সিস্টেমে এন্ট্রি করে ঝামেলাহীনভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন। ই-রিটার্ন দাখিলের পর তাৎক্ষণিকভাবে জমা স্লিপ পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আয়কর সনদও প্রিন্ট করে নিতে পারছেন করদাতারা।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ই-রিটার্ন জমা সহজ করার জন্য গত বছরের মতো এবারও করদাতাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ই-রিটার্নসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যায় করদাতাদের সহায়তা দিতে একটি কল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। আবার ওয়েবসাইটে ই-রিটার্নসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা লিখিতভাবে জানালেও তার সমাধান পাচ্ছেন করদাতারা। কোনো করদাতা সশরীর নিজ নিজ কর অঞ্চলে গিয়েও ই-রিটার্ন জমা দেওয়াসংক্রান্ত সেবা নিতে পারছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৩০ নভেম্বরের মধ্যে করদাতাদের ই-রিটার্ন জমা দিতে বলেছে এনবিআর